টিপসটেকনোলজিমোবাইল ফোন

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল নিত্যজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হওয়ায় দিনেদিনে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, একজন ব্যক্তি দিনে ৮০-১০০ বার হাতে থাকা মোবাইল ফোন আনলক করে থাকেন। কারনে-অকারনে আমাদের হাত চলে যায় মোবাইল ফোনের দিকে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনের স্ক্রিন দেখাতেই যেনো আমাদের শান্তি। কিন্তু অহরহ এই মোবাইল ব্যবহার করা কতটা ক্ষতিকর সেটা হয়তো আপনার ধারণাতেও নেই৷ মোবাইলের ক্ষতিকর রেডিয়েশন আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু এই স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি অনেকেই উপেক্ষা করেন। এ সমস্যা সত্ত্বেও মোবাইলের ব্যবহার কমে নি বরং মোবাইলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইলের অত্যাধিক ব্যবহার রেডিয়েশনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যা থেকে হতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এজন্য মোবাইলের রেডিয়েশনের বিষয়টি হালকাভাবে নেবার কিছু নেই। চলুন মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।

মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় 

সকালে ঘুম থেকে ওঠা ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত অর্থাৎ সবসময় আমাদের কাছে মোবাইল থাকে। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকেই এখন হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। ক্ষতিকর এই রেডিয়েশন নির্গত হয় কল করার সময় অর্থাৎ ওপাশে রিং বাজার সময়ই। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। তাই, আসুন জেনে নেই মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে।

নিজেকে ফোন থেকে দূরে রাখুন

মোবাইলের রেডিয়েশন যথেষ্ট ভয়াবহ। আর এই ভয়াবহ বিষয়টি থেকে বাঁচতে আপনাকে প্রথমেই ফোন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কানে ফোন দিয়ে কথা বলা উচিত নয়। আর হেডফোন বা স্পিকার ব্যবহার করে কথা বললে রেডিয়েশন এর ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটা এড়ানো যায়। ঘুমানোর সময় মুঠোফোনটি বালিশের নীচে একদমই রাখা না রেখে কয়েক ফিট দূরে রাখতে হবে। চেষ্টা করো কাজ হয়ে গেলে ফোনটি সুইচ অফ করে রাখতে।

মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করুন

প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কখনই ঠিক না। এক্ষেত্রে আপনার সচেতন হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার করলে শারিরীক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সাথে রেডিয়েশনের যোগসূত্র রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন না হলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার করবেন না। ফোন ব্যবহার সীমিত করুন। যখন প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র তখনই ফোনের ব্যবহার করুন। কল রিসিভ, টেক্সট চেক বা অন্যান্য কাজের জন্য বারবার মোবাইল ব্যবহার করবেন না। আপনি চাইলে টেক্সটের কাজগুলো ভয়েসে করতে পারেন। এতে মোবাইলের ব্যবহার যেমন সীমিত করা যাবে ঠিক তেমনি রেডিয়েশনের হাত থেকেও আপনি কিছুটা রেহাই পাবেন।

আবদ্ধ পরিবেশে মোবাইল ব্যবহার নয় 

আবদ্ধ ঘরে বা পরিবেশে কোনো ভাবেই মোবাইল ফোনের ব্যবহার করবেন না। এতে রেডিয়েশন নির্গত হয়। এছাড়া ধাবত ক্ষেত্রেও মোবাইলের রেডিয়েশন নির্গত হয়। আবার আবদ্ধ ঘরে বা ছোট্ট ফ্লাট-এর রুম-এ কিংবা জানলা বন্ধ করে গাড়িতে বেশি কথা বলবে না। কারণ লিফট বা গাড়িতে ফোন চলাকালীন রেডিয়েশনের তীব্রতা প্রতিফলিত হয়ে শরীরে বেশি প্রতিক্রিয়া করে থাকে।

দুর্বল নেটওয়ার্ক ও লো ব্যাটারিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা

নেটওয়ার্ক না থাকা একটি সাধারণ ঘটনা। খুব দুর্বল নেটওয়ার্ক বা কথা কেটে কেটে যাচ্ছে ইত্যাদি বিষয় খুবই সাধারণ। এমন অবস্থায় বা দুর্বল নেটওয়ার্কে মোবাইল ফোনে কথা না বলায় ভালো। এক্ষেত্রে টেক্সট ম্যাসেজ কিংবা ভয়েস ম্যাসেজে কাজ সারতে হবে। আবার লো ব্যাটারিতে কখনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। মোবাইলে ব্যাটারি কম থাকলেও কিন্তু উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয়। বিশেষ করে ১৫% কিংবা তার কম চার্জ থাকলে মোবাইল ফোন থেকে অধিক মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয়। তাই খুব বেশি জরুরি কোনো সমস্যা না হলে এই অবস্থায় ফোন ব্যবহার করো না।

নিম্নমানের হ্যান্ডসেট

বর্তমান সময়ে বাজারে অনেক নিম্নমানের হ্যান্ডসেটও পাওয়া যায়। এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করার মাধ্যমেও মোবাইল থেকে মারাত্মক রেডিয়েশন নির্গত হয়। তাই হ্যান্ডসেট কেনার আগে অবশ্যই সেই মডেলের ফোনের ম্যানুয়াল বুক বা ওয়েবসাইট থেকে রেডিয়েশন লেভেল চেক করে নেবেন।

বিনা প্রয়োজনে ভাইব্রেশন

আমরা অনেক সময়ই কারনে-অকারনে আমাদের মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশন মুড অন রাখি৷ কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, দীর্ঘসময় এই ভাইব্রেশন মুড অন করে রাখার কারণে মোবাইল ফোনে  রেডিয়েশন তৈরি হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হউন।

সময় নির্ধারণ

মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। সারাক্ষণ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ঠিক নয়। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। কারণ মোবাইলে অতিরিক্ত ব্যবহার রেডিয়েশনের জন্য দায়ী।

বিভিন্ন সার্ভিস বন্ধ রাখুন

স্মার্টফোনের বিভিন্ন সার্ভিস রয়েছে যেমন- ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি প্রয়োজন শেষ হলে অফ রাখুন। কারণ এগুলোর রেডিয়েশন দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেইসাথে আপনার ব্যক্তিগত অনেক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যেতে পারে প্রযুক্তি মাফিয়াদের কাছে। যার ফলাফল ভয়ঙ্কর। 

ওয়াইফাই রাউটার

আপনার শোবার ঘরে ওয়াইফাই রাউটার রাখবেন না। এতে প্রচুর রেডিয়েশন নির্গত হয়। আর রাত ১১টায় রাউটার বন্ধ করে দিন। ফোন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। তাছাড়া মোবাইল টাওয়ার থেকে যতটা সম্ভব দূরে বাসা নিন।

ঘুমের সময় ফোন নয়

আমরা ঘুমের সময় মোবাইল ফোন মাথার কাছে রেখে ঘুমায়। মাথার কাছে ফোন রাখলে তা ঘুমের পরিমাণ ও গভীরতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাছাড়া মোবাইল নয় ঘড়িতে এলার্ম দেবার অভ্যাস করুন। তাই ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন রান্নাঘরে ও চুলা থেকে দূরে বা অন্য কোনও দূরত্বে রাখুন।

শিশু,গর্ভবতী নারী ও রোগীদের থেকে দূরে রাখা 

আপনার শিশুদের কোমল শরীরকে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের থেকে দূরে মোবাইল থেকে দূরে রাখুন। খুব সহজেই শিশুরা স্মার্ট ফোন হাতে পেয়ে সব ভুলে যায়। ওদের জ্বালাতন থেকে বাঁচতে বড়রা তাই এটাই করে থাকে। কিন্তু মনে রেখো সাময়িক আনন্দ ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে । তাই যতটা সম্ভব শিশুদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করো। গর্ভবতী নারীদের ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করা বা দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোন এ কথা বলা ত্যাগ করতে অনুরোধ করো । আর গর্ভবতী নারী কিংবা যে কোনো রোগীর দুর্বল শরীরে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বেশি পড়ার সম্ভাবনা বলে, তাদের খুব সীমিত ও নির্ধারিত সময়ের বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়।

উপসংহার 

মোবাইল আমাদের জন্য যতটা ভালো ততটায় ভয়ঙ্কর। এর প্রভাবও তাই সুদূরপ্রসারী। মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে তাই আমাদের সচেতনতা জরুরি। তাই মোবাইলের ব্যবহারে সচেতন হউন, সীমিত পরিসরে ব্যবহার করুন।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. নিরাপদে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কি নিয়ম মানতে হবে?

উত্তর: মোবাইল প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হলেও মোবাইল ব্যবহারে কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন- প্রয়োজন ছাড়া বাচ্চাদের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না। সঠিক নিয়মে মোবাইল চার্জ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে ফোনের মূল চার্জার ব্যবহার করুন। চার্জ দেবার সময় ফোনে কথা বলা উচিত নয়। 

২. বেশি মোবাইল দেখলে কি হয়? 

উত্তর: মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর নীল আলো সরাসরি চোখে আঘাত করে। ফলে চোখের কোষের ক্ষতি হয় ও চোখে ব্যথা অনুভব হয়। আমেরিকান ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের নীল আলো রেটিনার স্থায়ী ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৩. মোবাইল স্ক্রিন কতটুকু দূরত্বে থাকলে নিরাপদ?

উত্তর: এর কোনো সঠিক হিসাব নেই। আপনি নিজেই বুঝবেন কত কাছে আনলে মোবাইলের আলোতে আপনার চোখ জ্বালা শুরু করে। তবে, মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিসীমার হিসেবে চোখ থেকে ২৫ সে.মি দূরের বস্তু সবচাইতে স্পষ্ট দেখে, ব্যক্তিভেদে তা পরিবর্তন হয়। দূরত্বের হিসাব টা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং যে দূরত্বেই হোক কতটা কম ব্যবহার করা যায় সে চেষ্টা করা উচিত।

৪. অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রভাব কি?

উত্তর: স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ব্রেন, মাথা বা গলার টিউমারের কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ও হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button