জমিজমা

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার উপায়

জমি আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষার্থে জমির মালিকানা, ডাক ও খতিয়ান নাম্বার সহ সমস্ত তথ্য সমূহ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে জানতে এবং যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে ভূমি মন্ত্রণালয় এর আধুনিকায়ননে খুব সহজেই তা সম্ভব হয়েছে।  প্রতিনিয়ত এই জমি নিয়ে চলছে নানা ধরণের বিরোধ। কোর্টে চলাকালীন বেশির ভাগ মামলাই জমি সংক্রান্ত। জমি নিয়ে এতো সমস্যার পিছনে রয়েছে প্রকৃত মালিকানা যাচাই নিয়ে। আবার অন্যদিকে কেউ একজন জমি ক্রয় করবেন। এতে প্রয়োজন হয় জমির মালিকানা যাচাই করা। 

আজকের আর্টিকেলে আমরা অনলাইনে জমিএ মালিকানা যাচাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম

জমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করার করতে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে যেতে হবে। সেই পদ্ধতি যথাক্রমে আলোচনা করা হলো,

প্রথম ধাপ: ওয়েবসাইট প্রবেশ করুন

ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন একটি ডিভাইসে eporcha ওয়েবসাইটে গিয়ে সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান বক্সে গিয়ে তথ্য দেওয়া শুরু করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী। 

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ১

দ্বিতীয় ধাপ: তথ্য প্রদান করা ও অনুসন্ধান করুন 

  • বিভাগ নির্বাচন: আপনি যে বিভাগের বাসিন্দা হলে সেই বিভাগ অথবা জমি যে বিভাগে আছে সেই বিভাগের উল্লেখ করতে হবে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২

  • জেলা নির্বাচন: এই পর্যায়ে জমি যে-ই জেলায় অবস্থিত, সে-ই জেলার নাম উল্লেখ করতে হবে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২.১

  • উপজেলা নির্বাচন: জেলার অধীনে উপজেলার নাম গুলো সহজে চলে আসবে। এক্ষেত্রে জমি যে-ই উপজেলায় অবস্থিত, সে-ই উপজেলা নির্বাচন করতে হবে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২.২

  • খতিয়ানের ধরন নির্বাচন: খতিয়ানের ধরন নির্বাচন করার পূর্বে খতিয়ান সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। সংক্ষেপে বলা যায়, কোনো মৌজার জমির মালিকের বিস্তারিত তথ্য সহ যেই নথি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষনে থাকে, তাকেই খতিয়ান বলা হয়। আর জমির দাগ নাম্বারের ক্রমানুসারে খতিয়ান নাম্বার ও সেই সূচিতে নির্ধারণ করা হয়। জমির খতিয়ান নাম্বারের একাধিক প্রকারভেদ বিদ্যমান। আপনি আমাদের ওয়েরবসাইটে জমির খতিয়ান নাম্বার দিয়ে যে আর্টিকেল আছে, সেখানে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২.৩

  • মৌজা নির্বাচন: জমি যে-ই মৌজার অন্তর্ভুক্ত, সেই মৌজা নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে খতিয়ানের ধরন নির্বাচনের সাথেই, তার অন্তর্ভুক্ত মৌজা’র নাম চলে আসে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২.৪

  • খতিয়ান নাম্বার: জমির খতিয়ান নাম্বার বসাতে হবে এই পর্যায়ে। জমির দাগ থেকে খতিয়ান নাম্বার বের করা বা জমির খতিয়ান নাম্বার সরাসরি না জানলে সেক্ষেত্রে মালিকানার নাম জানা জরুরি। আর যেহেতু আমরা মালিকানা যাচাই করছি, সেহেতু আমরা খতিয়ান নাম্বার সম্বন্ধে অবগত বলে মনে করা যায়। যদি না জানা থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট মৌজা বা এলাকার সম্পুর্ণ নাম্বার থেকে ক্রমানুসারে দেখে খুঁজে বের করতে হবে। অতঃপর, খুঁজে পেলে সরাসরি দুইটি ক্লিক করতে হবে খতিয়ানের ওপর।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ২.৫

তৃতীয় ধাপ: জমির মালিকানা ও বিস্তারিত ফলাফল পাওয়া

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ৩

এই ধাপে জমির সকল দাগ নম্বর সহ জমির মালিকের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। আবার পাশে খতিয়ান আবেদন করার ও অপশন আছে, যার সাহায্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত উপায়ে আবেদন করে খতিয়ান ও মালিকানার বিস্তারিত তথ্য নিজের কাছে ডকুমেন্টস আকারে রাখতে পারে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম, ধাপঃ ৩.২

জমির মালিকানা যাচাইয়ের গুরুত্ব 

অর্থের বিনিয়োগ করে জমি ক্রয় কিংবা সম্পত্তির সম্বন্ধে ধারণা পাওয়ার জন্য, জমির বিস্তারিত সকল তথ্য জানা জমির ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। সেক্ষেত্রে পূর্বের তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে,  যে জমিটা ক্রয় করতে যাচ্ছি, সেটার প্রকৃত মালিক কে এবং  ক্রয় করার পর সরকারি খাতায় আপনার নামে জমি অন্তর্ভূক্ত হইছে কি-না, তা অবশ্যই দেখে রাখতে হবে। আমাদের দেশে এমন ঘটনাও ঘটে থাকে যে, অনেকে ভূয়া মালিক সেজে অন্যের জমি বিক্রি করে দেয়। এই রকম অসাধু বিক্রেতার খপ্পর থেকে বাঁচতে এবং ক্রয়কৃত জমির সরকারি খাতায় অন্তর্ভুক্তকরণ দেখতে প্রয়োজন হয় জমির মালিকানা যাচাইয়ের।

অন্যদিকে, উত্তরাধীকারিদের মধ্যে জমি ভাগ করতে, সর্বপ্রথমে জানা প্রয়োজন হয় যে, মৃত ব্যক্তির জমির পরিমাণ কতটুকু, কোথায় সহ বিবিধ তথ্য। প্রকৃত জমির পরিমাণ জানতে না পারলে পরবর্তীতে নানা ধরনের  সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া মামলা মোকদ্দমা বা অন্যান্য  বিরোধ নিষ্পত্তিতে জমির প্রকৃত মালিক খুঁজে পেতে মালিকানা যাচাই করে নিতে হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে জমি সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে অথবা মুক্তি পেতে জমির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হয়।

শেষকথা

ভুমি মন্ত্রণালয় এর দারুণ উদ্যোগে জমির মালিকানা, দাগ ও খতিয়ান নাম্বার সহ বিস্তারিত সকল তথ্য পেতে Eporcha ওয়েবসাইটের যে সুবিধা প্রদান করছে, তা বাংলাদেশে আগের নিয়মে জমি-জমা’র তথ্য জানার মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া কে অত্যন্ত সহজ, সাবলীল প্রক্রিয়া কে একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের যেই পরিকল্পনা আছে, তা দেশের সকল কঠিন প্রক্রিয়া কে আরও সহজে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে মানুষের জীবন যাত্রা কে উন্নততর করার এই প্রক্রিয়া আরও বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১. সিএস খতিয়ান কী?

উত্তর: ১৯২০ সালে মৌজার ম্যাপ ও জমির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাকেই সিএস খতিয়ান বলে।

২. অনলাইনে কী জমির মালিকানা যাচাই করার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? 

উত্তর: অনলাইনে সকল তথ্য সঠিক প্রদান করা হলে কোনো প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ প্রদান কৃত তথ্য সঠিক হলে অনলাইনেও সঠিক তথ্যই দেখাবে।

৩. জমির খতিয়ান থেকে দাগ নাম্বার যাচাই কিভাবে করা যায়?

উত্তর: জমির খতিয়ান থেকে দাগ নাম্বার, মালিকানা থেকে খতিয়ান নাম্বার ও জমির খতিয়ান থেকে মালিকানা ইত্যাদি বের করার প্রক্রিয়া একই। শুধু তথ্যের ব্যাতিক্রম হওয়ায় আলাদা পদ্ধতি ভাবা হয়, কিন্তু আসলে মূল প্রক্রিয়া সাদৃশ্যপূর্ণ। শুধু প্রদান কৃত তথ্যের ওলট-পালট হতে পারে ব্যবহাকারীর নিকট থাকা তথ্য বিবেচনায়।

Back to top button