বাংলাদেশঃ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রতিটি নাগরিকের জীবনেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো শিশু জন্মানোর স্বীকৃতি হিসেবে তার জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন আছে। ঠিক একই ভাবে কোনো ব্যাক্তির মৃত্যু হলে তার যে মৃত্যু হয়েছে তা প্রমাণের জন্যও মৃত্যু নিবন্ধনের প্রয়োজন আছে। কারণ আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য এ সকল কিছুরই হিসাব রাখা হয়। আর বাংলাদেশ সরকার এ দেশের নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যুর হিসাব সংরক্ষণ ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রবর্তন করেছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল শিশুর জন্ম ও সকল ব্যক্তির মৃত্যু এই আইনের অধীনে নিবন্ধিত তথা লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। তাই আপনার যদি জন্ম সনদ অথবা মৃত্যু সনদের দরকার হয়ে থাকে তাহলে এই আইন সম্পর্কে জেনে নেওয়াটাও জরুরী।
সূচিপত্রঃ
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন কী?
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যুর হিসাব সংরক্ষণ করার জন্য প্রণিত আইনই হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন। অনেকে একে ‘জন্ম নিবন্ধন আইন’ অথবা ‘মৃত্যু নিবন্ধন আইন’ বলেও অবহিত করেন। এদের দ্বারা মূলত বোঝায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪’ কে। এটি ২০০৪ সনের ২৯ নং আইন হিসেবেও পরিচিত। এই আইনটি রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করার পর প্রথম জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০০৪ সালের ৭ই ডিসেম্ব। ২০০৪ সালের এই আইনের মোট ৪টি অধ্যায় ছিল। এই আইনটি ২০১৩ সালে সংশোধিতও হয়। এই আইনটি পরবর্তীতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল আইন / বিধিমালার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০১৮
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০১৮ মূলত ২০০৪ সালের আইনেরই কিছু নতুন বিধিমালা। বাস্তবে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০১৮’ বলতে আলাদা কোনো আইন নেই। কিন্তু জনমনে একটি স্বাভাবিক ধারনা আছে যে এটি একটি নতুন আইন। মূলত ২০০৪ সালের আইনের ২৩ নং ধারার ক্ষমতাবলে সরকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত কিছু বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। সেগুলোই মূলত ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০১৮’ নামে পরিচিত। কিন্তু বাস্তবে আইনটির নাম ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪। ২০১৮ সালেরটি ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৮’ হিসেবে গৃহীত।
২০১৮ সালের বিধিমালাগুলো এই আইনের সর্বশেষ বিধিমালা। এতে রয়েছে মোট ৭টি অধ্যায়। এছাড়াও ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগ এমন একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে যা ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নির্দেশিকা ২০২১’ হিসেবে পরিচিত।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের পরিভাষা
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিটি গেজেটেরই কিছু পরিভাষা রয়েছে। এই পরিভাষাগুলো গেজেটে ‘সংজ্ঞা’ হিসেবে উল্লেখিত থাকে। এর মাধ্যমে মূলত ওই নির্দিষ্ট গেজেটের ক্ষেত্রে কোন শব্দ দ্বারা কি বোঝাচ্ছে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা থাকে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের গেজেটটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী কিছু প্রয়োজনীয় শব্দের ব্যখ্যা পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে এখানে যুক্ত করা হলো।
ইপিআই কার্ড
ইপিআই কার্ডকে অনেকে টিকা কার্ড হিসেবেও চেনেন। কারণ এই কার্ডটি মূলত সম্প্রসারিত টিকা কর্মসূচির আওতায় টিকা দেওয়ার সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
উপযুক্ত চিকিৎসক
জন্ম ও মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে উপযুক্ত চিকিৎসক এর কাছ থেকে সনদপত্র যোগাড় করতে হয়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসক বলতে মূলত বোঝায় বাংলাদেশ মেডিকাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত নূন্যতম এমবিবিএস (MBBS) অথবা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী কোনো চিকিৎসক।
বর্তমান ঠিকানা
স্থায়ী ঠিকানা নয় এমন কোনো স্থানে যদি কোনো ব্যক্তি যদি ৬ মাসের বেশি সময় যাবত বসবাস করে তবে তা তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে গণ্য হবে। আবার মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে যদি মৃত ব্যক্তি ওই স্থানেই বসবাসের উদ্দেশ্যে অবস্থান করেন কিন্তু জীবদ্দশায় বসবাসকাল ৬ মাস না হয় তবুও ওই ঠিকানাকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে গণ্য করা যাবে।
স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান
এটি দ্বারা মূলত কোনো ব্যাক্তির স্থায়ী ঠিকানাকেই বোঝায়। কোনো ঠিকানা ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গণ্য হতে হলে ঐ ব্যক্তিকে নূন্যতম ৩ বছর সেখানে বসবাস করতে হয় অথবা ওই ঠিকানার ওপর দাবি রাখতে হয়। নদী ভাঙন বা এমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে জন্ম ও মৃত্যু সনদ করার সময় প্রয়োজন হলে নতুন বাড়ি অথবা জমির ঠিকানা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ বছরের সময়সীমা প্রযোজ্য নয়। ব্যক্তির কোনো স্থায়ী ঠিকানা না থাকলে সেই স্থানে অপ্রাপ্য লিখতে হবে।
বার্থ এটেন্ডেন্ট
শিশু জন্মের সময়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকে বার্থ এটেন্ডেন্ট বলে। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে কর্তব্যরত নার্সও বার্থ এটেন্ডেন্ট হিসেবে গণ্য হতে পারেন।
সনদ প্রস্তুতকারী
সনদ প্রস্তুতকারী মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। ইনি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের সনদ প্রস্তুত করে দেন।
জন্ম নিবন্ধন নম্বর
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের সবচেয়ে বহুল প্রচলিত অংশ হলো জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিক একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ পায়। প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদেরই একটি নম্বর থাকে যা ঐ নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন নম্বর হিসেবে পরিচিত। জন্ম নিবন্ধন আইন অনুসারে এই জন্ম নিবন্ধন নম্বর তৈরি করা হয়ে থাকে এবং প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আপনি অনলাইনেই যাচাই করতে পারবেন।
- জন্ম সনদের প্রথম ০৪ অংক জন্ম সাল (খ্রিষ্টাব্দ) অনুসারে দেওয়া হয়।
- পরের ০২ অংক জেলা কোড। এই জেলা কোড বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক নির্ধারিত। তবে বাংলাদেশের বাহিরের দূতাবাসের ক্ষেত্রে এই কোড ০০।
- পরবর্তী ০১ অংক হলো RMO কোড। এটিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক নির্ধারিত। যেমনঃ ইউনিয়ন পরিষদ – ১, পৌরসভা – ২, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড – ৫, সিটি কর্পোরেশন – ৯, দূতাবাস – ০।
- পরের ০২ অংক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক নির্ধারিত, ইউনিয়ন পরিষদের জন্য উপজেলা কোড, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের জন্য যথাক্রমে পৌরসভা কোড, সিটি কর্পোরেশন কোড ও ক্যান্টনমেন্ট কোড। কিন্তু দূতাবাসের ক্ষেত্রে এটি জাতিসংঘ নির্ধারিত যেই দেশে দূতাবাস অবস্থিত সেই দেশের ০৩ অংকের কোড।
- পরের ০২ অংক যথাক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন কোড। পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কোড। এ সকল কোডই যথারীতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক নির্ধারিত। দূতাবাস সমূহের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা অনুসারে সংশ্লিষ্ট কনসুলেটসমূহের ১ অংকের কোড।
- শেষের ৬ অংক ব্যক্তির ক্রমিক নম্বরের জন্য বরাদ্দ। এক্ষেত্রে ৯৯৯৯৯৯ সংখ্যা পূরণ করবার পর আবার ০০০০০১ হতে শুরু হবে।
মূলত এই সকল নিয়ম মেনেই জন্ম নিবন্ধন নম্বর একজন নাগরিককে বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। আর এই সকল নিয়মই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের অর্ন্তুভুক্ত। এই সকল নিয়ম জানার সাহায্যে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বরের কোন অংশটির মানে কি।
এতিম বা প্রতিবন্ধীদের জন্ম নিবন্ধন
বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তিদের অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, পিতা ও মাতার নাম, পিতা ও মাতার কততম সন্তান (দত্তক সহ), পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর (যদি থাকে), পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর (যদি থাকে), বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যাবলী দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। তবে অনেক সময়ই অনেক ব্যক্তির সকল তথ্যাবলী থাকে না। এক্ষেত্রে যা করণীয়ঃ
- কোনো ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী, পিতৃ বা মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথবাসী বা ঠিকানাবিহীন হলে অথবা সে যৌন কর্মী হলেও তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
- এক্ষেত্রে তথ্যের অভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিবন্ধক কোনো ক্রমেই তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না।
- প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি থাকলে তার স্থলে ‘অপ্রাপ্র্য’ লিখে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
প্রবাসীগণের জন্ম নিবন্ধন
প্রবাসীগণের জন্ম নিবন্ধন স্বাভাবিক জন্ম নিবন্ধনের মতই অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে যা যা বিষয় প্রয়োজনীয়।
- জন্মস্থান ও জন্ম তারিখের প্রমাণস্বরুপ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র। অথবা বার্থ এটেন্ডেন্ট এর প্রত্যয়ন কিংবা তার পাসপোর্টের প্রথম দুই পাতার ফটোকপি।
- পিতা-মাতার পাসপোর্টের প্রথম ৭ পাতার ফটোকপি।
- দেশে পিতা-মাতার ঠিকানাই ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গৃহীত হবে।
- কোনো যৌক্তিক কারণে ব্যক্তি পাসপোর্ট দেখাতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধক চাইলে তার স্থায়ী ঠিকানা অথবা বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ স্বরুপ যেকোনো কাগজ চাইতে পারে।
মৃত্যু নিবন্ধনের সাধারণ নিয়ম
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের জন্ম নিবন্ধন নিয়েই অধিকাংশ লেখালেখি হয়ে থাকে। কিন্তু আর্টিকেলের এই অংশে থাকছে মৃত্যু নিবন্ধন নিয়েও বিস্তারিত। মৃত্যু নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে সাধারণ যেসব নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
- মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন যেই কার্যালয়ে সেই কার্যালয়ই আবেদন পাওয়া সাপেক্ষে মৃত্যু সনদ ইস্যু করবে।
- তবে চাইলে মৃত ব্যক্তির আইনানুগ উত্তরাধিকার অন্য কার্যালয় থেকে মৃত্যু সনদ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আগেই অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করে মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে যেই স্থায়ী ঠিকানায় বসবাস করতো সেই এলাকার সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে মৃত্যু সনদ নিতে পারবে।
- মৃত্যু সনদের আবেদনের সময় মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর (যদি থাকে), মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান, মৃত্যুর কারণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে হবে।
মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজাবলী
জন্ম নিবন্ধনের জন্য যেমন নানা ধরনের প্রত্যয়ন পত্র বা সনদ দেখাতে হয়, মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি নানা কাগজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেগুলো হলোঃ
- সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মৃত্যু সংক্রান্ত সনদপত্র।
- সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীর প্রত্যয়ন পত্র।
- মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্তের সত্যায়িত অনুলিপি অথবা
- সমাধিস্থলের কেয়ারটেকারের দাফন বা সৎকার সংক্রান্ত রসিদের অনুলিপি।
- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিউভ অফিসারের কাছ থেকে মৃত্যু সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র।
- জানাজা বা সৎকার সম্পন্নকারী ইমাম বা সৎকারকারীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র।
- উপরের কাগজগুলো দাখিল করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক প্রয়োজনীয় যেকোনো কাগজ দাবি করতে পারেন।
- মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর নিবন্ধন সনদ যেই ব্যক্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তার জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র।
- মৃত্যু যেখানে হয়েছে সেই স্থানে মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদন করা না হলে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের স্থানেই তার মৃত্যু নিবন্ধন ইস্যু করা হবে।
জন্ম ও মৃত্যু সনদের ব্যাপারে কারা তথ্য দিতে পারবে?
জন্ম ও মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে নিবন্ধকের কাছে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু যে কেউ এই তথ্য সরবরাহ করতে পারেন না। সকলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গ্রহণযোগ্যও হবে না। গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে, নিম্নে উল্লেখিত ব্যক্তিরাই জন্ম ও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের কাছে জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য দাখিল করতে পারেন।
- জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পিতা, মাতা উপস্থিত না থাকলে তার ভাই, বোন, পিতামহ, পিতামহী, মাতামহ, মাতামহী এবং মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পিতা, মাতা, ভাই, বোন, পুত্রবধু, জামাতা, পৌত্র, পৌত্রী, দৌহিত্র, দৌহিত্রী।
- কোন প্রতিষ্ঠানে জন্ম বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
- কোন দালান বা বাড়িতে জন্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত দালান বা বাড়ির মালিক।
- কোন সড়কযান, নৌযান, আকাশযানে জন্ম বা মৃত্যু হলে ঐ যান পরিচালনাকারী ব্যক্তিবর্গ।
- রাস্তা বা উন্মুক্ত স্থানে জম্ম মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঐ রাস্তা বা ঐ উন্মুক্ত স্থান যেই থানার অর্ন্তভুক্ত সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
শেষকথা
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এর প্রতি কোন ব্যক্তিরই অবহেলা করা ঠিক নয়। জন্ম সনদ তৈরি না করলে যে সকল নিদারুণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা মোকাবেলা না করাই শ্রেয়। এই সকল সমস্যা এড়াতে এবং একটি ঝামেলামুক্ত নাগরিক জীবন কাটাতে প্রত্যেক নাগরিকেরই উচিত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সঠিক ভাবে করা। আর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সঠিক ভাবে করতে হলে এর আইন সম্পর্কেও সঠিক ভাবে জানাটা বাঞ্ছনীয়।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১। বাচ্চা জন্মের সাথে সাথে মারা গেলে তার কি জন্ম নিবন্ধন অথবা মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে?
উত্তরঃ আইন অনুসারে, বাচ্চার প্রথমে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে এরপরে মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে।
২। কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন না থাকলে তা মৃত্যু নিবন্ধন করানো যাবে?
উত্তরঃ কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন না করা হয়ে থাকে তবে প্রথমে তার জন্ম নিবন্ধন করে এরপরে তার মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে।
৩। জন্ম নিবন্ধন সনদ ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ পেতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার পর আইন অনুসারে নূন্যতম ৭ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু বাস্তবে আরো অনেক বেশি লাগে।
৪। মৃত্যু নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন যেমন বাধ্যতামূলক ঠিক তেমনই প্রতিটি নাগরিকের মৃত্যু নিবন্ধনও বাধ্যতামূলক।