কম্পিউটিংটেকনোলজি

জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করে বিশ্বে বাংলাকে করুন সমাদৃত

বাংলা ফন্ট, ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরার মূল চাবিকাঠিই যেনো এটি। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষা আজ শুধু অফলাইনে নয় বরং অনলাইনেও ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বজুড়ে। বিশ্বায়নের এই যুগে কোটি কোটি বাঙালী ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে দিনরাত বাংলা লিখছেন। কারণ মুদ্রিত মাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমেরও এখন প্রায় সমান গুরুত্ব রয়েছে। আর সারা বিশ্বজুড়ে বাংলাকে এভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল ভিত্তিটুকুই নিহিত বাংলা ফন্টের মধ্যে। কারণ শুধু বাংলা ফন্টের সাহায্যে আপনি ডিজিটালি বাংলা লিখতে পারবেন। আর সেজন্যই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাংলা ফন্ট। বাংলা অক্ষরগুলো ফুটে উঠছে নানা রুপে, ধরণে ভঙ্গিমায়।

আজকে আমরা বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট, জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট, এবং বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার পরে ইন্সটলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো। এছাড়াও বোনাস হিসেবে রয়েছে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

সূচিপত্রঃ

বাংলা ফন্ট কী?

বাংলা ফন্ট কী তার উত্তর জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে ফন্ট কী? ফন্ট এর একটি সুন্দর বাংলা হলো, ‘লিপি লিপি হলো কোনো ভাষার বর্ণসমূহ। অর্থাৎ কোনো ভাষার সমস্ত বর্ণ, সংখ্যা যতি চিহ্নগুলো যখন একই ধারার বা একই রুপের হবে তখন তাদের একত্রে বলা হবে লিপি। একটি বর্ণকেই কিন্তু ঘুরিয়েপেঁচিয়ে নানাভাবে এক এক রূপে লেখা সম্ভব। আর ঠিক সেজন্যই এতো এতো লিপির আবিষ্কার। ফন্টও ঠিক তাই। আর বাংলা ভাষার সকল বর্ণসমূহকে যখন ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচে প্রকাশ করা হবে তখন সেগুলোই হবে বাংলা ফন্ট তথা বাংলা লিপি। তবে মনে রাখতে হবে যে, ছাপাখানার নানান ধাঁচের বর্ণসমূহকেও ফন্ট বলে। কিন্তু লেখায় শুধু ডিজিটাল ফন্ট অর্থাৎ মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের বাংলা কিবোর্ড এর মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া ফন্টএর কথা বলা হচ্ছে।

বাংলা ফন্ট কেনো জরুরী?

লেখাটির প্রথমেই এই প্রশ্নের আংশিক উত্তর আছে। বর্তমান বিশ্বে বাংলা ফন্টের তাৎপর্য গুরুত্বের কোন সীমা নেই। সকল সরকারি অফিসআদালত থেকে শুরু করে সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন কাজ পরিচালনায় বাংলা ব্যবহার করে। এছাড়াও ডিজিটাল মিডিয়ায় যতো বাংলা রয়েছে, এমনকি পত্রিকা, পরিচয়পত্র সহ সকল বাংলা লেখাই কোনো না কোনো ফন্টের অর্ন্তভুক্ত। অর্থাৎ বাংলা লিখতে হলে আপনাকে কোনো না কোনো বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করে ব্যবহার করতেই হবে।

সুন্দর বাংলা ফন্টের প্রয়োজনীয়তা

সুন্দর বাংলা ফন্ট এর ব্যবহার জীবনের সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আকর্ষণীয় ফন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি যেকোনো লেখাকেই পাঠক বা ক্রেতার কাছে একটু আলাদাভাবে তুলে ধরতে পারেন। ফন্ট যদি দৃষ্টিনন্দন হয় তবে তা পড়তে চোখে আরাম হয়। ফলে স্বভাবতই বেশি মানুষ লেখাটা পড়ে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই কিছুটা দৃষ্টিনন্দন ফন্টের প্রয়োজন পড়ে। কোনো লেখাকে বিশেষভাবে লক্ষণীয় করতে অথবা ওয়েবসাইটের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে অনেক ধরনের ফন্টের প্রয়োজন হয়। যেমনঃ কার্টুনের ওয়েবসাইট, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট  একটি খবরের কাগজের ওয়েবসাইটের লেখার ফন্ট একরকম হবে না। একইভাবে যেই ফন্টে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম লেখা হয় সেই একই ফন্টে বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে নাম লিখলে তা খুবই বেমানান হবে। অর্থাৎ এটি পরিষ্কার যে প্রয়োজনভেদে এক ব্যক্তির একাধিক ফন্ট ব্যবহার করা আবশ্যক। সকলেরই চেষ্টা থাকে সবচেয়ে সুন্দর ফন্টটি বেছে নেয়ার। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সৌন্দর্য। একটি আপেক্ষিক ধারণা। আপনার কাছে যা ভালো লাগছে তা অন্যের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। তারই প্রেক্ষিতে আজকের এই লেখায় বিভিন্ন কাজের জন্য সেরা কিছু বাংলা ফন্ট নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তবে তার আগে বাংলা ফন্ট কোথায় থেকে ডাউনলোড করবেন সে সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক।

বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট

বর্তমানে অসংখ্য ডেভেলপার ডিজাইনাররা (Developer & Designer)  অনেক অনেক ফ্রী ফন্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড দিচ্ছে। এছাড়াও অনেকে ফ্রী সোর্স প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ফন্ট নির্মাণ করছে। তারই পাশাপাশি রয়েছেপ্রিমিয়াম ফন্টএর বেচা কেনা। মূলত এসব ফন্ট তথা লিপির রূপ তৈরি করা বেশ পরিশ্রমের কাজ। আর সেই পরিশ্রমের মূল্য দিতেই কিছু ফন্ট কিনে নিতে হয়। সেগুলোকে বলে প্রিমিয়াম ফন্ট। তবে ফ্রী হোক কিংবা প্রিমিয়াম; সব ফন্টই কিন্তু ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে। তাই এই লেখাতে কিছু নাম উল্লেখ করছিঃ

১) লিপিঘর

২) ওমিক্রন ল্যাব 

৩) বেঙ্গালী ফন্ট

৪) বাংলা ফন্ট লাইব্রেরি

৫) অক্ষর ৫২। (লিপিঘর এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান) 

লিপিঘরঃ

এতোসব ওয়েবসাইটের মধ্যে সেরার মুকুটটা দিতে হবে লিপিঘরকেই। প্রথমত, তাদের ওয়েবসাইটের লেআউট দারুণ নজরকাড়া সাবলীল। রয়েছে ফ্রী ফন্ট, প্রিমিয়াম ফন্ট, ফ্রী সোর্স প্রোগ্রাম হিসেবে অক্ষর ৫২ বাংলা কীবোর্ড। এছাড়াও প্রোজেক্ট ডিজাইনের জন্য পাথ এন্ড পিক্সেল প্রোগ্রাম এবং টিশার্ট ডিজাইনের জন্য ক্যালিগ্রাফিক টিশার্ট প্রোগ্রাম। পাশাপাশি নানারকম টিউটোরিয়াল (Tutorial) ভিডিও পাবেন তাদের ওয়েবসাইটে। 

ওমিক্রন ল্যাবঃ

ওমিক্রন ল্যাবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ভাষার পথিকৃত সফটওয়্যারঅভ্র অভ্র আমরা সবাই চিনি। অনেকে ব্যবহারও করি। আর এই অভ্র ডাউনলোড করতে পারবেন ওমিক্রন ল্যাবের ওয়েবসাইট থেকে। সাথে ডাউনলোড করতে পারবেন আরো নানা ধরনের ফন্ট। যা অভ্রতে ব্যবহার করতে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এছাড়াও বেঙ্গালী ফন্টস বাংলা ফন্ট লাইব্রেরিররয়েছে বাংলা ফন্টের বিশাল সংগ্রহ। 

এবার জেনে নেয়া যাক ১১ টি জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট সম্পর্কে। এবং প্রতিটির সাথে পেয়ে যাবেন একটি ডাউনলোড লিংক।

জনপ্রিয় কিছু বাংলা ফন্টসমূহ

নানা ওয়েবসাইট থেকে নানা ধরনের ফন্ট ডাউনলোড করা যায়, কিন্তু এতো এতো ফন্টের ভীড়ে সেরা ফন্টটি পছন্দ করতে অনেকেরই বেশ সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তাই নিচে বিভিন্ন কাজের জন্য আদর্শ ১০টি ফন্ট এর নাম বিস্তারিত তুলে ধরছি।

১) শহীদ বরকত ফন্ট

শহীদ বরকতফন্টটির নাম রাখা হয়েছে ভাষা শহীদ বরকতের নামে। এই স্টাইলিস বাংলা ফন্টটি নকশা করেছেন তৌফিকুর রহমান। বিকাশ ঘটিয়েছেন নিলাদ্রী শেখর বালা। ফন্টটি প্রকাশের মাত্র মাসের মাথায় এর ডাউনলোড সংখ্যা ৩৬ হাজারের অধিক হওয়ায় এটি নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় একটি বাংলা ফন্ট।

ফন্টটির ধরণঃ ইউনিকোড এবং ANSI 

স্টাইলঃ ২টি

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ শহীদ বরকত

ফন্টটি দেখেই বুঝতে পারছেন কতখানি দৃষ্টিনন্দন স্টাইলিস বাংলা ফন্ট এটি। জাতীয় সঙ্গীতের শব্দাগুলো যেনো অন্যরকমভাবে ফুটে উটেছে ফন্টটিতে। ‘শহীদ বরকত’ ফন্টটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন কোন স্মারক লিপি, ক্রোড়পত্র বা সাময়িকীর শিরোনামে অথবা কোন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে। দারুণ এই ফন্টটি অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করবে তা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

ডাউনলোড লিংকঃ শহীদ বরকতফ্রি ফন্ট (lipighor.com)

২) আজাদ পরী ফন্ট 

“আজাদ পরী” নামক এই ফন্টটিলিপিঘরএর সর্বাধিক ডাউনলোডকৃত বাংলা স্টাইলিস ফন্ট। আজ অবধি ফন্টটি ডাউনলোড হয়েছে ২২৪,৩৩০ বার, আর এ কারনেই এই ফন্টটি রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাংলা ফন্টের ক্ষেত্রে একটি অবিশ্বাস্য সংখ্যা। অসাধারণ এই ফন্টটি নকশা করেছেন আবুল কালাম আজাদ। বিকাশকারী নিলাদ্রী শেখর বালা।  

ফন্টটির ধরণঃ ইউনিকোড এবং ANSI

স্টাইলঃ ১টি

প্রকাশকালঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ আজাদ পরী 

“আজাদ পরী” নামক এই ফ্রী ফন্টটির গ্লিফ তথা বর্ণগুলো বেশ প্যাঁচানো আকৃতির। বইয়ের এক গাদা লেখাতে হয়তো এটি ভালো লাগবে না কিন্তু কোনো বই কিংবা ক্রোড়পত্রের প্রচ্ছদে মানিয়ে যাবে বেশ। এছাড়াও অধ্যায়ের শিরোনাম হিসেবেও এই ফন্টটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি কোনো প্রবন্ধের প্রথম শব্দটিতে একটু অনন্য ফন্ট ব্যবহারের যে রীতি প্রচলিত রয়েছে আমাদের পত্রিকাগুলোতে, তার প্রয়োজনমেটাতে পারবে এই ফন্টটি।

ডাউনলোড লিংকঃ আজাদ পরীফ্রি ফন্ট (lipighor.com)

৩) শুভ সন্ধ্যা ফন্ট

শুভ সন্ধ্যাফন্টটিলিপিঘরএর দ্বিতীয় সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া বাংলা স্টাইলিস ফন্ট। জনপ্রিয় এই বাংলা ফন্টটিও বিনামূল্যেই ব্যবহার করা যায় এবং এটির নকশা বিকাশ দুটিই করেছেন শুভদীপ রায়। আজ অবধি শুভ সন্ধ্যা ফন্ট ডাউনলোড হয়েছে ১৮৬,৯৯৬ বার। এই সংখ্যাটিও বাংলা ফন্ট ডাউনলোডের হিসেবে প্রায় অবিশ্বাস্য বলা চলে। 

ফন্টটির ধরণঃ ইউনিকোড এবং ANSI

স্টাইলঃ ২টি

প্রকাশকালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ শুভ সন্ধ্যাবিদ্রোহী কবির রচিত শব্দগুলো যেনো এই ফন্টটিতে আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। যেকোনো কবিতা ছাপানোর জন্য ‘শুভ সন্ধ্যা’ ফন্টটি আদর্শ। এছাড়াও কোনো রচনার মাঝে কোনো কবিতা অথবা কারো বাণীকে ফুটিয়ে তুলতে এই ফন্ট আদর্শ। খুব বেশি প্যাঁচানো নয়, আবার খুব সরলও নয়। সরল জটিলের সুষম মিশ্রণে স্টাইলিস একটি বাংলা ফন্ট এটি। তাই কবিতা কিংবা বাণী অমৃত যাই হোক না কেনো; এই ফন্টটি ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। 

ডাউনলোড লিংকঃ শুভ সন্ধ্যাফ্রি ফন্ট (lipighor.com)

৪) খালিদ কালকিনি ফন্ট 

খালিদ কালকিনিফন্টটি একটি প্রিমিয়াম ফন্ট। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এই ফন্টটি বিনামূল্যে নয় বরং কিনেই ব্যবহার করতে হবে। আজকের লেখায় মূলত বিনামূল্যে পাওয়া যায় এরকম ফন্ট নিয়ে আলোচনা করলেও শুধু এই একটি প্রিমিয়াম ফন্টই স্থান পেয়েছে এই ফন্টের জনপ্রিয়তার কারনে। এই ফন্টটির নকশাকার এইচ. এম. খালিদ। বিকাশকারী নিলাদ্রী শেখর বালা। এখন অবধি বিক্রি হয়েছে ৭১৬ বার।

ফন্টটির ধরণঃ ইউনিকোড এবং ANSI

স্টাইলঃ ২টি

প্রকাশকালঃ ৬মে, ২০১৯ 

মূল্যঃ ১০০ টাকা

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ খালিদ কালকিনি

ডাউনলোড লিংকঃ খালিদ কালকিনি ফন্ট (lipighor.com)

উল্লেখ্য যেলিপিঘরএর সকল ফ্রী ফন্ট আপনি ব্যক্তিগত এমনকি ব্যবসায়িক কাজেও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। একইভাবে ক্রয় সাপেক্ষে প্রিমিয়াম ফন্টও ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোনোভাবেই ফন্টগুলোকে ভিন্ন নামে, ভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারবেন না বা এর বিনিময়ে কোন অর্থের লেনদেন করতে পারবেন না। 

৫) রুপসী বাংলা ফন্ট

উপরের সবকটি ফন্ট বেশ ভিন্ন প্রকৃতির। কিন্তু সে সব কটি ফন্টই বিশেষ কিছু লেখাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুললেও সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য ঠিক মানানসই নয়। একটি প্রবন্ধ বা রচনার প্রতিটি শব্দই যদি জটিল ফন্টের হয় তাহলে অনেক সময়ই তা পাঠককে নিরুৎসাহিত করে তোলে। আর তাই সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য চাই একটি সহজ সাবলীল ফন্ট। একই সাথে যা স্টাইলিস  দৃষ্টিনন্দন। ঠিক এমনই একটি ফন্ট হলো রুপসী বাংলা। রুপসী বাংলার মতোই সরল স্বাভাবিক কিন্তু নান্দনিক এই ফন্টটি। নকশা করেছেন নিলাদ্রী শেখর বালা। ফন্টটি ডাউনলোড করা হয়েছে ১৫,৮৭৯ বার, যার কারনে এটিকেও জনপ্রিয় ফন্ট বলা চলে।

ফন্টটির ধরণঃ ইউনিকোড এবং ANSI

স্টাইলঃ ৪টি

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ রুপসী বাংলা

নমুনাটি দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এটি কতটা সরল একটি ফন্ট। এই ফন্টটি অক্ষর ৫২ এর একটি নিজস্ব ফন্ট। প্রায় যেকোনো লেখাতেই ব্যবহারযোগ্য এটি। ওয়েবসাইট, বই এমনকি খবরের কাগজেও ব্যবহার করা যাবে এই ফন্টটি। উল্লেখ্য যে, এই ফন্টটি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা গেলেও ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতে চাইলে নকশাকারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

৬) সুতন্বী এমজে রেগুলার ফন্ট

দীর্ঘদিন ধরে বাংলা লেখেন কিন্তুসুতন্বী এমজেফন্ট চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। অনেক পুরোনো এই ফন্টটি সম্ভবত বাংলা ভাষার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফন্ট। এটি একটি ট্রুটাইপ ফন্ট। তবে এই ফন্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্বাভাবিক অবস্থায় অভ্রে ব্যবহার করা যায় না। ‘সুতন্বী এমজে’ ফন্টটি ব্যবহার করতে হলে বাংলা কিবোর্ড চালনায় দক্ষ হতে হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রপত্রিকা বইপুস্তক এই ধরনের ফন্ট ব্যবহার করেই ছাপা হয়। 

নিচে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ সুতন্বী এমজে রেগুলার

ছাপার ক্ষেত্রে এই ফন্টটির লেখা ফেটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ‘সুতন্বী এমজে’ ফন্টটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এই ফন্টে লিখতে গেলে বাংলা কিবোর্ড চালনায় অত্যন্ত দক্ষ হতে হয় যা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এছাড়াও এই ফন্টটির প্রত্যেকটি স্টাইল আলাদা আলাদা ডাউনলোড ব্যবহার করতে হয় যা কিছুটা বিরক্তিকর। কিন্তু তবুও ছাপার ক্ষেত্রে এর নিপুণতা একে করে তুলেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ফন্টটি আপনি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন Bengali Fonts ওয়েবসাইটের নিচের ডাউনলোড লিংক থেকে। 

ডাউনলোড লিংকঃ SutonnyMJ Regular: Download for free at BengaliFonts : Bengali Fonts

৭) নিকষ ফন্ট

সুতন্বী এমজে’র মতোই আরেকটি বহুল পরিচিত একটি ফন্ট হলো নিকষ। এই তালিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফন্ট হলো এই নিকষ। কারণ এটি বাংলাদেশের সরকারী ফন্ট। এই ফন্টটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এর গ্লিফ ডিজাইন করেছেন জাওয়াদ কাজি কোর ডেভেলপারস। তন্মধ্যে জাওয়াদ কাজি, ওমি আজাদ ও মোজাম্মেল সরকারের নাম উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে এটিকে সরকারী ফন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেহেতু সরকারী ফন্ট তাই সকল সরকারী কাজে এই ফন্ট ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সমানভাবে এই ফন্ট ব্যবহার করে থাকে। তাই নিকষ ফন্টকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট বললে ভুল হবে না। 

নিচের ছবিতে ফন্টটির কিছু নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ নিকষ

‘নিকষ’ ফন্টটি খুবই সহজ ও স্বাভাবিক হওয়ায় এটি যেকোনো দাপ্তরিক কাজের জন্য আদর্শ। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলে এই ফন্টটির ব্যবহার জানা অবশ্য কর্তব্য। এর রয়েছে ৫টি রুপ। নিকষ, নিকষ বান, নিকষ গ্রামীণ, নিকষ লাইট, নিকষ লাইট বান। শুধুমাত্র এই ফন্টই বাংলাদেশের সরকারী ফন্টের মর্যাদা পেয়েছে। 

ডাউনলোড লিংকঃ Bengali Fonts – Bangla Fonts – Free Download (omicronlab.com)

৯) কুমারখালি এমজে ফন্ট

সুতন্বী এমজে’র মতো এই ফন্টটিও বেশ পুরোনো একটি ফন্ট। এটি ব্যবহার করতেও বাংলা কিবোর্ডে দক্ষ হতে হয় কারণ এটি অভ্র’র মতো ফোনেটিক কিবোর্ড ব্যবহার করে লেখা যায় না। মূলত ছাপার অক্ষরে সুতন্বী বা কুমারখালি ফন্ট ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মাঝে সুতন্বী সাধারণ ও কুমারখালী স্টাইলিস বাংলা ফন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

নিচের ছবিতে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ কুমারখালি এমজে

ডাউনলোড লিংকঃ KumarkhaliMJ Bold: Download for free at BengaliFonts : Bengali Fonts

১০) চারুকলা ফন্ট

চারুকলা ফন্টটি নির্মিত হয়েছিলো ২০১৬ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ গ্রাফিক্স ডিজাইনার চন্দন আচার্য এই ফন্টটির নির্মাতা। এই ফন্টটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর আল্ট্রা লাইট (Ultra Light) ধরণটি। অন্যান্য ফন্ট হতে বেশ অনেকটাই চিকন এটি। এছাড়াও অন্যান্য ফন্টের মতো রেগুলার ও বোল্ড টাইপও রয়েছে এই ফন্টটিতে। এই ফন্টটি চারুকলা সাময়িকী কিংবা কোনো শৈল্পিক বইয়ের প্রচ্ছদে বেশ মানাবে। এই ফন্টটির রয়েছে মোট ৬টি স্টাইল।

নিচের ছবিতে ফন্টটির কিছু নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ চারুকলা

উক্ত ফন্টটি আপনি চাইলেই বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি বাংলা ফন্ট লাইব্রেরি ও অক্ষর ৫২ দুটি সাইট থেকেই ডাউনলোড করা যায়। এছাড়াও অক্ষর ৫২ সাইট থেকে এর আরেকটি রূপ “চারুকলা রাউন্ড হেড” (Charukola Round Head) নামিয়ে নিতে পারবেন যা মূলত এই ফন্ট এরই সামান্য ভিন্ন রুপ।

ডাউনলোড লিংকঃ Charukola | বাংলা ফন্ট লাইব্রেরি (banglafontlibrary.com)

১১) চারু চন্দন ব্লাড ড্রিপ ফন্ট 

চারু চন্দন ব্লাড ড্রিপ ফন্ট খুবই ব্যতিক্রমী একটি ফন্ট। নামের সাথে মিল রেখে এই ফন্টটিতে প্রতিটি বাংলা বর্ণ থেকে যেনো।রক্ত ঝরে পড়ে। বাংলা ভাষার পেছনে লড়াই ও রক্তের ইতিহাসকে তুলে ধরতে এর কোন জুড়ি নেই। যেকোনো ব্যানার বা পোস্টারেই এই ফন্ট একটু আলাদা নজর কাড়বে। এর নির্মাতা হলেন পূর্বে উল্লিখিত ‘চারুকলা’ ফন্টের নির্মাতা চন্দন আচার্য। প্রতিভাবান এই মানুষটির অন্য ফন্টগুলোর মতো এটিও বেশ চমকপ্রদ।

নিচের ছবিতে ফন্টটির একটি নমুনা সংযুক্ত করা হলোঃ

বাংলা ফন্টঃ চারু চন্দন ব্লাড ড্রিপ 

২১শে ফেব্রুয়ারির জন্য নির্মিত ব্যানার পোস্টারে এই ফন্ট একেবারে আদর্শ। এছাড়াও অন্য যেকোনো শোকাবহ ঘটনাকে তুলে ধরতেও এই ফন্ট ব্যবহার করা যায়। আবার একই সাথে ভৌতিক গল্পের প্রচ্ছদ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থের প্রচ্ছদেও এই ফন্টটি মানানসই। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই নকশাকারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। 

ডাউনলোড লিংকঃ Charu Chandan Blood Drip – Okkhor 52

কীভাবে বাংলা ফন্ট ডাউনলোড ও ইন্সটল করবেন?

বাংলা ফন্ট ব্যবহারের জন্য তা শুধু ডাউনলোড করলেই হবে না। তা ইন্সটলও করতে হবে। এটি খুব সহজ একটি প্রক্রিয়া। চলুন ধাপে ধাপে জানা যাক কিভাবে একটি  বাংলা ফন্ট ইন্সটল করে তা ব্যবহারযোগ্য করে তুলবেন।

ধাপ ১ঃ বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করা

বাংলা ফন্ট ডাউনলোড ও ইন্সটল ধাপঃ ১যেকোনো বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করতে ফন্টটির ডাউনলোড লিংকে যান। ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন ও শর্তাবলীর সাথে একমত পোষণ করুন।

ধাপ ২ঃ ডাউনলোড হওয়া ফাইলটি খুঁজে বের করা।

বাংলা ফন্ট ডাউনলোড ও ইন্সটল ধাপঃ ২প্রথমেই আপনার ব্রাউজারের ডাউনলোড ইতিহাস থেকে ডাউনলোড হওয়া ফাইলটি খুঁজে বের করুন। এক্ষেত্রে ‘Show in folder’ বাটনে ক্লিক করলেই ফাইলটি যেখানে ডাউনলোড হয়েছে তা আপনার সামনে খুলে যাবে। 

ধাপ ৩ঃ আনজিপ করা

বাংলা ফন্ট ডাউনলোড ও ইন্সটল ধাপঃ ৩ফন্ট এর ফাইল গুলো সাধারণত জিপড (Zipped) অর্থাৎ বন্ধ অবস্থায় থাকে। এটি করা হয় ফাইলকে কোনো ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। নামানোর পরে ফাইলের উপরে রাইট ক্লিক করলে ‘Extract’ এর কয়েক ধরনের অপশন দেখাবে। ফাইলটি এক্সট্রাক্ট করার পূর্বে নির্ধারিত ফোল্ডারে নিয়ে গেলেই ভাল। অতঃপর ‘Extract Here’ অপশনে চাপ দিলেই ফাইলটি এক্সট্রাকটেড (Extracted) হয়ে যাবে।

ধাপ ৪ঃ নির্দিষ্ট ধরণের ফন্ট ইন্সটল করা

উপরের চিত্রে একই ফন্টের মোট তিনটি ধরণ দেখা যাচ্ছে। সেগুলো হলো ANSI V1, ANSI V2  ও Unicode। আপনি যেই ধরণটি ব্যবহার করতে চান সেটি নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট ফোল্ডার খুলুন। অতঃপর TrueType font file এ ক্লিক করুন। ইন্সটলেশন উইন্ডো (Installation Window) খুলে গেলে ‘Install’ বাটনে ক্লিক করলেই ফন্টটি ইন্সটল হয়ে যাবে এবং আপনি তা ব্যবহার করতে পারবেন।

শেষ কথা

বাংলা ভাষা সকল বাঙালির জন্যই একটি গর্বের বিষয়। এই ভাষার জন্য রক্ত ঝরেছে, অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। আসুন, সকলে মিলে বাংলা ভাষাকে ডিজিটাল মাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরি। মুখের বুলিকে লেখনীতে প্রকাশ করি ও নানারকম ফন্ট ব্যবহার করে তা আরো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলি। আপনি যদি আমাদের মাধ্যমে বাংলাকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করে তুলতে চান তাহলে আজই যোগাযোগ করুন বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ Progress bangladesh এ।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) একই ফন্টের বিভিন্ন স্টাইলের ফাইল কি আলাদা আলাদা ইন্সটল করতে হবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ। যেমন কুমারখালি এমজে বোল্ড, কুমারখালি এম জে ইটালিক কিংবা চারুকলা আল্ট্রা লাইট, চারুকলা আল্ট্রা লাইট ইটালিক ইত্যাদি একই ফন্টের ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের প্রতিটি ফাইলকেই আলাদা করে ইন্সটল করতে হবে।

২) জিপড ফাইল আনজিপ করতে পারছি না। কী করণীয়?

উত্তরঃ WinRAR নামক সফটওয়্যার এর ট্রায়াল ভার্সন নামান। অথবা 7z (7 Zipp) নামক ফ্রী সফটওয়্যার নামিয়ে আনজিপ করুন।

৩) ইউনিকোড এবং ANSI কী?

উত্তরঃ মূলত ইউনিকোড ও ANSI এ দুটোই হলো ক্যারেক্টার এনকোডিং (Character Encoding) পদ্ধতি। মানুষ যখন কম্পিউটারে কোনো লেখা বা তথ্য প্রবেশ করায় তখন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোডেড (Coded) হয়ে যায়। আর এই প্রক্রিয়া চালনার দুটি পদ্ধতি হলো ইউনিকোড ও ANSI। এদের মাঝে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো এদের সময়কাল ও ব্যবহার। ANSI পদ্ধতিটি অনেক পুরোনো। এগুলো মূলত ব্যবহৃত হতো উইন্ডোজ ৯৫/৯৮ অপারেটিং সিস্টেমে। কিন্তু এখন যুগ বদলেছে। বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ইউনিকোড হল আদর্শ পরিভাষা। আর সেজন্যই বর্তমান কম্পিউটারগুলোতে ইউনিকোড ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলো ANSI ভিত্তিক প্রোগ্রামের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করে। 

তবে যদিও ANSI অনেক পুরোনো একটি পদ্ধতি তবুও এটিকে পুরোপুরি ছুঁড়ে ফেলা যায়নি। কারণ ডিজিটাল মিডিয়ার বাইরে অফলাইন মিডিয়াতে এখনো সেই পুরোনো আমলের ANSI কোডের ফন্টগুলোতেই ছাপা হয়। তাই এখনো আধুনিক প্রায় সব ফন্ট এরই আলাদা করে একটি ANSI ভার্সন থাকে।

৪) অভ্র কিবোর্ডের সাহায্যে কিভাবে ANSI তে লিখবো?

উত্তরঃ অভ্র একটি ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা কিবোর্ড। এর সাহায্যে ANSI তে লিখতে হলে একইসাথে Shift ও F12 বাটন চাপুন। অতঃপর আপনাকে এ সম্পর্কিত একটি সতর্কবাণী দেখাবে। ‘Use ANSI anyway’ বাটনে চাপ দিয়ে ANSI ব্যবহার করতে পারবেন।

৫) অভ্রের সাহায্যে কি লেখাকে ANSI হতে ইউনিকোডে আনা যাবে?

উত্তরঃ না। অভ্র এই প্রক্রিয়া সাপোর্ট করে না। এর জন্য তৃতীয় পক্ষের কনভার্টার ব্যবহার করতে হবে যা শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে। এছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যায় পড়লে অভ্র টীম থেকে কোনো সাহায্য করা হবে না।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button