জাতীয় পরিচয়পত্রপরিচয় পত্র

ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নম্বর হারিয়ে গেলে করণীয়

ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র, যেটাই বলি না কেন আমাদের নাগরিক জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত বেশিরভাগ নাগরিকই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ভোটার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রমের আওতায় ভোটার হয়ে থাকেন। আবার অনেকে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়াটি শুধু জটিলই নয় বরং সময় সাপেক্ষও বটে। এই প্রক্রিয়া সম্পাদনে যেই লম্বা সময়ের প্রয়োজন, তাতে একটি কাগজের টুকরো হারিয়ে যেতেই পারে। কিন্তু অসাবধানতা বশত এই হারিয়ে যাওয়ার কারণেই জাতীয় পরিচয় পত্র হাতে পাওয়া হয়ে উঠতে পারে অসম্ভব জটিল। মূলত সেই জটিলতা থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় নিয়েই লেখা হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি।

ভোটার নিবন্ধন ফরম ও এর স্লিপ নম্বর কী?

একজন নাগরিক যেই প্রক্রিয়াতেই জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করুক না কেন, প্রক্রিয়ার একটি ধাপে তাকে অবশ্যই ভোটার নিবন্ধন ফরম দেওয়া হবে। নির্বাচন অফিসে গিয়ে নিবন্ধন করলে ২নং নিবন্ধন ফরমের নিচের একটি অংশ ছিড়ে দেওয়া হয়। এটিই ভোটার নিবন্ধন স্লিপ। একে প্রাপ্তি স্লিপও বলে। অনলাইনে আবেদন করলে যখন বায়োমেট্রিক তথ্যাবলী প্রদান করতে যাবেন তখন স্লিপটি পাবেন। এই স্লিপটির ডান দিকে একটি ৮ সংখ্যার নম্বর থাকবে। এই নম্বরটি ইউনিক বা অন্যন্য। এই নম্বরটিই হলো ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নম্বর। জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই নম্বরটিই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। তাই সকলেরই উচিত এই স্লিপ নম্বরটি অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা। কিন্তু আপনি যদি ভুলবশত এই স্লিপটি হারিয়ে ফেলেন তাহলে যেসব উপায়ে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রটি সংগ্রহ করতে পারবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

পূর্ববর্তী ভোটার হলে

অনেক নাগরিকই আছেন যাদের বয়স ১৮ এর বেশি এবং তারা ইতোমধ্যে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয় পত্র পাননি। তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ। তাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি মূলত দুইটি ভাগে বিভক্ত।

ভোটার নম্বর সংগ্রহ

যারা আগে কোনো না কোনো সময় ভোট দিয়েছেন তাদের নাম অবশ্যই ভোটার তালিকায় থাকবে। এই ভোটার তালিকা সাধারণত গ্রাম, পাড়া কিংবা মহল্লা ভিত্তিক হয়। যাকে বলে ভোটার এলাকা। আপনার ভোটার এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ অথবা নির্বাচন অফিসের স্মরণাপন্ন হোন। তারা আপনাকে ভোটার তালিকাটি দিতে পারবেন। ভোটার তালিকা থেকে আপনার নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম ও জন্ম তারিখ মিলিয়ে ১২ সংখ্যার ভোটার নম্বরটি খুঁজে বের করুন।

জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সংগ্রহ 

ভোটার নম্বর সংগ্রহ হলে এবার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সংগ্রহের পালা। সেটি করতে প্রবেশ করুন  Bangladesh NID Application System | ভোটার তথ্য (nidw.gov.bd) এই সাইটটিতে। কিন্তু এখান থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর বের করতে চাইলে আপনার আরেকজনের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি হতে হবে এমন একজন ব্যক্তি যিনি আপনার সাথেই ভোটার নিবন্ধন করেছেন।nidw.gov.bdএক্ষেত্রে ভোটার তালিকা থেকে আপনার ভোটার নম্বরের সাথে সাথে উনার ভোটার নম্বরটিও সংগ্রহ করে নিন। অতঃপর উপরের লিংকটি থেকে তার ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নম্বর ও সঠিক জন্ম তারিখের সাহায্যে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, ভোটার তথ্য ও ভোটার এলাকার তথ্য বের করে নিন। এবার ভোটার তালিকায় আপনার ভোটার নম্বর এবং তার ভোটার নম্বরের পার্থক্য দেখুন। ধরা যাক আপনার ভোটার নম্বর উনার ভোটার নম্বর থেকে ১০ সংখ্যা বেশি। তাহলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর উনার নম্বর থেকে ১০ সংখ্যা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটিই আপনার অনুমানকৃত NID নম্বর।

এবার যেহেতু আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অনুমান করতে পারছেন, আবারো চলে যান ভোটার তথ্য দেখার পেজটিতে। সেখানে আপনার অনুমানকৃত NID নম্বরটি ও আপনার নিবন্ধনে ব্যবহৃত জন্ম তারিখটি প্রবেশ করিয়ে ‘ভোটার তথ্য দেখুন’ বাটনে চাপ দিন। আপনার অনুমান ঠিক হলে আপনার নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও অন্যান্য ভোটার তথ্য সফল ভাবে দেখাবে। কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়া সফল না হয় তাহলে একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্য্য ধরে প্রথমে অনুমানকৃত নম্বরের সাথে ২ অথবা ৫ নম্বর কমিয়ে এবং বাড়িয়ে চেষ্টা করুন। অর্থাৎ আগের নম্বরটির থেকে ৫ কম একটি নম্বর প্রবেশ করান। তা না মিললে ৪ কম নম্বরটি প্রবেশ করান। এভাবে ১-৫ নম্বর বাড়িয়েও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। প্রতিবার জন্ম তারিখ একই দেবেন। নম্বর ও জন্মতারিখ মিলে গেলে সাইটে তথ্য দেখাবে। আর ওই তথ্যগুলো আপনার হলে বুঝতে পারবেন সেটিই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর।

এই প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ হলেও এর মাধ্যমে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরটি পাওয়ার কথা। এছাড়াও চাইলে সরাসরি নির্বাচন অফিসে যেয়ে আপনার ভোটার নম্বরটি দিয়ে তাদের অনুরোধ করতে পারেন। আশা করা যায় তারা আপনার অনুরোধ রক্ষা করবেন এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরটি বের করে দেবেন।

পূর্ববর্তী ভোটার না হলে

পূর্ববর্তী ভোটার না হলে ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নম্বর ছাড়া জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সংগ্রহ আরো কষ্টসাধ্য। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ সমাজের অনেক বড় একটি অংশ ১৮ বছর হলেও ভোট দেন না। তাই এমন সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এই সমস্যা সমাধানের দুটি স্থান রয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস

এই সমস্যা সমাধানে আপনি সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন। তাদেরকে আপনার ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপটি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অবহিত করুন। সাথে আপনার নামের বানান, পিতার নামের বানান, মাতার নামের বানান ও জন্ম তারিখ অবশ্যই দেবেন। খেয়াল রাখবেন যাতে এ সকল বানান ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আপনার পূরণকৃত বানানের সাথে হুবুহু মেলে। বানান সম্পূর্ণ না মিললে আপনার তথ্য খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে বানান মিললেও এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ। তাই উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্মচারীদের ভাল ভাবে অনুরোধ অথবা উৎসাহিত করুন। আশা করা যায় তারা আপনার তথ্য খুঁজে দিতে পারবেন। 

নির্বাচন কমিশন অফিস

উপজেলা নির্বাচন অফিসে বিফল হলে সর্বশেষে নির্বাচন কমিশন (NID Wing) এর নম্বরে ফোন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন অফিস (NID Wing) এর কল সেন্টার নম্বরঃ ১০৫।

প্রয়োজনে সরাসরি চলে যেতে পারেন আগারগাও এ অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান অফিস, নির্বাচন ভবনে। ওই ভবনের ৮ ও ৯ তলায় অবস্থিত NID Wing। সেখানে গিয়ে আপনার সমস্যার কথা বললে তারা সার্ভারে আপনার তথ্য খুঁজে দেখবে। এজন্য তারা আপনার হাতের আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ নেবে। বায়োমেট্রিক ম্যাচ হলে আপনার তথ্য সার্ভারে রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বরটি সরবরাহ করবে। ওই নম্বরের সাহায্যে বাকি তথ্য উপজেলা নির্বাচন অফিস কিংবা অনলাইন থেকেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন

কিন্তু যদি বায়োমেট্রিক ম্যাচ না হয়, তার মানে সার্ভারে আপনার তথ্য নেই। এমতাবস্থায় তারা আপনাকে একটি স্লিপ দেবে। স্লিপটিতে নির্বাচন কমিশনের সই এবং সিল থাকবে। ওই স্লিপটিতে লেখা থাকবে যে আপনার কোনো বায়োমেট্রিক তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে নেই। এই স্লিপটি দেখিয়ে আপনি আপনার এলাকার নির্বাচন অফিস থেকে আবার নতুন করে ভোটার হতে পারবেন। তবে এই স্লিপটি অত্যন্ত সাবধানতার সাথে সংরক্ষণ করবেন। যদি ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপের মতো এটিও হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তা আবার যোগাড় করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

শেষকথা

পরিশেষে এইটুকুই বলা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া আপনি নাগরিক জীবনে কোনোভাবেই চলতে পারবেন না। অনেকেই ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ হারিয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেন না। জাতীয় পরিচয় পত্রও সংগ্রহ করেন না। কিন্তু কোনো জরুরী কাজে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন পড়লে তখন শুরু হয় ঝক্কি। তাই কোনো জরুরী প্রয়োজনের জন্য অপেক্ষা না করে হাতে সময় নিয়েই জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সংগ্রহ করতে উদ্যোগী হোন। কারণ এই প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ ও জটিল। জরুরী মূহুর্তে এই অবস্থা আরো জটিলতর হতে পারে। তাই অবহেলা না করে সময় থাকতেই পদক্ষেপ নিন। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারি। 

উত্তরঃ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাগজ সুরক্ষিত স্থানে রেখে ভুলে যান কোথায় রেখেছেন। কিন্তু বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। তাই ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ কোথায় রেখেছেন তা গুগল একাউন্টের নোটপ্যাডে লিখে রাখুন। এছাড়াও ভাল ভাবে ছবি তুলে পিডিএফ করে রাখুন। তাহলে স্লিপটি ভুলবশত হারিয়ে গেলেও স্লিপ নম্বর সরবরাহ করতে পারবেন। 

২) আগের জাতীয় পরিচয় পত্র না তুলে কি নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবো?

উত্তরঃ অবশ্যই না। আপনি ইতোমধ্যে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে গেছেন। নতুন আবেদন করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হবে। শুধুমাত্র আপনার তথ্য যদি নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে না পাওয়া যায় এবং তারা যদি স্লিপে অনুমতি দেয় তাহলেই নতুন করে নিবন্ধন করতে পারবেন

৩) পূর্বে ভোট দিয়েছি কিন্তু ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই, এমন অবস্থায় কি করবো?

উত্তরঃ নির্বাচন অফিসে হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকা আসার জন্য অপেক্ষা করুন। তাতেও না পেলে অন্য প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করুন।

৪) নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ দেয় নি, এখন কি করবো?

উত্তরঃ এমনটি হওয়ার কথা নয়। যদি হয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন।

৫) ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ ছিড়ে গেলে কি করবো?

উত্তরঃ ছেড়া স্লিপটিই সংরক্ষণ করুন। নিবন্ধন স্লিপের নম্বরটি থাকলেই কাজ উদ্ধার হবে। তবে চাইলে নির্বাচন অফিসে গিয়ে আগের স্লিপটি জমা নিয়ে নতুন একটি স্লিপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button