Written by 11:59 pm চাকরি, জীবন ও জীবিকা

চাকরি ছাড়ার আগে যা করা উচিত এবং যা করা উচিত নয়

চাকরি ছাড়ার আগে যা করা উচিত এবং যা করা উচিত নয়

চাকরি, অনেক তরুণের কাছেই যেন এক আরাধ্য বস্তু। কিন্তু অনেকে যেমন একটি চাকরি পেয়েই তাতে স্থায়ী হতে পারলে খুশি, ঠিক তেমনই অনেকে চান আরো ভাল কিছু করতে। আরো ভাল কিছু করার আশায়, নিজেকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে তোলার আশায় অনেকেই একটি চাকরি বদলে আরেকটি চাকরি শুরু করেন। আপনিও হয়তো তেমনটাই ভাবছেন। কিন্তু একজন চাকরিজীবী হিসেবে আপনার একটি জিনিস মনে রাখা উচিত। সেটি হলো চাকরি পাওয়ার সময় আপনার পেশাদারিত্ব যতটা জরুরী, চাকরি ছাড়ার সময়ও ঠিক ততটাই জরুরী। আজকের এই লেখাতে কিভাবে আপনি সম্পূর্ণ পেশাদারি উপায়ে আপনার বর্তমান চাকরিটি ছাড়তে পারেন, তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

সূচিপত্রঃ

চাকরি ছাড়ার আগে যা করা উচিত

অনেকেই মনে করেন, চাকরি ছাড়তে চাইলে শুধু একটি পদত্যাগ পত্র জমা দিলেই হয়ে যায়। বাস্তবে মোটেও তা নয়। শুধু একটি পদত্যাগ পত্র জমা দিলে হয়তো আপনি প্রাথমিক ভাবে চাকরিটি ছাড়তে পারবেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক ঝামেলাই দীর্ঘদিনের জন্য আপনার পথসঙ্গী হয়ে থাকবে। তাই সম্পূর্ণ ঝামেলাহীন ভাবে চাকরি ছাড়তে চাইলে নিচের কয়েকটি ধাপ অবশ্যই অনুসরণ করুন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

চাকরি ছাড়ার পূর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অনেক আবেগপ্রবণ ব্যক্তিই থাকেন যারা কোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দেন। অনেক আবার নিছকই চাকরিটি ভাল লাগছে না বিধায় চাকরিটি ছেড়ে দেন। একটি চাকরি আপনি উপভোগ না করলে অবশ্যই আপনার চাকরিটি ছাড়া উচিত। কিন্তু সেটি অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা সহ। যেই কারণেই চাকরি ছাড়ুন না কেন, অবশ্যই চেষ্টা করবেন চাকরি ছাড়ার পরে আপনি কি করবেন, কত সময় নেবেন এবং আপনার আয়ের উৎস কি হবে তা ঠিক করে নেওয়া। 

নতুন আয়ের উৎস তৈরি

একটি চাকরি তখনই ছাড়া উচিত যখন আপনার ভিন্ন একটি আয়ের উৎস রয়েছে অথবা নিকট ভবিষ্যতে তা সৃষ্টির দৃড় সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনার ভিন্ন আয়ের উৎসটি থেকে আপনার খরচ মোটামুটি ভাল ভাবেই চলবে, তাহলে আপনি চাকরিটি ছাড়তে পারেন।

যেমন সরকারি ব্যাংকের একজন হিসাব রক্ষকের কাছে কোডিং ও প্রোগ্রামিং ভাল লাগতেই পারে। এ ব্যাপারটি যদিও তার বর্তমান কর্মক্ষেত্র থেকে একেবারেই ভিন্ন তবুও তিনি এর উপর ভরসা করতে পারেন; যদি এটি তার আয়ের উৎস হিসেবে তাকে সহায়তা করতে পারে। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সরকারি চাকরির মতো নিশ্চিত চাকরি ছেড়েও অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করেন। কারণ তিনি সেই কাজটি করতে পারদর্শী এবং তিনি তা করতে উপভোগ করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং এর এমন একটি স্তরে পৌঁছাতে হবে যা তাকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে সক্ষম। শুধু ভাল লাগার বশে কোনো ভিত্তি তৈরি না করেই যদি তিনি বর্তমান চাকরিটি ছাড়েন তবে তা হবে বোকামি। আবার কেউ যদি বেসরকারি চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরিতেও যোগদান করতে চান, তাহলে তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তারও সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়ার আগ অবধি বেসরকারি চাকরি ছাড়ার কোনো কারণ নেই।

খরচের হিসাব নির্ধারণ

যদি আপনার ভবিষ্যৎ আয়ের উৎসটি এখনো চালু না হয়ে থাকে, তাহলে আপনার অবশ্যই উচিত একটি ভবিষ্যৎ খরচ নির্ধারণ করা। ধরা যাক আপনার নতুন চাকরিতে যোগ দিতে আরো মাস দুয়েক সময় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এই দু’মাস আপনাকে অবশ্যই আপনার জমানো টাকার ওপর নির্ভর করতে হবে। এজন্য আপনার উচিত চাকরি ছাড়ার পূর্বেই খরচের একটি হিসাব নির্ধারণ করা। তা হতে পারে সাপ্তাহিক অথবা মাসিক। কিন্তু যতক্ষণ অবধি আপনি নতুন চাকরিতে নিশ্চিত ভাবে যোগ না দিচ্ছেন ততক্ষণ অবধি আপনার কোনোভাবেই আগের মতো খরচ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার পূর্বে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার নির্ধারিত খরচের হিসাব অনুযায়ী আপনি কতদিন জমানো টাকার উপর নির্ভর করতে পারবেন।

চাকরি ছাড়ার সময় নির্ধারণ

এই জিনিসটি অনেক সময়ই একজন চাকরিজীবীর হাতে থাকে না। এটি বেশিরভাগ সময়ই নির্ভর করে আপনি কখন আরেকটি চাকরি পাবেন অথবা কখন তারা আপনাকে চাকরিতে যোগদানের জন্য ডাকবে। তবুও একজন চাকরিজীবীর চেষ্টা করা উচিত যাতে তার প্রস্থানে প্রাক্তন কর্মস্থল অথবা সহকর্মীরা অতিরিক্ত চাপে না পড়েন। প্রতিটি কর্মস্থলই কিছু নির্দিষ্ট সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। এ ধরনের সময়ে চাকরি না ছাড়াটাই ভাল। কারণ এতে আপনার প্রস্থান আপনার প্রাক্তন কর্মস্থলে বেশ ঝামেলার সৃষ্টি করবে যা আপনার প্রাক্তন সহকর্মীদের মনক্ষুন্ন হওয়ার কারণ হতে পারে। 

অর্জনসমূহের তালিকা তৈরি

চাকরি ছাড়ার পূর্বে এই কাজটি অত্যন্ত জরুরী। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই কর্মক্ষেত্রে অনেক দক্ষ হয়েও পরবর্তী কর্মক্ষেত্রে তা প্রমাণ করতে পারেন না। কারণ আর কিছুই নয়, নিজের অর্জনগুলোর হিসেব না রাখা। প্রত্যেক চাকরিজীবীর উচিত সে তার চাকরিতে কি কি অর্জন করেছে, কি কি কাজ সফলতার সাথে শেষ করেছে তার একটি তালিকা তৈরি করা। শুধু তাই নয়, যদি অনেক বড় কোনো অর্জন সে তার চাকরিতে পেয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তার উচিত সেই অর্জনটি সিভিতে যুক্ত করা।

সিভি ও লিংকডইন (LinkedIn) প্রোফাইল হালনাগাদ করা

প্রতিটি সিভি লেখারই রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম। নিয়ম মেনে সিভি লেখাটা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি জরুরী সিভিটাকে হালনাগাদ করা। নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর পরই আপনার কোনো কাজে সিভি দেখাতে হতে পারে। নতুন চাকরিতে যোগদানের পরেও যদি আপনি পুরোনো সিভি জমা দেন, তাহলে তা খুবই অপেশাদারিত্বের লক্ষণ। এমন দৃষ্টিকটু বিষয় এড়াতে চাকরি ছাড়ার আগেই আরেকটি হালনাগাদকৃত সিভি তৈরি করে রাখুন। এর ফলে নতুন চাকরিতে যোগদানের সাথেই সাথেই আপনি একটি নতুন সিভি হাতের কাছে পাবেন। 

সিভির বাইরেও আপনার আরেকটি জিনিস হালনাগাদ করা উচিত। সেটি হলো লিংকডইন। বর্তমান যুগ যেহেতু ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ তাই এই যুগে লিংকডইন প্রোফাইলটিকে অনেকটাই গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তাই চাকরি ছাড়ার সাথে সাথেই লিংকডইন প্রোফাইলটি হালনাগাদ করা উচিত। একই ভাবে নতুন চাকরিতে যোগদানের সাথে সাথেই লিংকডইন প্রোফাইল আবার হালনাগাদ করুন।

অবসর সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া 

সরকারি চাকরি ছাড়ার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় চাকরি করার পর অবসর গ্রহণ করলে সকল বা আংশিক অবসর সুবিধা পাবেন। অনেক বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এমন নিয়ম খাটে। আবার আপনি যদি চাকরিকালীন কোনো সমিতিতে টাকা রেখে থাকেন, তাহলে তারও একটি বন্দবস্ত করা উচিত। এসব কারণে নিজের সুযোগ সুবিধাকে কখনোই অবহেলা করাটা উচিত নয়। হতে পারে সেই সুবিধাটুকুর আপনার কোনো প্রয়োজনই নেই। তবুও চেষ্টা করবেন তা গ্রহণ করতে, অথবা না করলেও আপনার প্রাক্তন কর্মস্থলের মানব সম্পদ বিভাগকে অবহিত করবেন। এক্ষেত্রে প্রাক্তন কর্মস্থলের মানব সম্পদ বিভাগ অনেকটাই ঝামেলা এড়াতে পারবে।

সুপারিশ প্রদান ও গ্রহণ

সুপারিশ শব্দটি শুনলেই অনেকে মনে করেন চাকরিতে যোগদানের সুপারিশ। কিন্তু এর মানেটা আরো বিস্তারিত। এর ইংরেজি শব্দটি বহুল প্রচলিত। যাকে বলে রেকমেন্ডেশন (Recommendation)। একজন অধস্তন কর্মকর্তাও তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সুপারিশ বা রেকমেন্ড করতে পারেন। বর্তমানে খুব সহজেই ডিজিটালমিডিয়ার সাহায্যে এই কাজটি সম্ভব। এছাড়াও আপনার সাথে যোগাযোগ ভাল থাকলে আপনি আপনার উর্ধ্বতন বা সহকর্মীদের জিজ্ঞেসা করে লিখিত সুপারিশও দিতে পারেন। এটি তাদের কর্মজীবনে ভাল প্রভাব ফেলবে।

ঠিক একই ভাবে সুপারিশ গ্রহণের ব্যাপারেও কার্পণ্য করা উচিত নয়। বিশেষত নিজে সুপারিশ প্রদান করলে আপনার সুপারিশ পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। আপনি যদি আপনার প্রাক্তন কর্মস্থলে উর্ধ্বতন ও সহকর্মী দ্বারা সুপারিশকৃত অথবা রেকমেন্ডেড (Recommended) হন, তাহলে তা আপনার ভবিষ্যৎ কর্মস্থলে চাকরি পেতে সহায়তা করবে। কারণ সেসব সুপারিশের মাধ্যমে সহজেই প্রমাণ হবে যে আপনি সাংগঠনিক ভাবে কাজ করে অভ্যস্থ।

ছাড়পত্র গ্রহণ

অনেক বেসরকারি চাকরিতেই চাকরিজীবীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন। অর্থাৎ সে চুক্তি অনুযায়ী ওই চাকরিজীবী ওই প্রতিষ্ঠানের চাকরি নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছাড়তে পারবেন না। সেই সময়টি চুক্তি অনুযায়ী হতে পারে ১ বছর কিংবা ৫ বছর অথবা অন্য যেকোনো সময়। প্রথমত খুব লম্বা সময়ের চুক্তি থাকলে এ ধরনের চাকরি না গ্রহণ করাটাই ভাল। তাও করতে হলে আপনি যখন চাকরিটি ছাড়বেন তখন অবশ্যই চেষ্টা করবেন একটি ছাড়পত্র যোগাড় করার। নাহলে পরবর্তীতে আপনার প্রাক্তন প্রতিষ্ঠান চাইলেই চুক্তির ভিত্তিতে নানা ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারবে।

যেসব চাকরিতে এমন চুক্তি থাকে না, বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, সেসব চাকরি থেকেও ছাড়পত্র নেওয়াটা বাঞ্ছনীয়। বিশেষত পরবর্তী চাকরিতে যদি ছাড়পত্রের বাধ্যবধকতা থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার একটি ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে। তাই সবসময়ই চেষ্টা করুন একটি ছাড়পত্র সংগ্রহ করার।

অফিস প্রদানকৃত সকল যন্ত্র পরিষ্কার করণ

বর্তমানে সকল চাকরিতে ডিজিটাল ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ, নোটপ্যাড অথবা ফোনের ব্যবহার রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের চাকরিজীবীকে এ সকল যন্ত্র সরবরাহ করে থাকেন। আবার চাকরি শেষে তা ফেরতও দিতে হয়। বাংলাদেশের চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ এক্ষেত্রে খুবই অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেন। যেহেতু একজন চাকরিজীবী দীর্ঘদিন যন্ত্রটি ব্যবহার করেছেন তাই স্বভাবতই তার ব্যক্তিগত অনেক জিনিসই সেই যন্ত্রে রয়ে যায়। বিশেষত ব্রাউজারের ইতিহাস অন্যতম স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এছাড়াও বর্তমানের অটোফিল প্রযুক্তির কারণে অনেক ব্যক্তিগত তথ্যাবলীই সহজে দেখা যায়। একই সাথে অনেকে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ব্রাউজারে তাদের পাসওয়ার্ডও সংরক্ষণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ঐ যন্ত্রটি কেউ ব্যবহার করলে তিনি সহজেই আপনার সকল গোপনীয় তথ্য পেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যেকোনো প্রকারের বিপদ হওয়া থেকে শুরু করে আপনি একটি হাসির পাত্রেও পরিণত হতে পারেন। 

তাই এমন পরিস্থিতি এড়াতে অবশ্যই সেই যন্ত্রটি পরিষ্কার করুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ল্যাপটপে আপনার সকল পাসওয়ার্ড (Password), অটোফিল (Auto fill), কুকিজ (Cookies) নিশ্চিহ্ন করে দিন। তার পাশাপাশি হার্ড্রড্রাইভ (Hard drive) এ আপনার কোনো ব্যক্তিগত বা স্পর্শকাতর জিনিস থাকলে অবশ্যই নিশ্চিহ্ন করুন। যদি অনুমতি থাকে তাহলে সম্পূর্ণ ল্যাপটপটিই একটি রিসেট (Reset) দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আর্থিক বিবরণী বুঝিয়ে দেওয়া

চাকরি ছাড়ার পূর্বে এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন যাবত প্রতিষ্ঠানের যে সকল কাজ করেছেন তার হিসাব আপনিই সবচেয়ে ভাল দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সকল হিসাব ও কাজের ফলাফল একটি স্থানে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেওয়া উচিত। এতে আপনার পেশাদারিত্ব চূড়ান্ত মাত্রায় প্রকাশ পাবে। একই সাথে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য পরবর্তীতে আপনাকে কেউ বিরক্তও করবে না।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কথা বলতে হলে আর্থিক বিবরণীর কথাটা আলাদা করে না বললেই নয়। আপনার কর্মস্থলের সাথে যদি আপনার আর্থিক কোনো লেনদেন থাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিবরণী বুঝিয়ে দিন। সাধারণত চাকরিজীবীরা অনেক খাতেই কর্মস্থলের টাকা ব্যবহার করেন। কিন্তু কোন কোন খাতে কত ব্যায় করেছেন তার হিসাব রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সেই হিসাব বুঝিয়ে দিতে না পারলে আপনার নামে অর্থচুরির অভিযোগ আসতে পারে। এমনকি মামলা অবধি হতে পারে। 

পুরোনো চাকরিতে নতুন প্রলোভনের ব্যাপারে সাবধানতা

অনেক সময়ই দেখা যায় একজন দক্ষ কর্মী চাকরি ছাড়তে চাইলে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নানা প্রলভন দেখিয়ে থাকেন। তা হতে পারে বেতন বৃদ্ধি, গাড়ি অথবা যাতায়াত সুবিধা প্রদান, বোনাস বৃদ্ধি অথবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এ ধরনের সুযোগ পেলেই তা লুফে নেওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই মনে রাখা উচিত কেন আপনি চাকরিটি ছাড়তে চেয়েছিলেন। সেই কারণটির সমাধান হয়েছে নাকি নতুন সুযোগের পরেও সমস্যাটি রয়েই যাচ্ছে তা আপনার লক্ষ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে জবাবে প্রথমেই ইতিবাচক বা নেতিবাচক কিছু না বলে কিছুটা সময় চাওয়া উচিত।

সকলের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া

একদম সাধারণ এই কাজটিই আপনাকে করে তুলতে পারে অসাধারণ। চাকরি ছাড়ার আগে সকল সহকর্মীর কাছ থেকেই বিদায় নিন। এমনকি কারো সাথে যদি আপনার মনোমালিন্য থেকে থাকে, তাও মিটিয়ে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। 

চাকরি ছাড়ার আগে যা যা করা উচিত নয়

চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে কি কি করতে হয় নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন জানা যাক কি কি কাজ চাকরি ছাড়ার পূর্বে একদমই করা উচিত নয়।

উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর আগেই সহকর্মীদের জানানো

চাকরিজীবীরা চাকরি ছাড়ার আগে সবচেয়ে বেশি যেই ভুলটা করে থাকেন এই ভুলটি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। কোথাও নতুন চাকরির সুযোগ পেলেও উচ্ছ্বসিত হয়ে আগে আপনার সহকর্মীদের জানাবেন না। প্রথমে অবশ্যই চাকরি ছাড়ার সিধান্তটি আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান। কারণ খবরটি অন্য কারো মুখ থেকে না শুনে আপনার মুখ থেকে শোনাই সবচেয়ে ভাল। এরপর চাইলে সহকর্মীদের জানাতে পারেন।

চাকরির শেষ ক’দিন অপেশাদারিত্ব দেখানো

এ বিশ্বে অধিকাংশ চাকরিজীবি পরবর্তী চাকরি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর অনেকটাই অপেশাদারি আচরণ করেন। অনেকেই কাজে ফাঁকি দেন এই ভেবে যে, এখানে তো আর আমার কাজ করতে হচ্ছে না। এছাড়াও অনেকে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অসন্তোষ তীব্র ভাবে প্রকাশ করে শুরু করেন। অনেকেই ইচ্ছাকৃত ভাবে সহকর্মীদের আঘাত করে কথা বলেন। একজন পেশাজীবী হিসেবে এমন আচরণ খুবই অপেশাদার। সুনাম বজায় রাখতে চাইলে প্রত্যেকেরই উচিত শেষ অবধি একটি ভাল ব্যবহার বজায় রাখা।

হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া

বাংলাদেশের বেশিরভাগ চাকরিতেই অন্তত ১ মাসের নোটিশ দিয়ে এরপর চাকরি ছাড়তে হয়। কিন্তু তাও দেখা যায় অনেকেই মাত্র দুই সপ্তাহ বা এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি ছাড়ার চেষ্টা করেন। অনেকে এজন্য দুর্ব্যবহারও প্রয়োগ করেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একটি পদ ফাঁকা হলে সেই পদটি পূরণ করতে অবশ্যই বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আপনার সকল সুনাম নিমিষেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন আচরণের কারণে।

নতুন কর্মস্থল সম্পর্কে বড়াই করা

ভাল কিছু অর্জন করলে তা কাছের মানুষকে জানাতে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই চাওয়া আর বড়াই করার মধ্যে বেশ পরিষ্কার একটি পার্থক্য রয়েছে। আপনি আরো ভাল স্থানে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন বলেই বর্তমান কর্মস্থলে সে সম্পর্কে বড়াই করা উচিত নয়। এতে অনেক সহকর্মীই মনক্ষুন্ন ও হতাশ হন। সবার সাথে সম্পর্ক ভাল রাখতে চাইলে এমনটি না করাই শ্রেয়।

কর্মস্থলের স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করা

একজন চাকরিজীবীর কাছে তার কর্মস্থলের অনেক তথ্যই থাকে। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেবেন বিধায় সে সকল তথ্য নিয়ে হেলা ফেলা করা উচিত নয়। কারণ পরিচালনার নীতি বা এডমিনিস্ট্রেটিভ পলিসি (Administrative Policy) অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্যই অনেক স্পর্শকাতর তথ্য। এসব নীতিই একটি প্রতিষ্ঠানকে সমগোত্রীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করে। তাই চাকরি ছাড়ার পূর্বে আপনার কাছে কোনো স্পর্শকাতর নথিপত্র থাকলে তা জমা দিন। আপনার ডিজিটাল ডিভাইসেও এমন তথ্য থাকলে তা বুঝিয়ে দিন অথবা মুছে ফেলুন। পূর্ববর্তী কর্মস্থলের অর্জনসমূহ সংরক্ষণ করলেও স্পর্শকাতর কোনো তথ্য সংরক্ষণ না করাই শ্রেয়।

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কটু কথা বলা 

অনেক অসচেতন চাকরিজীবীই চাকরি ছাড়ার পূর্বে নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কটু কথা বলেন। এমনকি অনেকে সরাসরি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও মৌখিক আক্রমণ করে বসেন। এমনটি করা একেবারেই অনুচিত। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত বা পরামর্শ থাকলে অবশ্যই তা গঠনমূলক উপায়ে প্রকাশ করুন।

চাকরি ছাড়ার শিষ্টাচার পালনের গুরুত্ব

উপরের সবকয়টি নির্দেশনাই মূলত চাকরি ছাড়ার শিষ্টাচার। অনেকের কাছেই এর অনেক কিছু অপ্রয়োজনীয় বা অহেতুক লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা মোটেই নয়। আপনি যদি নতুন চাকরিতে যোগ দিতে চান, তাহলে আপনার প্রাক্তন কর্মস্থলে আপনার সুনাম থাকাটা বেশ জরুরী। কারণ যখন নতুন কোনো চাকরিতে যোগ দেবেন তখন আপনার অজান্তেই প্রাক্তন কর্মস্থলে আপনার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়ে থাকে। প্রাক্তন কর্মস্থলে যদি আপনার বদনাম থাকে, তাহলে আপনি চাকরিটি নাও পেতে পারেন। কারণ বদনামের কারণে নতুন কর্মদাতাও স্বভাবতই ধরে নেবেন আপনি নতুন কর্মস্থলেও এমনই ব্যবহার করবেন। এছাড়াও চাকরি ক্ষেত্রে রেফারেন্স, রেকমেন্ডেশন, সুপারিশ যাই বলি না কেন, অত্যন্ত জরুরী। আপনার চাকরির অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য আপনার পূর্ববর্তী উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হতেই পারে। তিনি যদি আপনার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে তিনি আপনার সম্পর্কে ভাল কথা বলবেন না। যা আপনার নতুন চাকরি পাওয়ারর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে।

শেষকথা

একজন চাকরিজীবীর প্রতিটি চাকরিই তার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রেই সেসব প্রভাব হয়ে থাকে সুদূরপ্রসারী। তাই সকলেরই উচিত চাকরি ছাড়ার শিষ্টাচারগুলো সঠিক ও সুন্দর ভাবে মেনে চলা।  

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১। আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাকে ছাড়পত্র দিতে রাজি হচ্ছেন না, এক্ষেত্রে কি করণীয়?

উত্তরঃ এসব ক্ষেত্রে আপনি কতটা সুন্দর ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন এবং আপনার বোঝানোর দক্ষতা কতটুকুই সেগুলোই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

২। আমার নতুন চাকরিতে যোগদানের তারিখ হুট করেই দিয়ে দিয়েছে। আমার হাতে ১ মাস সময় নেই, এক্ষেত্রে কি করণীয়?

উত্তরঃ নিয়ম অনুযায়ী আপনার উচিত আপনার পূর্বের কর্মস্থলকে অন্তত ১ মাসের নোটিশ দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি আপনি একেবারেই অপারাগ হন তাহলে নতুন কর্মস্থলের যোগদানের তারিখ যে একদম হুট করেই দিয়েছে তা বোঝানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চাকরি ছাড়ার পরেও আগের কর্মস্থলের যেই কাজটি আপনার হাতে ছিল তা সম্পন্ন করে দিন। 

৩। নতুন চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রাক্তন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুপারিশ না থাকলে কি কোনো সমস্যা হবে?

উত্তরঃ চাকরির বাজারে শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকেও অনেক সময় অভিজ্ঞতার মূল্য বেশি দেওয়া হয়। আর আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সুপারিশ থাকলে তা আপনার জন্য সুবিধাজনক। সুপারিশটি ছাড়া অভিজ্ঞতার মূল্য থাকলেও তা কিছুটা কমে যায়। 

৪। চাকরি ছাড়ার আগেই নতুন চাকরির ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদযাপন করা উচিত কি না?

উত্তরঃ আগে অবশ্যই আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। অতঃপর আপনি চাইলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।

Visited 4 times, 1 visit(s) today
[mc4wp_form id=7429]