ফরেক্সব্যবসা

ফরেক্স ট্রেডিং এর আদ্যোপান্ত

বর্তমানে ফরেক্স ট্রেডিং বাংলাদেশি অসংখ্য তরুণের কাছেই হয়ে উঠছে আগ্রহের বস্তু। বস্তুত ফরেক্স বা ফরেক্স ট্রেডিং বিষয়গুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন নয়। কিন্তু ইন্টারনেটের ব্যবহার আর ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ফরেক্স ট্রেডিং এ প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এখন নতুন অনেকেই ঝুকছেন ফরেক্স ট্রেডিং এর দিকে। তবে এই পেশায় যুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই একজন ব্যক্তিকে ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে তবেই কাজে নামতে হবে। আর ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার লক্ষ্যেই আজকের এই লেখাটি। 

সূচিপত্রঃ

ফরেক্স কি?

ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে কথা বলার আগে সবার প্রথমেই যেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত, তা হলো ফরেক্স কি। মূলত ফরেক্স (Forex) হলো ফরেইন কারেন্সি আন্ড এক্সচেঞ্জ (Foreign Currency & Exchange) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ফরেক্স কে অনেক স্থানেই এফএক্স (FX) দিয়েও প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

ফরেইন এক্সচেঞ্জ হলো মূলত এক দেশের মুদ্রাকে আরেক দেশের মুদ্রায় রুপান্তরের প্রক্রিয়া। “ফরেইন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ” নামটি থেকেই এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। ব্যবসা, বাণিজ্য, লেনদেন, চিকিৎসা, ভ্রমণ এমন নানা কারণেই এক দেশের নাগরিকের অপর দেশের মুদ্রার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই এক দেশের মুদ্রার বিনিময়ে আরেক দেশের মুদ্রা পাওয়ার যে প্রক্রিয়া তাকেই বলে ফরেইন এক্সচেঞ্জ।

ফরেক্স ট্রেডিং কি?

ফরেক্স ট্রেডিং কি?

ফরেক্স যেহেতু মূলত বৈদিশিক মুদ্রার বিনিময়, তাই এই ফরেক্স ট্রেডিং এ অবশ্যই বৈদিশিক মুদ্রারই কেনা-বেচা হয়ে থাকে। সাধারণত কোনো ব্যবসাতে আমরা টাকার সাহায্যে কোনো পণ্য বা সেবা কিনে থাকি। কিন্তু ফরেক্স ট্রেডিং এমন এক ব্যবসা যেখানে আলাদা কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে হয় না। বরং এখানে মুদ্রাটাই পণ্য। এক বাক্যে ফরেক্স ট্রেডিং হলো মূলত সেই ব্যবসা যেখানে মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা কেনা হয়। যেমন টাকার বিনিময়ে ডলার অথবা রুপি। অথবা ইউরোর বিনিময়ে ডলার অথবা পাউন্ড।

ফরেক্স ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে? 

এক মুদ্রার বিনিময়ে আরেক মুদ্রা কেনার এই প্রক্রিয়াটা মোটেও নতুন নয়। শতবর্ষ ধরেই এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। কারণ এক দেশ থেকে আরেক দেশে গেলে ওই দেশের মুদ্রাই লাগবেই। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভিন্ন মুদ্রা অথবা ডলারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই মুদ্রার কেনা বেচার ব্যবসার কলেবর অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ শুধু ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় বরং ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে এই ব্যবসায় অংশ নিচ্ছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

  • ফরেক্স ট্রেডিং এ মূলত আপনার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা পুঁজি করে ব্যবসায় নামতে হবে। সেটি হতে পারে ৫০ ডলার অথবা ৫০০০ ডলার। অথবা হতে পারে এর চেয়েও অনেক বেশি। ধরা যাক, আপনি ডলারের বিনিময়ে ইউরো ক্রয় করতে  চান। সেক্ষেত্রে হিসাব নিকেশ গুলো কেমন হবে তা খুব সহজ ভাষায় একবার দেখে নেওয়া যাক।
  • আপনি যদি ১ ইউরো ক্রয় করতে  চান তাহলে বর্তমান বাজার দর অনুসারে আপনাকে খরচ করতে হবে ১.০২ ডলার। তাহলে ১০ ইউরো ক্রয় করতে  চাইলে আপনাকে গুণতে হবে ১০.২ ডলার।
  • ধরা যাক, সুনির্দিষ্ট কারণে আগামীকাল আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরোর দাম বেড়ে গেলো। সেক্ষেত্রে প্রতি ইউরো ক্রয় করতে  হয়তো আপনার খরচ করতে হবে ১.০৪ ডলার। অর্থাৎ ১০ ইউরোর দাম তখন হবে ১০.৪ ডলার।
  • এখন আপনি যদি সিধান্ত নেন যে আপনি আপনার পূর্বে কিনে রাখা ইউরোগুলো বিক্রি করবেন, তাহলে আপনি আগের ১০ ইউরো বিক্রি করতে পারবেন ১০.৪ ডলারে। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে ১০ ডলার বিনিয়োগে আপনার লাভ ০.৪ ডলার।
  • ঠিক একই ভাবে যদি আগামীকাল ইউরোর মান কমে যায় এবং প্রতি ১ ডলারে ১ ইউরো কেনা যায় তাহলে কিন্তু আপনার লাভের বদলে ক্ষতি হবে। কারণ তখন আপনার ১০.২ ডলারে কেনা ইউরো বিক্রয় করতে চাইলে করতে হবে ১০ ডলারেই।

আপাতদৃষ্টিতে লাভের হার অনেক কম মনে হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার মানের এই সামান্য পার্থক্যই কারণ হতে পারে হাজার কোটি টাকার লাভ ক্ষতির। অর্থাৎ এই ব্যবসায় আপনার বিনিয়োগের সাথে আপনার লাভ ক্ষতির হারটা একদম সমানুপাতিক।

ফরেক্স ট্রেডিং এর পরিভাষা

ফরেক্স ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে তা ওপরে সংক্ষেপে খুব সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টা সম্পর্কে আরো ভাল ভাবে বুঝতে হলে কিছু পরিভাষা জানা চাই। কারণ ফরেক্স ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শব্দ বা টার্ম (Term) ব্যবহৃত হয় যা না বুঝলে আসলে কোনো ভাবেই ফরেক্স ট্রেডিং বোঝা সম্ভব নয়। 

কারেন্সি পেয়ার (Currency Pair)

কারেন্সি পেয়ার কে বাংলায় বলা চলে মুদ্রার জোড়া। যেহেতু ফরেক্স ট্রেডিং হলো মূলত মুদ্রার কেনা-বেচা তাই এখানে যেই মুদ্রাটি কেনা হচ্ছে এবং যেই মুদ্রার সাহায্যে কেনা হচ্ছে এই দুটোই কারেন্সি পেয়ারের অংশ। এই দুইটি কারেন্সির একটিকে বলা বেজ কারেন্সি (Base Currency), অন্যটি হলো কোট কারেন্সি (Quote Currency)। ধরা যাক একটি ইউরো এবং ডলার মিলে একটি কারেন্সি পেয়ার গঠিত।

বেজ কারেন্সি (Base Currency)

কারেন্সি পেয়ারের যেই কারেন্সি বা মুদ্রাটি কেনা হবে সেটি হলো বেজ কারেন্সি। অর্থাৎ ইউরো-ডলার কারেন্সি পেয়ারের মধ্যে যদি ডলারের বদলে ইউরো কেনা হয় তাহলে ইউরো হচ্ছে বেজ কারেন্সি।

কোট কারেন্সি (Quote Currency)

কারেন্সি পেয়ারের যেই কারেন্সি বা মুদ্রাটির সাহায্যে অপর মুদ্রাটি কেনা হবে সেটি হলো কোট কারেন্সি। এক্ষেত্রে ডলার হবে কোট কারেন্সি।

আস্ক (Ask)

আস্ক হলো এক ধরনের অফার। মূলত এটি হলো কোনো মুদ্রা আপনি সর্বনিম্ন কত দামে বিক্রি করবেন তার অফার। ধরা যাক আপনি প্রতি ইউরো নূন্যতম ১.০৩ ডলারে বিক্রি করতে চান। এক্ষেত্রে এটিই হবে আপনার আস্ক প্রাইস।

বিড (Bid)

বিড ও এক ধরনের অফার। এটি হলো কোনো মুদ্রা আপনি সর্বোচ্চ কত দামে ক্রয় করতে  চান তার অফার। ধরা যাক কোনো বিক্রেতা ইউরো প্রতি ১.০৩ ডলার চাচ্ছেন। আপনি তাকে প্রতি ইউরো ১.০২ ডলারে কেনার অফার দিলে সেটি হবে আপনার বিড প্রাইস।

স্প্রেড (Spread)

আস্ক এবং বিডের মধ্যে যেই পার্থক্য তাকেই বলা হয় স্প্রেড। এই বিষয়টি একদম দামাদামির মতই। এই প্রক্রিয়ায় বিক্রেতার দামটি হবে আস্ক প্রাইস। আর আপনি যেই দামে ক্রয় করতে  চান সেটি হবে বিড প্রাইস। স্বভাবতই বিড প্রাইস আস্ক প্রাইস থেকে কম হয়ে থাকে। কিন্তু প্রচুর চাহিদার সময় কখনো কখনো বিড প্রাইস আস্ক প্রাইস থেকেও বেশি হতে পারে। তবে সাধারণ হিসেবে একজন বিক্রেতার ইউরো প্রতি ১.০৩ ডলারে বিক্রির অফারে আপনি যখন ১.০২ ডলারের অফার দেবেন, তখন সে রাজি হতে পারে নাও হতে পারে। মূলত মুদ্রার কেনা-বেচা তখনি সম্ভব হবে যখন একজন ক্রেতা ও বিক্রেতা দামাদামি করে তাদের আস্ক ও বিড প্রাইস সমান করতে সমর্থ হবেন।

ফরেক্স ট্রেডাররা মুদ্রার বেচা-কেনায় কখনোই কমিশনের মাধ্যমে লাভ করেন না। বরং তাদের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে এই স্প্রেডের ওপরে। ধরা যাক আজকে প্রতি ইউরোর দাম ১.০৩ ডলার। আগামী কাল যদি ইউরোর দাম বাড়ে এবং ইউরো প্রতি দাম হয় ১.০৭ ডলার তবে আপনার বিড প্রাইসের সাথে বিক্রেতার আস্ক প্রাইসের স্প্রেড ০.০১ থেকে বেড়ে হয়ে যাবে ০.০৫ ডলার। ফলে বিক্রেতার লাভটা তুলনামূলক বেশি হবে।

পিপ (Pip)

পিপ এর দুইটি পূর্ণরুপ আছে। সেগুলো হলো, “পার্সেন্টেজ ইন পয়েন্ট” (Percentage in Point)  ও “প্রাইস ইন্টারেস্ট পয়েন্ট” (Price Interest Point)। আমরা জানি আন্তর্জাতিক ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার দাম ওঠা নামা করে। পিপ হলো মূলত সেই ওঠা নামা করার সর্বনিম্ন মাত্রা। এক পিপ দিয়ে সাধারণত দশমিকের পরে ৪ ঘর বোঝায়। অর্থাৎ এক পিপ সমানঃ ০.০০০১। ১০০০ পিপ হলো ১ সেন্টের সমান। আর ১০,০০০ পিপ হলো ১ ডলারের সমান। তবে এই পিপের মান স্ট্যান্ডার্ড লট সাইজের ওপর নির্ভর করে বদলাতে পারে। সাধারণত ১০০,০০০ ডলারের একটি স্ট্যান্ডার্ড লটে একটি পিপের মূল্য হতে পারে ১০ ডলার। উপরে বর্ণিত স্প্রেড নির্ভর করে পিপের ওপরেই। যদি আগে থেকে কিনে রাখা কোনো মুদ্রার মান অনেক পিপ বেড়ে যায় তাহলে তা লাভজনক। আবার যদি কমে যায় তবে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি মূলত মুদ্রার মানের বাড়া কমার সর্বনিম্ন সূচক। 

লট সাইজ (Lot Size)

লট সাইজ মূলত একটি স্ট্যান্ডার্ড যা  অনুসারে মুদ্রার কেনা-বেচা হয়ে থাকে। ফরেক্স মার্কেটে সাধারণত ৪ ধরনের লট সাইজ দেখা যায়।

  • ন্যানোঃ এই লট সাইজ হলো সবচেয়ে ছোট লট সাইজ। ট্রেডাররা  এই লট সাইজের সাহায্যে মাত্র ১০০ ইউনিট কারেন্সিও ক্রয় করতে  পারেন। যেমন এই লটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আপনি চাইলেই মাত্র ১০০ ইউরো বা ১০০ রুপি ক্রয় করতে পারবেন।
  • মাইক্রোঃ এই লট সাইজে একজন ট্রেডার ১,০০০ ইউনিট কারেন্সি ক্রয় করতে পারবেন।
  • মিনিঃ এই লট সাইজে একজন ট্রেডার ১০,০০০ ইউনিট কারেন্সি ক্রয় করতে পারবেন।
  • স্ট্যান্ডার্ডঃ এটি সবচেয়ে বড় লট সাইজ। এতে একজন ট্রেডার কোনো কারেন্সির ১০০,০০০ ইউনিট ক্রয় করতে  পারবেন।

ফরেক্স একাউন্ট (Forex Account) 

ফরেক্স ট্রেডিং করার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো একটি ফরেক্স একাউন্ট থাকা। পূর্বেই বলেছি যে বর্তমানে অনলাইনে ফরেক্স ট্রেডিং করা সম্ভব। আর এই অনলাইনে ট্রেডিং এ অংশ নিতে আপনার চাই একটি ফরেক্স অ্যাকাউন্ট। লট সাইজের উপর নির্ভর করে সাধারণত তিন ধরনের ফরেক্স একাউন্ট হয়ে থাকে।

  • মাইক্রো ফরেক্স একাউন্টঃ এই একাউন্টে এক লটে সর্বোচ্চ ১০০০ ডলার সমমানের মুদ্রা আপনি কেনা-বেচা করতে পারবেন। যেমন এই ধরনের একাউন্টে একবারে সর্বোচ্চ ৯৪,২৯০ টাকার কেনা-বেচা আপনি করতে পারবেন। (উল্লেখ্য মুদ্রার মান পরিবর্তনশীল তাই টাকার এই সীমা পরিবর্তন হতেই পারে)
  • ম্যাক্রো ফরেক্স একাউন্টঃ এই একাউন্টে এক লটে সর্বোচ্চ ১০,০০০ ডলার সমমানের মুদ্রা কেনা-বেচা করতে পারবেন। যা বাংলাদেশি টাকায় ৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৯শ ২ টাকা। আবার ব্রিটিশ পাউন্ডে যা ৮,৬২৮.৫০ পাউন্ড।
  • স্ট্যান্ডার্ড ফরেক্স একাউন্টঃ এই একাউন্টে এক লটে সর্বোচ্চ ১০০,০০০ ডলার সমমানের মুদ্রা কেনা-বেচা করতে পারবেন। যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৪ লক্ষ ২৯ হাজার ২৭ টাকা। আবার ইউরোতে ৯৮ হাজার ৪শ ৮৫ ইউরো।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, লট সাইজ এবং ফরেক্স একাউন্টের মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে। মূলত লট সাইজ হলো একবারে একজন ট্রেডার কোনো কারেন্সির সর্বোচ্চ কতটি ইউনিট ক্রয় করতে পারবে তার পরিমাণ। অপর দিকে ফরেক্স একাউন্ট হলো একজন ট্রেডার একবারে ওই একাউন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ কত মূল্যমানের কারেন্সি ক্রয় করতে পারবে তার মাত্রা।

লেভারেজ (Leverage)

লেভারেজ হলো মূলত ধার করা অর্থ। একজন ফরেক্স ট্রেডারকে যে সবসময় তার নিজের পুজিই ব্যবহার করতে হবে এমন বাধ্যবোধকতা নেই। বরং সে চাইলে তার ব্রোকারের কাছ থেকে ধার হিসেবে অর্থ নিতে পারে। এটিই লেভারেজ। ধরা যাক একটি ডিলে ২০,০০০ ডলারের মধ্যে ১০,০০০ ডলার ট্রেডার তার নিজের পুঁজি থেকে বিনিয়োগ করলো। বাকি ১০,০০০ ডলার ব্রোকারের কাছ থেকে নিয়ে সে ডিলে বিনিয়োগ করতে পারে। এভাবে ব্রোকারের কাছ থেকে ডলার নিয়ে সেটা ব্যবসায় ব্যবহার করাকেই বলে লেভারেজ।

মার্জিন (Margin)

মার্জিন হলো একজন ট্রেডারের স্থায়ী পুঁজি। আমরা একটু আগেই লেভারেজ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু ব্রোকার একজন ট্রেডারকে যেই ধার দেয় তা এমনি এমনি দেয় না। একজন ট্রেডার যতটুকু লেভারেজ নিতে চায় তার একাউন্টের মার্জিন অবশ্যই তার থেকে বেশি হতে হবে। এর ফলে ব্রোকার নিশ্চিন্ত থাকতে পারে যে কোনো কারণে যদি ডিলের ফলাফল খারাপও হয় তাহলেও ব্রোকার তার টাকা ফেরত পাবে। 

লং (Long)

ফরেক্স মার্কেটের খুব বহুল প্রচলিত একটি টার্ম হচ্ছে “গোয়িং লং” (Going Long)। এর মাধ্যমে মূলত কোনো নির্দিষ্ট মুদ্রা কেনা বোঝায়। একজন ট্রেডারের যদি মনে হয় যে কোনো কারেন্সি পেয়ারে একটি কারেন্সির দাম ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। তাহলে সে ঐ কারেন্সি বা মুদ্রাটি বেশি করে কিনে রাখতে পারে। যেমন সমসাময়িক কালে ডলারের মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি যদি কেউ আগেই বুঝতে পেরে বেশি ডলার কিনে রাখে, তাহলে ওই প্রক্রিয়াটিই হলো লং। 

শর্ট (Short)

“গোয়িং লং” এর বিপরীতি টার্ম হলো “গোয়িং শর্ট” (Going Short)। এটি দ্বারা বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট মুদ্রা বেচে দেওয়া। যেমন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে ইউরোপ অনেক বেকায়দায় পড়েছে এবং ইউরোর দাম এখন ক্রমাগত কমছে। আর ইউরোর দাম কমবে এটি বুঝতে পেরে যদি কোনো ট্রেডার আগেই ইউরো বিক্রি করে দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি এখন আবার অনেক কম দামে সম পরিমাণ ইউরো কিনে নিতে পারবেন। এতে তার মুদ্রার পরিমাণ একই থাকলো কিন্তু লাভো বেশ হলো। এই প্রক্রিয়াটিই হলো শর্ট। 

ফরেক্স মার্কেট (Forex Market)

ফরেক্স মার্কেট (Forex Market)

ফরেক্স ট্রেডিং যেহেতু মুদ্রার কেনা-বেচা তাই স্বভাবতই ফরেক্স মার্কেট হলো সেই মার্কেট যেখানে মুদ্রা বা কারেন্সির কেনা-বেচা হয়। এটিকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মার্কেটও বলা যায়। কারণ প্রতিদিন এই ফরেক্স মার্কেটে ৬.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়।

ফরেক্স মার্কেট একইসাথে পৃথিবীর একমাত্র মার্কেট যা সার্বক্ষণিক চলমান। মূলত প্রতিটি দেশেই ফরেক্স মার্কেট সপ্তাহে পাঁচদিন চলে। কিন্তু যখন আমেরিকার ফরেক্স মার্কেট বন্ধ হয়, তখনই আবার জাপানের ফরেক্স মার্কেট খোলা থাকে। এ ধরনের স্থানিক পার্থক্যের কারণে আসলে সামগ্রিক ভাবে ফরেক্স মার্কেট কখনোই বন্ধ হয় না। তার পাশাপাশি এর পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। ফরেক্স মার্কেট এমন একটি মার্কেট যার কোনো নির্দিষ্ট হেডকোয়ার্টার (Headquarter) নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট ভবনে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি এমন একটি নেটওয়ার্ক যেটি সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত।

এই মার্কেটের অংশগ্রহণকারী হলো মূলত ছোট বড় অসংখ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী ব্যাংক, ব্যবসায়িক ব্যাংক এবং খুচরা বিনিয়োগকারী। পূর্বে ফরেক্স মার্কেটে শুধু বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকেরই অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ফরেক্স মার্কেটের কলেবর ব্যক্তি পর্যায়ে আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

মূলত ফরেক্স ট্রেডিং এর পুরো প্রক্রিয়াটিই ফরেক্স মার্কেটে সংগঠিত হয়ে থাকে। আর সাধারণ কোন মার্কেটের মতো এই মার্কেটকে খুব বেশি প্রভাবিত করাটাও সম্ভব নয়। অর্থাৎ হুট করে কোনো মুদ্রার দাম কমিয়ে দেওয়া বা বাড়িয়ে ফেলা কোনো একক গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ মুদ্রার মূল্যমান কখনোই বিনা কারণে বাড়ে কমে না। এটি নির্ভর করে কোনো মুদ্রার চাহিদা এবং তার যোগানের ওপর। এছাড়াও কোনো দেশের অর্থনৈতিক সুচকের অবস্থানও সেই দেশের মুদ্রার মূল্যমানে বড় প্রভাব রাখতে পারে। তার পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটিভও এর পেছনে অনেকটা প্রভাব ফেলে। তাই কোনো একক কারণ বা একক গোষ্ঠীর কারণে ফরেক্স মার্কেটে বৃহৎ ভাবে প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এই ফরেক্স মার্কেটের রয়েছে মূলত তিনটি ধরন। স্পট মার্কেট, ফরোয়ার্ড মার্কেট ও ফিউচার মার্কেট।

স্পট মার্কেট (Spot Market) 

স্পট মার্কেট দিয়ে মূলত ফরেক্স ট্রেডিং এর তাৎক্ষণিক লেনদেনকে বোঝায়। ফরেক্স মার্কেটের এই ধরনটিতে কারেন্সি তার তাৎক্ষণিক মূল্যমানের ওপর নির্ভর করে ক্রয়-বিক্রয় হয়। কোনো কারেন্সি বা মুদ্রার তাৎক্ষণিক মূল্য অনেকভাবেই প্রভাবিত হতে পারে। যেমনঃ ঐ মুদ্রার চাহিদা এবং যোগানের অনুপাত, সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থা, মুদ্রার সুদের হার ইত্যাদি। এই মার্কেটের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে তাৎক্ষণিক দামে একটি ডিল হয়। ডিলটি সম্পন্ন হলে তাকে বলে স্পট ডিল। এই স্পট ডিল কখন কেমন হবে তা আগে থেকে শতভাগ নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়। কারণ মুদ্রার মান সবসময়ই কিছুটা পরিবর্তনশীল। উল্লেখ্য যে, তাৎক্ষনিক হলেও এই লেনদেন সম্পন্ন হতেই দুই দিন সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

পূর্বে যখন বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডিল হতো, তখন এই স্পট মার্কেটে লেনদেনের হার কম ছিল। কারণ তখন বেশিরভাগ লেনদেনই হতো ফরোয়ার্ড বা ফিউচার মার্কেটে। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমের কল্যাণে খুচরা বিনিয়োগকারীর পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যত দিন যাচ্ছে, ততই স্পট মার্কেটে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ফরোয়ার্ড মার্কেট এবং ফিউচার মার্কেট (Forward & Future Market)

স্পট মার্কেটের সাথে ফরোয়ার্ড মার্কেটের প্রধান পার্থক্য হলো এর লেনদেনের ধরনে। স্পট মার্কেটে তাৎক্ষণিক ভাবে মুদ্রার যেই মূল্যমান থাকে তাতেই লেনদেন সম্পন্ন হয়। আর সেখানে সরাসরি মুদ্রাই আদান প্রদান হয়। কিন্তু ফরোয়ার্ড মার্কেটের ক্ষেত্রে সরাসরি মুদ্রা আদান প্রদানের বদলে একটি চুক্তির সৃষ্টি হয়। চুক্তি অনুসারে দুই পক্ষের মধ্যে মুদ্রা আদান প্রদান হয় কিন্তু মুদ্রার মূল্যমান এবং কবে আদান প্রদান হবে তা আগে থেকেই চুক্তিতে ঠিক করা থাকে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে ঐ মুদ্রার দাম বাড়লে বা কমলেও চুক্তিতে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।

ফরোয়ার্ড মার্কেটের আদান প্রদান গুলো চুক্তিভিত্তিক হলেও তা হয়ে থাকে ওটিসি (OTC) বা ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেটে। এর অর্থ এই ধরনের চুক্তিতে আলাদা কোনো পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান থাকে না। অপরদিকে ফিউচার মার্কেটে ফরোয়ার্ড মার্কেটের মতই চুক্তিভিত্তিক লেনদেনই হয়। কিন্তু ফিউচার মার্কেটকে বলা যায় ফরোয়ার্ড মার্কেটের আরো স্ট্যান্ডার্ড ধরন। এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে আরও বেশি নিয়ম কানুন মানা হয় এবং একটি পর্যবেক্ষক বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি এখানে বজায় থাকে।

ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করার উপায় 

বর্তমানে অনেক তরুণ ফরেক্স ট্রেডিংকে বেছে নিয়েছে তাদের পেশা হিসেবে। দিনে দিনে বাংলাদেশ সহ আরো অনেক দেশের জনগণের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফরেক্স ট্রেডিং। কিন্তু ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরী। 

সঠিক জ্ঞান আহরণ

ফরেক্স ট্রেডিং যথেষ্ট জটিল এবং কৌশলী একটি ব্যবসা। এই খাতে ভাল করতে চাইলে প্রথমেই ফরেক্স ট্রেডিং এর প্রতিটি টার্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ফরেক্স মার্কেটের অসংখ্য কৌশলে পারদর্শী হতে হবে। লেভারেজের অনুপাত কতটুকু রাখলে নিরাপদ থাকা যাবে তা বুঝতে হবে। তার পাশাপাশি কোন ঘটনা ফরেক্স মার্কেটে প্রভাব ফেলতে পারে, কখন কি কারণে কারেন্সির দাম বাড়তে বা কমতে পারে তা নিয়ে পরিষ্কার ধারনা অর্জন করতে হবে। 

একটি ফরেক্স একাউন্ট খোলা

ডিজিটাল মাধ্যমে ফরেক্স ট্রেডিং করতে চাইলে অবশ্যই তেমন কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে একাউন্ট লাগবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ব্রোকার প্ল্যাটফর্ম (Broker Platform) আছে। এর মধ্যে থেকে নির্ভরযোগ্য ব্রোকার প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করতে হবে। সেখানে ট্রেডিং একাউন্ট খোলার মাধ্যমেই শুরু হবে আপনার ফরেক্স ট্রেডিং এর যাত্রা। 

ব্যবসায়িক নীতি ঠিক করা

ফরেক্স মার্কেটে নিজস্ব কিছু ব্যবসায়িক নীতি রাখা খুবই জরুরী। কারণ এই মার্কেট অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আশা প্রদানকারী। কিন্তু অতিরিক্ত বিশ্বাসে কোনো বিনিয়োগে সকল পুঁজি ব্যবহার করলে তা যেমন দেখাতে পারে দারুণ লাভের মুখ, ঠিক তেমনি ঠেলে দিতে পারে নিদারুণ ক্ষতির কবলে। তাই অবশ্যই কিছু নীতি ঠিক করতে হবে। যেমন লেভারেজ ব্যবহারের সময় ঠিক কতখানি ধার করবেন, এক দিনে কতটুকু ট্রেডিং করবেন, কোন সূচক দেখে সিধান্ত নেবেন এবং সর্বোপরি এই ট্রেডিং ব্যবসায় কতখানি লগ্নি করবেন।

দৈনিক হিসাব করা

ফরেক্স ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে দৈনিক হিসাব করতে হবে। দিনের শেষে আপনি কতটুকু লাভ বা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, কেন হয়েছেন তা হিসাব রাখতে হবে। আপনার একাউন্টে কত ডলার আছে, ভবিষ্যতে কি করবেন তার হিসাব রাখা প্রয়োজন। আর এ মার্কেটে দৈনিক হিসাব করাটাই কাম্য কারণ এটির মতন পরিবর্তনশীল মার্কেট খুব কমই আছে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা

নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করাটা ফরেক্স ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিটি মূহুর্তে খুব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই কোনো কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেই ক্ষতি নিয়েই ভাবতে থাকলে আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

ফরেক্স ট্রেডিং এর কৌশল

ফরেক্স মার্কেট পৃথিবীর সবচেয়ে কৌশলী মার্কেটগুলোর একটা। এই মার্কেটের সবচেয়ে বৃহৎ দুটি কৌশল হলো গোয়িং লং এবং গোয়িং শর্ট। এ দুটো পূর্বেই আলোচনা করেছি। সময় সম্পর্কিত আরও কিছু কৌশল তুলে ধরা হলো লেখার এ অংশে। 

স্ক্যাল্প ট্রেড (Scalp Trade) 

এটিকে বলা চলে সবচেয়ে কম সময়ের ফরেক্স ট্রেডিং। মূলত কম পুঁজি সম্পন্ন ট্রেডাররা এই ধরনের ট্রেডিং করে থাকেন। এই ধরনের ট্রেডিং এ বিনিয়োগ মাত্র কিছু সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। অর্থাৎ কোনো কারেন্সির মান বাড়তে শুরু করার সাথে সাথে তাতে বিনিয়োগ করা হয়। এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডিল ক্লোজ করে দেওয়া হয়। এতে ঝুঁকি যেমন কম ঠিক তেমনি লাভের পরিমাণও কম। 

ডে ট্রেড (Day Trade)

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এটি মূলত দৈনিক ট্রেডিং। তবে এতে সারাদিন ধরে বিনিয়োগ বজায় রাখার কোনো বাধ্যবোধকতা নেই। বরং দিনের কিছু ঘন্টায় এই বিনিয়োগ বজায় থাকে। যেমন কোনো কারেন্সির দাম বাড়তে শুরু করার পর সেখানে বিনিয়োগ করা হয়। আর সেই কমতে শুরু করার সাথে সাথেই ডিল ক্লোজ করে ফেলা হয়। এক্ষেত্রেও ঝুঁকি এবং লাভের পরিমাণ দুটিই অনেক কম। 

সুইং ট্রেড (Swing Trade)

সুইং ট্রেডিং এর সময়কাল কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ হতে পারে। এ ধরনের ট্রেডাররা বেশি লাভ করে মূলত কোনো সরকারি নীতি পরিবর্তন অথবা বড় কোনো ইস্যুর সময়। যেমন কিছুদিন আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে হুট করেই ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ সময় যারা কয়েক সপ্তাহ আগে অল্প দামে ডলার কিনেছে তার বেশ লাভেই সেগুলো বিক্রি করতে পারছে। 

পজিশন ট্রেড (Position Trade)

এটি হলো সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের ফরেক্স ট্রেডিং। এই ধরনের ট্রেডিং কয়েক মাস থেকে বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে পারে। সাধারণত বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই এ ধরনের ট্রেডিং করে থাকে।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফরেক্স ব্রোকার 

এই পুরো লেখাটি যদি পড়ে থাকেন তবে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারনা পেয়েছেন। তবে অনেকেই এই বিষয়টিতে নিশ্চিত নয় যে বাংলাদেশ থেকেও ফরেক্স ট্রেডিং করা যায় কি না। অবশ্যই যায় এবং বর্তমানে অনেক আন্তর্জাতিক ফরেক্স ব্রোকার প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তেমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলোঃ

  • এক্সএম (XM) 
  • এফএক্সটিএম (FXTM) 
  • ই তোরো (eToro)
  • অক্টা এফএক্স (OctaFX) 
  • ইন্সটাফরেক্স (Instaforex) 

শেষকথা

ফরেক্স ট্রেডিং শতবর্ষের চলমান প্রক্রিয়া। আধুনিক কালে এসে ডিজিটাল মাধ্যমের কল্যাণে এই ফরেক্স ট্রেডিং এ যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আর এর শামিল হয়েছে বাংলাদেশও। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতিমালা যা মেনে চলা একান্তই কাম্য। ফরেক্স ট্রেডিং এর এই ব্যবসা যেমনি সম্ভাবনাময় তেমনি চ্যালেঞ্জিং। অন্যান্য সাধারণ ব্যবসার চেয়ে এখানে গভীর জ্ঞান, দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতা এবং বিশ্লেষণ দক্ষতার গুরুত্ব অনেক বেশি। যদি এই গুণগুলো আপনার থেকে থাকে এবং এই চ্যালেঞ্জকে বেছে নিতে চান তাহলে আপনিও যোগ দিতে পারেন ফরেক্স ট্রেডিং এর সম্ভাবনাময় জগতে।

বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং বৈধ কি না?

উত্তরঃ ফরেইন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ (Foreign Exchange Regulation Act, 1947) মোতাবেক বৈধ ভাবে বৈদিশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সধারী অনুমোদিত ডিলার বা মানি চেঞ্জার হওয়া বাধ্যতামূলক। 

ফরেক্স ট্রেডিং এর লভ্যাংশ উত্তোলন করবো কিভাবে?

উত্তরঃ বাইনারি অপশন বাংলাদেশ সংস্করণ এর মতো অনুমোদিত ফরেক্স ব্রোকারগুলো থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আপনি সরাসরি বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আনতে ও উত্তোলন করতে পারবেন। 

ফরেক্স ট্রেডিং এর ব্যবসা কতটা ঝুকিপূর্ণ?

উত্তরঃ ফরেক্স ট্রেডিং এর ব্যবসা অনেকটাই কৌশলী এবং ঝুকিপূর্ণ। তবে এই ব্যবসাক্ষেত্র বন্ধ হওয়া বা ছোট হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। 

 

তথ্যসূত্র

১) ফরেক্সটাইম (১) 

২) ফরেক্সটাইম (২) 

৩) ইনভেস্ট ইন গোল 

৪) ওয়ালস্ট্রিট মোজো

৫) ইউনিভার্সাল পার্টনার্স এফএক্স 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button