বিকাশমোবাইল ব্যাংকিং

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

মোবাইল ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশে দ্বিতীয়তে শুরু হলেও বিকাশ বর্তমানে এদেশে সবচেয়ে বেশী পরিচিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। একইসাথে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হওয়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও বিকাশ। তাদের দ্রুতগতিতে টাকা পাঠানোর সুবিধা, ভালো নিরাপত্তা সহ বেশ কিছু কারণে বিকাশ এদেশে সবচাইতে সেরা মোবাইল ব্যাংকিং এর অবস্থানে চলে গিয়েছিল। কিন্তু খ্যাতি যেমন সবসময়ই খারাপকে আকর্ষণ করে, তেমনি ইদানীং বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এধরনের পরিস্থিতিতে একাউন্টটি বন্ধ করে ফেলাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত। এছাড়াও নিজের কোন সিম বন্ধ করে ফেলায় সেই নাম্বার ব্যবহার করে খোলা বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করে ফেলার প্রয়োজন পরতে পারে। কখনো নিজের একাধিক একাউন্ট খুলে ফেলার কারণে একটি বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি বিকাশের ফোন নাম্বার পরিবর্তন করতে গেলেও পুরাতন একাউন্ট বন্ধ করে নতুন একাউন্ট খুলতে হয়। আবার অনেকেই বর্তমানের অতিরিক্ত ক্যাশ আউট চার্জ ও অন্যান্য খরচের জন্য বিকাশ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। তাই এসব প্রয়োজনে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম জেনে রাখা একান্ত জরুরী। কিন্তু বিকাশের নিরাপত্তার জন্য করা নিয়ম অনুযায়ী বিকাশ একাউন্ট বন্ধ (delete) করার কাজ আপনি বিকাশের অন্যান্য কাজের মত বিকাশ অ্যাপ দিয়ে বা *২৪৭# ডায়াল করে করতে পারবেন না। একাউন্ট বন্ধ করতে হলে আপনাকে বিকাশের নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার (customer care) সেন্টারে যেতে হবে। এছাড়াও বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য যেসকল কাগজ পত্র ব্যবহার করা হয়েছিলো সেগুলোরও প্রয়োজন হতে পারে একাউন্ট বন্ধ করতে। এটা কিছুটা সময় ও শ্রম সাপেক্ষ হলেও নিরাপত্তার খাতিরে বিকাশ এখনো একাউন্ট বন্ধ করার কাজটি অ্যাপ দিয়ে বা *২৪৭# ডায়াল করে করার সুবিধা তৈরি করেনি। তাই আপনাদের কখনো বিকাশ একাউন্ট বন্ধের প্রয়োজন পরলে আপনাদের সুবিধার জন্য এখানে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম আলোচনা করছি।

বিকাশ একাউন্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে ফেলতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১ঃ একাউন্ট ব্যালেন্স শূন্য করে ফেলুন

একাউন্ট ডিলেট করতে চাইলে সবার প্রথমেই আপনাকে আপনি যেই একাউন্ট ডিলেট করতে চাইছেন তার ব্যালেন্স শূন্য করে ফেলতে হবে। আপনার একাউন্টে যত টাকা আছে সবটুকুই নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে তুলে ফেলুন। অথবা আপনি পরিচিত কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারেও পাঠিয়ে দিতে পারেন আপনার বিকাশের সমস্ত টাকা। এছাড়া আপনি ক্যাশ আউট না করতে চাইলে আপনার সিমে রিচার্জও করে ফেলতে পারেন বিকাশের টাকাগুলো। এ ব্যাপারে উল্লেখ্য একটি বিষয় হচ্ছে, বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স প্রায়ই দশমিকে থাকে। যেখানে মুল টাকার অঙ্কের পরে দশমিকের অংশটি পয়সা বোঝায়। একাউন্ট বন্ধ করার আগে আপনাকে অবশ্যই সেই পয়সার অংশটুকু ও আপনার একাউন্ট থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এ কাজ করার জন্য যে কাউকে টাকা পাঠিয়ে একাউন্ট ব্যালেন্স শূন্য করার সময় ঐ দশমিকের অংশটিও পাঠিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন সিমে দশমিকের অংশটি সহ রিচার্জ করে ফেললে দশমিকের পরের অংশটাও ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

ধাপ ২ঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখুন

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে হলে যে ভোটার আইডি কার্ড (NID) ব্যবহার করে একাউন্টটি খোলা হয়েছে সেটি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। কার্ডটি অবশ্যই হালনাগাদকৃত থাকতে হবে এবং একই সাথে সচল ও সমস্যা বিহীন হতে হবে। কার্ডে কোনরকম সমস্যা হলে বা পুরাতন হলে আপনি বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে পারবেন না। এছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেকেই বাবা-মা বা অন্য কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ কারো এনআইডি কার্ড ব্যাবহার করে বিকাশ একাউন্ট খুলে থাকি। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কার্ডটির প্রকৃত মালিককে একাউন্ট বন্ধ করার সময় সাথে নিয়ে যেতে হবে। কার্ডের প্রকৃত মালিককে ছাড়া শুধুমাত্র কার্ডটি নিয়ে গেলে নিরাপত্তার খাতিরে আপনাকে একাউন্ট বন্ধ করতে দেয়া হবে না। সুতরাং একাউন্ট বন্ধ করতে হলে অবশ্যই একাউন্টের মালিক ও যে এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে একাউন্টটি খোলা হয়েছে তার মালিককে এনআইডি কার্ড সহ বিকাশ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে উপস্থিত থাকতে হবে।

ধাপ ৩ঃ যে সিম কার্ড থেকে একাউন্ট খোলা হয়েছে সেটি সাথে রাখুন

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে যাবার সময় যে সিম কার্ড ব্যাবহার করে একাউন্টটি খোলা হয়েছে সেটি সাথে রাখা আবশ্যক।

ধাপ ৪ঃ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করুন

উপরের ধাপগুলো শেষ করে অর্থাৎ একাউন্ট ব্যালেন্স শূন্য করে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যেতে হবে। কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে উপস্থিত প্রতিনিধিদের কাছে একাউন্ট বন্ধ করার বৈধ কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। এরপর তারা আপনার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়ার পর সেগুলো সরবরাহ করতে হবে। সরবরাহ করে তাদের কাছে বিকাশ একাউন্টটি বন্ধ করার অনুরোধ জানাতে হবে। এরপর তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করলেই তারা আপনার একাউন্টটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিবে। 

শেষকথা

এভাবে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই আপনি আপনার বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে পারবেন। মোবাইল ব্যাংকিং এর বিস্তৃত প্রসার এর যুগে একাউন্টে সমস্যা হওয়া বা বিকাশ ব্যবহার বন্ধ করে অন্য মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার শুরু করাটা খুবই স্বাভাবিক। এরকম পরিস্থিতিতে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন পরলে উপরের লেখাটি আপনাদের সাহায্য করবে বলে আশা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

বিকাশ একাউন্টের মালিক কি পরিবর্তন করা যায়?

উত্তরঃ বিকাশ একাউন্টের মালিক পরিবর্তন করা যায়। সেজন্য সাময়িক ভাবে একাউন্টটি বন্ধ করতে হবে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে। একাউন্টের মালিক পরিবর্তন করতেও এই ধাপ গুলোই অনুসরণ করতে হবে। শুধু অতিরিক্ত হিসাবে নতুন মালিকের এনআইডি (NID) কার্ড ও ছবি সাথে নিয়ে যেতে হবে।

নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছে গেলে কি তারা আমার একাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারবে?

উত্তরঃ বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার ক্ষমতা শুধুমাত্র বিকাশ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের বিকাশের প্রতিনিধিদেরই আছে। বিকাশ এজেন্টদের এই অধিকার বা ক্ষমতা দেয়া নেই।

একাউন্ট যার এনআইডি (NID) কার্ড দিয়ে খোলা তাকে যদি কাস্টমার কেয়ারে না নিয়ে যেতে পারি, তাহলে কি একাউন্ট বন্ধ করতে পারবো না?

উত্তরঃ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য যার এনআইডি (NID) ব্যবহার করে একাউন্টটি খোলা তাকে অবশ্যই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে নিতে হবে। অন্যথায় একাউন্ট বন্ধ করা যাবে না।

কোন ফোন নাম্বার থেকে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার পরে পুনরায় সেই নাম্বারে একাউন্ট খোলা যাবে?

উত্তরঃ সম্পুর্নভাবে একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবার পর একই নাম্বার থেকে, এমনকি একই এনআইডি ব্যবহার করে নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলা যাবে

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button