নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম (২০২৩)
নাগরিকত্ব। প্রত্যেক মানুষের জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো দেশের নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। আর নাগরিক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ড। অনেকে এ দুটোকে আলাদা মনে করলেও মূলত জাতীয় পরিচয় পত্রই ভোটার আইডি কার্ড হিসেবে কাজ করে। এটিই প্রাথমিক ভাবে আপনার নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। তাই প্রায় সকল নাগরিক সেবা পেতেই জাতীয় পরিচয় পত্র বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছর হলে একজন বাংলাদেশী নাগরিক জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়ে থাকেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়, এটি পেতে কি কি প্রয়োজন তা অনেকেই জানেন না। এ সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের এই লেখাটি।
সূচিপত্রঃ
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড কেন প্রয়োজন?
জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি যে প্রয়োজন তা প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু ঠিক কেন প্রয়োজন তা নিয়েও পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত।
ভোট প্রদান
ভোট প্রদানের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র আবশ্যক একটি বস্তু। এজন্যই এর অপর নাম ভোটার আইডি কার্ড। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন নাগরিক ১৮ বছর হলে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়ে থাকেন। আর প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার সাথে সাথে তিনি ভোট প্রদানের অধিকার প্রাপ্ত হন। কিন্তু একজন নাগরিক যে প্রাপ বয়ষ্ক এবং ভোট দেওয়ার অধিকার তার রয়েছে তার প্রমাণস্বরুপ জাতীয় পরিচয় পত্রটি তার অবশ্যই দরকার।
সরকারি সেবা গ্রহণ
সরকারি সেবাগুলো বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ সেবা পেতেই জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ট্রেনের টিকেটের কথা। বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান। আর তাই বর্তমানে রেলের টিকিট কাটতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর প্রদান করতে হয়। একই ভাবে অনলাইন অফলাইন সকল সেবাতেই জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রভাব দিনকে দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই বলা যায় যেকোনো নাগরিক সেবা পেতে জাতীয় পরিচয় পত্র এখন বাধ্যতামূলক।
পাসপোর্ট
আপনি যদি বিদেশ ভ্রমণ করতে চান তাহলে বর্তমানে আপনার ই-পাসপোর্ট করতে হবে। আপনি যদি প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে থাকেন তাহলে কোন ভাবেই জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারবেন না। তাই শিক্ষা, চিকিৎসা বা জীবিকা যে কাজেই বিদেশ যেতে চান না কেন, জাতীয় পরিচয় পত্র আপনার লাগবেই।
প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ও দলিলাদি
সরকারি সেবার বাইরেও প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই জাতীয় পরিচয় পত্রকে বাধ্যতামূলক একটি বিষয় হিসেবে গণ্য করে। শতকরা প্রায় শতভাগ প্রতিষ্ঠান যেকোনো চাকুরি প্রদানের আগে জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি দাখিল করার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর জমা রাখে। এছাড়াও যেকোনো মূল্যবান বস্তু ক্রয় করতে হলে দলিল করা প্রয়োজন। এবং দলিল এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ক্রেতা ও বিক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর।
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের গুরুত্ব নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পেরেছেন। এবার চলুন জানা যাক ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম।
অফলাইনে বা সশরীরে ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো সশরীরে নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ড করে থাকে। প্রতি বছর নতুন যেসব নাগরিক প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়ে থাকেন তাদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। মোট ৬টি ধাপে নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে এই প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত। প্রতিটি নির্বাচনি অঞ্চলেই এলাকাভিত্তিক সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময় গণ্যমাধ্যম, মাইকিং ইত্যাদি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে নাগরিকদের সচেতন করা হয়। তাই আপনি যদি নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে চান তাহলে আপনার নিজেরই এ বিষয়ে খোজ রাখা উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। গ্রামাঞ্চলে এখনো তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। আবার অনেকে অঞ্চলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অপরদিকে শহরে অধিকাংশ কাজ নির্বাচন অফিসেই করা হয়ে থাকে।
প্রাথমিক তথ্যাবলী প্রদান
যদি নতুন ভোটার নিবন্ধনের কার্য্রক্রম শুরু হয়ে থাকে তাহলে আপনার অঞ্চলের নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলেই কবে আসতে হবে তা জানতে পারবেন। সাধারণত একাধিক তারিখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক ভাবে যে সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেগুলো মূলত ফরম-২ এর অর্ন্তভুক্ত। নিচে ফরম-২ এর একটি নমুনা দেখানো হলো।
প্রাথমিক ভাবে এই ফরমটিতে যেসব তথ্যাবলী প্রয়োজন সেগুলোই প্রদান করতে হয়। ছবি গুলো দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি কি তথ্যাবলী দরকার। তাই নির্বাচন অফিসে যাওয়ার আগে থেকেই এ সকল তথ্য সঠিক ভাবে যোগাড় করে রাখতে হবে। একই সাথে এই ফরমের তথ্যাবলী কে সত্য প্রমাণ করার জন্য একাধিক কাগজপত্র দাখিল করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার পরবর্তী অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
বর্তমানে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন করা যায়। অনলাইন নিবন্ধন সহ জাতীয় পরিচয় পত্র জনিত সকল সেবার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আলাদা একটি ওয়েবসাইট চালু রেখেছে।
আপনি যদি প্রবাসী, নতুন অথবা বাদ পড়া ভোটার হয়ে থাকেন তাহলে এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে আগে নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে থাকলে এটি করার দরকার নেই। করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। নিচে ধাপে ধাপে অনলাইনে আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
একাউন্ট খোলা
ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে প্রথমেই https://services.nidw.gov.bd/ ওয়েবসাইটটিতে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। সাইটের নতুন নিবন্ধন ট্যাবে ক্লিক করে নিচে স্ক্রল করলেই দেখবেন ‘আমি রাজি ও নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে চাই’ নামক একটি বাটন রয়েছে। বাটনটিতে চাপ দিলেই নিচের দৃশ্যটি দেখতে পাবেন।এই পেজটিতে মোট তিনটি অংশ রয়েছে। আপনি যেহেতু জাতীয় পরিচয় পত্র এর জন্য নতুন নিবন্ধন করবেন তাই ‘নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন’ সেকশনে ‘’আবেদন করুন’ বাটনে ক্লিক করুন। অতঃপর নিচের চিত্রের ন্যায় একটি পেজ দেখতে পাবেন।
উক্ত পেজটিতে আপনার পুরো নাম (ইংরেজিতে) ও আপনার জন্ম তারিখ নির্ভুল ভাবে প্রবেশ করান। এক্ষেত্রে অবশ্যই জন্ম সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ প্রবেশ করাবেন। অতঃপর ক্যাপচা কোডটি প্রবেশ করিয়ে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন। ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করার পর একটি মোবাইল নম্বর প্রবেশ করাতে হবে। এমন একটি মোবাইল নম্বর দিন যা সব সময় চালু থাকবে ও আপনার কাছে থাকবে। অতঃপর ‘বার্তা পাঠান’ বাটনে ক্লিক করলে নম্বরে একটি কোড আসবে যা সাইটে প্রবেশ করাতে হবে।মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করার পরে আপনার একটি ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ঠিক করতে হবে। ইউজারনেমটি অবশ্যই ইউনিক তথা অন্যন্য হতে হবে। ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ঠিক করা হলেই আপনার একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। এবার একাউন্টে লগইন এর পালা।
একাউন্টে লগইন
একাউন্ট খোলার পর সরাসরিই লগইন করতে পারবেন। পরবর্তীতে লগইন করতে হলে সাইটের লগইন ট্যাবে ক্লিক করে ‘লগইন করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। বাটনে ক্লিক করার পর আবার পূর্বের ন্যায় একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। (১ম চিত্র দ্রষ্টব্য)। তবে এবার পেজটির ডানদিকের তিনটি বক্সে যথাক্রমে আপনার ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা কোড প্রবেশ করিয়ে লগইন বাটনে ক্লিক করুন। প্রয়োজনে সাইটের ভাষা বাংলা ইংরেজি উভয়ই নির্ধারণ করতে পারবেন।লগইন করার পর নিচের পেজটি আসবে।
প্রোফাইল সম্পাদনা
এই পেজটির ‘প্রোফাইল’ অংশে ক্লিক করলেই আপনি চলে যাবেন প্রোফাইলে যেখানে আপনার যাবতীয় তথ্য পূরণের ঘর থাকবে।প্রোফাইলে ঢোকার পরে যে কয়টি তথ্যের ঘর আছে সব কয়টিই আপনাকে সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। পূরণ করতে পেজের বাম দিকের ‘এডিট’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইলটি একটি আবেদন হিসেবে সম্পাদনা করার পর্যায়ে চলে যাবে।অতঃপর প্রত্যেকটি ঘর সঠিক ভাবে পূরণ করুন। নিচে বাকি সমস্ত ঘরের ছবি যুক্ত করা হলো।উপরের ছবি দুটো দেখে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন ব্যাক্তিগত তথ্য হিসেবে কি কি তথ্য প্রদান করতে হবে। তবে এর বাইরেও অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করতে হবে। যার ছবি নিচে দেওয়া হলো।
অন্যান্য তথ্যঃ
ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্যঃ
আপনার প্রোফাইলের সকল তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করার পর এবার কাগজপত্র জমা দানের পালা। কাগজপত্র জমা দিতে সেগুলোর স্ক্যান করা পিডিএফ কপি আপনার একাউন্টে আপলোড দিতে হবে। আপলোড দিতে প্রোফাইলের এডিট মোডে গিয়ে ‘পরবর্তী’ ধাপে ক্লিক করলেই আপলোডের উপায় পাবেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড হলে আবারো ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। এটিই আবেদনের শেষ ধাপ। এই ধাপে আপনার আবেদনের একটি প্রিভিউ আপনাকে দেখানো হবে। এর সাহায্যে ভাল ভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আবেদনের সকল তথ্য সঠিক কি না। সঠিক হলে আবেদনটি জমা দিন।
আবেদন করার পর আবেদনটির পিডিএফ এর একটি প্রিন্ট কপি তৈরি করুন। অতঃপর সেই প্রিন্ট কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজাবলী নিয়ে আপনার নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে আসুন। কি কি কাগজাবলী আপলোড করতে হবে ও জমা দিতে হবে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো।
নতুন ভোটার হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নতুন ভোটার হতে বেশ কিছু কাগজপত্র আবশ্যক। এসব কাগজ মূলত জাতীয় পরিচয় পত্র এর জন্য পূরণকৃত ফরম বা অনলাইন আবেদনে প্রদত্ত তথ্যগুলোর সত্যয়তা নিশ্চিত করে। কাগজপত্রগুলো হলোঃ
১) জন্ম নিবন্ধন সনদঃ এটি পুরো প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ বলা চলে। মূলত জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনুসারেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হয়ে থাকে।
২) এসএসসি সনদঃ আবেদনকারী শিক্ষিত হলে বয়স প্রমাণের জন্য।
৩) বাবা / স্বামী ও মা এর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
৪) পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টি.আই.এন (ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার)ঃ বয়স প্রমানের সনদ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।
৫) বিদ্যুৎ বিল / পানির বিল বা এমন কোন ইউটিলিটি বিলের কপি ও বাড়ি ভাড়ার রশিদঃ ঐ অঞ্চলে নিয়মিত থাকেন এমন কোন প্রমাণ।
৬) নাগরিকত্বের সনদঃ কখনো কখনো এর প্রয়োজন হয়। উপজেলার চেয়ারম্যান অথবা শহরের ওয়ার্ড কমিশনার এর কাছ থেকে এই সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
সাধারণত উপরিউক্ত কাগজগুলোর বাইরে আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। অফলাইন অনলাইন দুই ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রেই এগুলোর দরকার রয়েছে। অফলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ফরম জমাদানের সময় ও অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনের পিডিএফ এর প্রিন্ট কপি জমাদানের সময় এসব কাগজ জমা দিতে হবে।
ছবি তোলা ও স্বাক্ষর গ্রহণ
অফলাইন অনলাইন দুই ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক তথ্যাবলী প্রদানের পরে কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। এলাকা ভেদে অপেক্ষার সময়ে অনেক পার্থক্য থাকতে পারে। এ সময়ে আপনার প্রদত্ত তথ্যাবলী যাচাই করে দেখা হবে। যাচাই শেষ হলে জাতীয় পরিচয় পত্র এর ছবি তোলার তারিখ আপনার মোবাইল নম্বরে ম্যাসেজ করে জানানো হবে। তাই অবশ্যই নম্বরটি খোলা রাখুন। ছবি তোলার তারিখ পেলে নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অফিসে হাজির হয়ে যান। এই দিনে মূলত তিনটি কাজ করা হয়ে থাকে।
- ছবি তোলা
- স্বাক্ষর গ্রহণ
- চোখের স্ক্যান
ছবি তোলা
ছবি তোলা নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। ছবি তোলার জন্য সিরিয়াল ধরে একটি নির্দিষ্ট বুথে যেতে হবে। সেখানেই ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা থাকে। মোট তিন দিক থেকে ছবি তোলা হবে। সামনে থেকে এবং মুখের বাম ও ডান উভয় পাশ থেকেই। এই ছবিটিই সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রে দৃশ্যমান হবে। তাই ছবি তোলার দিন অবশ্যই পরিপাটি হয়ে যাওয়া উচিৎ।
স্বাক্ষর গ্রহণ
স্বাক্ষর প্রদানের সময়ে অধিকাংশ মানুষই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কারণ স্বাক্ষর গ্রহণের সময় নিজের নাম লিখতে বলা হয়। সরাসরি ‘স্বাক্ষর’ শব্দটি উচ্চারিত না হওয়ায় অনেকেই তাৎক্ষণিক ভাবে বিষয়টি বুঝতে পারেন না। কিন্তু এটিই স্বাক্ষর গ্রহণ। এই স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়ে থাকে একটি ইলেক্ট্রনিক প্যাডে ইলেক্ট্রনিক পেনের সাহায্যে। এ সময় আপনাকে বসার জন্য টুল দেওয়া হতেও পারে, নাও দেওয়া হতে পারে। তাই যদি জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজের একটি সুন্দর স্বাক্ষর দেখতে চান তাহলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে এবং বসে স্বাক্ষর দেওয়া অনুশীলন করুন। চাইলে শুধু নিজের নাম লিখে স্বাক্ষর দিতে পারেন। অথবা একটি প্রকৃত স্বাক্ষরও অনুশীলন করতে পারেন। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে, ইলেক্ট্রনিক প্যাডে আপনার নাম লিখতে বলা মানেই স্বাক্ষর করা। তাই সে সময়ই আপনার পছন্দনীয় স্বাক্ষরটি করুন। নাম লিখতে বলার কারণে স্বাভাবিক ভাবে নাম লিখে ফেললে পরবর্তীতে আবার স্বাক্ষরের সুযোগ পাবেন না।
চোখের স্ক্যান
চোখের স্ক্যান করাও জাতীয় পরিচয় পত্র করারই একটি অংশ। ছবি তোলা ও স্বাক্ষর গ্রহণের পরে একটি যন্ত্রের সাহায্যে আপনার চোখ স্ক্যান করা হবে। এ সময় চোখ বড় করে মেলে রাখুন। স্ক্যান করা শেষ হলে আপনার চোখের তথ্যও সার্ভারে জমা হবে। চোখের আইরিশ মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়দানকারী বস্তুগুলোর মধ্যে একটা। তাই এই ধাপটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
চোখের স্ক্যান সহ সকল তিনটি ধাপ শেষ হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সকল তথ্য প্রদান সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে। অতঃপর নির্বাচন অফিস থেকে আপনাকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে। এই স্লিপটি অত্যন্ত যত্ন করে রাখবেন। এই স্লিপটি ব্যাতীত জাতীয় পরিচয় পত্রের ডেলিভারি পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। তাই এই স্লিপটি একটি নিরাপদ যায়গায় রাখুন ও একাধিক ফটোকপি সংরক্ষণ করুন।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ
আপনার ভোটার নিবন্ধন হয়ে থাকলে আপনি খুব সহজেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের সফট কপি নামিয়ে নিতে পারবেন। অতঃপর তা প্রিন্ট করে আসল জাতীয় পত্রের মতই প্রায় সব কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এ ধরনের প্রিন্ট কপির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। আসল জাতীয় পরিচয় পত্র সাধারণত এই মেয়াদের মধ্যেই ডেলিভারি দিয়ে দেওয়া হয়। জাতীয় পরিচয় পত্র করার সময় যেই মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন তাতে কোনো ম্যাসেজ আসলো কি না খেয়াল রাখুন। এছাড়া সশরীরে গিয়েও নির্বাচন অফিসে খোজ রাখতে পারেন। জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরণ শুরু হলে স্লিপটি নিয়ে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করুন।
শেষকথা
জাতীয় পরিচয় পত্র প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবনেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত সময় হলেই জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করা। তবে জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনের সময় কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে আবেদন করা উচিত। আশা করি এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা এ সম্পর্কে যথেষ্ট বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) আমার জন্ম সনদ ও এসএসসির সনদের নামের বানান ভিন্ন। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তরঃ সঠিক নামের বানান নির্ধারণ করে যেকোনো একটি সনদ সংশোধন করুন। সংশোধন করতে অপারাগ হলে জন্ম সনদ অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
২) আমার জন্ম সনদ ও এসএসির সনদে বাবার / মার নাম ভিন্ন। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তরঃ আপনার বাবা / মা এর জাতীয় পরিচয় পত্রে যেই নাম / নামের বানান আছে সেটি অনুসরণ করুন। প্রয়োজনে আপনার জন্ম সনদ সংশোধন করুন।
৩) ভোটার আইডি করতে কত টাকা প্রয়োজন?
উত্তরঃ এক টাকাও না। এটি সকলের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যের নাগরিক সেবা।
৪) ডেলিভারির পরে আমার ভোটার আইডি কার্ডে ভুল দেখতে পাচ্ছি। এটি কি নির্বাচন অফিসে ফেরত দেবো?
উত্তরঃ আইডি কার্ডে ভুল আসলে অফিসে ফেরত দিয়ে লাভ নেই। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের সঠিক নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হবে।
৫) অনেকে আমার পরে আবেদন করে অনেক অল্প সময়েই জাতীয় পরিচয় পত্রের ডেলিভারি পেয়ে গেছে। এক্ষেত্রে কি করবো?
উত্তরঃ আপনাদের নির্বাচনি এলাকা ভিন্ন হয়ে থাকলে কিছুই করার নেই। এলাকাভেদে সময়ের বেশ বড় রকমের তফাৎ দেখা দিতে পারে। তবে একই নির্বাচনি এলাকা হলে সরাসরি নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিন। সেক্ষেত্রে খুব সম্ভবত আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হয়ে পড়ে আছে।