খবরবাংলাদেশসঞ্চয়পত্র

পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম (২০২৩)

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আওতাধীন ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে টাকা বিনিয়োগ সবচাইতে নিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এতে সরাসরি টাকা জমা রাখা হয়না, কারন পোস্ট অফিস কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। তবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে টাকা জমা রাখা যায়। এটি সরকারি বিধায় অন্যান্য প্রাইভেট ব্যাংকের মতো এতে বিনিয়োগে কোনোরকম ঝুঁকি নেই, আবার যখন ইচ্ছা তখন সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে তা উত্তোলন ও করা যায়। ডাকবিভাগ ১৮৭২ সাল থেকে এই সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মুনাফার হার অন্যান্য ব্যাংক এর তুলনায় অনেক কম। তা সত্ত্বেও যারা সবচেয়ে ঝামেলাহীন ও নিরাপদ ভাবে নিজের টাকা জমা রাখতে চান তাদের জন্য ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র এর মাধ্যমে জমা রাখাটা উত্তম। 

পোস্ট অফিসে একাউন্ট খুলতে যা যা লাগবে

  • আমানতকারীর NID কার্ড এবং দুই কপি ছবি।
  • নমিনীর দুই কপি ছবি।
  • ২ লক্ষ টাকার অধিক জমা করতে হলে নগদে করা যাবেনা সেক্ষেত্রে চেক এ পরিশোধ করতে হবে। 
  • চেক এ পরিশোধ করলে চেক এবং TIN সার্টিফিকেট এর ফটোকপি। 
  • চেকের অপর পাতায় “Good for Payment” লিখে ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষর কিংবা ব্যাংক থেকে ইনটিমেশন ফর্ম ( ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষর ও সীল সংবলিত ) জমা দিতে হবে।
  • আমানতকারীকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হবে।

পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার নিয়ম

পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার জন্য আপনার স্বশরীরে পোস্ট অফিসে হাজির হতে হবে। একাউন্ট খোলার সময় যে সাক্ষর করতে হয় তা নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই পোস্টমাস্টারের সম্মুখে থেকে করতে হবে, তাই আপনার নিজের পোস্ট অফিসে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। আপনি সঞ্চয় ব্যাংকে দুইধরনের একাউন্ট খুলতে পারেন। তা হচ্ছে যথাক্রমে মেয়াদী হিসাবের একাউন্ট এবং সাধারন হিসাবের একাউন্ট।

মেয়াদী হিসাব

এটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট সিস্টেম। এই হিসাবের একাউন্ট খুললে আপনি আপনার অর্থ ৩ বছর মেয়াদে জমা রাখতে পারবেন। অন্যান্য ব্যাংকের নিয়মের মতোই, এই ধরনের মেয়াদী হিসাবের একাউন্টে সাধারন হিসাবের তুলনায় বেশি মুনাফা প্রদান করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে ১১.২৮% হারে মুনাফা প্রদান করা হয়, তবে উৎসে মুনাফার ১০% হারে কর কর্তন করা হয়ে থাকে। এই ৩ বছর মেয়াদী হিসাবে আপনি প্রতি এক লাখ টাকা জমা রাখলে ৩ বছর শেষে ৩০,৪৫৬/- টাকা মুনাফা লাভ করবেন। মেয়াদী হিসাবে একক ভাবে ১০ লক্ষ এবং যৌথভাবে ২০ লক্ষ টাকা সমমূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়। এভাবে, ৩ বছর পর যদি আপনি টাকা উত্তোলন না করেন তবে আপনার মুনাফা আপনার মূলধনের সাথে যুক্ত হবে এবং এভাবে আপনার উর্ধ্বসীমা ( একক একাউন্টে ১০ লক্ষ এবং যৌথ একাউন্টে ২০ লক্ষ ) অব্ধি জমা হতে থাকবে এবং সে অনুপাতে আপনি মুনাফা পাবেন। অর্থাৎ মেয়াদী হিসেবের ক্ষেত্রে আপনি চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাবেন। চক্রবৃদ্ধি মুনাফার ব্যাপারটি হলো, মনে করুন আপনি ১ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন এবং এতে ৩০ হাজার টাকার মুনাফা এসেছে, কিন্তু আপনি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক থেকে আপনার মুনাফার অর্থ উত্তোলন করেননি৷ এবার আপনার মুনাফা হিসেবে নয় বরং মূলধন হিসেবে এই ৩০ হাজার টাকাকে গণ্য করা হবে। আগে যেখানে আপনি মুনাফা পেতেন এক লক্ষ টাকার ১১.২৮% হারে, এবার আপনি মুনাফা এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকার ১১.২৮% হারে। এরপর আপনার মুনাফা থেকে ১০% হারে কর কর্তন করে নেওয়া হবে। এভাবে আপনার মূলধন এবং সে অনুপাতে মুনাফা বৃদ্ধি পেতে থাকবে যতক্ষন তা আপনার ক্রয়ের উর্ধ্বসীমা অতিক্রম না করে। 

সাধারন হিসাব

সাধারন হিসাব এর আওতায় আপনি মাসিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন এবং ইচ্ছানুযায়ী টাকা উত্তোলন করবেন। এতে আপনি আপনার অর্থের উপর ৭.৫% হারে মুনাফা পাবেন এবং আপনার উৎসে মুনাফার ১০% হারে করকর্তন হবে। অর্থাৎ, সাধারন হিসাবে আপনি টাকা জমা রাখলে প্রতি এক লক্ষ টাকায় বছরে মোট ৬৭৫০/- টাকা মুনাফা লাভ করবেন। আপনি এ মুনাফা প্রতি মাসেই উত্তোলন করতে পারবেন৷ সাধারন হিসাবের ক্ষেত্রেও একক একাউন্টের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের উর্ধ্বসীমা ১০ লক্ষ এবং যৌথ একাউন্টের ক্ষেত্রে উর্ধ্বসীমা ২০ লক্ষ টাকা।

এভাবে আপনি যে ধরনের একাউন্ট খুলতে চান সেই একাউন্টের ফর্ম আপনাকে পূরন করতে হবে। ফর্ম পূরনের শেষে একাউন্ট খোলার কাজ সম্পন্ন হলে আপনাকে একটি পাসবই দেওয়া হবে যা দিয়ে আপনি পরবর্তীতে টাকা উত্তোলন বা অন্যান্য লেনদেন করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ্য, একজন ব্যক্তি একটিই একাউন্ট খুলতে পারবেন৷ আপনি এক পোস্ট অফিসে গিয়ে একাউন্ট খুলে থাকলে অন্য কোন পোস্ট অফিসে গিয়ে আরেকবার আরেকটি একাউন্ট খুলতে চাইলে তা রীতিমত অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।

পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের এখনো অব্ধি অনলাইনে কার্যক্রম খুব একটা নেই। যেহেতু এটি সাধারণ ব্যাংক না বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান না, যার ফলে আপনি ব্যাংকের মতো শুধু টাকা জমা রাখতে পারেন না, আপনাকে সঞ্চয়পত্র কেনার মাধ্যমে জমা রাখতে হয়। সেজন্য সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আপনাকে স্বশরীরেই পোস্ট অফিসে যেতে হবে। একাউন্ট খোলার সময় আপনাকে সে পাস বই দেওয়া হয়েছে সেটির মাধ্যমে আপনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিক্রয়ের সকল হিসেবের লেনদেন করা হবে। তবে আপনি যদি নগদ অর্থ নিয়ে যান তবে দুই লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের সঞ্চয়পত্র আপনি নগদ টাকায় ক্রয় করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে অন্য কোন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে, সে ব্যাংক একাউন্টে আপনার টাকা জমা করে চেকের মাধ্যমে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এভাবে আপনি আপনার একাউন্টে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে টাকা রাখতে পারবেন

শেষকথা

১৮৭২ সাল থেকে চলমান এই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া বেশ নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য। আজকের এ লেখাতে পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এতে আপনার পোস্ট অফিসে অর্থ সঞ্চয় এর ক্ষেত্রে সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে এবং আপনি উপকৃত হবেন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) পোস্ট অফিসে টাকা রাখা কি নিরাপদ? 

উত্তরঃ পোস্ট অফিসে টাকা রাখা বলতে সঞ্চয়পত্র ক্রয় বা ডাক সঞ্চয় ব্যাংকে টাকা রাখা বুঝানো হয়ে থাকে। যেহেতু একটি সরকারি, তাই এতে বিনিয়োগ করা বা টাকা রাখা নিঃসন্দেহে সবচাইতে নিরাপদ। 

২) সঞ্চয় ব্যাংকে সর্বোচ্চ কত টাকা রাখা যাবে? 

উত্তরঃ ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে যৌথ বা একক দুইধরনের একাউন্ট খোলা যাবে। বাংলাদেশ ডাকবিভাগের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী, একক একাউন্টে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ এবং যৌথ একাউন্টে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যাবে। উল্লেখ্য একজন ব্যক্তি একটিই একাউন্ট খুলতে পারবেন।

৩) সঞ্চয় ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ কি লাভজনক? 

উত্তরঃ ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মুনাফার হার এর থেকে অন্যান্য ব্যাংকের মুনাফার হার তুলনামূলক অনেক বেশি, সুতরাং এখানে অর্থ বিনিয়োগ তুলনামূলক কম লাভজনক। তবে এক্ষেত্রে সুবিধাটি হচ্ছে এতে কোন বাড়তি ঝামেলা নেই এবং সরকারি বিধায় সম্পূর্ণ নিরাপদ। আপনি একদিকে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে আপনার অর্থের ক্ষতি হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই কারন দেশের সরকার কখনোই আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়না, যেমনটা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। তাই যদি মুনাফাভিত্তিক লাভ বিবেচনা করেন সেক্ষেত্রে এটি অত লাভজনক নয় তবে যদি ঝুঁকির দিক বিবেচনায় এটি লাভজনক।

৪) মেয়াদী হিসাবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবো নাকি সাধারন হিসাবে?

উত্তরঃ মেয়াদী হিসাবে মুনাফার হার সাধারন হিসেবের তুলনায় বেশি। তাই আপনার যদি অর্থ প্রতিনিয়ত উত্তোলনের প্রয়োজন না থাকে, তবে মেয়াদী হিসাব এর একাউন্ট খোলাই উত্তম। তবে যদি এমন হয় যে সঞ্চয়পত্র ক্র‍য়ের পর আপনার প্রতি মাসে অর্থ উত্তোলন এর প্রয়োজন রয়েছে বা যেকোন সময় আপনার এ অর্থ প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাধারন হিসাবের একাউন্ট খুলে লেনদেন করুন৷ মেয়াদী হিসাবটা যারা সঞ্চয়ের জন্য দীর্ঘসময় জুড়ে টাকা রাখতে চায় তাদের জন্যই বেশি উপযোগী।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button