ওয়েবসাইটটেকনোলজি

ডোমেইন কি? ডোমেইন কত প্রকার ও কি কি?

ডোমেইন, বর্তমানের সুবিশাল এই ইন্টারনেট জগতে পথ খুঁজে পাওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে এই ডোমেইন। বৈশ্বিক গ্রামের এই আধুনিক যুগে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের তথ্য সংগ্রেহর জন্য প্রধাম মাধ্যম এখন হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। তবে সারা বিশ্বের অসংখ্য নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত এই ইন্টারনেটে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া হতো যারপরানই কঠিন। কিন্তু ডোমেইন নেইম সেই প্রক্রিয়াকে করেছে সহজ। যেহেতু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুনিয়া হবে ইন্টারনেট ভিত্তিক, তাই ইন্টারনেটের এই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সম্পর্কে জানাটাও হয়ে উঠেছে জরুরী। 

সূচিপত্রঃ

ডোমেইন (Domain) কি?

ডোমেইন (Domain) বা ডোমেইন নেম (Domain Name) হলো একটি নাম বা ঠিকানা যা ইন্টারনেটের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ তথা ওয়েবসাইট / ওয়েবপেজকে নির্দেশ করে। এটির পুরো নাম ডোমেইন নেম হলেও একে সবাই ডোমেইন নামেও চেনে।

মূলত ডোমেইন বা ডোমেইন নেম হলো একটি ঠিকানা। একটি শহরে কোনো বাড়ি খুঁজে বের করতে চাইলে প্রয়োজন নির্দিষ্ট ঠিকানার। ঠিক তেমনই ইন্টারনেটের এই বিশাল জগতে কোনো কিছু খুঁজে বের করতে হলে প্রয়োজন ঠিকানার। আর ডোমেইন নেম হলো সেই ঠিকানা বা বলা ভাল ঠিকানার সংক্ষিপ্ত রুপ। 

ডোমেইন নেম সিস্টেম (Domain Name System – DNS) 

পৃথিবীর সকল ওয়েবসাইট ও ওয়েবপেজকে নির্দিষ্ট নাম দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি ডিজিটাল নথি তৈরি এবং রক্ষা করার জন্য দায়ী সিস্টেমটিকে বলে ডোমেইন নেম সিস্টেম (Domain Name System)। এই ডোমেইন নেম সিস্টেম বুঝতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে ডোমেইন আসলে কিভাবে কাজ করে। সকল ওয়েবপেজের ঠিকানাকেই দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়।

  • হোস্ট নেম (Host Name)
  • আইপি অ্যাড্রেস (IP Address) 

হোস্ট নেম (Host Name): একটি নেটওয়ার্কে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসকে যেই নাম বা লেবেল দ্বারা চিহ্নিত করা হয় সেটিই হলো হোস্ট নেম। হোস্টে নেম সাধারণত বর্ণমালা দিয়েই প্রকাশিত হয়। 

আইপি অ্যাড্রেস (IP Address): আইপি অ্যাড্রেস হলো এক গুচ্ছ সংখ্যা ও বর্ণের সম্বনয় যা ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের অন্যন্য পরিচয় হিসেবে কাজ করে। এর পূর্ণ রুপ হলো ইন্টারনেট প্রটোকল (Internet Protocol) অ্যাড্রেস। এই আইপি অ্যাড্রেস আবার দুই রকমের হতে পারে। 

  • ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন ৪ (IPv4)
  • ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন ৬ (IPv6) 

ডিএনএস সিস্টেম এর কাজ হচ্ছে মূলত এই হোস্ট নেমের সাথে আইপি অ্যাড্রেস এর সংযোগ ঘটানো। কারণ কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের জন্য অন্য ডিভাইস খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস অনেক বেশি কার্যকরী। অপরদিকে মানুষের জন্য এমন লম্বা লম্বা সংখ্যা গুচ্ছ মনে রাখার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট নাম মনে রাখা অনেক সহজ। মূলত এই দুইটির মেলবন্ধন ঘটানোই হলো ডিএনএস সিস্টেমের কাজ। এই সিস্টেমের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস এর জন্য একটি নাম নির্ধারিত হয়ে যায় যা ডোমেইন নেম হিসেবে পরিচিত হয়। 

যেমন google.com এর আইপি অ্যাড্রেস হলো “216.58.216.164”। কিন্তু একজন মানুষের জন্য এমন সংখ্যা গুচ্ছ মনে রাখা ও টাইপ করাটা অনেক পরিশ্রম সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তার চেয়ে google.com লিখলেই সরাসরি গুগল এ চলে যাওয়া যায়। এখানে google.com টি হলো ডোমেইন নেম। আর যেই প্রক্রিয়ার সাহায্যে ইন্টারনেটে যুক্ত সকল ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেসের সাথে নামকে এভাবে জুড়ে দেওয়া হয়, সেই সিস্টেমকেই বলে ডিএনএস সিস্টেম। 

ডোমেইন-এর প্রকারভেদ

ইন্টারনেটে ওয়েবপেজ যেরকম অসংখ্য, তেমনি প্রতিটি ওয়েবপেজের জন্য ডোমেইনও রয়েছে অসংখ্য। তবে সকল ডোমেইনকে সাধারণত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলোঃ 

টপ-লেভেল ডোমেইন (Top-Level Domain) 

একটি ডোমেইন নেমের এক্সটেনশনকে সাধারণত বলা হয় এর টপ-লেভেল ডোমেইন। মূলত প্রতিটি ডোমেইন নেমেরই প্রধান দুইটি অংশ থাকে। একটি হলো এর নাম। আরেকটি হলো এক্সটেনশন (Extension)। যেমনঃ ‘progressbangladesh.com’ । এখানে ‘Progress Bangladesh’ হলো আসল নাম। আর ‘com’ হলো এক্সটেনশন। 

এই এক্সটেশনই টপ-লেভেল ডোমেইন বা টিএলডি (TLD) হিসেবে পরিচিত। টপ-লেভেল ডোমেইন গুলো  সাধারণত ওয়েবসাইটের ধরন নির্দেশ করে। অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি কি সম্পর্কিত সে সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা পাওয়া যায় এর এক্সটেনশন বা টপ-লেভেল ডোমেইন দেখে। বর্তমানে ইন্টারনেটের হাজারেরও বেশি টিএলডি বা টপ-লেভেল ডোমেইন আছে। এই টপ-লেভেল ডোমেইন কে আবার দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।

জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন (Generic Top-level Domain -gTLD)

মূলত টপ-লেভেল ডোমেইন বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি, জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন তারই একটি বিষেশায়িত নাম। পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, একটি সাইটের কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পেতে টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। তেমনই কিছু জনপ্রিয় টপ-লেভেল ডোমেইন হলোঃ

  • .com – ‘.com’ দিয়ে বোঝায় ‘commercial’। অর্থাৎ ‘.com’ ডোমেইনটি মূলত কমার্শিয়াল বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহকে উদ্দেশ্য করেই বানানো। 
  • .net – ‘.net’ দ্বারা বোঝানো হয় ‘network’। যে সকল ওয়েবসাইট অন্যান্য ছোট ছোট ওয়েবসাইটের কাছে প্রধান ওয়েবসাইট হিসেবে কাজ করে সে ধরনের ওয়েবসাইট সাধারণত এই ‘.net’ এক্সটেনশন ব্যবহার করে। যেমনঃ ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। 
  • .info – ‘.info’ দিয়ে বোঝায় ‘information’। মূলত তথ্য সমৃদ্ধ সাইটের জন্যই ‘.info’ এক্সটেনশনটি যথাযথ। 
  • .co – ‘.co’ মূলত ‘.com’ এরই ভিন্ন রুপ। বর্তমানে ‘.com’ এক্সটেনশন সবসময় খালি থাকে না বিধায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ‘.co’ এক্সটেনশটি ব্যবহার করে ওয়েবসাইট খুলছেন।
  • .org – ‘.org’ এর পূর্ণরুপ হলো ‘organization’। ‘.org’ দ্বারা আসলে বোঝানো হয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সমূহকে। মূলত ব্যবসায়িক বা লাভের উদ্দেশ্যে নয় বরং মানব এবং সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান গুলোই এই এক্সটেনশনের দাবিদার।

নিউ জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন (New Generic Top-Level Domain – n GLTD)

উল্লেখ্য যে পৃথিবীর প্রথম টপ-লেভেল ডোমেইনের নাম ছিল ‘.arpa’। এটি মূলত ইন্টারনেটের পূর্বপুরুষ আর্পানেটের সাথে ইন্টারনেটের একটি সংযোগ হিসেবে কাজ করতো। একটি লম্বা সময় ধরে ডোমেইন নেম হাতে গোণা থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ICANN ব্যাপক হারে নতুন টপ-লেভেল ডোমেইনের অনুমতি দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ এর মার্চ মাস পর্যন্ত ICANN মোট ১৫৮৯টি টপ-লেভেল ডোমেইনের অনুমতি দিয়েছে। এমন নতুন নতুন টপ-লেভেল ডোমেইন গুলোই ‘নিউ জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন’ হিসেবে পরিচিত। এমন কিছু নতুন টপ-লেভেল ডোমেইন হলোঃ 

  • .co
  • .app
  • .bank
  • .cloud ইত্যাদি। 

কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডোমেইন (Country Code Top-Level Domain – ccLTD) 

কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডোমেইন মূলত কোনো নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলকে নির্দেশ করে। সাধারণত সেটি হয়ে থাকে একটি দেশ। অর্থাৎ এটি টপ-লেভেল ডোমেইনের আরেকটি অংশ যেটি দেখে বোঝা যায় যে ওয়েবসাইটটি মূলত কোন অঞ্চলের গ্রাহকদের সেবা দিতে বানানো হয়েছে। এই ধরনের টপ-লেভেল ডোমেইন গুলো দুই অক্ষরের হয়ে থাকে। এমন কিছু কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডোমেইন হলোঃ 

  • .us – যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক
  • .ru – রাশিয়া ভিত্তিক 
  • .uk – যুক্তরাজ্য ভিত্তিক 
  • .cn – চীন ভিত্তিক 
  • .au – অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক 
  • .nl – নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক 
  • .bd – বাংলাদেশ ভিত্তিক

কোনো ওয়েবসাইটের পরে এরকম এক্সটেনশন থাকা মানে ওয়েবসাইটটি ঐ দেশে বসবাসকারীদের সেবা দিতেই তৈরি করা হয়েছে। 

ইন্টারন্যাশনালাইজড কান্ট্রি-কোড টপ-লেভেল ডোমেইন (Internationalized Country Code Top-Level Domains – IDN ccTLD)

এটি এমন এক ধরনের টপ-লেভেল ডোমেইন যেখানে এক্সটেনশনটি ল্যাটিন অক্ষর বাদেও অন্য ভাষাতে লেখা যায়। যেমন চীনের কান্ট্রি কোড টিএলডি হলো ‘.cn’। অপর দিকে চীনের ইন্টারন্যাশনালাইজড কান্ট্রি কোড টিএলডি হলো  ‘.中国’. অর্থাৎ এখানে চীনের কান্ট্রি কোডটি চৈনিক ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। 

এছাড়াও কে ডোমেইন নেমটি ক্রয় করতে পারবে, কে পারবে না তার উপরর ভিত্তি করেও সকল টপ-লেভেল ডোমেইনকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।

রেস্ট্রিকটেড টপ-লেভেল ডোমেইন (Restricted Top-Level Domain) 

এই ধরনের টপ-লেভেল ডোমেইন গুলো ক্রয় করতে গেলে ICANN তা বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কারণ টপ-লেভেল ডোমেইনের কাজই হচ্ছে ওয়েবসাইটের সেবার ধরন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দেওয়া। কিছু স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমনঃ-

  • .edu – ‘.edu’ দিয়ে বোঝানো হয় ‘education’ বা শিক্ষা। তাই ‘.edu’ এক্সটেনশনটি শুধু মাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ক্রয় করতে পারে। তবে শুধু ‘.edu’ এক্সটেনশনটি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই নির্ধারিত। অন্য দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘.edu’ ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই সাথে কান্ট্রি কোড ব্যবহার করতে হবে। যেমন bsmrmu.edu.bd
  • .mil – ‘.mil’ দিয়ে বোঝায় কোনো সামরিক সংগঠনকে। ‘.edu’ এর মতো ‘.mil’ ও একই ভাবে সংরক্ষিত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য। অন্য কোনো দেশের সামরিক বাহিনী ‘.mil’ এক্সটেনশন ব্যবহার করতে চাইলে সাথে অবশ্যই কান্ট্রি কোড ব্যবহার করতে হবে। যেমন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটঃ army.mil.bd 
  • .gov – ‘.gov’ এর পূর্ণরুপ ‘government’ অর্থাৎ সরকার। সুতরাং শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানই পারবে ‘.gov’ এক্সটেনশন ক্রয় করতে। এক্ষেত্রেও অন্য দেশ এই এক্সটেনশন ব্যবহার করতে চাইলে ‘.gov’ এর পরে কান্ট্রি কোড এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হবে। 
  • .aero – ‘.aero’ ডোমেইন গুলো ব্যবহৃত হয় শুধু মাত্র আকাশ ভ্রমনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য। অর্থাৎ এই এক্সটেনশন ক্রয় করতে হলে আপনাকে প্রমাণ দিতে হবে যে আপনি বিমান বা এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ডোমেইনটি কিনছেন।

এভাবেই অসংখ্য টপ-লেভেল ডোমেইনকে রেস্ট্রিকটেড বা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আবার কিছু বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কিছু ডোমেইনকে সম্পূর্ণ নিজেদের করে রেখেছে। যেমন ‘.google’ , ‘.amazon’ , ‘.apple’ এসব ডোমেইন যথাক্রমে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট, আমাজন এবং অ্যাপল ইনকরোপরেটেড (Apple Inc.) এর জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। 

আনরেস্ট্রিকটেড টপ-লেভেল ডোমেইন (Unrestrcited Top-Level Domain)

আনরেস্ট্রিকটেড টপ-লেভেল ডোমেইন হলো সে সকল টপ-লেভেল ডোমেইন যেগুলো চাইলেই যে কেউ ক্রয় করতে পারে। এ ধরনের ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে কোনো কিছুর প্রমাণ দিতে হয় না। এগুলোকে সাধারণ টপ-লেভেল ডোমেইনও বলা চলে। যেমনঃ 

  • .com
  • .net
  • .info 
  • .org

সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন (Second-Level Domain) 

সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন হলো মূলত একটি ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট নাম। যেমন ‘progressbangladesh.com’ এই ডোমেইনটির ‘progressbangladesh’ অংশটি হলো এর সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন। এই সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন সবসময় টপ-লেভেল ডোমেইনের আগে বা বাম পাশে থাকে। 

এই নামটি সাধারণত অন্যন্য বা ইউনিক হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুকরণ করার জন্য একই নামে ভিন্ন এক্সটেনশন ব্যবহার করে আরেকটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। যেমন ‘progressbangladsh.com’ এবং ‘progressbangladesh.info’ এই দুইটিকে আলাদা ওয়েবসাইট হিসেবে ধরা হবে। কারণ এদের সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন এক হলেও টপ-লেভেল ডোমেইন আলাদা। অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য অনেক অসাধু ব্যক্তি এমন করে থাকে। তেমন অবস্থা ঠেকাতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় নিজেদের সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল টপ-লেভেল ডোমেইন কিনে ফেলেন। যেমন আপনি ‘google.com’ লিখলে যেমন গুগল এ যাবেন, ঠিক তেমনি ‘google.net’ অথবা ‘google.info’ লিখলেও গুগল এই যাবেন। 

কান্ট্রি কোড সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন (cc Second-Level Domain)

আমরা পূর্বেই জেনেছি যে কান্ট্রি কোড মূলত টপ-লেভেল ডোমেইন এর সাথে জড়িত। কিন্তু কান্ট্রি-কোড একই সাথে সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন হিসেবেও কাজ করতে পারে। যেমন এদেশের সরকারী সাইট ‘বাংলাদেশ জাতীয় তথ্যবাতায়ন’ এর ডোমেইন নেম হলো ‘bangladesh.gov.bd’ কিন্তু এখানে ‘bangladesh’ অংশটি সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন। কিন্তু ‘gov’ থাকায় সেটিই টপ-লেভেল ডোমেইন। আর শেষে অবস্থিত ‘bd ’টা হলো কাট্রি কোড সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইন। 

থার্ড-লেভেল ডোমেইন (Third-Level Domain)

থার্ড-লেভেল ডোমেইনের অপর নাম হলো সাবডোমেইন (Subdomain) এটি ডোমেইনের এমন একটি অংশ যেটি সবসময় সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইনের আগে অর্থাৎ বামে থাকে। সবচেয়ে সাধারণ থার্ড-লেভেল ডোমেইন হলো ‘www’। কিন্তু বর্তমানে ‘www’ লেখার কোনো প্রয়োজন নেই, তাই এটি লেখা হয় না বললেই চলে। 

থার্ড-লেভেল ডোমেইনের সাহায্যে একটি ওয়েবসাইটের কোনো বিশেষ অংশ বা ওয়েবপেজকে নির্দেশ করা সম্ভব। অথবা এর সাহায্যে ঐ ওয়েবসাইটের এক গুচ্ছ বিশেষ সেবাকেই নির্দেশ করে। যেমন ‘drive.google.com’ এখানে ‘drive’ টি হলো থার্ড-লেভেল ডোমেইন বা সাবডোমেইন। একই ভাবে ‘photos.google.com’ এ ‘photos’ টি হলো সাবডোমেইন এবং ‘docs.google.com’ এ ‘docs’ টি হলো সাবডোমেইন। এখানে একেকটি সাবডোমেইনের একেকটি কাজ রয়েছে। যেমন ‘drive’ সাবডোমেইনের সাহায্যে গুগলের ড্রাইভ বা ক্লাউড জনিত সেবা সকল দেওয়া হয়ে থাকে। ‘photos’ সাবডোমেইনের সাহায্যে ছবি ও ভিডিও সংক্রান্ত সেবা দেওয়া থেকে থাকে। আবার ‘docs’ এর সাহায্যে দেওয়া হয়ে থাকে ওয়ার্ড প্রসেসিং জনিত সকল সেবা।

ডোমেইন নেমের প্রভাব ও কার্যকারিতা 

ডোমেইন নেমের কাজ সম্পর্কে ইতোমধ্যে আশা করি সবারই মোটামুটি ধারনা হয়ে গেছে। তবে ডোমেইন নেম শুধু হোস্ট নেমের সাথে আইপি অ্যাড্রেসকে সংযুক্ত করে, বিষয়টি তা নয়। এর বাইরেও ডোমেইন নেমের রয়েছে অনেক প্রভাব ও কার্যকারিতা। 

মালিকানা

ডোমেইন নেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই মালিকানা। ইন্টারনেট জগতে একটি সহজ ডোমেইন নেম অনেকটাই মূল্যবান একটি জিনিস। এরই উদাহরণ দেখা যায় ‘.gov’, ‘.mil’ কিংবা ‘.edu’ এর ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র এমন অনেক টপ-লেভেল ডোমেইনকেই শুধু নিজের দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছে যাদের তাদের ডোমেইন গুলো সহজ হয়। আলাদা করে কান্ট্রি কোড ব্যবহার করতে না হয়। অর্থাৎ একটি সহজবোধ্য নামের মূল্য ডোমেইন নেইম সিস্টেমে অনেকটাই বেশি। আর দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে বই কমছে নয়। আর একবার যদি আপনি কোনো ডোমেইন নেম কিনে ফেলতে পারেন এবং তা রিনিউ (Renew) করতে থাকেন তাহলে কারোরই ক্ষমতা নেই সেটি দখল করে নেওয়ার। অনেকেই আগে থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ ডোমেইনের মালিকানা নিয়ে তা দিয়ে ব্যবসাও করেছেন। 

বিশ্বাসযোগ্যতা

বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে ডোমেইন নেম অনেক বড় একটি ভূমিকা রাখে। একটি ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যতটাই ভাল থাকুক, এর ডোমেইন নেম যেন তেন, নেতিবাচক বা অশ্লীল কিছু হলে কখনোই সাইটটি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে না। 

প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় 

অনলাইনে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ও অস্তিত্ব তৈরি করতে ঐ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং তার ডোমেইন নেম সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন নেম অবশ্যই হওয়া উচিত প্রতিষ্ঠানের নামে। অথবা নূন্যতম হলেও একদম কাছাকাছি নামে। কারণ প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ডোমেইন নেম যদি আলাদা হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা প্রতিষ্ঠান ও এর ওয়েবসাইটকে আলাদা মনে করে। 

এ সকল দিকের বাইরেও একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম সাইটের অনলাইন অস্তিত্বকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান – ICANN

পুরো লেখাটি পড়ে এক ডোমেইন নেম একাধিক ব্যক্তি দখল করে বসতে পারে কি না এমন প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সকল ওয়েবসাইট, ওয়েবপেইজের ডোমেইন নেমের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ICANN এর। ICANN এর পূর্ণরুপ হলো ‘The Internet Corporation for Assigned Names and Numbers’। এটি যুক্তরাষ্ট্রেরে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যার দায়িত্ব হলো সারা বিশ্বব্যাপী ডোমেইন নেম এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ ডাটাবেজ গুলোর সম্বনয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। এই প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু ১৯৯৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। এর মূলমন্ত্র হলো ‘এক পৃথিবী, এক ইন্টারনেট’। 

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানের ইন্টারনেট জগতের এই বিশালতায় হারিয়ে না যাওয়ার একমাত্র কান্ডারি হলো এই ডোমেইন নেম সিস্টেম। একে ইন্টারনেটের অন্যতম ভিত্তি বললেও ভুল হবে না। সমগ্র পৃথিবীর সকল ডিজিটাল ডিভাইস এই প্রক্রিয়া মেনেই ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে। একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছে। মানবসভ্যতার সকল প্রযুক্তির বিস্তারেই এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় টপ-লেভেল ডোমেইন / এক্সটেনশন কোনটি?

উত্তরঃ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় টপ-লেভেল ডোমেইন হলো ‘.com’। স্ট্যাটিস্টা এর সূত্র অনুযায়ী জুন ২০২২ অবধি পৃথিবীর শতকরা ৫২.৮ ভাগ ওয়েবসাইট ‘.com’ এক্সটেনশন ব্যবহার করে নিবন্ধিত হয়েছে।

২। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় টপ-লেভেল ডোমেইন / এক্সটেনশন কোনটি?

উত্তরঃ স্ট্যাটিস্টা এর সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় এক্সটেনশন হলো ‘.org’। এর শতকরা হার ৪.৪ ভাগ। 

৩। এক্সটেনশন কি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) কে প্রভাবিত করে?

উত্তরঃ গুগল এর ভাষ্য অনুযায়ী এক্সটেনশন সার্চ ইঞ্জিনে দেখানো ফলাফলকে প্রভাবিত করে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ অধিকাংশ ওয়েবসাইট ‘.com’ এক্সটেনশন ব্যবহার করায় সাধারণ ব্যবহারকারীরাও বর্তমানে ‘.com’ এক্সটেনশনকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করেন। ফলে ‘.com’ এক্সটেনশন সম্পন্ন সাইটেই প্রবেশ করেন। ফলে সেই সাইটের ভিজিটর বেড়ে যায়। আর সাধারণ ভাবেই যে সকল সাইটের ভিজিটর বেশি, সেগুলো সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে উপরে দেখায়। 

৪। পৃথিবীর প্রথম ডোমেইন কোনটি?

উত্তরঃ অনুমোদন পাওয়ার দিক দিয়ে পৃথিবীর প্রথম ডোমেইন নেম হলো ‘symbolics.com’। এটি রেজিস্টার করেছিল Symbolics Inc. নামক একটি প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘bbn.com’। এটি রেজিস্টার করেছিলো BBN Technologies। 

৫। ডোমেইন এবং ইউআরএল এর মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ ইউআরএল কে বলা যায় সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট। ইউআরএল এর মধ্যে ডোমেইন নেমও অন্তর্ভুক্ত থাকে। ডোমেইন নেম ইউআরএল একটি অংশ। অন্যদিকে ইউআরএল হল একটি বৃহৎ রুপ যা শুধু সাইটের ঠিকানা নয় বরং নির্দিষ্ট ওয়েবপেজের ঠিকানাও সংরক্ষণ করে। 

 

 

 

তথ্যসূত্র 

১। হাবস্পট (১) 

২। হাবস্পট (২)

৩। হোস্ট গ্যাটর (১)

৪। হোস্ট গ্যাটর (২) 

৫। ইনডিড 

৬। কম্পিউটার হোপ

৭। উইকিপিডিয়া 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button