ইতিহাসখেলাধুলাফুটবল

ফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল খেলা দেখেনি অথবা অন্তত একবার হলেও খেলেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। একটি খেলা যে বিশ্বজোড়া মানুষকে এভাবে এক ছাতার তলে নিয়ে আসতে পারে, তা ফুটবল না দেখলে অনুভব করা যাবে না। কিন্তু সবাই শুধু ফুটবল দেখেন না। কেউ কেউ ফুটবলের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হওয়ার পাশাপাশি এর ইতিহাসটাও জানতে চান। ফুটবলের ইতিহাস সম্পর্কে সেই জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতেই আজকের এই লেখাটি। 

মানবসভ্যতার নানা বাকে ফুটবল 

ফুটবল নামটির বেশ সার্থকতা রয়েছে। ফুট (Foot) অর্থ পা। আর বল (Ball) এর প্রচলিত বাংলা শব্দ খোদ ‘বল’। যাকে আগে বলা হতো গোলক। মূলত পা দিয়ে বল লাথি মেরে খেলাকেই বলে ফুটবল। আর এমন খেলা পাওয়া গেছে মানবসভ্যতার নানা বাঁকে। 

মেসোমেরিকান সভ্যতা

বলের সাহায্যে খেলার প্রথম প্রমাণ মেলে মেসোমেরিকান সভ্যতায়। আজ থেকে প্রায় ৩,০০০ হাজার বছর পূর্বে হতো সেই খেলা। বলটি ছিল পাথরের। অ্যাজটেকদের সেই খেলায় কিছু অনুষ্ঠানে বলকে মনে করা হতো সূর্যের প্রতীক। আর সূর্যদেবতার সম্মানে খেলায় বিজিত দলের দলপতিকে উৎসর্গ করতো অ্যাজটেকরা। তবে মেসোমেরিকান সভ্যতাই ছিল রাবার ব্যবহারকারী প্রথম সভ্যতা। তাই তাদের খেলায় এমনকি রাবারের বল ব্যবহারেরও নজির রয়েছে।

এশীয় ও অস্ট্রেলীয় সভ্যতা

বল লাথি দিয়ে খেলতে হয় এমন খেলার ব্যাপারে প্রথম জানা যায় চীনাদের ইতিহাস থেকে। হান রাজবংশের সময় ২য় ও ৩য় খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীন দেশে একটি খেলা প্রচলিত ছিল। যার নাম ছিল ‘কুজু’ (Cuju)। যা সরাসরি ইংরজি করলে দাঁড়ায় Kickball। কুজু খেলাটি খেলা হতো একটি গোল বল দিয়ে। পশম কিংবা পালককে চামড়া দিয়ে মুড়ে বানানো হতো বল। এরপর চারকোণা একটি মাঠে হতো সেই খেলা। সময়ের সাথে সাথে যা ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপে। ধীরে ধীরে জাপান, প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপ এবং অস্ট্রেলীয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে কুজুর মতো খেলা। জাপানিজরা যাকে বলতো ‘খেমারি’। অন্যদিকে অস্ট্রেলীয়াতে এর নাম ছিল মার্ন গুক। ১৮০০ শতকেও অস্ট্রেলীয় আদিবাসীরা গাছের পাতা ও মুল দ্বারা বল বানিয়ে খেলা করতো।

এছাড়াও বল লাথি দিয়ে খেলা প্রচলিত ছিল প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায়। তবে সেসব অঞ্চলে খুব বড় আকারে এ খেলা হতো না। যদিও গ্রেট ব্রিটেনে এই খেলাকে পৌছে দেয় রোমানরাই। পরবর্তীতে ব্রিটিশরাই এ খেলার প্রচলন ঘটায় বিশ্ব জুড়ে। আর যার কারনে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষ পছন্দের দলের খেলা হলেই বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে লাইভ ফুটবল ম্যাচ দেখায় মেতে উঠে।

ব্রিটেনঃ আধুনিক ফুটবলের জন্মভূমি

পূর্বকথা

ইংল্যান্ডের মাঠে ফুটবল খেলছে ৩ জন খেলোয়াড়

ব্রিটেনকে বলা হয় আধুনিক ফুটবলের জন্মভূমি। সেই ১২০০ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের মাঠে ঘাটে খেলা হতো ফুটবলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নানা খেলা। তবে সেসব খেলায় নিয়মের বালাই ছিল না বললেই চলে। এমনকি পায়ের পাশাপাশি হাতের ব্যবহারও হতো দেদারসে। অনেক সময় এসব খেলায় অনেক বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করতো। ফলস্বরূপ হাতাহাতি, মারামারি এমনকি মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। খেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি-ঘর ভাঙচুরও হতো প্রায়শই। আর এসব অনিয়মে বিরক্ত হয়ে রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড সব শহর থেকে এই খেলা নিষিদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ১৩৪৯ সালে তার ছেলে তৃতীয় এডওয়ার্ড পুরো ব্রিটেন থেকেই এই খেলা নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু রাজা সপ্তম হেনরির ফুটবলের প্রতি বেশ অনুরাগ ছিল। তার রাজকীয় জুতার সম্ভারে ফুটবল খেলার জন্য ৪৫ জোড়া ভেলভেট ও ১ জোড়া চামড়ার জুতা দেখলেই তা বোঝা যায়। তবে তার স্থুলতার কারণে এ খেলায় তিনি তেমন পারদর্শী ছিলেন না। পরবর্তীতে ১৫৪৮ সালে এই খেলা দাঙ্গার সূচনা করে এমন কারণ দেখিয়ে রাজা সপ্তম হেনরি আবার তৎকালীন ফুটবলকে নিষিদ্ধ করেন। 

তৎকালীন ফুটবলের এই হিংস্রতার ইতিহাস বার বার ফুটে উঠেছে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দী জুড়ে। নিষিদ্ধ হলেও ফুটবলের মতোই নানা খেলার চল ছিল ইংল্যান্ডের পথে প্রান্তরে। এমনকি খোদ লন্ডন শহরেও চলতো সেসব খেলা। সেসময় শুধু ইংল্যান্ড নয়, ফুটবলের মতো খেলা ছড়িয়ে পড়েছিলো স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস এও। তবে সেসব খেলার হিংস্রতার জন্য সেগুলো ১৮৩৫ সালে আবারো নিষিদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু ততদিনে সাধারণ জনমানুষের খেলার স্তর থেকে ফুটবলের উন্নতি ঘটেছিলো। সেসময় ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলগুলোতে ফুটবলের মতো নানা খেলা হতো। এমন দুটি প্রধান পাবলিক স্কুল ছিল রাগবি ও ইটন। রাগবি স্কুলের ফুটবলে পায়ের পাশাপাশি হাতের ব্যবহারও প্রচলিত ছিল। সেখান থেকেই জন্ম হয়েছে আজকের রাগবি খেলার। অপর দিকে ইটন স্কুলে শুধু পা এর মাধ্যমেই ফুটবল খেলা হতো। অর্থাৎ এটিকে বলা যায় বর্তমান ফুটবলের আদিপুরুষ।

নিয়মাবলীর জন্ম

ফুটবলের প্রাচীন আইন এর ছবি. ১৮৬৩
সূত্রঃ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়

সেটা ছিল ১৮৪৮ সাল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়াতলে ইংল্যান্ডের বড় বড় পাবলিক স্কুলগুলোর প্রতিনিধিরা জমা হোন। সেসময় কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি হয়। সেগুলোকে বলা হয় ‘কেমব্রিজ রুলস’ (Cambridge Rules)। তৎকালীন বড় বড় স্কুলগুলো অর্থাৎ ইটন, হ্যারো, রাগবি, শ্রুসবেরি ও উইনচেস্টার এই নিয়ম মেনে নেয়। যদিও ১৮৫০ এর দশক জুড়ে ইংল্যান্ডের অনেক স্কুলই নিজেদের মতো নিয়ম বানিয়ে খেলা চালিয়ে গিয়েছিলো। আবার কিছু স্কুল শেফার্ড রুলস নামে ভিন্ন কিছু নিয়মাবলীও অনুসরণ করতো। 

বেনিজার কব মর্লেই (Ebenezer Cobb Morley)। ২২ বছর বয়স্ক এক উজ্জ্বল তরুণ। তিনি ছিলেন তৎকালীন বার্নস ক্লাব এর দলপতি। ২৬ অক্টোবর ১৮৬৩, লন্ডনের গ্রেট কুইন স্ট্রিটের ফ্রিম্যাসন ট্যাভার্নে এবেনিজার ডেকে বসেন একটি মিটিং। আর সেই মিটিং এর ফলস্বরুপই প্রতিষ্ঠিত হয় দ্যা ফুটবল এসোসিয়েশন (The Football Association) । যা আজ পরিচিত FA নামে। 

পরবর্তীতে আরো পাঁচটি মিটিং এর পরে অবশেষে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করতে সমর্থ হয়। কিন্তু শেষ মিটিং এর দিন ব্ল্যাকহিথ ক্লাব (Blackheath Club) অ্যাসোসিয়েশন ত্যাগ করে। কারণ তাদের দাবি ছিল ফুটবল খেলায় হাতের ব্যবহার এবং প্রতিপক্ষকে ধরে রাখার প্রথা বজায় রাখতে হবে। ব্ল্যাকহিথ ক্লাবকে সমর্থনকারী আরো কিছু ক্লাব মিলে এরপর গঠন করে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন। যা আজ রাগবি খেলা হিসেবে পরিচিত। 

আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন 

বর্তমানে ফুটবল খেলার নিয়ম-কানুন নিয়ন্ত্রিত হয় আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা। আর এই আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম হয়েছিলো ১৮৮৬ সালে, ম্যানচেস্টার শহরে। দা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দা স্কটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়েলস এবং আইরিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মিলে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আর প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ ছিল ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের ভেতরে। যা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭২ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে।

দেশে দেশে ফুটবল

দেশে দেশে ফুটবল এর জনপ্রিয়তা
হংকং এ ফুটবল ম্যাচের একটি দৃশ্য। সূত্রঃ ফুটবল ক্লাব, হংকং।

আধুনিক ফুটবলের জনক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষদের ফুটবল খেলায় আগ্রহী করা ও অনুৎসাহিত করা এই দুটোরই দায়ভার আসলে ব্রিটিশদের। ইউরোপ, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে ফুটবল খেলাও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আবার ভারতবর্ষ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত দেশগুলো যেগুলোতে ব্রিটিশরা জোরপূর্বক কলোনি তৈরী করেছিলো সেগুলোতে ফুটবল খেলার অতটা চল তৈরী হয় নি। ঐসব দেশে ক্রিকেট, রাগবির মত খেলা প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও ইংল্যান্ড ও অন্যান্য অনেক দেশে ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যেশ্রেণীর পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতই। যেমন ইংল্যান্ডের ফুটবল দলে সকল শ্রেণীর খেলোয়াড় কিছু কিছু করে থাকলেও অধিকাংশ খেলোয়াড়ই নিচু শ্রেণী থেকে উঠে এসেছিল। আবার ডাচদের ক্ষেত্রে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে উঁচু শ্রেণীর মানুষেরাই বেশি অংশ নিতে পারতো। ফুটবল খেলায় সে সময় জাতীয় দলের খেলার তুলনায় ক্লাবের খেলাগুলোই বেশী গুরুত্ব পেত। প্রথমে শুধুমাত্র ব্রিটিশ ক্লাব গঠন শুরু হলেও পরে একে একে অনেক দেশে ফুটবল ক্লাব তৈরী হয়। যা খুবই দ্রুত ফুটবলকে জনমানুষের কাছে পরিচিত করে তোলে।

ড্যনিশ ফুটবল ও ফুটবল ক্লাব

ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের পর ইউরোপের প্রথম ফুটবল ক্লাব তৈরী করে ড্যানিশরা, ১৮৭৬ সালে। যার নাম ছিলো কোপেনহেগেন বোল্ডক্লাব। ইউরোপের প্রথম ফুটবল ক্লাবও তৈরী হয় এই ডেনমার্কেই, ১৮৮৯ সালে। এসকল বিষয় মিলিয়ে ইউরোপীয় অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ড্যানিশরা বেশ শক্তিশালী ছিলো। যার ফলস্বরুপ ১৯০৮ ও ১৯১২ সালের অলিম্পিকে তারা পর পর দুইবার রৌপ্য পদক অর্জন করে।

স্প্যানিশ ফুটবল

স্পেনে ফুটবলের চল তৈরী হয় মূলত স্পেনে কাজ করতে আসা ব্রিটিশ অভিবাসীদের মাধ্যমে। উনিশ শতকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে ফুটবল খেলা অভিবাসীদের থেকে স্পেনের সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। খেলাটিকে স্পেনে জনপ্রিয় করার জন্য তৎকালীন স্পেনের রাজা ত্রয়োদশতম আলফোনসের ভূমিকা অনেকখানিই। তিনি ১৯০২ সালে স্পেনের বাস্ক, ক্যাটালনিয়া ও মাদ্রিদের অঞ্চলগুলোর বেশ কিছু দলের মধ্যে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও আঞ্চলিক বিভক্তির কারণে স্প্যানিশ জাতীয় দল তৈরি করাটা ছিল বেশ কঠিন। এ কারণেই তারা ১৯০৪ সালে ফিফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কোন জাতীয় দল তৈরী করতে পারে নি।

ইতালীয় ফুটবল

ইতালিতে ফুটবলের সূচনাটা হয়েছে আসলে ব্রিটিশ, সুইস ও ইতালির উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের দ্বারা। যার কারণে এখনো ইতালির ফুটবলে সেখানকার উচ্চ শ্রেণীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইতালির ফুটবলের উত্থান স্পেনের সমসাময়িক। উনিশ শতকের শেষের দিকে ইতালির প্রথম ফুটবল ক্লাব তৈরী হয়। এবং ১৮৯৮ সালে ইতালিতে প্রথম জাতীয় পর্যায়ে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ফুটবল

ইউরপিয়ান ফুটবল ম্যাচ
সূত্রঃ গেম অফ পিপল

ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফুটবলের উত্থান স্পেন বা ইতালির সাথে একই সময়েই শুরু হলেও এখানে ফুটবলের বিস্তার ঘটাতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয়। স্পেন ও ইতালিতে ফুটবল আসার আগে তেমন কোন জনপ্রিয় খেলা প্রচলিত ছিল না। কিন্তু ফ্রান্স ও জার্মানিতে আগে থেকেই সাইক্লিং ও জিমন্যাস্টিকস (Gymnastics) সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচুর জনপ্রিয় ছিল। ফলে এই দুটি খেলাকে টেক্কা দিয়ে ফুটবলের জনপ্রিয় হওয়াটা খুব সহজ হয় নি। 

ফ্রান্সের প্রথম ফুটবল দল তৈরী হয় মূলত স্কটিশ ও ইংরেজদের হাতে। যদিও তখন প্রায় একই সময়ে কিছু ফরাসি ছাত্ররাও নিজেদের দল গঠন করে। ফ্রান্সে প্রথম জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৯৪ সালে। তারপর থেকেই মূলত ফ্রান্সে ফুটবল জনপ্রিয় হতে থাকে এবং একের পর এক নতুন নতুন দল তৈরী হয়। তবে অনেক দল তৈরি হলেও ফ্রান্সে একটি ফুটবল ফেডারেশনের জন্ম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। ফ্রান্সে ফুটবল ফেডারেশন প্রথম তৈরী হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। 

জার্মানিতে অবশ্য ফুটবলের যাত্রা ছিল আরো কঠিন। দেশটিতে ফুটবলের প্রথম পরিচয়ের পর থেকে জনপ্রিয় হতে প্রায় ত্রিশ বছরের মতো সময় লাগে। জার্মানির প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৪ সালে। কিন্তু খেলার নিয়মকানুন জার্মানির মানুষের কাছে পৌছায়ই ১৮৯১ সালে। তবে এর পর আর জার্মান ফুটবলকে পিছনে ফিরতে হয় নি। এর পরবর্তী ১০ বছরে জার্মানিতে ২০০ টিরও বেশি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দশ হাজারেরও বেশী ফুটবল খেলোয়াড় নিয়মিতভাবে খেলায় অংশ নেয়। এরপর ১৯০৩ সালে জার্মানিতে জাতীয় পর্যায়ের প্রথম ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল

দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল টিম সালঃ ১৮৭৬
দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল টিমের চিত্র। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

ইউরোপের অনেকগুলো দেশের মতই দক্ষিণ আমেরিকাতেও ফুটবল খেলার শুরুটা হয়েছে কাজের জন্য আসা ব্রিটিশ অভিবাসীদের হাত ধরে। দক্ষিণ আমেরিকাতে খনিজ পদার্থের প্রাচুর্যের কারণে সেসময় ইংল্যান্ড থেকে অনেক মানুষই কাজের জন্য সেখানে যেতো, ফলে তাদের মাধ্যমেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ফুটবল জনপ্রিয় হতে থাকে। এমনকি এই মহাদেশটিতে ১৮৬৭ সালের প্রথম ফুটবল ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশদের মধ্যে। এর ২৬ বছর পরে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনায় প্রথম ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু হয়। যেটি এখনো আর্জেন্টাইন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে চালু রয়েছে। যদিও সেসময় খেলোয়াড়রা প্রায় সবাই ছিল ব্রিটিশ। এরপর উনিশ শতাব্দীর শেষদিকে ব্রাজিলের প্রথম দল ও টুর্নামেন্ট চালু হয়। সেখানেও অবশ্য ব্রিটিশদের আধিপত্যই বিরাজ করছিল। কিন্তু তার পরেই ব্রাজিল ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোর সাধারণ মানুষ ফুটবল খেলায় অংশ নেয়া শুরু করে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই দক্ষিণ আমেরিকার মানুষরাই ফুটবল দলগুলোতে খেলায়াড় হিসেবে মূখ্য ভুমিকা রাখা শুরু করে। 

বিশ্বকাপ ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবলে ১৯২১ সালে উরুগুয়ে ফুটবল টিম
উরুগুয়ে ফুটবল দল ১৯২১। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

ফুটবল বিশ্বকাপ, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই যেন আগ্রহের এক কেন্দ্রবিন্দু। তবে এর শুরু হয়েছিলো জুলস রিমেট নামক এক ফরাসি ব্যাক্তির হাত ধরে। তিনি আর কেউ নন, ১৯২১ সালে ফিফা এর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। অলিম্পিক টুর্নামেন্টকে অনুসরণ করে তিনি ফুটবল বিশ্বকাপের সূচনা করেন। প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৩০ সালে। উরুগুয়ের মাঠগুলো কাপিয়ে ১৩টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো সেই বার। তবে স্বাগতিক দল উরুগুয়েই জিতেছিল বিশ্বকাপ। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে তারা জিতে নেয় রিমেট ট্রফি। সে সময় বিশ্বকাপ ট্রফির নামকরণ করা হয়েছিলো ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিমেট এর নামানুসারেই। পরবর্তীতে ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে আরো দুইটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৪ সালে ১৬টি দল বিশ্বকাপ খেললেও ১৯৩৮ সালে খেলে ১৫টি। কারণ ততদিনে অস্ট্রিয়াকে জার্মানি দখল করে নিয়েছিলো। এরপরের বেশ কটি বছর ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক অন্ধকার সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন অনেক সমীকরণকেই পালটে দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালো থাবা 

মানব ইতিহাসে আধুনিক সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। এ যুদ্ধের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি ভুগেছিল ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ। কিন্ত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো তুলনামূলক বেশ নিশ্চিন্তেই ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপীয় দেশগুলো ফুটবলে অনেক প্রভাব বিস্তার করতো। বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা খর্ব হওয়ায় সে শূন্য স্থান পূরণ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। যার মধ্যে অন্যতম ছিল আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও কলাম্বিয়া। সেসময় ওই মহদেশের রেডিওর চল শুরু হওয়ায় পুরো মহাদেশের মানুষই এ খেলা উপভোগ করতে শুরু করে। এমনকি ফুটবল খেলার যে ‘গোল’ শব্দ তাও তখন প্রথম উচ্চারিত হয় রেবেলো জুনিয়র নামের এক ব্রাজিলিয়ান বার্তাপাঠকের কন্ঠে।

অবশ্য ইউরোপ থেকে ফুটবলের নাম-নিশানা মুছে গিয়েছিলো এমনটাও নয়। যেসব ইউরোপীয় দেশ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ছিল তারা ফুটবল খেলা অব্যাহত রাখে। যেমন আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেইন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুর্কি ইত্যাদি। এমনকি ইটালি, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোতেও ফুটবল খেলা হয়েছে। খোদ জার্মানিই ১৯৪২ সালে তার দখলকৃত ও বন্ধু দেশগুলোর সাথে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। এমনকি ১৯৪৪ সালে বার্লিনের পতনের মাত্র কয়েক মাস আগেও জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। 

বিশ্বকাপের নবযাত্রা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরো অনেক কিছুর পাশাপাশি বিশ্বকাপ ফুটবলও হালে পানি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় নি। ১৯৫০ সালে সেই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলে। আর সেই বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ব্রাজিল তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম বানায় রিও ডে জেনেরো শহরে। মারকানা নামক এই স্টেডিয়ামের ফাইনাল ম্যাচ দেখেছিলো ২ লক্ষের বেশি মানুষ। যা আজ অবধি রেকর্ড। তবে ব্রাজিলিয়ানদের চরম হতাশ করে সেবার ২-১ গোলে কাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে।

ফুটবলে প্রাণসঞ্চার

ইউরোপে ফুটবল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইউরোপের দেশগুলো আবারো ফুটবলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ১৯৪৯ সালে ব্রিটেনে ফুটবলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গস্পর্শী আকার ধারণ করে। এই ব্যাপক জনপ্রীয়তা ৬০ এর দশক অবধি স্থায়ী হয়েছিলো। তবে  লীগ পর্যায়ে ব্রিটিশরা দারুণ দেখালেও বিশ্বকাপের ময়দানে গল্পটা ছিল অন্য রকম। ১৯৫০ সালে বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্যে মাঠে নেমে প্রথম খেলায় চিলিকে হারায় তারা। কিন্তু পরবর্তী ম্যাচেই হেরে বসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যা ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বিপর্যয়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ইতিহাসে এটি অন্যতম সোনালি অধ্যায়। এরপর স্পেনের কাছে হেরে ঘরে ফিরতে হয় ব্রিটিশদের। 

অপরদিকে বিশ্বযুদ্ধে হেরে বসে থাকা জার্মানির গল্পটা কিন্তু ভিন্ন। বিশ্বযুদ্ধে হারলেও ১৯৫৪ সালে বিশ্বকাপটা ঠিকই জিতে নেয় তারা। প্রচন্ড শক্তিশালী হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভাবনীয় ভাবে জেতে পশ্চিম-জার্মানি। আর তাদের সে জয়ের পেছনে অন্যতম কারণ ধরা হয় তাদের জুতোগুলোকে। জার্মান প্রতিষ্ঠান এডিডাস (Adidas) এর প্রস্তুতকৃত জুতোগুলো কাদার বিরুদ্ধে অধিক কার্যকরীতা ছিল সে জয়ের অন্যতম নিয়ামক।  

ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (UEFA)

ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (UEFA) ১৯৫৫
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

ক্লাব ফুটবলের স্বর্গ বলা চলে ইউরোপকে। ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাজিল ওরফে দক্ষিণ আমেরিকারই আধিপত্য ছিল। কিন্তু সে সময় ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয় দলগুলো ছিল মূলত ইউরোপের। ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বস্তুত ইউরোপের ফুটবল খেলুড়ে ক্লাবগুলোর একটি সংগঠন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় দ্যা ইউরোপিয়ান কাপ। যা বর্তমানে পরিচিত ‘চ্যাম্পিয়ন্স লীগ’ (Champions League) নামে। আর এসব ক্লাব ফুটবলের মাধ্যমেই ইউরোপের সাধারণ জনগণের ভেতর ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। সে সময় ইউরোপে টিভির বহুল প্রচলন পুরো প্রক্রিয়াটিকেই করে তুলেছিলো আরো গতিশীল। 

পেলেঃ ফুটবলের রাজা

বিশ্বসেরা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারঃ পেলে
সুত্রঃ বিবিসি

পৃথিবীতে এমন কোন ফুটবলপ্রেমী নেই যে পেলেকে চেনে না। ১৯৪০ সালে জন্মে ১৯৫৮ সালেই তিনি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন। ফুটবলের রাজার বদৌলতে সামনের বছরগুলোতেও ব্রাজিলের আধিপত্য বজায় ছিল। ১৯৬২ ও ১৯৭০ এর বিশ্বকাপেও জয়ী হয় ব্রাজিল। এই পুরোটা সময় জুড়েই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেলে ছিলেন তুলনাহীন। সমস্ত রেকর্ড চূর্ণ-বিচুর্ণ করেই তিনি ‘ফুটবলের রাজা’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়াও ফিফা কর্তৃক তাকে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার এর সম্মাননা দেওয়া হয়। ফুটবলের ইতিহাস বলতে হলে ব্রাজিল ও পেলের কথা আসবেই বটে।

কোপা আমেরিকা 

ফুটবলের জন্ম ইউরোপের একটি দেশে হলেও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোই ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করেছে। সেই ১৯১০ সাল থেকেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে। ১৯৭৫ সাল থেকে যা পরিচিতি পায় ‘কোপা আমেরিকা’ নামে। দা সাউথ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (CONMEBOL) এর তত্ত্বাবধায়নে সংগঠিত এই কোপা আমেরিকা বহু আগে থেকেই সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। কিছুদিন আগের ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচটি হয়তো এ প্রজন্মের অনেকেরই দীর্ঘদিন মনে থাকবে। 

রাজনীতি, যুদ্ধ ও ফুটবল 

ফুটবল কোন নিছক খেলা নয়। লাখো মানুষের আবেগ এর সাথে জড়িয়ে থাকায় স্বভাবতই রাজনীতিতে এর প্রভাব অনস্বীকার্য। আধুনিক ফুটবলের প্রথম দিনগুলো থেকেই রাজনীতিবিদরা ফুটবলের তারকা খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রচারযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। সে ধারা এখনো অব্যাহত আছে। এছাড়াও শত্রু দেশের বিরুদ্ধে খেলার মাঠে জয় যেন অনেক নাগরিকের কাছেই এক পরোক্ষ বিজয় বলেই মনে হয়। ফুটবলের প্রতি আবেগকে পুঁজি করে অনেক শাসকই প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। বেনিটো মুসোলিনি থেকে শুরু করে স্বয়ং হিটলারও এর ব্যাতিক্রম নন। এমনকি আর্জেন্টিনার শাসক হুয়ান পেরন তার দেশকে ১৯৪৯ সালের কোপা আমেরিকা ও ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে দেয় নি। কারণ সে সময় আর্জেন্টিনার হার জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারতো। এছাড়া ফুটবলকে অনেক সময়ই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ সমস্যার কারণে আফ্রিকান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল দলকে বার বার বয়কট করেছে। 

শুধু রাজনীতিতে ফুটবলের ব্যবহার রয়েছে তা নয়। এমনকি শুধু ফুটবলকে ঘিরে যুদ্ধের ইতিহাসও রয়েছে। ১৯৬৯ সালে এল সালদাভর ও হন্ডুরাসের মধ্যে  ১০০ ঘন্টাব্যাপী একটি যুদ্ধ হয় যা ১০০ ঘন্টার যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

শেষকথা

যুগে যুগে ফুটবল সারা বিশ্বের মানুষের বুকে স্থান করে নিয়েছে। কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছে হাজারো কোটি মানুষ। শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ফুটবলের এই যে জনপ্রিয়তা, এরই কারণে ফুটবলকে এক কথায় বলা চলে অসাধারণ। আশা করি, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা বাদেও বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলোও ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লিখবে। বিশেষত বাংলাদেশও হয়তো একদিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে গর্বের সাথে অবস্থান করবে। সেই সময়ের অপেক্ষায়।

 

তথ্যসূত্র

১। The history of football (soccer) (footballhistory.org)

২। History of Association Football (Soccer) From Early Beginnings To Present (thepeoplehistory.com)

৩। Association Football or Soccer as it also known (historic-uk.com)

৪। History | CONMEBOL Copa America 2021

৫। Football War – Wikipedia 

 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button