উন্নয়নপরিচয় পত্রপাসপোর্ট

সহজে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৩

নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম

পাসপোর্ট, ফরাসী ভাষা থেকে আসা এই শব্দটি সারা বিশ্বেই আজ সুপরিচিত। হবে নাই বা কেন, বর্তমান পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষেরই দেশ-বিদেশে ভ্রমনের জন্য পাসপোর্ট জরুরী। বিমান, রেল কিংবা নদীপথ; আপনি যদি পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া কোনভাবে এক দেশ থেকে অন্য একটি দেশে প্রবেশ করেন তবে তা অনুপ্রবেশ বলেই চিহ্নিত হবে। আর এর জন্য আপনাকে নানা শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। তাই প্রত্যেক সুনাগরিকেরই উচিত তার পাসপোর্ট করিয়ে রাখা। কারণ এটি শুধু প্রয়োজন নয় বরং প্রত্যেকের নাগরিক অধিকারও বটে। আজকে আমরা ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং এই বিষয়ক তথ্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আর আশা করি আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সূচিপত্রঃ

পাসপোর্টের প্রকারভেদ

যুগে যুগে পাসপোর্টের নানা রকমফের হয়েছে। কিন্তু মূল জিনিসটা একই রয়েছে। পাসপোর্ট মূলত একটি ছোট আকারের বই যাতে আপনার ও আপনার দেশের যাবতীয় তথ্য এবং একইসাথে আপনার বিদেশ ভ্রমণের অনুমতির তথ্যাবলী উল্লেখ করা থাকে।

পাসপোর্ট মূলত তিন প্রকারঃ

১) হাতে লেখা পাসপোর্ট

২) এমআরপি (MRP) তথা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট (Machine Readable Passport)

৩) ই-পাসপোর্ট (E-Passport)

হাতে লেখা পাসপোর্ট

বাংলাদেশি হাতে লেখা পাসপোর্টহাতে লেখা পাসপোর্টকে প্রায় সেই পুরনো যুগের পাসপোর্ট বলা চলে। যদিও কিছু দেশে এখনো হাতে লেখা পাসপোর্টের প্রচলন রয়েছে, তবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে আর কোন হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু করে নি। এর বদলে নতুন প্রযুক্তি এনেছে, যার নাম “এমআরপি তথা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট” 

এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট

বাংলাদেশি এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট“এমআরপি” হলো এমন এক ধরনের পাসপোর্ট যা মেশিন বা যন্ত্র দ্বারা শনাক্ত করা যায়। অর্থাৎ আগের হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে এমআরপি পাসপোর্টে সকল তথ্যাবলী এমনভাবে থাকে যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মেশিন শনাক্ত করতে পারবে। আর এর জন্যই একে বলা হয় “মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট”। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশী নাগরিকদের “এমআরপি পাসপোর্ট” প্রদান শুরু করেছে। এ পাসপোর্টের পরিচিতি পাতায় ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্যাবলী থাকে না। বরং পরিচিতি পাতার একটি বিশেষ অংশে অনেকগুলো সংকেত থাকে যা দেখে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। সেই অংশটির মাঝে তথ্যাবলী ‘কোডেড’ (Coded) বা লুকায়িত থাকে। যন্ত্রের সাহায্যে সেই তথ্যাবলী ইমিগ্রেশন অফিসাররা দেখে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে। এ পাসপোর্টের কারণে ভুয়া পাসপোর্টজনিত অপরাধ অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে।

এমআরপি পাসপোর্টধারীরা চাইলেই স্বাভাবিকভাবে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। তাদের এখনি ই-পাসপোর্ট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বর্তমানে নতুন করে কেউ এমআরপি পাসপোর্ট নিতে পারবে না। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে। যদি আপনার এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ই-পাসপোর্টে রিনিউ বা নবায়ন করে নিতে হবে

ই-পাসপোর্ট

বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টএমআরপি পাসপোর্টেরও আধুনিক রূপ হলো ই-পাসপোর্ট। বর্তমান বিশ্বে এটিই পাসপোর্টের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যা বাংলাদেশ সরকার মুজিববর্ষে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি এ দেশের নাগরিকদের জন্য চালু করেছে। ই-পাসপোর্টকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ও বলা হয়ে থাকে। এই বিশেষ পাসপোর্টে সিম কার্ডের মতো একটি ছোট আকারের চিপ লাগানো থাকে। চিপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে মাইক্রো প্রসেসর এবং এন্টেনা প্রযুক্তি। এই চিপের ভেতর পাসপোর্টধারীকে শনাক্ত করার জন্য থাকবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবলী। যেমনঃ পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, চোখের আইরিশের স্ক্যান, ১০ আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ ইত্যাদি। ই-পাসপোর্ট এ থাকছে ই-বর্ডার বা ইলেক্ট্রনিক বর্ডার প্রযুক্তি যার সাহায্যে চিপের বাইরের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনামূলক যাচাই করা যাবে। পাসপোর্টের চিপের তথ্য যাচার করার জন্য থাকছে “পাবলিক কি ইনফ্রাষ্ট্রাকচার” (PKI) প্রযুক্তি। উল্লেখ্য যে, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই এই অত্যাধুনিক পাসপোর্ট প্রথম ইস্যু করা শুরু করেছে।

ভিডিও ক্রেডিটঃ Department of Immigration and Passports

ই-পাসপোর্টের সুবিধা

ই-পাসপোর্ট যেহেতু সর্বাধুনিক তাই পুরনো পাসপোর্টের তুলনায় এর সুবিধাগুলোও অনেক বেশি। ই-পাসপোর্টের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি যেই সুবিধাটা ভোগ করবেন সেটি হলো দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হওয়া। আমরা অনেকেই জানি, ইমিগ্রেশন পার হওয়াতে অনেক সময় একটু বেশিই সময় লেগে যেতে পারে। যা দীর্ঘ যাত্রার পরে অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে অসহ্য। আর সে সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি মেলে ই-পাসপোর্টের সাহায্যে। যেহেতু এর মাইক্রোচিপেই পাসপোর্টধারীর সকল তথ্য থাকে তাই ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশেষ ই-গেটের সাহায্যে খুব সহজেই এবং দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব। ই-গেটে পাসপোর্টটি রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল তথ্য যাচাই হয়ে যাবে।

অতঃপর পাসপোর্টধারীর হাতের আঙুলের বায়োমেট্রিক স্ক্যান সম্পন্ন হলেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ হবে। ফলে একজন যাত্রীর অনেকটাই সময় বাঁচবে। তবে শুধু দ্রুতগতিতে ইমিগ্রেশন পার করাটাই নয় বরং এই ই-পাসপোর্টের মূল লক্ষ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অনেকসময় একজনের পাসপোর্ট আরেকজন ব্যবহার করে নানা জালিয়াতি করা হয়ে থাকে, যা জন্ম দেয় নানা জটিলতার। ই-পাসপোর্টে যেহেতু সকল তথ্য মাইক্রো চিপে থাকে তাই এসকল বেআইনী কাজ সহজেই এড়ানো যাবে।

এতে রয়েছে ৩৮ ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর তাই কোনভাবে পাসপোর্টধারীর সাথে পাসপোর্টের তথ্যাবলী না মিললেই লাল বাতি জ্বলে উঠবে এবং বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন (ICAO) এর দ্বারা পরিচালিত হবে। ফলে, যেকোন স্থল, নৌ বা বিমান বন্দর হতেই পাসপোর্টের সমস্ত তথ্য মূল তথ্যকেন্দ্রের সাথে সহজেই মিলিয়ে দেখা যাবে। প্রয়োজনে পুলিশ থেকে শুরু করে ইন্টারপোলের মতো আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা গুলোও ব্যবস্থা নিতে পারবে। ফলে সন্ত্রাস দমনের মতো কঠিন কাজও বেশ খানিকটা সহজ হয়ে উঠবে।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক নতুন ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগেঃ

২০২৩ সালে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১) ই-পাসপোর্ট আবেদন এর প্রিন্ট কপি

২) পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২ কপি

৩) জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ

৪) শিক্ষাগত সনদ

৫) এপয়েন্টমেন্ট এর প্রিন্ট কপি

৬) আগের যদি পাসপোর্ট থাকে, তাহলে তার ডাটা পেইজ এর ফটোকপি

৭) পেশাগত সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে)

৮) নাগরিক সনদ

সূত্রঃ epassport.gov.bd

ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম

ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা ১
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা-১ | সূত্রঃ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা ২
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা-২ | সূত্রঃ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা ৩
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পৃষ্ঠা-৩ | সূত্রঃ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর

এ ছাড়াও ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পিডিএফ (PDF) ডাউনলোড করুন এই লিংকেঃ E-Passport PDF Form Downoad

ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী

ই-পাসপোর্ট এর ফরম পূরণের সময় কিছু নির্দেশাবলী অবশ্যই মেনে চলতে হবে। 

১) ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে অথবা পিডিএফ (PDF) ফরম্যাটে ডাউনলোড করেও পূরণ করা যাবে।

২) ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র অথবা ছবি সত্যায়িত করার প্রয়োজন হবে না।

৩) আবেদনের সময় নাম, জন্মতারিখসহ সকল তথ্যাবলী জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।

  • ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ অনুযায়ী।
  • ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ অনুযায়ী।
  • ২০ বছরের উর্ধ্বে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক। আপনি যদি আইডি কার্ড না পেয়ে থাকেন তবে, জাতীয় পরিচয় পত্রের অনলাইন কপি ডাউনলোড করে জমা দিলেও হবে। এছাড়াও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন থেকে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।

৪) ১৮ বছরের কম অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক আবেদনকারী যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নেই, তাকে তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাম্বার অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

৫) তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।

৬) অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে আবেদনকারীর জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর। 

এবার আমরা আপনাদের ধাপে ধাপে দেখাবো কিভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেনঃ

ই-পাসপোর্টের আবেদন করার নিয়ম ২০২৩

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সেজন্য প্রথমেই ই-পাসপোর্ট আবেদনের সরকারি ওয়েবসাইটে চলে যান। ওয়েবসাইটে গেলেই উপরে ডান দিকে ইংরেজি ও বাংলা দুই ধরনের ভাষা নির্ধারণ করতে পারবেন। আপনি যেই ভাষায় আবেদন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেই ভাষাটি বাছাই করুন।

ই-পাসপোর্ট আবেদনের ৫ টি ধাপঃ

ধাপ ১ঃ বর্তমানে বসবাসরত জেলাতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা।

ধাপ ২ঃ অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করা।

ধাপ ৩ঃ পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা।

ধাপ ৪ঃ ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রদানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হওয়া।

ধাপ ৫ঃ পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করা।

উক্ত ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ‘Apply Online‘ অনলাইনে আবেদন’ নামক একটি ট্যাব (Tab) চোখে পড়বে। তাতে ক্লিক করলেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমেই আপনি যেখানে বসবাস করেন তার আশেপাশের কোথায়  ই-পাসপোর্ট অফিস আছে তা খুঁজে নিকটস্থ অফিসটি বাছাই করে নিতে হবে।

এবার, ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য পরবর্তী উইন্ডোতে আপনি যেতে পারবেন। সেখানে অবশ্যই আপনার ইমেইল এড্রেস প্রবেশ করাতে হবে। নিজের নাম (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী) ও মোবাইল নাম্বার প্রবেশ করিয়ে একটি পাসওয়ার্ড সেট করে একাউন্ট খুলতে হবে। একাউন্ট খোলার পর আপনার দেওয়া ইমেইল এড্রেসে একটি কনফারমেশন ইমেইল (Confirmation Email) যাবে। সেখান থেকে একাউন্টটি কনফার্ম করে নিতে হবে। অতঃপর আবেদন ফরমের প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাবলী পূরণ করতে হবে।

অতি জরুরী ই-পাসপোর্টের আবেদন করার নিয়ম ২০২৩

অনেক সময় অনেকেরই অতি জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মাত্র দুই কর্মদিবসের মাঝে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য অতি জরুরী বা ‘Super Express’ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। তবে অতি জরুরী এই পাসপোর্ট সেবার সম্পর্কে কিছু তথ্য না জানালেই নয়।

১) দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অতি জরুরী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা গেলেও বিদেশে বাংলাদেশ মিশন থেকে এর জন্য আবেদন করা যায় না।

২) দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আবেদন করা গেলেও অতি জরুরী পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে অবশ্যই ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আসতে হবে।

৩) অতি জরুরী পাসপোর্টে আবেদনের পূর্বে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকা আবশ্যক

৪) বর্তমানে এই সেবাটি শুধুমাত্র পূর্বের এমআরপি পাসপোর্টধারীদের জন্যই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ আপনি নতুন আবেদনকারী হলে অতি জরুরী পাসপোর্টের জন্য এখন অবধি আবেদন করতে পারবেন না। 

পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

প্রত্যেক ব্যক্তিকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়। পাসপোর্ট ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। পাসপোর্টের ফি পাসপোর্টের ধরণ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে। চাইলে খুব সহজেই অনলাইনে ফি পরিশোধ করা সম্ভব। তবে কেউ চাইলে স্ব-শরীরে ব্যাংকে গিয়েও ফি পরিশোধ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনে ফি পরিশোধের পরে আপনার অনলাইন আবেদনের সারাংশতে পরিশোধকৃত টাকার পরিমাণ যোগ হয়ে যাবে। যদি সারাংশতে পরিমাণটি যুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই অনলাইনে চালানের কপি অথবা যার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করেছেন তার কাছ হতে ‘পেমেন্ট স্লিপ’ (Payment slip) সংগ্রহ করে রাখবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করলে ব্যাংক হতে স্লিপ সংগ্রহ করে রাখবেন এবং বায়োমেট্রিক আবেদনের সময় তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দেবেন। 

বিভিন্ন পাসপোর্টের ফি সমূহ

পাসপোর্টের ধরণ ও দ্রুততার ওপর ভিত্তি করে পাসপোর্টের ফি নির্ধারিত হয়। নিম্নে পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি সমূহ দেওয়া হলোঃ

৫ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৪৮ পাতার পাসপোর্ট
  • নিয়মিত পাসপোর্ট- ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৪,০২৫ টাকা
  • জরূরী পাসপোর্ট- ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৬,৩২৫ টাকা
  • অতি জরুরী পাসপোর্ট- ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৮,৬২৫ টাকা 
১০ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৪৮ পাতার পাসপোর্ট
  • নিয়মিত পাসপোর্ট- ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৫,৭৫০ টাকা
  • জরূরী পাসপোর্ট- ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৮,০৫০ টাকা
  • অতি জরুরী পাসপোর্ট- ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ১০,৩৫০ টাকা
৫ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৬৪ পাতার পাসপোর্ট
  • নিয়মিত পাসপোর্ট- ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৬,৩২৫ টাকা
  • জরূরী পাসপোর্ট- ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৮,৩২৫ টাকা
  • অতি জরুরী পাসপোর্ট- ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ১২,০৭৫ টাকা 
১০ বছরের মেয়াদ সম্বলিত ৬৪ পাতার পাসপোর্ট
  • নিয়মিত পাসপোর্ট- ১৫ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ৮,০৫০ টাকা
  • জরূরী পাসপোর্ট- ৭ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ১০,৩৫০ টাকা
  • অতি জরুরী পাসপোর্ট- ২ কর্মদিবসের মাঝে প্রদানঃ ১৩,৮০০ টাকা 

ই-পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন 

অনলাইন পুলিশ ছাড়পত্র/ভেরিফিকেশন পুলিশ ভেরিফিকেশন পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার যদি পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদ না থাকে তাহলে কোনভাবেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন না। বায়োমেট্রিক আবেদনের পূর্বেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে এবং সেই সনদ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। আবেদনের অন্যান্য সকল তথ্য ঠিক থাকা সাপেক্ষে আপনি পাসপোর্ট পাবেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক পুলিশ ভেরিফিকেশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলীঃ

১) আবেদন পত্রে আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা যেই মেট্রোপলিটন/জেলা পুলিশের অধীনে পরে সেই মেট্রোপলিটন/জেলাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। 

২) যদি কেউ বিদেশ থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করে তাহলে তার বর্তমান ঠিকানা হবে তিনি দেশে থাকা অবস্থায় যেই ঠিকানায় থাকতেন সেই ঠিকানা।

৩) বিদেশ থেকে কোন বাংলাদেশী পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য আবেদন করলে তার আবেদনপত্র অবশ্যই সে দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশী হাইকমিশন দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।

৪) এ প্রক্রিয়ায় দেশে অথবা বিদেশে থাকা বাংলাদেশী ও একইসাথে একবার বাংলাদেশে থেকে যাওয়া বিদেশীও পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

৫) উল্লেখ্য যে, অভ্যন্তরীণ নানা কাজেও অনেকসময় পুলিশ ভেরিফিকেশন এর প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে জেলা বা শহরের স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। 

৬) যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

অনলাইন আবেদনপত্রে যদি বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন দিয়ে থাকেন, তাহলে দুই স্থানেই ভেরিফিকেশন হবে। যদি একই দিয়ে থাকেন, তাহলে এক স্থানে ভেরিফিকেশন করালেই চলবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন মূলত আবেদনে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক দিয়েছেন কিনা তা যাচাই করার প্রক্রিয়া। তাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের পূর্বে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখা ভাল।

নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক আবেদনের জন্য উপস্থিত হওয়া

নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক আবেদনের জন্য উপস্থিতনির্ধারিত ফী পরিশোধ ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরে এবার বায়োমেট্রিক আবেদনের পালা। এক্ষেত্রে নিয়মিত নিজের একাউন্টে ঢুকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হলো কিনা তা দেখে নেবেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হলে নির্ধারিত দিন তারিখ ও সময় অনুযায়ী আপনাকে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে।

এ সময় যেসকল কাগজপত্র আপনার সাথে রাখতে হবেঃ

১) আবেদনপত্রের সারংশের প্রিন্ট কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ)

২) শনাক্তকরণ নথির প্রিন্ট কপি (জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্ম নিবন্ধন নং)

৩) পেমেন্ট স্লিপ 

৪) পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি (যদি থাকে) 

৫) তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যদি থাকে)

৬) আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি (ঐচ্ছিক)

এ সকল কাগজপত্রই সঠিকভাবে নিতে হবে। কোন কমতি রাখা চলবে না। পাসপোর্ট অফিসে গেলে যথাক্রমে আপনার কয়েকধরনের ছবি তোলা হবে, আপনার চোখের আইরিশের ছবি তোলা হবে। আপনার দুই হাতের দশটি আঙ্গুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে। আপনি যদি নতুন ভোটার হয়ে থাকেন এবং স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয় পত্র) এর জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে এই প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যে আপনার থাকার কথা। অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যেকোনো মানুষ সম্পন্ন করতে পারবে এমন প্রক্রিয়াতেই সব কিছু করা হয়। 

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আবেদন শেষ হলে আপনাকে ‘ডেলিভারি স্লিপ’ (Delivery Slip) নামক একটি স্লিপ দেওয়া হবে। এটির তথ্যগুলো ভালোভাবে পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিন এবং সাবধানে সংরক্ষণ করুন। কারণ এটি ছাড়া কোনভাবেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন না। 

পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক (Status Check) 

পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেকপাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক বা অবস্থা নির্ধারণ করাটা বেশ স্বস্তিদায়ক একটি প্রক্রিয়া। এর সাহায্যে আপনি আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করতে আবারো ই-পাসপোর্ট এর ওয়েবসাইটে যান। সেখানেই মেনুবারের ডান দিকে ‘STATUS CHECK’ নামক একটি অপশন পাবেন। স্ট্যাটাস চেক করতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি অথবা বায়োমেট্রিক আবেদনের সময় স্লিপে দেওয়া ‘অ্যাপ্লিকেশন আইডি’ প্রয়োজন হবে। পাসপোর্ট তৈরি হলে তা আপনি এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে সহজেই জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনার মোবাইল নাম্বারে এ সংক্রান্ত একটি ম্যাসেজ যাবে।

পাসপোর্ট সংগ্রহ

অবশেষে পাসপোর্ট সংগ্রহের পালা। পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য আবারো সেই পাসপোর্ট অফিসে যান। (তবে অতি জরুরী পাসপোর্টে শুধুমাত্র রাজধানীর আগারগাঁও অফিস থেকেই সংগ্রহ করা যাবে) অবশ্যই সাথে করে ‘ডেলিভারি স্লিপ’ টি নেবেন। অতঃপর ডেলিভেরি স্লিপ দেখিয়ে আপনার আরাধ্য পাসপোর্টটি সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন, পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য স্ব-শরীরে যাওয়াটাই উত্তম। নিতান্তই অপারগ হলে আপনার হয়ে একজন সত্যায়িত প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন। পাসপোর্ট সংগ্রহের পরে দেখে নিন পাসপোর্টের সবকিছু ঠিক আছে কিনা।

পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে তার প্রতিকার

নাম বা অন্য তথ্য ভুল হলে করনীয়

পাসপোর্টের আবেদন করার সময় খুবই সাবধানে আবেদন করা উচিত। তবুও মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার অনলাইন আবেদনের সারাংশ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে দ্রুত যোগাযোগ করুন। পাসপোর্ট অফিসের এনরোলমেন্ট অফিসারের সহায়তায় ভুল সংশোধন করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি নাম ভুল করলেও তা ঠিক করে নেওয়া সম্ভব। তবে নাম বা অন্যান্য তথ্যের শুদ্ধতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ। উল্লেখ্য, ফি পরিশোধের পরেও ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকে। তবে নাম ভুল করলে ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে যার জন্য অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে হবে।

অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত না থাকতে পারলে করণীয়

অনলাইনে আবেদনের পরে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার নির্ধারিত সময় দেওয়া হবে। যদি কোন কারণে সেই সময়ে উপস্থিত থাকতে অপারগ হন তাহলে নিজের একাউন্টে লগইন করুন। সেখানে অনলাইন নিবন্ধনের ‘Re-schedule/Cancel’ বাটনে ক্লিক করে আপনি আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় পরিবর্তন করতে পারবেন। বা কোন কারণে যদি পরিবর্তন না করেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করে ফেলেন তাহলেও পরে আবার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু পরামর্শ থাকবে একবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলে তা কোনভাবেই না হারানো।

আবেদন করেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পেলে করণীয়

সত্যি বলতে এ মুহূর্তে এর কোন প্রতিকার নেই। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার একটাই উপায় আছে। তা হলো অনলাইন আবেদন করে অপেক্ষা করা। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলেন কিনা তা জানতে ঘন ঘন একাউন্ট চেক করতে পারেন। মূলত আঞ্চলিক অফিস গুলোতে এই সমস্যাটা বেশি হয়ে থাকে। অফিসের সক্ষমতা না বাড়ালে এই সমস্যা সমাধানের আর কোন উপায় নেই। তাই এই সমস্যা এড়াতে ‘অফ সিজন’ এ আবেদন করুন। কারণ বিদেশ যাওয়ার মৌসুমে অফিসে প্রচুর চাপ থাকে।

পূর্বের পাসপোর্টের সাপেক্ষে বর্তমানে কোন তথ্য পরিবর্তন হলে করণীয়

অনেক সময়ই পূর্বের পাসপোর্টের সাপেক্ষে আপনার বর্তমান তথ্যাবলী নাও মিলতে পারে। যেমনঃ বর্তমান ঠিকানা, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা। এসব তথ্য পরিবর্তন যোগ্য। অনলাইন আবেদনের সময় বর্তমান তথ্যাবলী সহকারেই আবেদন পূরণ করুন। তবে পাসপোর্ট অফিসে আবেদনের সময় পেশা পরিবর্তনের প্রমাণ দেখাতে হবে। যেমনঃ বর্তমান পেশার প্রশংসাপত্র। শিক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখাতে হবে।  বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তিত হলে অবশ্যই বিয়ের সনদ দাখিল করতে হবে। এছাড়াও বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হলে নতুন ঠিকানায় আবারো পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হবে। নাহলে আবেদন বাতিল হবে এবং পরিশোধিত ফি আর ফেরত দেওয়া হবে না।

অনলাইন আবেদনে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল পরিবর্তন করতে চাইলে করণীয়

অনলাইন আবেদনের পরে কোন কারণে এই দুটি তথ্যের পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিলে শুধু মোবাইল নাম্বার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সফল হবেন। একাউন্টে লগইন করে ‘একাউন্ট ডাটা’ (Account Data) সিলেক্ট করুন। সেখান থেকে এসএমএস নোটিফিকেশন ডিএক্টিভেট করে নতুন নাম্বার প্রবেশ করান যেখানে নতুন এসএমএস সমূহ যাবে। উল্লেখ্য, যে একটি মোবাইল নাম্বার শুধুমাত্র একটি একাউন্ট তৈরিতেই ব্যবহার করতে পারবেন। 

ইমেইল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এমন কোন সু্যোগ নেই। নতুন ইমেইল ব্যবহার করতে চাইলে একাউন্ট বাতিল করে নতুন ইমেইল খুলে নতুন আবেদন করতে হবে। উল্লেখ্য যে একাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে শুধুমাত্র ইমেইল এড্রেসের সাহায্যেই পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

শেষ কথা

সর্বোপরি ই-পাসপোর্ট এ দেশের বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ছবি সত্যায়নের প্রয়োজন না থাকায় ঝামেলা কমেছে অনেকটুকু। তৈরি হয়েছে দ্রুততার সাথে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সুযোগ। জালিয়াতি হয়ে উঠেছে প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে করার সুযোগ থাকায় আগের চেয়ে দূর্ভোগও কমেছে বেশ খানিকটা। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রত্যেক নাগরিকের ই-পাসপোর্ট নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী।

সাধারন জিজ্ঞাসা

১) আমার ইমেইল এড্রেস নেই, আমার পক্ষে কি অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব?

উত্তরঃ না। অনলাইনে আবেদনের জন্য ইমেইল এড্রেস অপরিহার্য। এটি ছাড়া আপনি কোনভাবেই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন না। তাই অনলাইনে আবেদন করতে একটি ইমেইল এড্রেস খুলে ফেলুন। এক্ষেত্রে ‘Google’ এর ‘Gmail’ নামক ইমেইল পরিষেবাটি ব্যবহার করতে পারেন।

২) অনলাইন আবেদনের পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি; এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে আপনার ইমেইলটি আপনার একমাত্র ভরসা। একাউন্ট উদ্ধার করতে

  • একাউন্ট লগইন এর স্থানে যান।
  • Forgot Password’ লেখা লিংকে ক্লিক করুন।
  • এবার আবেদনের একাউন্টের সাথে সংযুক্ত ইমেইল একাউন্টে লগ ইন করুন।
  • একটি ইমেইল এসেছে। তাতে নতুন পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবেন।

৩) একাউন্ট খোলার সময় ইমেইল এড্রেস প্রবেশ করালেও একাউন্ট কনফারমেশনসহ ইমেইল পাই নি; এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তরঃ প্রথমেই ইমেইলটি সঠিকভাবে দিয়েছেন নাকি কোন বানান ভুল হয়েছে তা নিশ্চিত হয়ে নিন। বানান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকলে ইমেইল একাউন্টে লগ ইন করে ইনবক্সের ‘Spam’ নামক ফোল্ডারে যান। অনেক সময় অজানা ইমেইলকে গুগল বা অন্যান্য ইমেল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করে স্প্যাম নামক ফোল্ডারে জমা করে রাখে।

৪) অনলাইন হতে পিডিএফ নামিয়ে তা হাতে লিখে পূরণ করে আবেদন করা যাবে কি?

উত্তরঃ না। অনলাইন হতে পিডিএফ নামিয়ে তা আবার পিডিএফ ফরম্যাটেই এডিট করে সমস্ত তথ্যাবলী বসাতে হবে। পিডিএফ এডিট করার জন্য ‘Adobe Acrobat Reader DC’ ব্যবহার করতে পারেন। তবে পিডিএফ এর প্রিন্ট কপিতে হাতে লিখে আবেদন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ই-পাসপোর্টের আবেদনে সবকিছু ডিজিটালি করতে হবে, এখানে হাতে লেখার কোন স্থান নেই।

৫) পিডিএফ নামিয়ে প্রিন্ট করে আবেদনের ক্ষেত্রে কি অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া সম্ভব?

উত্তরঃ না। অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট শুধুমাত্র অনলাইন আবেদনকারীদেরই দেওয়া হয়। প্রিন্ট কপির মাধ্যমে আবেদন করতে চাইলে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আবেদন করতে হবে।

৬) আমার এসএসসি/এইচএইচসি এর সার্টিফিকেটে নামের বানান এবং জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান ভিন্ন; এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে আপনার জন্ম নিবন্ধনের বানান অনুযায়ী সকল তথ্যাবলী পূরণ করতে হবে। কারণ পাসপোর্ট জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ীই হয়।

৭) জন্ম নিবন্ধনে আমার নাম/ বাবার নাম/ মায়ের নাম ভুল আছে। ঠিক না করে আবেদন করা উচিত হবে কি?

উত্তরঃ অবশ্যই না। যদি এই অবস্থায় আবেদন করেন তাহলে এই নামই সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাই অতি দ্রুত জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করুন।

৮) জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে কি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে?

উত্তরঃ ২০ বছরের নিচে হলে যাবে। কিন্তু বয়স সার্টিফিকেট অনুযায়ী ২০ বছরের বেশি হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে।

৯) নিয়মিত ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর কি তা জরুরী আবেদনে পরিবর্তন করা যাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। আপনার আবেদন চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হওয়ার আগ অবধি পারবেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফী অনলাইনে বা ব্যাংকে গিয়ে আবার পরিশোধ করতে হবে ও স্লিপ সংরক্ষণ করতে হবে।

১০) পাসপোর্টের তথ্যাবলী কি সত্যায়িত করার প্রয়োজন আছে?

উত্তরঃ না। এমআরপি পাসপোর্টে সত্যায়িত করতে হলেও ই-পাসপোর্টে সত্যায়িত করার প্রয়োজন নেই।

১১) ইউটিলিটি বিল বা ছাত্র আইডি কার্ড কি প্রয়োজন?

উত্তরঃ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন নেই। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে গেলে অনেক সময়ই এসব চায়। তাই সাথে রাখা ভাল।

১২) পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় কী পুলিশ আমার বাসায় আসবে নাকি আমার থানায় যেতে হবে?

উত্তরঃ যেকোনোটিই হতে পারে। হয়তো আপনার বাসায় আসবে অথবা আপনাকে থানায় যেতে বলবে। দুটির জন্যই প্রস্তুত থাকা ভালো।

১৩) ই-পাসপোর্টের জন্য কি আগের এমআরপি পাসপোর্টের প্রিন্ট করা ফরম ব্যবহার করা যাবে?

উত্তরঃ অবশ্যই না। আলাদা করে ই-পাসপোর্টের জন্য ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করাতে হবে।

১৪) আমার একটি এমআরপি পাসপোর্ট আছে। আমি কি স্বাভাবিকভাবেই আবেদন করবো?

উত্তরঃ জ্বী, আবেদনের সময় আগের পাসপোর্টের কোন তথ্যই এখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে না। নিজে থেকে তথ্যাবলী দিতে হবে। তবে তথ্যাবলীর আগের পাসপোর্টের সাথে মিল থাকলে নতুন করে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে না।

১৫) অনলাইনে আবেদন করার পর কোন তথ্য কি অফিসে না গিয়ে অনলাইনেই পরিবর্তন করা সম্ভব?

উত্তরঃ না। একবার আবেদন জমা দিয়ে ফেললে তা অপরিবর্তনীয়। আপনি তথ্য সংশোধন করতে চাইলে উপযুক্ত কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

১৬) আমি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে ফেলেছি কিন্তু তা এখন বাতিল করতে চাই। এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে আপনি আবেদন ও একাউন্টটি মুছে ফেলতে পারেন। যদি আপনি ফি পরিশোধ না করে থাকেন সেক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ পরে আপনার আবেদনের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং জন্মসনদের নাম্বার দ্বারা আবার আবেদন করতে পারবেন। যদি আপনি ফী পরিশোধ করে থাকেন তাহলে প্রমাণসহ নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।

১৭) একাউন্ট মুছে ফেলার পরে কি আমি আবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পারবো?

উত্তরঃ আপনার যদি ইতোমধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে থাকে তাহলে আপনি অনলাইন নিবন্ধকরণ আইডি সহকারে অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত হয়ে আপনার আবেদন পুনরুদ্ধার করতে পারেন। যদি না থেকে থেকে থাকে তাহলে আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবেন না।

১৮) পাসপোর্ট অফিসে দালালের উৎপাতে পড়লে কি করতে পারি?

উত্তরঃ দালাল সমস্যা কেমন হবে তা এলাকার উপর নির্ভর করে। সব পাসপোর্ট অফিসের পরিস্থিতি এক না। তবে সাধারণত দালালরা ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ১২০০-১৫০০ টাকা চেয়ে থাকে। যদি আপনার কাগজপত্র শতভাগ নিখুঁত থাকে তাহলে দালাল চক্র আপনাকে বিপদে ফেলতে পারবে না।

১৯) পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সমস্যার পড়লে কি করতে পারি?

উত্তরঃ এ ক্ষেত্রেও আপনার সকল কাগজপত্র নিখুঁত থাকা চাই। এরপরেও কোন সমস্যা হলে সরাসরি স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশের সাথে কথা বলতে পারেন।

২০) ছবির আকার ও ব্যাকগ্রাউন্ড কিরকম হবে?

উত্তরঃ প্রাপ্ত বয়ষ্ক আবেদনকারীদের জন্য কোন ছবি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ৬ বছরের ছোট বাচ্চা হলে ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডসহ বাচ্চার ছবি জমা দিতে হবে। যে সকল আবেদনকারীর বয়স ১৫ বছরের কম তাদের সকলের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি জমা দিতে হবে। সকল ছবির আকার পাসপোর্ট সাইজ অর্থাৎ ‘3R’ আকারের হতে হবে।

 

তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট পোর্টাল

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button