জীবন ও জীবিকাটিপসবাংলাদেশ

বিধবা ভাতা কি? বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

বিধবা ভাতা (Widow’s Allowance) সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিধবা ভাতা আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান রয়েছে। আপনার/আপনার পরিবারের/এলাকার কারো বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে অনলাইনে ও সরাসরি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম, ভাতা প্রাপ্তির শর্তাবলী, কারা পাবেন, প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড, কতো টাকা পাবেন, এই ভাতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজকের এই নিবন্ধ।

বিবিএস (BBS)-এর জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট নারী জনগোষ্ঠীর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বিধবা (প্রায় ৫৩ লক্ষ)। এর মধ্যে অধিকাংশ নারীই অসহায় ও দুস্থ জীবনযাপন করেন। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, মর্যাদা বৃদ্ধি, মনোবল জোরদার ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এই ভাতার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সূচিপত্রঃ

বিধবা ভাতা কী?

বিধবা ভাতা কী?

সমাজের দুস্থ, অসহায় বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর এসব মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করে। অসহায় বিধবা নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি পরিচালিত হয়।

২০০৩-০৪ অর্থবছরে এই উন্নয়ন কর্মসূচিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকার পুনরায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিকট এই কর্মসূচি ন্যস্ত করে। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই কর্মসূচিটি ধারাবাহিকভাবে সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।

বিধবা ভাতা কারা পাবে?

স্বামী নিগৃহীতা ও বিধবা নারীরা বিধবা ভাতা কর্মসূচির আওতাভুক্ত হয়। সাধারণত বিধবা বলতে, যাদের স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং সেসব মহিলা পুনঃবিবাহ করেন নি, তাদেরকে বোঝানো হয়। স্বামী নিগৃহীতা হলো সেসব মহিলা, যারা স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত বা অন্য যেকোনো কারণে অন্তত ২ বছর যাবত স্বামীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা একত্রে বসবাস করেন না। 

এই দু’ধরনের আওতাভুক্ত নারীদের মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের বাছাই কমিটি (Selection Committee) কর্তৃক বাছাইকৃত প্রার্থীরাই বিধবা ভাতা পাবেন। 

ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলী

বিধবা ভাতা প্রাপ্তির জন্য একজন উপযুক্ত প্রার্থী হতে আবেদনকারীকে নিম্নোক্ত যোগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ করতে হবে:

  • আবেদনকারী যেই এলাকা থেকে আবেদন করবে সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • আবেদনকারীর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৭ সংখ্যার) বা ভোটার আইডি কার্ড থাকতে হবে।
  • অধিক বয়স্ক, অসহায় ও দুস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা নারীরা আবেদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
  • আবেদনকারীর বার্ষিক গড় আয় ১২০০০ টাকা বা তারও কম হতে হবে। 
  • ভূমিহীন ও অসহায় বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা নারীরা আবেদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
  • যেই বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ১৬ বছরের কম বয়সী ২টি সন্তান রয়েছে, সেসব নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
  • আবেদনকারীদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী, অসুস্থ কিংবা কর্মক্ষমতাহীন সেসব আবেদনকারী ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
  • ভাতা প্রাপ্তির জন্য, অবশ্যই উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।

বিধবা ভাতা আবেদন করতে কী কী লাগে?

বিধবা ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে এবং সমাজসেবা কার্যালয় থেকে অনুমোদন পেতে বেশকিছু কাগজপত্র লাগে। এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো:

এছাড়াও নিকটস্থ সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আরো কিছু কাগজপত্র চাইতে পারে।

অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি‘ বিষয়ক ওয়েবসাইটে বিধবা ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। যেহেতু এই আবেদনের ভিত্তিতেই যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করা হয়, তাই সঠিকভাবে আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আবেদন সাবমিট (Submit) করার পর তা পুনরায় সংশোধন করা যায় না। তাই, যোগ্য প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পেতে নির্ভুলভাবে  আবেদন করার জন্য (যারা ইতিমধ্যে ভাতা পাচ্ছেন তাদের আবেদন করতে হবে না) অনলাইনে বিধবা ভাতার আবেদন প্রক্রিয়াটি নিচে ছবিসহ ধাপে ধাপে দেখানো হলো:

ধাপ ১: সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ

বিধবা ভাতার অনলাইন আবেদন করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির’ আবেদন ফরমে প্রবেশ করুন। মূল ওয়েবপেইজে (Webpage) যেতে প্রবেশ করুন-  https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication, এই লিংকে (Link)। অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। ধাপঃ ১

এখানে, কার্যক্রম অপশনে (Option) ভাতার ধরন নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন করুন ঘরের ডানপাশের ড্রপডাউন (Drop-down) অপশনে ক্লিক করে ভাতার অপশনগুলো থেকে বিধবা ভাতা নির্বাচন করুন। এবার, একটি বিস্তারিত অনলাইন আবেদন ফরম দেখতে পাবেন।

ধাপ ২: ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই

আবেদন করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করতে হবে।অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। ধাপঃ ২

আপনার কাছে যেই ডকুমেন্ট (Document) আছে, সেটি সিলেক্ট (Select) করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র সিলেক্ট করলে, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার লিখুন। (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অবশ্যই ১০ বা ১৭ সংখ্যার হতে হবে)

পাশের জন্ম তারিখের ঘরে ক্যালেন্ডার (Calendar) অপশনে ক্লিক (Click) করে, সঠিক তারিখটি সিলেক্ট করে যাচাই করুন। আইডি কার্ড অনুযায়ী ছবিসহ সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। যেসব তথ্যের ঘর খালি থাকবে, তা লিখে পূরণ করুন।

ধাপ ৩: বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা অনুযায়ী বিস্তারিত তথ্য

এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে বিধবা ভাতা আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরতে হয়। এখানে, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো হলো:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ ইত্যাদি) নির্বাচন করুন
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)
  • পেশা
  • বার্ষিক আয়ের পরিমাণ
  • স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য
  • সরকারি/বেসরকারি সুবিধা প্রাপ্তির বিবরণ
  • বাসস্থানের (নিজস্ব, ভাড়া, গৃহহীন বা অন্যান্য)
  • ভূমির মালিকানা

অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। ধাপঃ ৩

ধাপ ৪: আবেদনকারীর যোগাযোগ ও ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য

এই ধাপে, আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানার বিবরণ দিতে হবে। যেমন-

  • বিভাগ, জেলা, উপজেলা সিলেক্ট করুন
  • অবস্থান অপশনে, আপনি যেই এলাকার আওতাধীন (ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা) তা সিলেক্ট করুন
  • পোস্ট কোড (Post code) লিখুন
  • গ্রাম/বাড়ির হোল্ডিং (Holding) ঠিকানার তথ্য দিন।

একইভাবে স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পূরণ করুন। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা অনুরূপ হলে ‘একই ঠিকানা’ লেখার পার্শ্ববর্তী ঘরে ক্লিক করুন। অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। ধাপঃ ৪

  • নিচে আপনার একটি ইমেইল (Email) ঠিকানা লিখুন। (ঐচ্ছিক)
  • বিকাশ/নগদ একাউন্টসহ একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখুন। (যে নাম্বারে ভাতার টাকা পেতে ইচ্ছুক)
  • মোবাইল নাম্বারের মালিকানা বাছাই করুন।

ধাপ ৫: ভাতা প্রাপ্তির অন্যান্য যোগ্যতা সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য

এখানে, বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য আপনি যোগ্য কিনা সে সম্পর্কিত তথ্যাদি পূরণ হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর-

  • বাসগৃহের তথ্য
  • খানা প্রধানের তথ্য
  • খানায় বিভিন্ন সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য
  • গত এক বছরে আবেদনকারীর খানায় বিদেশে অবস্থানকারী কারো নিকট থেকে অর্থ পেয়েছে কিনা।
  • পরিবারের কেউ গত ১ বছরে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় কোনো সহায়তা পেয়েছে কিনা ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।

অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। ধাপঃ ৫

সকল তথ্য পূরণ সম্পন্ন হলে, বিস্তারিত তথ্য পূনরায় রিভিউ (Review) করে নিন। তারপর নিচের ‘সংরক্ষণ’ বাটনে ক্লিক করে অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন জমা দিন।

ধাপ ৬: বিধবা ভাতা অনলাইন আবেদনের কপি ডাউনলোড 

আবেদন সাবমিট করার পর “আপনার আবেদনটি সফলভাবে গৃহীত হয়েছে” লেখা একটি স্বয়ংক্রিয় পেজ দেখতে পাবেন। সেখান থেকে প্রিন্ট (Print) অপশনে ক্লিক করে আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করে নিন। 

কম্পিউটারে প্রিন্টার (Printer) সংযুক্ত না থাকলে ফরমটির পিডিএফ (PDF) কপি ডাউনলোড (Download) করে নিন। পরবর্তীতে প্রিন্ট করে স্থানীয় চেয়ারম্যান/পৌরসভার কাউন্সিলরের (Counselor) স্বাক্ষর নিয়ে সংরক্ষণ করুন।

ধাপ ৭: জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আবেদন জমাদান

বিধবা ভাতার আবেদনের মূল কার্যক্রম উপজেলা সমাজসেবা অফিসে পরিচালিত হয়। তাই সেখানে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনের জন্য প্রয়োজন হবে-

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • অনলাইনে আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি
  • পুনঃবিবাহ না করার প্রত্যয়ন পত্র
  • নাগরিকত্ব সনদ

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট এসব কাগজপত্র জমা দিলে তা কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থীরা ভাতার জন্য অনুমোদন পাবেন।

সরাসরি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

গ্রামীণ অসহায় মানুষদের জন্য বিধবা ভাতার অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করা অবশ্যই তেমন একটি সহজ কাজ নয়। তাই এসব মানুষ সরাসরি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় লিখিত আবেদন ফরম জমা দিতে পারেন। 

প্রথমে, আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। তারপর তা সঠিকভাবে পূরণ করে এর সাথে আবেদনকারীর ১ কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংযুক্ত করুন। স্বাক্ষরের স্থানে আপনার স্বাক্ষর দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তাগণ পুনরায় অনলাইনে আবেদন করে বাকি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড

স্থানীয় সমাজসেবা অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি অনুমোদিত কমিটি কর্তৃক যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। প্রার্থী নির্বাচন করতে কিছু নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। সেগুলো হলোঃ

(১) নাগরিকত্ব: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।

(২) বয়স বিবেচনা: আবেদনকারী বিধবা নারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। অধিক বয়স্ক আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

(৩) স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা: আবেদনকারীদের মধ্যে যিনি সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।

(৪) আর্থ-সামাজিক অবস্থা:

  • আর্থিক অবস্থা: গৃহহীন, ভূমিহীন, নিঃস্ব ও উদ্বাস্তু বিধবা নারীরা ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।
  • সামাজিক অবস্থা: সামাজিকভাবে দুর্দশাগ্রস্থ, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বিধবা নারীরা ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।

(৫) ভূমির মালিকানা: ভূমিহীন আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। এক্ষেত্রে, বসতবাড়ী ব্যতিত কোনো বিধবা নারীর জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে, তাকে ভূমিহীন বলে বিবেচনা করা হবে।

উপরিউক্ত মানদণ্ড বিবেচনায় বিধবা ভাতা আবেদনকারীদের বাছাই করা হয়।

কতো টাকা বিধবা ভাতা দেওয়া হয়?

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের মাধ্যমে বিধবা নারীদের ভাতা কর্মসূচির সূচনা হয়। বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক স্বচ্ছ কর্মসূচি প্রণয়ন এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জিটুপি (G2P) বা গভর্নমেন্ট টু পারসন (Government to Person) পদ্ধতিতে ভাতার টাকা দেওয়া হচ্ছে। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫ লক্ষ ৭৫ হাজার জন সুবিধাভোগী মাসিক ৫৫০ টাকা হারে ভাতার অর্থ পান। পরবর্তীতে বিধবা ভাতা আবেদন কার্যক্রমের মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

বিধবা ভাতা কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ও উন্নয়ন

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিধবা ভাতার ধারাবাহিকতা নিচে তালিকাভুক্ত করা হলোঃ

অর্থবছরউপকারভোগীর সংখ্যা ভাতার হার (টাকায়)বার্ষিক বাজেট
১৯৯৮-৯৯৪ লক্ষ ৩ হাজার ১১০ জনজনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা৪০.৩১ কোটি টাকা
২০০৫-২০০৬৬ লক্ষ ২৫ হাজার জনজনপ্রতি মাসিক ১৮০ টাকা১৩৫ কোটি টাকা 
২০০৯-১০৯ লক্ষ ২০ হাজার জনজনপ্রতি মাসিক ৩০০ টাকা৩৩১.২০ কোটি টাকা 
২০১৬-২০১৭১১ লক্ষ ৫০ হাজার জন জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা৬৯০ কোটি টাকা 
২০২৩-২০২৪২৫ লক্ষ ৭৫ হাজার জনজনপ্রতি মাসিক ৫৫০ টাকা১৭১১.৪০ কোটি টাকা

বিধবা ভাতা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বিধবা ভাতা কর্মসূচি প্রণয়নের মূল লক্ষ্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা।
  • আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে বিধবা নারীদের মনোবল জোরদার করা।
  • অসহায় নারীদের চিকিৎসা সেবা ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
  • পরিবার ও সমাজে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা।

শেষকথা 

বিধবা ভাতা বাংলাদেশ সরকারের একটি সহযোগিতামূলক উন্নয়ন কর্মসূচি। সারাদেশের অগণিত দুস্থ, অসহায়, স্বামী নিগৃহীতা, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের জন্য এটি বিশাল এক আশার আশ্র‍য়। সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করছি, সেসব নারীদের কল্যাণে এই নিবন্ধ কিছুটা হলেও কাজে আসবে। উপরে উল্লেখিত বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে উপযুক্ত নারীরা সহজে আবেদন করতে পারবেন। এতে করে, সমাজের অসহায় নারীরা এই ভাতা কার্যক্রমের আওতায় আসবে এবং তাদের জীবনধারণ কিছুটা সহজ হবে। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) বিধবা ভাতা আবেদনের শেষ তারিখ কবে?

চলতি বছরে বিধবা ভাতার আবেদন কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই আবেদন গ্রহণপ্রক্রিয়া ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে।

(২) গৃহহীন ও ভূমিহীন ভাসমান বিধবা নারী বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে কী?

বিধবা ভাতার আবেদনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারী যেই জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আবেদন করবে সেই সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। ভাসমান জনগোষ্ঠী হলে যে এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছেন অথবা যেখানে আবেদনকারীর ভোটার আইডি (Voter ID)/জন্ম নিবন্ধন হয়েছে সেখান থেকে আবেদন করতে হবে।

(৩) ইউনিয়ন পরিষদে বিধবা ভাতা আবেদন করবো কীভাবে?

আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। তারপর তা সঠিকভাবে পূরণ করে এর সাথে আবেদনকারীর ১ কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংযুক্ত করুন। স্বাক্ষরের স্থানে আবেদনকারীর স্বাক্ষর দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিয়ে বিধবা ভাতার আবেদন করতে পারবেন।

(৪) বিধবা ভাতার আবেদন করতে কতো টাকা লাগে?

বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে কোনো টাকা লাগেনা। নিজে নিজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তবে কোনো আইটি (IT) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করলে তাদের সার্ভিস চার্জ (Service charge) দিতে হয়।

(৫) বাংলাদেশে বিধবা ভাতা কর্মসূচি চালু হয় কতো সাল থেকে?

দেশের দুস্থ ও অসহায় বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে এবং পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বিধবা ভাতা কর্মসূচি চালু করা হয়।

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button