বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ইলেক্ট্রনিক কার্ড যেমন- ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদিকে ব্যাপক পরিচিত করে তুলেছে। সরকারি ফি প্রদান থেকে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটা, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, সর্বত্র এখন বিল পরিশোধের সহজ ও ঝামেলামুক্ত মাধ্যম হলো ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড। জরুরি অবস্থায় এসব কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলনের সুব্যবস্থাও আছে। ফলে, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড দেখতে আপাতদৃষ্টিতে একইরকম মনে হলেও এই দুই কার্ডের নীতিমালা ও কাজে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। তাই আপনি যদি এই দুই কার্ডের মধ্যে কোনোটি ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আগে এই দুই কার্ডের পার্থক্য সম্পর্কে আপনাকে জেনে নিতে হবে।
সূচিপত্রঃ
ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য সমূহঃ–
পার্থক্যসমূহ | ডেবিট কার্ড | ক্রেডিট কার্ড | |
সংজ্ঞা | গ্রাহকের নিজস্ব সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি অর্থ পরিশোধিত হয়। | ব্যাংক অথবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের ব্যবহারের জন্য ঐ কার্ডের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ ঋণ বা লোন হিসেবে প্রদান করে থাকে। | |
অর্থের উৎস | গ্রাহকের চলতি বা সঞ্চয়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। | ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে অর্থ প্রদান করে থাকে। | |
ক্রেডিট লিমিট | ডেবিট কার্ড দ্বারা গ্রাহকের নিজের অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ টাকা জমা আছে গ্রাহক ঠিক সে পরিমাণ টাকাই ব্যবহার করতে পারবেন। | ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ব্যাংক যে পরিমাণ টাকা ঋণ বা ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে, গ্রাহক শুধু সেই পরিমাণ টাকা ব্যবহার করতে পারে। | |
বিল প্রদানকারী | গ্রাহক ব্যাংকে নিজের জমা টাকা থেকেই কেনাকাটার বিল পরিশোধ করে থাকে। | ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিল পরিশোধ করে, যা পরবর্তীতে গ্রাহককে ফেরত দিতে হয়। | |
মাসিক স্টেটমেন্ট | ডেবিট কার্ডের জন্য সাধারণত কোনো বিল বা খরচের স্টেটমেন্ট দেয়া হয়না। | ক্রেডিট কার্ডের জন্য লেনদেনের বিস্তারিত বর্ণনাসহ একটি মাসিক খরচের স্টেটমেন্ট দেয়া হয়। | |
সুদ | ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে ব্যাংকে কোনো সুদ বা চার্জ প্রদান করতে হয়না। | নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গ্রাহকের ব্যবহারকৃত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সুদ দিতে হয়। | |
ফি ও চার্জ | ডেবিট কার্ড ব্যবহারের জন্য সামান্য কিছু বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কারা জমা দিতে হয়। | ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে গ্রাহককে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি, রেজিস্ট্রেশান ফি, প্রসেসিং ফি, বিলম্ব ফি-সহ অনেক টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়। | |
ইএমআই | ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কোনো ইএমআই ( একোয়াটেড মান্থলি ইন্সটলমেন্ট ) সুবিধা লাভ করা যায়না। | ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা ইএমআই এর মাধ্যমে মাসিক কিস্তি হিসেবে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। | |
ইনস্যুরেন্স সুবিধা | ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে তার কার্ডের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স সুবিধা প্রদান করা হয় না। | ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ইনস্যুরেন্স সুবিধা গ্রহণ করা যায়। | |
অন্যান্য সুবিধা | এ কার্ড ব্যবহারকারীরা উল্লেখ্যযোগ্য কোনো সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারেনা। | ক্রেডিট কার্ড দিয়ে লেনদেন করলে ক্যাশব্যাক অফার, ডিসকাউন্ট, পয়েন্ট অর্জনের মতো বাড়তি সুবিধা উপভোগ করা যায়। | |
কার্ড ব্যবহারের যোগ্যতা | এই কার্ড পেতে বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। একটি ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ড পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আপনার সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলেই চলবে। | ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেয়া ন্যূনতম কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। তবেই একজন গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। | |
নিরাপত্তা | ডেবিট কার্ড-এর সঠিক ব্যবহার না জানলে অথবা হারিয়ে গেলে সহজেই এর অপব্যবহার হতে পারে। | বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডেই বেশ উন্নতমানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে। তাই এই কার্ড হারিয়ে গেলে খুব বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। |
ডেবিট কার্ডের সুবিধাঃ
১। ডেবিট কার্ড দেশ-বিদেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়।
২। এটিএম থেকে টাকা উঠানোর কাজে এটি এটিএম কার্ড হিসেবে কাজ করে। এটিএম থেকে টাকা উঠানোর জন্য আপনার ডেবিট কার্ড এবং তার সাথে থাকা ৪ ডিজিটের পিন কোড ব্যবহার করতে হয়।
৩। ডেবিট কার্ডে নিজস্ব অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহৃত হয়, তাই এতে ঋণজনিত কোনো সমস্যা নেই।
৪। এ কার্ড ব্যবহার করলে ব্যাংকে কোনো সুদ দিতে হয় না।
৫। ডেবিট কার্ড ব্যবহারের জন্য বেশ সহজে এবং দ্রুত অনুমতি পাওয়া যায়।
ডেবিট কার্ডের অসুবিধাঃ
১। ডেবিট কার্ড দ্বারা সীমিত লেনদেন করা যায়।
২। অতিরিক্ত খরচের সম্ভাবনা থাকে।
৩। ডেবিট কার্ড হারালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব কম।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাঃ
১। ক্রেডিট কার্ডগুলি অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং নগদ টাকা বহন করার উত্তম বিকল্প।
২। ক্রেডিট কার্ড ক্রেডিট স্কোর তৈরিতে সাহায্য করে।
৩। নিরাপদ ও সুরক্ষিত লেনদেনের জন্য ক্রেডিট কার্ড বেশি গ্রহণযোগ্য।
৪। এ কার্ড ব্যবহার করলে বিভিন্ন পুরষ্কার, রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জন করা যায়।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধাঃ
১। ক্রেডিট লিমিটের বেশি খরচ করা যায় না।
২। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে ব্যবহারকারীকে বেশ ভালো অংকের সুদ দিতে হয়।
৩। ক্রেডিট কার্ড গ্রাহককে বার্ষিক ফি, বিলম্ব ফি, রক্ষণাবেক্ষণ ফি-সহ বিভিন্ন হিডেন চার্জ বহন করতে হয়।
শেষকথা
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে বেশ কিছু লক্ষ্যনীয় পার্থক্য রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড নাকি ডেবিট কার্ড কোনটা নেয়া উচিত এ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এদের পার্থক্য জেনে রাখা প্রয়োজন। ডেবিট কার্ড দিয়ে আপনি ততক্ষণই লেনদেন করতে পারবেন, যতক্ষণ আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা থাকবে। অপরদিকে, ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত একটি ঋণ বা লোন, যেখানে খরচ হওয়া টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
১। ডেবিট কার্ড নাকি ক্রেডিট কার্ড ভালো?
ডেবিট কার্ড এবং একটি ক্রেডিট কার্ডের নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। এসব যাচাই বাছাই করে আপনার প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে কোন কার্ড ব্যবহার করা আপনার জন্য ভালো হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
২। ডেবিট কার্ড কি ক্রেডিট কার্ড হিসাবে কাজ করতে পারে?
না, ডেবিট কার্ডে সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। তাই এটি ক্রেডিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
৩। আমি কি আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারি?
না, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন না।
৪। ডেবিট কার্ডের আবেদন করার জন্য কি ক্রেডিট হিস্টোরি প্রয়োজন?
না, ডেবিট কার্ডের আবেদনের জন্য আপনার ক্রেডিট হিস্টোরির প্রয়োজন নেই।
৫। আমি কি একই ব্যাংক থেকে একাধিক ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে পারি?
হ্যাঁ, আপনি একই ব্যাংক থেকে ভিন্ন ভিন্ন ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
৬। ডেবিট কার্ড ব্যবহারে কি রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জন করা যায়?
হ্যাঁ, ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলেও রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জন করা সম্ভব। তবে ক্রেডিট কার্ডে বেশি পয়েন্ট অর্জন করা যায়।