ভোটার নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
আইডি কার্ড একটি মানুষের ব্যক্তিগত পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। নতুন ভোটার হলে, পূর্বে ভোটার হয়ে আইডি কার্ড না পেলে কিংবা ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যুগে সরকারি সেবাগুলো অনলাইনেই পাওয়া যায়। যেমন- জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদি। আপনার ভোটার আইডি কার্ড পেতে জন্য ভোটার নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম ও বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি থাকছে আজকের সম্পূর্ণ আলোচনায়।
সূচিপত্রঃ
আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের, http://www.nidw.gov.bd/- এই লিংকে ভিজিট করে রেজিস্ট্রেশন করে ভোটার নাম্বার, জন্মতারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করুন। এবার, ঠিকানার তথ্য দিন এবং মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করে ফেস (Face) ভেরিফাই করে পাসওয়ার্ড সেট করুন। আপনার এনআইডি ড্যাশবোর্ড পেজ আসলে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আইডি কার্ড বের করতে পারবেন।
২০১৯ সালের পরবর্তী আইডি কার্ডগুলো অনলাইনে কোন ফি ছাড়াই ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে এর পূর্ববর্তী আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে চাইলে প্রথমে রিইস্যু করে তারপর ডাউনলোড করতে হবে।
আইডি কার্ড বের করতে কি কি লাগে?
অনলাইনে আইডি কার্ড বের করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু গুলো প্রয়োজন হয়-
- ভোটার নাম্বার/ ভোটার নিবন্ধন স্লিপ নাম্বার/ভোটার ফরম নাম্বার/ এনআইডি নাম্বার;
- জন্ম তারিখ;
- বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য;
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার;
- ফেস ভেরিফাই করার জন্য এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপস;
- ইন্টারনেট কানেকশন।
উপরোক্ত বিষয়বস্তুগুলো আপনার কাছে থাকলে সহজেই এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভোটার আবেদন স্লিপ দিয়ে ভোটার নাম্বার বের করার নিয়ম
নির্বাচনী কর্মসূচির প্রয়োজনে আমাদের ভোটার নাম্বারের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আইডি কার্ড বের করার জন্যও ভোটার নাম্বারের প্রয়োজন হয়। পূর্বে এনআইডিডাব্লিউ (NIDW) ওয়েবসাইটে ভোটার তথ্য যাচাই পেজ থেকে ভোটার নাম্বার বের করা যেত। তবে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভোটার আবেদন স্লিপ দিয়ে ভোটার তথ্য দেখা যায় না।
বর্তমানে এসএমএস (SMS) এর মাধ্যমে ভোটার নাম্বার বের করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন-
- আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে যান।
- এবার প্লাস (+) অপশনে ক্লিক কর ইংরেজিতে- SC <স্পেস> F <স্পেস> এনআইডি নাম্বার/ ভোটার আবেদন স্লিপ নাম্বার <স্পেস> D <স্পেস> জন্ম তারিখ (বছর-মাস-দিন ফরম্যাটে) লিখুন।
- এবার পাঠিয়ে দিন ১০৫ নাম্বারে।
২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে রিপ্লাই (Reply) মেসেজের মাধ্যমে ভোটার নাম্বারসহ এনআইডি তথ্য পাঠানো হবে।
ভোটার নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
ভোটার নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার জন্য উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু ও তথ্যগুলো সংগ্রহ করে নিচের ছবিসহ দেখানো ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ ১: এনআইডি রেজিস্ট্রেশন ওয়েব পেজে প্রবেশ
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন (Bangladesh Election Commission)- এর ‘ন্যাশনাল আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রেশন উইং (National Identity Registration Wing)’ ওয়েবসাইটে ভিজিট করে এনআইডি অনলাইন সার্ভিসেস (NID Online Services) অপশনে প্রবেশ করুন।
অথবা, সরাসরি https://services.nidw.gov.bd/ এই লিংকে ভিজিট করুন। পূর্বে রেজিস্টার করা থাকলে নিচে লগইন অপশনে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন পারবেন। নতুন নিবন্ধন করতে ‘রেজিস্টার করুন’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করুন
এনআইডি অনলাইন সার্ভিসে রেজিস্ট্রেশন করতে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনের তথ্য অনুযায়ী-
- ভোটার নাম্বার/ ভোটার স্লিপ নাম্বার অথবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া এন আইডি নাম্বার লিখুন।
- জন্ম তারিখ লিখুন। প্রথমে দিন তারপর মাস এবং সর্বশেষ বছর।
- এবার, ছবিতে ৫ সংখ্যার একটি কোড দেখতে পাবেন। কোডটি নিচের ঘরে লিখুন।
- সর্বশেষ, সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য প্রদান
জাতীয় পরিচয়পত্রে আবেদনের সময় দেওয়া বর্তমান ঠিকানার তথ্য অনুযায়ী আপনার- বিভাগ, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন করুন। একইভাবে স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পূরণ করে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই
এই ধাপে, মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন করতে হবে। এখানে, আইডি কার্ডের আবেদন করার সময় দেওয়া মোবাইল নাম্বারের প্রথম ও শেষের ৩ ডিজিট দেখতে পাবেন। আপনার কাছে যদি এই মোবাইল নাম্বারটি থাকে তাহলে ‘বার্তা পাঠান’ বাটনে ক্লিক করুন। অন্য মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করতে ‘মোবাইল পরিবর্তন’ বাটনে ক্লিক করে নতুন নাম্বার দিয়ে বহাল বাটনে ক্লিক করবেন।
আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি ৬ ডিজিটের যাচাইকরন কোড পাঠানো হবে। পরবর্তী পেজে কোডটি লিখে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: ফেস ভেরিফিকেশন
মোবাইল ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে পরবর্তী ধাপে এনআইডি সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ফেস ভেরিফাই করতে হয়। এজন্য-
- প্রথমে আপনার মোবাইলে এনআইডি ওয়ালেট (NID Wallet) অ্যাপ্লিকেশনটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করুন।
- তারপর, অ্যাপসে প্রবেশ করে প্রথমবারের জন্য ‘আই এগ্রি (I Agree) বাটনে ক্লিক করে ওয়েবসাইটের কিউ আর কোড (QR Code) টি স্ক্যান করুন। অথবা, একই ডিভাইস/ মোবাইল ব্যবহার করলে অ্যাপসের উপরের কোড বাটনে ক্লিক করে ওয়েবসাইটের কোডটি পেস্ট করুন।
- এবার, স্টার্ট ফেস স্ক্যান (Start Face Scan) বাটনে ক্লিক করে আপনার মুখের সামনের, ডান দিকের ও বাম দিকের স্ক্যান নিশ্চিত করুন।
- ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে ওয়েবসাইটের পরবর্তী পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
ধাপ ৬: পাসওয়ার্ড সেট করুন
আপনার এনআইডি একাউন্টে পরবর্তীতে সহজেই লগইন করার জন্য এবং অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার জন্য একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন। এজন্য সেট পাসওয়ার্ড বাটনে ক্লিক করলে নতুন পেজ ওপেন হবে। সেখানে-
- একটি ইউজার নেম (ঐচ্ছিক) লিখুন;
- পাসওয়ার্ড লিখুন;
- পুনরায় পাসওয়ার্ড লিখুন।
সর্বশেষ ‘আপডেট’ বাটনে ক্লিক করে শেষ ধাপে যান।
ধাপ ৭: এনআইডি ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে স্ক্রিনে আপনার এনআইডি ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড আসবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র বিস্তারিত তথ্য ও বিভিন্ন সেবার অপশন দেখতে পাবেন। এনআইডি কার্ডটি বের করার জন্য ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন।
উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী আপনার এনআইডি কার্ড বের করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড
ন্যাশনাল আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রেশন উইং- ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করলে তার অনলাইন কপিটি পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্ট ড্যাশবোর্ড থেকে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের পিডিএফ (PDF) কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। তারপর, তা আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে কোন আইটি সেবা প্রদানকারী দোকান থেকে প্রিন্ট ও লেমিনেটিং করে নিলেই সর্বত্র ব্যবহার করতে পারবেন।
পুরাতন আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
২০১৯ সালের পূর্ববর্তী ভোটারগন অনলাইন থেকে সরাসরি আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেনা। পুরাতন আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তা উল্লেখ করে এবং সরকারি ফি ২৩০ টাকা (ফি ২০০+ ভ্যাট ৩০) পরিশোধ করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর কার্যক্রম সম্পন্ন হলে অনলাইন থেকে আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবে।
শেষকথা
দেশের নাগরিক সেবা ভোগ করতে, সিম রেজিস্ট্রেশন, পাসপোর্ট তৈরি ইত্যাদি বিভিন্ন সেবা ভোগ করতে ভোটার আইডি কার্ড অপরিহার্য। তবে সরকারিভাবে ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেতে অনেকটাই সময় লাগে। তাই ভোটার নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম অনুসরণ করে আপনার আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন আজই।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ভোটার আবেদন স্লিপ নাম্বার কি?
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে একটি টোকেন বা আবেদন স্লিপ প্রদান করা হয়। এতে একটি স্লিপ নাম্বার থাকে। এই নাম্বার দিয়ে পরবর্তীতে আইডি কার্ড সংগ্রহ করা যায়।
ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে কি টাকা লাগে?
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে কোন টাকা লাগে না। তবে পুরাতন ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে রি ইস্যু ফি ২৩০ টাকা প্রদানপূর্বক আবেদন করে তা সংগ্রহ করতে হয়।
মোবাইল নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করা যায় কি?
না, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, মোবাইল নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড বের করার কোন অপশন রাখেনি।