জন্মের পর প্রত্যেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে জন্মসনদ থাকাটা খুব জরুরি। কিন্তু বিবিধ কারণে জন্ম নিবন্ধন সনদে নানারকম ভুল হয়ে থাকতে পারে। আগে যখন কাগজে-কলমে এই নিবন্ধন ইস্যু করা হতো, তখন এই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করাটাও বেশ ঝামেলার ছিলো। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করার পর থেকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন প্রক্রিয়াটিও এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। সকল নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জন্ম নিবন্ধন সনদে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল সংশোধন করতে, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন বিষয়ে এই নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করা হলো।
সূচিপত্রঃ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন সংশোধন করার নিয়ম
কোনো জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চাইলে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন করতে হবে। আবেদনের শুরুতে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্মতারিখ প্রদানের মাধ্যমে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য, সংশোধিত তথ্য, সংশোধনের কারণ এবং এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। এরপর অনলাইন আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা/ইউনিয়ন/উপজেলা অফিসে জমা দিতে হবে। জমাকৃত জন্ম নিবন্ধন সংশোধিত হলে, তা সংগ্রহ করতে হবে।
আপনাদের সহজে বোঝার সুবিধার্থে নিচে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো:
ধাপ ১ঃ ‘জন্ম তথ্য সংশোধন’ ওয়েবপেজে প্রবেশের প্রক্রিয়া
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রথমেই ‘জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন’ ওয়েবপেইজে যেতে হবে। এটি মূলত বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের একটি অংশ মাত্র। এই ওয়েবসাইটের হোমপেইজের মেনু থেকেও আপনি জন্ম তথ্য সংশোধনের ওয়েবপেইজে যেতে পারবেন।
ধাপ ২ঃ জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধান
জন্ম তথ্য সংশোধনের পেইজে গিয়ে আপনার নিজস্ব জন্ম নিবন্ধনটি খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনার জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি টাইপ করতে হবে। এই নাম্বারটিকে পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারও (Personal Identification Number) বলা হয়ে থাকে। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই নাম্বার ১৭ সংখ্যার হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় ঘরটিতে আপনার জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী জন্মতারিখ দিতে হবে। এক্ষেত্রে টাইপ করে অথবা ছবির মতো ক্যালেন্ডার থেকেও তারিখ নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
তৃতীয় ঘরটিতে ছবিতে থাকা ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে, অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৩ঃ জন্ম নিবন্ধন সনদ নির্বাচন
জন্ম তথ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিয়ে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলেই আপনার জন্ম তারিখ, নাম, বাবা-মায়ের নাম দেখতে পাবেন। এসব তথ্য যাচাই করে ‘নির্বাচন করুন’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ সংশোধিত তথ্য নির্বাচন
জন্ম নিবন্ধন সনদ নির্বাচনের পর, তাতে কোন কোন তথ্য সংশোধন করতে চান তা নির্বাচন করতে হবে।
এক্ষেত্রে কোন কোন তথ্য সংশোধনযোগ্য তা উপরের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন। এর মধ্যে থেকে আপনার জন্মসনদের কী তথ্য সংশোধন করতে হবে তা নির্বাচন করুন এবং এর বিপরীতে সঠিক তথ্য দিয়ে ‘চাহিত সংশোধিত তথ্য’ ঘরটি পূরণ করুন। এবার সংশোধনের কারণ নির্ধারণ করুন। অপশনে থাকা কারণের সাথে মিল না থাকলে সবচেয়ে কাছাকাছি কারণটি নির্বাচন করুন। একবার আবেদন করেই জন্ম নিবন্ধনের সব ভুল একবারে সংশোধন করাটাই বাঞ্ছনীয়। তাই জন্ম নিবন্ধনে একাধিক ভুল থাকলে ‘আরো তথ্য সংযোজন করুন’ বাটনে ক্লিক করে সব ভুল সংশোধনের জন্য একসাথে আবেদন করুন। আপনাদের সুবিধার্থে একাধিকবার যেসব ভুল সাধারণত জন্মসনদে হয়ে থাকে, সেগুলোর সংশোধন প্রক্রিয়া দেখানো হলো:
ধাপ ৪.১ঃ জন্ম নিবন্ধনে নাম সংশোধন করার নিয়ম
প্রথমেই আপনার নামটি বাংলায় নাকি ইংরেজিতে সংশোধন করবেন তা নির্ধারণ করুন। তারপর সংশোধিত তথ্য দিন। সবশেষে সংশোধনের কারণটি উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে যদি আপনার বাংলা নাম সংশোধন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে ‘নতুন তথ্য সংযুক্ত’ অপশনটি নির্ধারণ করতে পারেন।
ধাপ ৪.২ঃ জন্ম নিবন্ধনে ইংরেজি তথ্য সংযোজনের নিয়ম
আগে শুধু বাংলা ভাষাতেই জন্মসনদ দেওয়া হতো। বর্তমানে বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষাতেই এ সনদ দেওয়া হয়ে থাকে। আপনার জন্মসনদে যদি ইংরেজি তথ্য না থাকে তাহলে সংশোধনের কারণ হিসেবে ‘পূর্বে ইংরেজীতে ছিল না’ কারণটি উল্লেখ করে তথ্য সংশোধন করুন।
ধাপ ৪.৩ঃ জন্ম নিবন্ধনে পিতা/মাতার নাম সংশোধনের নিয়ম
পিতা/মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে বিষয় হিসেবে পিতা/মাতার বাংলা বা ইংরেজি নাম নির্ধারণ করুন। যদি নামের বানান ভুল হয়ে থাকে তাহলে কারণ হিসেবে ‘নতুন তথ্য সংযোজন’ নির্বাচন করুন। আর যদি ইংরেজিতে নাম যুক্ত করতে চান তবে কারণ হিসেবে ‘পূর্বে ইংরেজীতে ছিল না’ সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৪.৪ঃ জন্ম নিবন্ধনে জন্মতারিখ সংশোধনের নিয়ম
জন্ম নিবন্ধনে থাকা জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য বিষয় হিসেবে ‘জন্মতারিখ’ নির্বাচন করে, এরপর কারণ হিসেবে ‘নতুন তথ্য সংযুক্ত’ নির্বাচন করুন।
ধাপ ৫ঃ জন্ম নিবন্ধনে ঠিকানা সংশোধনের নিয়ম
জন্ম নিবন্ধনে বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি ঠিকানা সংশোধন করারও প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে, তিন ধরনের ঠিকানা সংশোধন করা যায়। এক্ষেত্রে যে ধরনের ঠিকানা সংশোধন করতে চান সেটিতে ক্লিক করলেই, ঠিকানা সংশোধনের অপশন চলে আসবে। এর মধ্যে সংশোধনযোগ্য ঠিকানাগুলো হলো:
- জন্মস্থানের ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
- বর্তমান ঠিকানা
উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ঠিকানা সংশোধনের ক্ষেত্রেই দেশ ও বিভাগ ড্রপ-ডাউন মেনুতে ক্লিক করে নির্বাচন করতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য সকল তথ্য টাইপ করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, বানানের বিষয়ে অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ধাপ ৬ঃ সংশ্লিষ্ট প্রমাণ আপলোড করুন
তথ্য সংশোধনের বিষয় এবং কারণ উল্লেখ করার পর এবার সংশোধিত তথ্যের প্রমাণ দাখিলের পালা। জন্ম নিবন্ধনের যেকোনো তথ্য পরিবর্তন বা নতুন তথ্য সংযোজন করতে চাইলে তার স্বপক্ষে বিভিন্ন ধরনের কাগজ দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রমাণাদি স্ক্যান করে আপলোডের জন্য লজেপিইজি (JPEG) অথবা পিডিএফ (PDF) ফরম্যাটে আপনার কম্পিউটারে সংরক্ষণ করুন। তবে যেকোনো ডকুমেন্ট আপলোডের ক্ষেত্রে এর ফাইল সাইজ ১০০ কিলোবাইটের বেশি হতে পারবে না।
যেকোনো ডকুমেন্ট সংযোজন বাটনে ক্লিক করে আপলোড করতে পারবেন। প্রয়োজনে আপলোডকৃত ডকুমেন্ট বাতিল বা ডিলিট করতে সংশ্লিষ্ট ডিলিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৭ঃ প্রমাণাদির ধরন নির্ধারণ করুন
যেকোনো তথ্য সংশোধন করতে নির্দিষ্ট ধরনের বিভিন্ন প্রমাণের প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিটি ডকুমেন্ট আপলোডের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটি কোন বিষয়ের প্রমাণ তা নির্বাচন করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে দুইটি অপশন রয়েছে। ‘ফাইল টাইপ’ (File Type) মেনুতে ক্লিক করলে সবধরনের প্রমাণাদির নাম আসবে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট প্রমাণের ধরনটি নির্বাচন করে দিতে হবে। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ‘ফাইল সাব-টাইপ’ (File sub-type) নির্বাচন করতে হবে। এরপর নীল রঙের স্টার্ট (Start) বাটনে ক্লিক করে আপলোড সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ ৮ঃ আবেদনকারীর তথ্য ও ওটিপি প্রদান করুন
জন্মনিবন্ধন একটি অত্যন্ত জরুরী দলিল হওয়ায় যে কারো মাধ্যমে এটি সংশোধন করা উচিত নয়। তাই জন্মসনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আবেদনকারীর সাথে জন্মসনদধারীর নির্দিষ্ট সম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘পিতা’, ‘মাতা’ এবং ‘নিজ’ এই অপশন তিনটির যেকোনো একটি নির্বাচন করলে, সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাম, ইমেইল ও ফোন নাম্বার ছাড়া আর কিছুই লাগবে না। কিন্তু এই তিনটির বাইরে, কোনো অপশন নির্বাচন করলে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, আবেদকারীর নাম, ইমেইল, ফোন নাম্বার ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
সবশেষে, আবেদনকারীর ফোন নাম্বারে আসা ওটিপি দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই আবেদনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
ধাপ ৯ঃ ফি প্রদানের মাধ্যম নির্ধারণ ও আবেদনের কপি প্রিন্ট করুন
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি দুইভাবে দেওয়া যায়। এরমধ্যে একটি হলো ‘ফি আদায়’ এবং অন্যটি ‘চালান’। অফিস থেকে সংশোধিত সনদপত্র গ্রহণের সময় ফি পরিশোধ করতে চাইলে ফি আদায় অপশন নির্বাচন করুন। দ্বিতীয় মাধ্যমে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সংশোধনের আগেই ফি পরিশোধ করতে চালান মাধ্যম সিলেক্ট করুন। আবেদনের সময়ই ফি প্রদানের মাধ্যম নির্বাচন করে দিতে হবে।
এরপর উপরের চিত্রের মতো ‘আবেদনপত্র প্রিন্ট’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। আবেদনপত্রটিতে কত তারিখের মধ্যে আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট অফিসে দাখিল করতে হবে তা উল্লেখ থাকবে। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদনপত্রের প্রিন্টেড কপি জমা দিতে হবে।
ধাপ ১০ঃ ব্যবহারকারী সংযোজন
আবেদন শেষে একটি ব্যবহারকারী আইডি পাবেন। সেটি ব্যবহার করে সরকারি ওয়েবসাইটে লগইন করুন। এক্ষেত্রে প্রথমবার আপনাকে ‘ব্যবহারকারী সংযোজন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় লগ ইন উইন্ডোতে ‘নতুন ব্যবহারকারীর জন্য’ লেখা অংশে ক্লিক করলে, নিচের চিত্রের মতো একটি ওয়েবপেইজ পাবেন। এখানে আপনার ইউজার আইডি এবং মোবাইল নাম্বারে আসা ওটিপি দিন। এভাবেই ধাপে ধাপে আপনি সহজেই জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য অনলাইন আবেদন শেষে প্রাপ্ত ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদনের অবস্থা জানার উপায়
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করলে সেই আবেদন অনেকদিন পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদনের অবস্থা জানার একমাত্র মাধ্যম হলো জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মেনুতে গিয়ে ‘জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা’ বাটনে ক্লিক করুন। এরপর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা জেনে নিন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অনেক ধরনের দরকারি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। কোন দরকারি কাগজটি লাগবে তা নির্ভর করে কোন তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন তার উপর। তবে নিম্নে সর্বাধিক সংশোধন হওয়া তথ্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা দেওয়া হলো-
সংশোধনীয় তথ্য | প্রয়োজনীয় কাগজ |
পিতা-মাতার নাম বা অন্য কোনো তথ্য |
|
নিজের নামের বানান অথবা জন্ম তারিখ |
|
ঠিকানা পরিবর্তন (স্থায়ী) |
|
ঠিকানা পরিবর্তন (বর্তমান) |
|
জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত খরচ
জন্ম নিবন্ধন করতে বা তা সংশোধনের জন্য কিছু ফি প্রদান করতে হয় যা রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারিত। ফি-এর হারসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
বিষয় | ফিসের হার (দেশে) | ফিসের হার (বিদেশে) |
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে যেকোনো ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন | বিনা খরচে | বিনা খরচে |
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর থেকে ৫ বছর সময় পর্যন্ত | ২৫ টাকা | ১ মার্কিন ডলার |
জন্ম বা মৃত্যুর ৫ বছর পর কোনো ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন | ৫০ টাকা | ১ মার্কিন ডলার |
জন্মতারিখ সংশোধন | ১০০ টাকা | ২ মার্কিন ডলার |
জন্মতারিখ ব্যতীত নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা কিংবা অন্যান্য তথ্য সংশোধন | ৫০ টাকা | ১ মার্কিন ডলার |
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূল সনদ ও তথ্য সংশোধনের পর দুই ভাষায় সনদের কপি সরবরাহ | বিনা খরচে | বিনা খরচে |
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহ | ৫০ টাকা | ১ মার্কিন ডলার |
পূর্ববর্তী আবেদন ব্যবস্থার সাথে বর্তমান ব্যবস্থার পার্থক্য
কিছু দিন আগে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনসমূহ না জেনেই আগের নিয়মে আবেদন করতে গেলে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। আগের আবেদন প্রক্রিয়ার সাথে বর্তমান আবেদন ব্যবস্থার প্রধান পার্থক্যগুলো হলো-
পূর্ববর্তী আবেদন ব্যবস্থা | বর্তমান আবেদন ব্যবস্থা | |
১ | আগে সংশ্লিষ্ট অফিস আবেদনকারীর নির্বাচন করতে হতো। | বর্তমানে সংশ্লিষ্ট অফিস স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত হয়। |
২ | পূর্বের ব্যবস্থায় সংশোধনের কারণ হিসেবে ‘ভুল ভাবে লিপিবদ্ধ’ উল্লেখ করা যেতো। | বর্তমান ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হয়। |
৩ | পূর্বের আবেদন প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীকে সকল ঠিকানা নিজে থেকে পূরণ করতে হতো। | এখনকার আবেদন প্রক্রিয়ায় সংশোধন করতে না চাইলে আলাদা করে ঠিকানা পূরণের দরকার পড়ে না। |
৪ | পূর্বে সর্বোচ্চ ৯৭৬ কিলোবাইটের ফাইল আপলোড করা যেতো। | বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোবাইটের ফাইল আপলোড করা যায়। |
৫ | আগে আবেদনের ক্ষেত্রে লগইন করার ব্যবস্থা ছিল না। | বর্তমানে আবেদনের ক্ষেত্রে লগইন অপশন রয়েছে। |
৬ | পূর্বে আবেদন আইডির সাহায্যে আবেদনের অবস্থা জানা যেতো। | বর্তমানেওয়েবসাইটে লগইন করে আবেদনের সঠিক অবস্থা জানা যায়। |
শেষকথা
ডিজিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সনদ ডিজিটাল করে নেয়ার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। জন্মসনদও এর ব্যতিক্রম নয়। আর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে, অপারেটরের ভুলে অনেকেরই প্রয়োজনীয় সনদে অনেক তথ্য ভুল হচ্ছে। কোনো ভুলকেই অবহেলা করা উচিত নয়। বরং এসব অত্যন্ত দরকারি সনদে ভুল লক্ষ্য করার সাথে সাথেই সংশোধন না করলে প্রয়োজনের সময় আর তা সংশোধনের সময় থাকে না। তাই সময়মতো, উপরে উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় জন্ম নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধন করুন এবং ঝামেলামুক্ত থাকুন।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১। জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের সময় কার মোবাইল নাম্বার দেবো?
উত্তরঃ অবশ্যই আপনার নিজের বা আপনার বাবা-মার মোবাইল নাম্বার দেবেন। অনেকেই কম্পিউটার অপারেটর বা কোনো সরকারি কর্মচারীর নাম্বার দিতে চান, যা একদমই করা উচিত নয়।
২। অন্য কেউ কি আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের আবেদন করতে পারবে?
উত্তরঃ পারবে। তবে অন্য কেউ আবেদন করলে অবশ্যই তাকে আপনার সাথে সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ও জন্মসনদ নাম্বার দিতে হবে।
৩। একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে সর্বোচ্চ কয়জন আবেদন করতে পারে?
উত্তরঃ একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে একই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজন আবেদন করতে পারে।
৪। সর্বোচ্চ কতবার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করা যাবে?
উত্তরঃ সর্বোচ্চ ৭ বার সংশোধন করা যাবে।
৫। জন্মসনদের নামের বানান বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি এসএসসি সার্টিফিকেটের?
উত্তরঃ অবশ্যই জন্মসনদের নামের বানান।
৬। জন্মসনদে নাম্বার কম থাকলে কি করণীয়?
উত্তরঃ অনেক সময় জন্মসনদের নাম্বার ১৭ সংখ্যার বদলে ১৬ সংখ্যার হয়। এক্ষেত্রে আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপোরেশনে গিয়ে এই সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। আমার জন্মসনদে নামের বানান ভুল, আমি কি কোনোভাবে ঠিক নামের বানান দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারবো?
উত্তরঃ না। আপনার জন্মসনদের বানান দিয়েই জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে হবে।