বাংলাদেশসঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্র কী? সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা ও মুনাফা

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে সঞ্চয়পত্র একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। তবে শুধু মধ্যবিত্তই নয়, আপনি যেই শ্রেণী পেশার মানুষই হয়ে থাকুন না কেন, একটি ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করতে চাইলে সঞ্চয়পত্রই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় আশা। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অনেক ব্যক্তি অথবা পরিবারই নিজের জমানো টাকা কিছুতে বিনিয়োগ করতে চায়। আর সঞ্চয়কে পুঁজি করে পাওয়া এই মুনাফা অনেকের কাছে হয়তো উপরি লাভ, কিন্তু অনেকের কাছেই জীবন ধারণের একমাত্র মাধ্যম। দেশের অসংখ্য নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের চলার খরচ আসে এই সঞ্চয়পত্র থেকে। আর আপনিও যদি আপনার জমানো টাকা একটি ঝুঁকিমুক্ত খাতে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে জানতে হবে সঞ্চয়পত্র কী এবং সঞ্চয়পত্রের অন্য সকল বিস্তারিত। 

সূচিপত্রঃ

সঞ্চয়পত্র কী?

সঞ্চয়পত্র মূলত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ প্রকল্প যা থেকে বিনিয়োগকারী সময়ে সময়ে মুনাফা ও মেয়াদ শেষ হলে আসল পেয়ে থাকেন। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেশের ভেতর জনগণের হাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অর্থ সরকারের কাছে জমা হয়। ফলে এটি বাজেটের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এতে সাময়িক ভাবে সরকারের লাভ হলেও দীর্ঘ হিসাব এ থেকে সাধারণ জনগণ অনেকটাই লাভবান হন। এর মাধ্যমে দেশের সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়ে। তার পাশাপাশি দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন- অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, মহিলা ও সমাজের অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকে। শুধু তাই নয়, এসব কিছুর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নাগরিকদের বৈদিশিক নির্ভরতা যেমন কমায় তেমনি দেশের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত সঞ্চয়পত্র 

সঞ্চয়পত্রের নানা ধরন রয়েছে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সাল থেকে আজ অবধি মোট ১০ ধরনের সঞ্চয়পত্রের প্রচলন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬টিই বর্তমানে বাতিল। বর্তমানে প্রচলিত চারটি সঞ্চয়পত্র হলোঃ

  • পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, মেয়াদ- ৫ বছর;
  • পরিবার সঞ্চয়পত্র, মেয়াদ- ৫ বছর;
  • তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, মেয়াদ- ৩ বছর ও
  • পেনশনার সঞ্চয়পত্র, মেয়াদ- ৫ বছর। 

সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা

বর্তমানে প্রচলিত চারটি সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা সবার নেই। প্রতিটি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা শর্তাবলী রয়েছে। সেগুলো পূরণ হলে তবেই সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম অনুসারে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়। নিচে প্রতিটি সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা বর্ণনা করা হলো।

পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

ব্যক্তিপর্যায়ে এই সঞ্চয়পত্র যেকোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক বাংলাদেশী নাগরিকই একক বা যুগ্ন ভাবে কিনতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শুধু কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ড ফান্ড এর টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা সম্ভব। ভবিষ্য তহবিল হলো এমন একটি তহবিল যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাঁদা অথবা গচ্ছিত অর্থ তাদের স্ব-স্ব হিসাবে জমা রাখা হয়। এই তহবিলের মাধ্যমে চাকরি শেষে ঐ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় থাকে। সে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে বলিষ্ঠ করতেই এই তহবিলের অর্থ দ্বারা সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। 

পরিবার সঞ্চয়পত্র

পরিবার সঞ্চয়পত্র যেকোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক বাংলাদেশী নারী কিনতে পারলেও যেকোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষ কিনতে পারে না। তবে ক্রেতার বয়স ৬৫ বছরের বেশী হলে নারী-পুরুষ যাই হোক না কেন, সে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে। আবার বাংলাদেশি যেকোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রাপ্ত বয়ষ্ক হলেই পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। 

তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়প্ত্রের ন্যায় এই সঞ্চয়পত্রটিও যেকোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক বাংলাদেশী নাগরিক একক বা যুগ্ন ভাবে কিনতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শুধু এক ধরনের প্রতিষ্ঠানই এই সঞ্চয়পত্র কেনার অধিকার রাখে। সেটি হলো অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠান। 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এই সঞ্চয়পত্রটি মূলত পেনশন বা অবসর ভাতা ভোগী নাগরিকদের জন্য। যারা যারা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেনঃ

  • সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পিআরএল ভোগরত / অবসরপ্রাপ্ত চাকরীজীবী। 
  • সুপ্রিম কোর্টের পিআরএল ভোগরত / অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি। 
  • সশস্ত্র বাহিনীর পিআরএল ভোগরত / অবসরপ্রাপ্ত সদস্য।
  • উল্লিখিত ক্যাটাগরিতে মৃত চাকরিজীবীদের পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী / স্ত্রী / সন্তানগণ।

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই সঞ্চয়পত্রটিতেও বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ অধিকাংশ নাগরিক সঞ্চয়পত্র কেনেই মুনাফা লাভের জন্য। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যসীমা থেকে অনেক বেশি বিক্রি হওয়ায় গত ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ সরকার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমিয়েছে। কমানোর পরে চারটি সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রেই সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। 

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রাপ্তির সময়কাল

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত প্রশ্নের একটি হলো, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কখন উত্তোলন করা যায়। নিচের চার্টটিতে প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের নীট প্রাপ্য মুনাফা যে কিস্তিতে শোধ করা হয়ে থাকে তার বিবরণ দেওয়া হলোঃ

সঞ্চয়পত্রের নাম মুনাফা প্রাপ্তির সময়কাল
পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র মেয়াদান্তে
পরিবার সঞ্চয়পত্রএক মাস অন্তর
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রতিন মাস অন্তর
পেনশনার সঞ্চয়পত্রতিন মাস অন্তর 

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রাপ্তির হার

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারগুলো নিচে দেখানো হলো। উল্লেখ্য যে, সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুসারে যেকোনো সময় এ হার পরিবর্তন হতে পারে। 

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার এর তালিকা

এক লক্ষ টাকার বিপরীতে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মাসিক/ত্রৈমাসিক মুনাফার পরিমাণ

সরকারি সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফা একটি ঝামেলাবিহীন আয়ের উৎস। কিন্তু অন্যান্য আয়ের উৎসের মতই এতেও আয়কর দিতে হয়। তবে যেহেতু এই মুনাফাটি সরকার থেকেই দেওয়া হয়ে থাকে তাই এতে উৎসে আয়কর প্রযোজ্য। অর্থাৎ আপনি মুনাফা লাভের পূর্বেই মোট মুনাফার ওপর প্রযোজ্য আয়কর কেটে রাখা হবে। অতঃপর নীট মুনাফা আপনি উত্তোলন করতে পারবেন। একেই বলে উৎসে আয়কর। অর্থাৎ অর্থ প্রাপ্তির উৎস থেকেই আয়কর কর্তন।

এছাড়াও সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সম্পর্কে জানতে হলে আরেকটি বিষয়ে জানা জরুরী। সেটি হলো পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ। পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ বলতে পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে একজন নাগরিকের মোট বিনিয়োগকে বোঝায়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকৃত টাকা পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের হিসাবে যোগ হয় না। 

লেখার এই অংশে উৎসে আয়কর কর্তনের পরে প্রতিটি সঞ্চয়পত্র থেকে প্রতি ১ লক্ষ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে বা প্রতি তিন মাসে আপনি নীট কত টাকা মুনাফা পাবেন তার একটি বিবরণ দেওয়া হল।

পরিবার সঞ্চয়পত্র

  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে পরিবার সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ৯১২ টাকা। 
  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ৮৬৪ টাকা। 
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৩০ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ৭৮৭.৫ টাকা। 
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ৭১২.৫ টাকা।

তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে এই সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২৬২২ টাকা। 
  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে এবং এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২৪৮৪ টাকা।
  • তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৩০ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২২৫০ টাকা। 
  • তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২০২৫ টাকা।

উল্লেখ্য যে, পরিবার সঞ্চয় পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীর পুঞ্জীভূত মুনাফা যদি ৫ লক্ষ অবধি হয়ে থাকে তবে এই দুই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ৫% আয়কর কর্তন করা হয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীর পুঞ্জীভূত মুনাফা ৫ লক্ষের বেশি হলে মুনাফা থেকে ১০% আয়কর কর্তন করা হয়।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র

  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে তিন মাসে মুনাফা ২৯৪০ টাকা। 
  • পুঞ্জীভূত বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২৬৪৬ টাকা।
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৩০ লক্ষ টাকা অবধি হলে প্রতি লাখে  ত্রৈমাসিক মুনাফা ২৪১৮.৭৫ টাকা।
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে প্রতি লাখে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২১৯৩.৭৫ টাকা।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর পুঞ্জীভূত মূলধন ৫ লক্ষ টাকা অবধি হলে কোনো আয়কর কর্তন করা হয় না। পুঞ্জীভূত মূলধন ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে ১০% হারে আয়কর কর্তন করা হয়।

আবারো উল্লেখ্য যে, উপরিউক্ত হিসাবে যেই আয়করের কথা বলা হয়েছে তার প্রতিটিই উৎসে আয়কর। এছাড়াও এই হিসাবে যেই মুনাফা উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রতিটিই এক লক্ষ টাকার বিপরীতে মুনাফা। এবং উপরে উল্লিখিত মুনাফার সকল হিসাব আয়কর কর্তনের পর বিনিয়োগকারীর প্রাপ্য নিট হিসাব।

যেমন, কোনো বিনিয়োগকারী পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকলে এক মাস পর তিনি মুনাফা পাবেন ৯১২ টাকা। ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকলে মুনাফা পাবেন ৯১২*৫ = ৪৫৬০ টাকা। আবার ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাবেন ৮৬৪*১৫ = ১২,৯৬০ টাকা।

নমিনি

প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের জন্যই নমিনি নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। কোনো কারণে ক্রেতা মারা গেলে সঞ্চয়পত্রের মালিকানা নিয়ে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ সকল জটিলতা এড়াতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময়েই ক্রয় ফরমে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে মনোনয়ন করা যায়। ক্রেতা বা মালিক মারা গেলে নমিনিই সেই সঞ্চয়পত্রের মালিকানা পায়। একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিনজনকে নমিনি করা যায়। চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেও নমিনি করা যায়। উল্লেখ্য যে, নমিনি সাবালক নাবালক দুই’ই হতে পারে।

সঞ্চয়পত্রের নমিনি না থাকলে এবং ক্রেতার মৃত্যু হলে আইনানুগ ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারী সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্রেতার মৃত্যুর তিন মাসের ভেতর কোর্ট থেকে সাকসেশন সার্টিফিকেট (Succession Certificate) সংগ্রহ করতে হবে। তার মাধ্যমে সে উত্তরাধিকারী হিসেবে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবে।

মালিক ও নমিনি ব্যাতীত মুনাফা উত্তোলন

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রয়োজনে মালিক ও নমিনি ছাড়াও মনোনীত ব্যক্তি উত্তোলন করতে পারে। বিনিয়োগকারীই কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। তবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মনোনীত ব্যক্তির স্বাক্ষর সত্যয়নপূর্বক বিনিয়োগকারীকে অথোরাইজেশন লেটার (Authorisation Letter) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা আসল অর্থ কোনো ভাবেই অথোরাইজেশন লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মুনাফা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।

শেষকথা

সঞ্চয়পত্রের হলো বিপদের বন্ধু। টাকা এমনই একটি জিনিস যা কখন খরচ হয়ে যা তা অনেকে বুঝতেও পারেন না। তাই এমন পরিস্থিতিতে না পড়লে চাইলে হতে হবে সঞ্চয়ী। আর বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা সঞ্চয়ী মাধ্যম হলো সঞ্চয়পত্র। যা কেনার সুযোগ অনেকেই পান না। তাই সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ পেলে এতে বিনিয়োগ করুন নিশ্চিন্তে। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) সঞ্চয়পত্র কোথায় নগদায়ন / ভাঙানো যায়?

উত্তরঃ মেয়াদ শেষ হলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (Electronic Fund Transfer) পদ্ধতির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসেবে জমা হয়। তবে মেয়াদের পূর্বেই সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে চাইলে যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন সেই অফিসেই আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও সিস্টেম হতে সরবরাহ করা সঞ্চয়পত্রের মূল কপি জমা দিতে হবে।

২) সঞ্চয়পত্র কখন নগদায়ন করলে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না?

উত্তরঃ সকল প্রকার সঞ্চয়পত্র ১ বছরের পূর্বে নগদায়ন করলে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। ইতোমধ্যে মুনাফা উত্তোলন করলে আসল থেকে মুনাফা কেটে রাখা হয়। 

৩) সঞ্চয়পত্র লিয়েন করে বা জামানত রেখে কি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়?

উত্তরঃ না। সঞ্চয়পত্র লিয়েন করে বা জামানত রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায় না।

৪) সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পরিবর্তিত হলে কি সকল সঞ্চয়পত্রই এর দ্বারা প্রভাবিত হয়?

উত্তরঃ আগে থেকেই ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার অপরিবর্তিত থাকে। তবে প্রজ্ঞাপন জারির পর নতুন ক্রয় করা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা পরিবর্তিত হার অনুযায়ীই নির্ধারিত হয়। আবার আগের ক্রয় করা সঞ্চয়পত্রে পুনর্বিনিয়োগ করতে গেলে নতুন মুনাফার হার প্রযোজ্য হয়।

৫) সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ার সম্ভাবনা কি আছে? 

উত্তরঃ ‘মুনাফায় হার বাড়ানো, কমানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। প্রয়োজনে বাড়তেও পারে আবার।’ গত ২২শে সেপ্টেম্বর এমনটাই বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তবে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে ১৫ লক্ষের অধিক বিনিয়োগে মুনাফার হার কমানো হয়েছে। তাই ধারনা করা যায় যে অদূর ভবিষ্যতে মুনাফার হার বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। 

 

তথ্যসূত্রঃ

১। বাংলাদেশ ব্যাংক 

২। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর (ক)

৩। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর (খ)

৪। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর (গ)

৫। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর (ঘ) 

৬। প্রথম আলো 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button