সরকারি চাকরির গ্রেড, বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
বর্তমানে চাকরির বাজারে সবচেয়ে মূল্যবান চাকরি হলো সরকারি চাকরি। প্রায় সকল শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির দিকেই ঝুঁকছে। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকারি চাকরি সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক। সে তালিকায় প্রথমেই পড়ে সরকারি চাকরির গ্রেডিং সিস্টেম ও বেতন কাঠামো। সে সম্পর্কেই আজকের এই লেখা।
সূচিপত্রঃ
সরকারি চাকরির গ্রেড কি?
‘গ্রেড’ এর শাব্দিক অর্থ হলো শ্রেণি বা ধাপ। সরকারি বেসরকারি প্রত্যেকটি চাকরির বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। যার সাহায্যে বোঝা যায় একজন চাকরিজীবী ঠিক কোন পর্যায়ে আছে। সরকারি চাকরিরও এমন ২০টি পর্যায় রয়েছে যাদের বলা হয়ে থাকে গ্রেড। মূলত একজন চাকরিজীবীর বেতন থেকে শুরু করে অবস্থান, ক্ষমতা, দায়িত্ব ও অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধাসমূহ এই গ্রেডের সাথেই সম্পর্কিত। তাই আপনি যদি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন বা সরকারি চাকরি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার এর গ্রেড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘বাংলাদেশ গেজেট’ এর একটি অতিরিক্ত সংখ্যা প্রকাশিত হয় যা ‘চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫’ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এই আদেশ অনুসারেই সকল সরকারি চাকরিজীবীর বেতন স্কেল তথা মূল বেতন, ভাতাদি ও গ্রেড নির্ধারিত হয়। এর পূর্বের জাতীয় বেতন স্কেলটি ছিল ২০০৯ সালের।
সরকারি চাকরির গ্রেড সমূহ
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী উক্ত বেতন স্কেলে মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। ২০১৫ এর পূর্বে সরকারি চাকরিজীবীরা মোট ৪টি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল যা ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু চাকরি আদেশ, ২০১৫ এর ৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী তার বেতন স্কেলের গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। অর্থাৎ বর্তমানে মোট ২০টি গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবী আছেন। উল্লেখ্য যে, যদিও শ্রেণি বিভাজন পদ্ধতির বদলে গ্রেড বিভাজন পদ্ধতি আনা হয়েছে তবুও ২০টি গ্রেড ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত। যা নিচে দেওয়া হলোঃ
শ্রেণি | গ্রেড |
১ম শ্রেণি | গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৯ |
২য় শ্রেণি | গ্রেড-১০ |
৩য় শ্রেণি | গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১৬ |
৪র্থ শ্রেণি | গ্রেড-১৭ থেকে গ্রেড-২০ |
ক্যাডার, নন-ক্যাডার ও গ্রেড বিভাজন
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ক্যাডার ও নন-ক্যাডার। মূলত সকল সরকারি চাকরিজীবিকে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার এই দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়। ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের প্রশাসনিক ক্ষমতায়। ক্যাডার চাকরিজীবীরা পদোন্নতি পেয়ে নীতি-নির্ধারণী পদে যেতে পারেন কিন্তু নন-ক্যাডারের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
ক্যাডার
ক্যাডার বলতে বোঝায় সেই সকল চাকরিজীবীদের যারা বিসিএস অর্থাৎ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। বিসিএস এ রয়েছে মোট ২৭টি ক্যাডার। এই ২৭টি ক্যাডার আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথাঃ-
১) সাধারণ ক্যাডার
২) কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
আগেই বলেছি গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৯ এর সকলেই ১ম শ্রেণির চাকরিজীবী। এর মধ্যে যারা ক্যাডার তাদের বলা হয় গেজেটেড কর্মকর্তা। এদের নিয়োগের সময় গেজেট বা প্রজ্ঞাপন বের হয়।
নন-ক্যাডার
সরকারি এমন অনেক চাকরিজীবী আছেন যারা বিসিএস পরীক্ষা দেন নি কিন্তু সরকারি চাকরিজীবী। মূলত বিসিএস বাদেও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অনেকে চাকরি পেয়ে থাকেন। ছোট-বড় সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিশেষ প্রতিষ্ঠান যেমন বিআইডব্লিউটিসি (BIWTC), বিআরটিএ (BRTA), সরকারি ব্যাংকসমূহ, সরকারি বন্দরসমূহ বা সরকারি প্রজেক্টে সরকারি চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের সকল সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাও সরকারি চাকরিজীবী।
সরকারি চাকরির গ্রেড বিভাজন
সকল সরকারি চাকরিজীবীর অবস্থান, মান-মর্যাদা, বেতন, ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারিত হয় তার গ্রেড অনুসারে। ২০টি গ্রেডের মধ্যে সর্বোচ্চ গ্রেড হলো গ্রেড-১। যা সরকারের পূর্ণ সচিবদের জন্য নির্ধারিত। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপকেরা গ্রেড-১ এর চাকরিজীবী। গ্রেড-২ এ আছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। গ্রেড-৩, ৪ এ আছেন সরকারের যুগ্ন সচিব, সরকারি কলেজের অধ্যাপক। গ্রেড-৫ এ আছে বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, এমপিওভুক্ত কলেজের উপাধ্যক্ষ। গ্রেড-৬ এ আছে উপ-পরিচালক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, হজ অফিসার প্রমুখ। গ্রেড-৭ এ আছে সহকারি পরিচালক, জুনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জন, ফিজিশিয়ান প্রমুখ। গ্রেড-৯ এ আছে মেডিকেল অফিসার, বিভিন্ন বিভাগের সহকারী পরিচালক, সহকারী প্রোগ্রামার, পুলিশের এএসপি। গ্রেড-১০ এ আছে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর। এভাবে প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীই কোনো না কোনো গ্রেডের অর্ন্তভুক্ত।
সরকারি চাকরির বেতন কাঠামো
সকল চাকরিপ্রার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো চাকরির বেতন। অবস্থান, সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতার চেয়েও অনেকের কাছে চাকরির বেতন বেশি প্রাধান্য পায়। সরকারি চাকরিতে ক্ষমতার পাশাপাশি বেতনও বেশ ভালো। কারণ সকল সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের পাশাপাশি নানা রকম ভাতা হিসেবে মোটামুটি ভালো অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। নিচে উল্লিখিত প্রত্যেকটি গ্রেডের মূল বেতন উল্লেখ করা হলো।
গ্রেড | বেতনের পরিমান |
গ্রেড-১ | ৭৮০০০ (নির্ধারিত) |
গ্রেড-২ | ৬৬০০০ – ৭৬৪৯০ টাকা |
গ্রেড-৩ | ৫৬৫০০ – ৭৪৪০০ টাকা |
গ্রেড-৪ | ৫০০০০ – ৭১২০০ টাকা |
গ্রেড-৫ | ৪৩০০০ – ৬৯৮৫০ টাকা |
গ্রেড-৬ | ৩৫৫০০ – ৬৭০১০ টাকা |
গ্রেড-৭ | ২৯০০০ – ৬৩৪১০ টাকা |
গ্রেড-৮ | ২৩০০০ – ৫৫৪৭০ টাকা |
গ্রেড-৯ | ২২০০০ – ৫৩০৬০ টাকা |
গ্রেড-১০ | ১৬০০০ – ৩৮৬৪০ টাকা |
গ্রেড-১১ | ১২৫০০ – ৩০২৩০ টাকা |
গ্রেড-১২ | ১১৩০০ – ২৭৩০০ টাকা |
গ্রেড-১৩ | ১১০০০ – ২৬৫৯০ টাকা |
গ্রেড-১৪ | ১০২০০ – ২৪৬৮০ টাকা |
গ্রেড-১৫ | ৯৭০০ – ২৩৪৯০ টাকা |
গ্রেড-১৬ | ৯৩০০ – ২২৪৯০ টাকা |
গ্রেড-১৭ | ৯০০০ – ২১৮০০ টাকা |
গ্রেড-১৮ | ৮৮০০ – ২১৩১০ টাকা |
গ্রেড-১৯ | ৮৫০০ – ২০৫৭০ টাকা |
গ্রেড-২০ | ৮২৫০ – ২০১০০ টাকা |
সরকারি চাকরির অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি
ভাতা সুবিধা
বেতনের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির সব থেকে ভালো একটি দিক হলো এই ভাতা সুবিধা। প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী বিপুল অংকের ভাতা পাওয়ার কারণে তাদের মোট বেতনের অংকটা অনেক বেশি হয়ে যায়। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিত কিন্তু সরকারি বেতনভুক্ত চাকরিজীবীরা (যেমনঃ এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণ) এই সুবিধা পান না। যেমন একজন উপাধ্যক্ষ গ্রেড-৫ অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু তিনি গ্রেড-৫ এর মূল বেতন ৪৩০০০ টাকার বাইরে অন্যান্য সরকারি ভাতা পান না। ফলে একজন গ্রেড-৫ এর সরকারি চাকরিজীবী থেকে তার মোট বেতন অনেক কম। এবার চলুন জানা যাক সরকারি নানা ভাতা সম্পর্কে।
বাড়ি ভাড়া ভাতা
বাড়ি ভাড়া ভাতা একজন সরকারি চাকরিজীবীর মোট ভাতার সিংহভাগ। এই ভাতা চাকরির স্থানভেদে মোট তিন রকমের হয়ে থাকে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য
মূল বেতন ৯৭০০ টাকা বা তার কম হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৬৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৫৬০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৬৩০৫ টাকা।
মূল বেতন ৯৭০১ টাকা থেকে ১৬০০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৬০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৬৪০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৯৬০০ টাকা।
মূল বেতন ১৬০০১ টাকা থেকে ৩৫৫০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৯৬০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৯৫২৫ টাকা।
মূল বেতন ৩৫৫০০ এর বেশি হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ১৯৫০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩৯০০০ টাকা।
অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৩৯০০০ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫৬০০ টাকা।
চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য
মূল বেতন ৯৭০০ টাকা বা তার কম হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৫০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫৩৩৫ টাকা।
মূল বেতন ৯৭০১ টাকা থেকে ১৬০০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৫৪০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮০০০ টাকা।
মূল বেতন ১৬০০১ টাকা থেকে ৩৫৫০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৮০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৫৯৭৫ টাকা।
মূল বেতন ৩৫৫০০ এর বেশি হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ১৬০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩১২০০ টাকা।
অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৩১২০০ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকা।
অন্যান্য স্থানের জন্য
মূল বেতন ৯৭০০ টাকা বা তার কম হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৪৫০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪৮৫০ টাকা।
মূল বেতন ৯৭০১ টাকা থেকে ১৬০০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৪৮০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৭২০০ টাকা।
মূল বেতন ১৬০০১ টাকা থেকে ৩৫৫০০ টাকা হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪০% হারে পাবে। যা নূন্যতম ৭০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৪২০০ টাকা।
মূল বেতন ৩৫৫০০ এর বেশি হলে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৩৫% হারে পাবে। যা নূন্যতম ১৩৮০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৭৩০০ টাকা।
অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২৭৩০০ টাকা ও সর্বনিম্ন ৪৫০০ টাকা।
তবে কোনো সরকারি চাকরিজীবী যদি সরকারি বাসস্থানে থাকেন তাহলে তিনি বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন না। আবার একই সাথে যদি স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই সরকারি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে যার নামে সরকারি বাসস্থান বরাদ্দ তিনি বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন না। কিন্তু অন্যজন পাবেন। এছাড়াও যদি অফিস থেকে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে হোস্টেল, মেস, ডর্মিটরি, ডাক-বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় তবে তা সরকারি বাসস্থান হিসেবে গণ্য হবে না। ফলে ওই চাকরিজীবী সম্পূর্ণ বাড়ি ভাড়া ভাতাই পাবেন।
গাড়ি সুবিধা ও যাতায়াত ভাতা
সরকারি চাকরির আরেকটি বড় সুবিধা হলো গাড়ির সুবিধা।
গাড়ি সুবিধা মূলত তিন ধরনের হয়ঃ
১) সরকারি গাড়ি কর্তৃক যাতায়াত সুবিধা
২) গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা
৩) রেকুইজিশনের মাধ্যমে বিশেষ প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার
যাতায়াত সুবিধা
কর্মকর্তাগণ অফিসের কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। আবার অফিসের কাজ শেষ হলে প্রয়োজনে তা ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। এসব গাড়ি সরকারি চালকেরাই চালিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে গাড়ির চালকের বেতন, তেলের দাম, গাড়ির মেরামত ও যন্ত্রাংশের খরচ সবই সরকার বহন করবে।
সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা
সাধারণত একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর গাড়ি কেনার অর্থ সম্পূর্ণ নিজে জমিয়ে অথবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে গাড়ি কিনতে হয়। কিছু বেসরকারি কোম্পানি গাড়ির জন্য ঋণ দিলেও; তেমন কোম্পানির সংখ্যা হাতে গোণা। অপরদিকে সরকারের প্রত্যেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ নিতে পারেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলতে বোঝায় উপ সচিব (উপ সচিব পদে নূন্যতম ৩ বছর চাকরির পর) যুগ্ন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব। এছাড়াও এ সকল পদের সমমর্যাদার যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা সুদমুক্ত ঋণ সুবিধার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
গাড়ি কেনার জন্য এককালীন বিশাল অংকের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। এই ঋণ মূলত দেওয়া হয় একজন কর্মকর্তার পেনশন অথবা গ্র্যাচুইটির টাকা থেকে। সেই টাকা অগ্রিম কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয় এবং কর্মকর্তা মোট ১২০টি কিস্তিতে সেই টাকা আবার সরকারকে ফেরত দেয়। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে কোনো সুদ নেই। তবে মঞ্জুরী জারি হবার পর নূন্যতম ১ বছর চাকরি না করলে এই টাকা দেওয়া হয় না।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সেডান, এসইউভি, সিইউভি ইত্যাদি নানা ধরনের গাড়ি কেনা যেতে পারে। তবে গাড়ির ইঞ্জিন ১৬০০ সিসি এর কম বা ২০০০ সিসি এর বেশি হতে পারবে না। গাড়ি কেনার ৯০ দিনের মধ্যে গাড়ির সকল কাগজ ও বিমা করাতে হবে। চাইলে এ গাড়ী বিক্রি করে নতুন গাড়িও কেনা সম্ভব। তবে তার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে। গাড়ি কেনার পর কিস্তিতে গাড়ির দাম পরিশোধ করে ফেললে গাড়িটি পুরোপুরি ব্যক্তি মালিকানায় চলে আসবে। সুদমুক্ত ঋণ সুবিধার পাশাপাশি আরেকটি বিশাল সুবিধা হলো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা। প্রতি মাসে ড্রাইভারের বেতন, তেলের খরচ এবং গাড়ি মেরামতের জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তা ৪৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। প্রায়শই গাড়ির জন্য খরচ করার পরেও বেশ ভালো অংকের টাকা হাতে রয়ে যায়।
রেকুইজিশনের মাধ্যমে গাড়ি ব্যবহার
রেকুইজিশন অর্থ অনুরোধ। এক্ষেত্রে রেকুইজেশন বলতে বিশেষ দিনে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অনুরোধকে বোঝানো হচ্ছে। সরকারি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহার ও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্যই নির্ধারিত। কিন্তু এর বাইরেও প্রায় সকল কর্মকর্তাই চাইলে আগে থেকে অনুরোধ করে বিশেষ কোনো দিন বা কিছুদিনের জন্য সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এই সুবিধা সরকারি কাজ ও পারিবারিক কাজ দুই ক্ষেত্রেই নেওয়া সম্ভব।
যাতায়াত ভাতা
সরকারের ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিজীবীরা এই ভাতা পান না। এটি শুধু মাত্র ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির (গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০) কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। এ সকল কর্মচারীরা যাতায়াত ভাতা হিসেবে মাসিক ৩০০ টাকা পেয়ে থাকেন।
বাড়ি নির্মাণ ঋণ
প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ নিতে পারেন। এই ঋণ দিয়ে তারা দেশের যেকোনো অংশে নিজস্ব জমিতে বাড়ি বানাতে পারবেন। অথবা বাড়িসহ জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন। তবে যেই জমিতে বাড়ি করবেন তা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে। যেই ফ্ল্যাট কিনবেন তা সম্পূর্ণ নির্মিত ফ্ল্যাট হতে হবে। অর্ধ-নির্মিত ফ্ল্যাট সরকারি ঋণের টাকায় কেনা যাবে না।
বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স্ক চাকরিজীবীরা নিতে পারেন। তবে কোন চাকরিজীবীর নামে কোন ধরনের মামলা চললে তিনি ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ঋণের জন্য আবেদন করলে তার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হবে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক। আবেদনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবেন ও সেই অর্থ দিয়ে বাড়ি বানাবেন। এক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম অনুসারে তাকে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হবে। এছাড়াও ঋণের উপর ১০% সরল সুদ শোধ করতে হবে। তবে এটি সরল সুদ হওয়ায় সুদের উপর আবার সুদ আরোপ হবে না। সরকারি ঋণ নেওয়ার একটি বড় সুবিধা হলো এই ১০% সুদের ৫% সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ ঋণ গ্রহণকারী মাত্র ৫% সরল সুদ প্রদান করবেন। সুদসহ মোট ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে ২০ বছর।
নিচে কোন চাকরিজীবী কত টাকা ঋণ পাবেন তা দেওয়া হলোঃ
৫ম গ্রেড বা তার উপরের গ্রেডের চাকরিজীবীঃ
ঢাকা মহানগরী, সকল সিটি কর্পোরেশন এবং সকল বিভাগীয় সদরের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
জেলা সদরের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডের চাকরিজীবীঃ
ঢাকা মহানগরী, সকল সিটি কর্পোরেশন এবং সকল বিভাগীয় সদরের জন্য সর্বোচ্চ ৬৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
জেলা সদরের জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
১৩ম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডের চাকরিজীবীঃ
ঢাকা মহানগরী, সকল সিটি কর্পোরেশন এবং সকল বিভাগীয় সদরের জন্য সর্বোচ্চ ৫৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
জেলা সদরের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
১৭ তম গ্রেড থেকে ১৪ম গ্রেডের চাকরিজীবীঃ
ঢাকা মহানগরী, সকল সিটি কর্পোরেশন এবং সকল বিভাগীয় সদরের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
জেলা সদরের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
২০ তম গ্রেড থেকে ১৮ তম গ্রেডের চাকরিজীবীঃ
ঢাকা মহানগরী, সকল সিটি কর্পোরেশন এবং সকল বিভাগীয় সদরের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
জেলা সদরের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
ঋণ শোধের আগেই যদি ঋণ গ্রহণকারী মারা যান তাহলে সেই টাকা তার পেনশন ও গ্র্যাচুইটি থেকে কেটে রাখা হবে। তার পরেও ঋণ বাকি থাকলে তার উত্তরাধিকারদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ঋণ মওকুফ
সরকারি চাকরিতে ঋণ নেওয়ার যেমন সুবিধা আছে তেমনি ঋণ মওকুফেরও সুবিধা আছে। কোনো চাকরিজীবী ঋণ নেওয়ার পর মারা গেলে বা অক্ষম হয়ে পড়লে ঋণ মওকুফের জন্য আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় রেখে এ সংক্রান্ত কমিটি ঋণ মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রথম নিয়োগ প্রাপ্তিতে বেতনবৃদ্ধি
প্রথম নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু কর্মচারীর অগ্রিম বেতন বৃদ্ধির একটি বিধান রয়েছে। এর ফলে সেই সকল কর্মচারী নিয়োগ পাওয়ার পর পরই একটি বেতনবৃদ্ধি পাবেন। তবে তার জন্য তাকে অবশ্যই প্রথম শ্রেণীর চাকরিজীবী হতে হবে। এক্ষেত্রেঃ-
(১) চাকরিজীবী এম.বি.বি.এস ডিগ্রিধারী অথবা ব্যাচেলর অব ইঞ্জিনিয়ারিং/ আর্কিটেকচার বা সমমর্যাদার ডিগ্রিধারী হলে ১টি অগ্রিম বেতনবৃদ্ধি পাবেন।
(২) যে সকল চাকরিজীবীর ইঞ্জিনিয়ারিং বা আর্কিটেকচার এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বা ফিজিক্যাল প্ল্যানিং ডিগ্রি রয়েছে এবং যে সকল চাকরিজীবীর আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে তারা ২টি অগ্রিম বেতনবৃদ্ধি পাবেন।
(৩) কোন কর্মচারী চিকিৎসা অনুষদের লাইন্সেসধারী হলে তিনি ১টি অগ্রিম বেতনবৃদ্ধি পাবেন।
বেসরকারি চাকরির সাথে সরকারি চাকরির এটি আরেকটি বড় পার্থক্য। বেসরকারি চাকরিতে যোগ্যতা থাকলেও নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথে বেতন বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু সরকারি চাকরিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগের সময়ই বেতন বৃদ্ধি হয়।
উৎসব ভাতা
সকল সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যে প্রতিবছর তাদের দুই মাসের মূল বেতনের সমান টাকা উৎসব ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। অর্থাৎ গ্রেড ১ এর একজন কর্মকর্তা বছরে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা উৎসব ভাতা পাবেন। এছাড়াও পেনশনভুক্ত ব্যক্তিকে তার মাসিক নিট পেনশনের দ্বিগুণ টাকা বছরে দুইটি উৎসব ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।
নববর্ষ ভাতা
বাংলা নববর্ষ পালনের জন্য প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীকে তার মূল বেতনের ২০% নববর্ষ ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এই ভাতা এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরাও পেয়ে থাকেন।
চিকিৎসা ভাতা
চিকিৎসা করার জন্য প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীকে মাসে ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত নানারকম সুবিধা তারা পেয়ে থাকেন।
চিকিৎসা ভাতা গ্রহণকারী যদি অবসরভোগী হন এবং তার বয়স যদি ৬৫ এর বেশি হয় তাহলে তিনি মাসিক ২৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাবেন। তবে অবসরভোগীর বয়স ৬৫ এর কম হলে ১৫০০ টাকা পাবেন।
ছুটি এবং শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা
বেসরকারি চাকরির তুলনায় সরকারি চাকরিতে ছুটি অনেক কম। এটি সরকারি চাকরির একটি অসুবিধাজনক দিক হলেও সুবিধাজনক দিক হলো সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটি। আবার ২০১৫ সালের সরকারি ছুটির আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য সরকারি ছুটি বাদে প্রতি দুই বছরে ১৫ দিন বেতনসহ ছুটি নেওয়া যাবে। তবে গুরুতর অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিশাল মাপের ছুটি মঞ্জুর করা সম্ভব। এছাড়াও প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী প্রতি দুই বছরে একবার তার এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন।
শিক্ষা সহায়ক ভাতা
সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা পেয়ে থাকেন। এই ভাতার পরিমাণ সন্তান প্রতি ৫০০ টাকা। দুইজন সন্তান হলে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা। তবে দুই এর বেশি সন্তান হলে তাদের জন্য কোনো শিক্ষা সহায়ক ভাতা দেওয়া হয় না। আবার স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই সরকারি চাকরিজীবী হলে যেকোনো একজন এই ভাতা পাবেন। শিক্ষা সহায়ক ভাতা সন্তানের বয়স ২৩ বৎসর হওয়া অবধি চালু থাকবে। এছাড়াও আরেকটি বড় সুবিধা হলো সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের জন্য প্রায় প্রত্যেক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা বরাদ্দ থাকে।
পাহাড়ী ও দুর্গম অঞ্চল ভাতা
এই ভাতা মূলত পার্বত্য জেলা হিসেবে ঘোষিত তিনটি জেলা অর্থাৎ রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগরাছড়িতে চাকরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত। এসব জেলাসমূহের জেলাসদর ও সদর উপজেলায় নিয়োজিত সকল চাকরিজীবী মূল বেতনের ২০% হারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পাহাড়ী ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন। অপর দিকে অন্যান্য উপজেলায় নিয়োজিত চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০% হারে ভাতা পেলেও তাদের সর্বোচ্চ ভাতা ৫ হাজার টাকা।
তিনটি পার্ব্যত্য জেলা বাদেও দেশের আরো ১১টি জেলার মোট ১৬টি উপজেলাকে ২০১৯ সালে দুর্গম অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। সরকারি আদেশ অনুযায়ী সেসব উপজেলায় নিয়োজিত কর্মচারীরাও পাহাড়ী ভাতার অনুরূপ ভাতা পাবেন।
সূত্রঃ যুগান্তর পত্রিকা
অবসর ভাতা
পেনশন তথা অবসর ভাতাকে অনেকেই সরকারি চাকরির সবচেয়ে বড় সুবিধা হিসেবে গণ্য করেন। কারণ বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার পরে তেমন পেনশন পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তা নয়।
যেকোনো সরকারি চাকরিজীবী মাত্র ৫ বছর চাকরি করলেই তিনি পেনশনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে ৫ বছর চাকরির পরে অবসরে গেলে পেনশনের হার হবে সর্বশেষ মূল বেতনের মাত্র ২১%। চাকরির ৬ বছরের মাথায় অবসরে গেলে পেনশনের হার হবে ২৪%। এভাবে প্রতি বছর চাকরির সাথে সাথে পেনশনের হার বাড়তে থাকবে। একজন চাকরিজীবী সর্বোচ্চ পেনশনভোগী হবেন নূন্যতম ২৫ বছর চাকরি করার পরে। সেক্ষেত্রে তার পেনশনের হার হবে সর্বশেষ মূল বেতনের ৯০%।
তবে চাকরির ৫-২৪ বছরের মধ্যে চাইলেই চাকরি ছাড়া যায় না। সেক্ষেত্রে পেনশন পাওয়া যাবে না। যদি কোনোভাবে চাকরিজীবির মৃত্যু হয় অথবা সরকারি মেডিকেল-বোর্ড কর্তৃক শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম ঘোষিত হন তাহলেই তিনি বা তার পরিবার পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এছাড়া স্থায়ীভাবে পদ ছাঁটাই এর কারণে চাকরিচ্যুত হলেও পেনশন পাবেন।
এছাড়া কোন সরকারি চাকরিজীবী যদি চাকরির বয়স ৫ বছর হওয়ার আগেই মারা যান অথব অক্ষম ঘোষিত হন তাহলে তিনি বা তার পরিবার এককালীন আর্থিক সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে চাকরিজীবীর মূল বেতনের তিন মাসের সমান অর্থ আর্থিক সুবিধা হিসেবে দেওয়া হবে।
তবে পূর্বে গ্রস পেনশনের ১০০ ভাগই সমর্পণ করা যেতো। কিন্তু বর্তমানে ৫০ ভাগ বাধ্যতামূলক সমর্পণের নিয়ম করা হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ মাসিক পেনশন হিসেবে প্রদান করা হবে।
ভ্রমণ ভাতা
কোন সরকারি চাকরিজীবী বদলি অথবা অন্য সরকারি কাজে ভ্রমণ করলে তার জন্য দৈনিক ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও সড়ক পথে কিলোমিটার ভিত্তিক পথভাড়া পেয়ে থাকেন। এই ভাতার কারণে যাতায়াতজনিত খরচ চাকরিজীবীর নিজের করতে হয় না বললেই চলে।
দৈনিক ভাতা
ভ্রমণকালের প্রতিটি দিনের জন্য প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবী দৈনিক ভাতা পেয়ে থাকেন। এই ভাতা মূলত ‘ক’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণি অবধি মোট ৪ ভাগে বিভক্ত। ‘ক’ শ্রেণির কর্মকর্তা অর্থাৎ গ্রেড-৯ থেকে গ্রেড-১ এর সকল কর্মকর্তা এবং গ্রেড-১০ এর যেসব কর্মচারীর বেতন ২৯০০০ এর বেশি তারা ‘ক’ শ্রেণির অর্ন্তভুক্ত। এদের দৈনিক ভাতা ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
‘খ’ শ্রেণি অর্থাৎ ২৯০০০ টাকার কম বেতন গ্রহণকারী গ্রেড-১০ এর কর্মচারী ও ১৬০০০ টাকার বেশি বেতন গ্রহণকারী গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১৬ এর কর্মচারীগণের দৈনিক ভাতা ৪২০ থেকে ৪৯০ টাকা।
‘গ’ শ্রেণি অর্থাৎ ‘খ’ শ্রেণি বাদে গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১৬ এর সকল কর্মচারীর দৈনিক ভাতা ৩৫০ টাকা।
‘ঘ’ শ্রেণি অর্থাৎ গ্রেড-১৭ থেকে গ্রেড-২০ এর সকল কর্মচারীর দৈনিক ভাতা ৩০০ টাকা।
এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাভার পৌর এলাকার জন্য দৈনিক ভাতা আরো ৩০% বেশি বরাদ্দ থাকে।
পথ ভাড়া
দৈনিক ভাতার পাশাপাশি পথ ভাড়া ভাতাও দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ‘ক’ শ্রেণির ৫ম গ্রেড ও তার উপরের কর্মকর্তাদের জন্য ট্রেন বা স্টিমারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন বরাদ্দ থাকে। ‘ক’ শ্রেণির বাকি কর্মকর্তাদের জন্য ১ম শ্রেণির আসন থাকে।
‘খ’ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণি/ শোভন/ বা সুলভ চেয়ার বরাদ্দ থাকে।
‘গ’ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য মধ্যম বা নিম্নতম শ্রেণি বরাদ্দ থাকে।
বাস ভ্রমণের ক্ষেত্রে গ্রেড-৯ ও তার উপরের কর্মকর্তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন ও বাকিদের জন্য সাধারণ আসন বরাদ্দ থাকে।
এছাড়াও শুধু ৫ম গ্রেড বা তার উপরের কর্মকর্তারা বিমানের ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণের সুযোগ পান।
বদলিজনিত ভ্রমণ ভাতা
বদলির ক্ষেত্রে চাকরিজীবী এবং তার পরিবারের যাতায়াত ভাড়াও সরকার বহন করে। এক্ষেত্রে ট্রেনের টিকিট, লঞ্চ বা স্টিমারের ক্ষেত্রে নিজের জন্য তিনটি ভাড়া ও আরো তিনজনের জন্য একটি করে পূর্ণভাড়া বরাদ্দ থাকে। সড়ক পথে নিজের জন্য দুটি ও বাকিদের জন্য একটি করে ভাড়া বরাদ্দ থাকে। বিমান পথে শুধু নিজের জন্য একটি ভাড়া বরাদ্দ থাকে। এছাড়া সড়ক পথে সংসারের মালামাল পরিবহনের জন্য প্রতি ১০০ কেজি মালের জন্য কিলোমিটার প্রতি ২.০০-৩.৫ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে।
সূত্রঃ bbs.portal.gov.bd
মাতৃকালীন ছুটি
মাতৃকালীন ছুটির ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি সেরা সুবিধা দিয়ে থাকে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃকালীন ছুটির সুবিধা চালু থাকলেও তা সরকারি চাকরির মতো এত দীর্ঘ ও সুবিধাজনক নয়। যেকোনো সরকারি মহিলা চাকরিজীবী মাতৃকালীন ছুটি হিসেবে ৬ মাস পূর্ণ বেতনের ছুটি পাবেন। অর্থাৎ এই ৬ মাস পুরোপুরি বাসায় বসে সন্তানের দেখা-শোনা করতে পারবেন এবং একইসাথে পূর্ণ বেতনও পাবেন।
সূত্রঃ portal.gov.bd
আপ্যায়ন ভাতা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব এর জন্য ২০০০ টাকা, সিনিয়র সচিব ও সচিব ১০০০ টাকা, অতিরিক্ত সচিব ৯০০ টাকা, যুগ্ম সচিব ও অন্যান্য প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য ৬০০ টাকা আপ্যায়ন ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাগণ মাসিক ৩০০০ টাকা ডোমেস্টিক এইড এলাউন্স পেয়ে থাকেন।
অন্যান্য ভাতা
সরকারি চাকরিতে আরো নানা ধরনের ভাতা প্রচলিত আছে যা বর্ণনা করা ভীষণ সময়সাপেক্ষ। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য ভাতা হলো কর্মচারীদের টিফিন ভাতা, ধোলাই ভাতা, প্রেষণভাতা, কার্যভার ভাতা ইত্যাদি। এছাড়াও র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ইত্যাদি বাহিনীর সদস্য এবং কারা অধিদপ্তরের কারারক্ষীরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঝুঁকি ভাতা পেয়ে থাকেন।
সরকারি বিশেষ ব্যক্তিবর্গের বেতন
সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতন ও ভাতাদি সম্পর্কে তো জেনেছেন। তবে এই অংশে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কিছু পদের অধীন থাকা ব্যক্তিবর্গের বেতন সম্পর্কে। যেহেতু তারাও সরকারি বেতনের অর্ন্তভুক্ত তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের মাসিক মূল বেতন কত।
পদের নাম | মাসিক বেতন |
প্রজাতন্ত্রের মাননীয় রাষ্ট্রপতি | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
প্রজাতন্ত্রের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী | ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা |
মাননীয় স্পিকার | ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা |
মাননীয় প্রধান বিচারপতি | ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা |
মাননীয় মন্ত্রিগণ | ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা |
উচ্চ আদালতের বিচারক | ৯৫ হাজার টাকা |
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও তিন বাহিনী প্রধান | ৮৬ হাজার টাকা |
জ্যেষ্ঠ সচিব | ৮২ হাজার টাকা |
সংসদ সদস্য | ৫৫ হাজার টাকা |
সূত্রঃ DW মাল্টিমিডিয়া
মনে রাখতে হবে যে উপরিউক্ত বেতন শুধু মূল বেতন মাত্র। মোট বেতনের সাথে এর অনেক পার্থক্য আছে। যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ভাড়া ভাতা মাসিক ১ লক্ষ টাকা। কার্যত এই সকল পদের জন্য নির্ধারিত ভাতা সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট তথ্য নেই।
উপরিউক্ত সুযোগ সুবিধাগুলোর কারনেই প্রতি বছর লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী সরকারি চাকরিতে আবেদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়। সঠিক পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায় এর সাথে যারা লেগে থাকে একমাত্র তারাই পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।
শেষ কথা
সরকারি চাকরি চাকরিতে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ভালো পাওয়া যায় বিধায় বাংলাদেশের সেরা চাকরি হিসেবে সরকারি চাকরির নাম প্রথমেই উঠে আসে। আশা করি, এই লেখার মাধ্যমে সরকারি চাকরির গ্রেড, তার বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে মোটামুটি পরিষ্কার একটি ধারণা পেয়েছেন। তবে আর দেরি কেনো! চাকরির খবর পাওয়ার ও আবেদন করার জব পোর্টালগুলোতে নিয়মিত খোঁজ রেখে খুব ভালোভাবে চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে নিন এবং নেমে পড়ুন চাকরী প্রাপ্তির লড়াইয়ে। তবে অনলাইনে চাকরির আবেদন করার পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিতে কোনভাবেই ভুলবেন না কিন্তু!
অন্যান্য তথ্যসূত্রঃ
(১) বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা। ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫।
লিংকঃ Microsoft Word – 3946-SRO-369-Finance-15 December 2015_10739-10753_.docx (portal.gov.bd)
(২) বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা। মার্চ ৩০, ২০১৬
লিংকঃ amandment_pay scale_2015.pdf (portal.gov.bd)
(৩) অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ। বাজেট শাখা-১১। নং- ০৭.১১১.০৩১.০১.০০.০০৫.২০১০-১৫
লিংকঃ Consolidated Pay 2015 for Development Projects.pdf (portal.gov.bd)
(৪) বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা। আগস্ট ১৯, ২০২০। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গাড়ি সেবা শাখা।
লিংকঃ Microsoft Word – 2557 (mopa.gov.bd)
(৫) অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ। বাজেট অনুবিভাগ-১, বাজেট অধিশাখা-২। নং- ০৭.০০.০০০০.১০২.০০২.০০১.২০১৮-৪২৫
লিংকঃ home_loan.pdf (mof.gov.bd)
(৬) বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা। ডিসেম্বর ২০, ২০১৫। সরকারি কর্মচারীগণের অবসরকালীন সুবিধাদি।
লিংকঃ pension_related.pdf (portal.gov.bd)
(৭) অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ। প্রবিধি অনুবিভাগ, প্রবিধি শাখা-১। নং- ০৭.০০.০০০০.১৭১.১৩.০০৫.১৬-১৬
লিংকঃ pension_9.1.17.pdf (portal.gov.bd)
সর্বশেষ আপডেটের তারিখঃ ০৭/২০/২০২১