জন্ম নিবন্ধনপরিচয় পত্র

জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে করণীয়

জন্ম নিবন্ধন সনদ বর্তমানে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্যই হাতের কাছে রাখাটা অনেকটা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সকল ধরনের নথি, সার্টিফিকেট তৈরী সহ আরো অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই জন্ম নিবন্ধন সনদটি ব্যবহার করতে হয়। সেকারণে জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতের কাছে রাখা সকলের জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপিটি হারিয়ে যেতে পারে। এর ফলে অনেক প্রয়োজনীয় সময়ে জন্ম নিবন্ধন হাতের কাছে না থাকায় নানান সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হতে পারে। এরকম পরিস্থিতর মুখোমুখী হলে কি করা উচিত, কিভাবে জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে তা পুনরায় পাওয়া যাবে তা নিয়েই থাকছে আজকের লেখাটি।

সূচিপত্রঃ

জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে মূল কপির বিকল্প

জন্ম নিবন্ধন সনদ বলতে আমরা প্রায় সবাই কাগজে ছাপানো সিটি কর্পোরেশন অফিস অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া কপিটিকেই বুঝি। কিন্তু বর্তমানে সকল জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইন ডাটাবেসে সংরক্ষন করা আছে। ফলে সেই মূল কপিটি না থাকলেও অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করে বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব।

জন্ম নিবন্ধন নং ব্যবহার করুন

জন্ম নিবন্ধন সনদের মুল সনাক্তকারী পরিচয়টি হচ্ছে জন্ম নিবন্ধনের আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। সেকারণে এই নাম্বারটি কারো কাছে থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপিটি ছাড়াও অনেক স্থানেই নাম্বারটি ব্যবহার করা সম্ভব হয়। যেসকল স্থানে জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, সেগুলোর অধিকাংশতেই জন্ম নিবন্ধন সনদের ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নং ব্যবহার করে ঐ ব্যক্তির তথ্য নেওয়া ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই জন্ম নিবন্ধন নং দেশের সকল মানুষের জন্যই আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। ফলে যেকোন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিয়ে এই আইডি নাম্বারটি ব্যবহার করতে পারে। এরপর জন্মনিবন্ধনের যে কোন তথ্য প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে এখন কেউ জন্ম নিবন্ধন সনদের মুল কপি ছাড়াও জন্ম নিবন্ধন নং ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সনদের কাজ করতে পারবে অধিকাংশ জায়গাতেই।

প্রিন্ট কপি ব্যবহার করুন

কার্যক্ষেত্রে অনেক ধরনের লাইসেন্স বা নথি তৈরী করতে জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি যুক্ত করতে হয়। এই কাজটি চাইলে জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি না থাকলেও করা সম্ভব। জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন ডাটাবেসে সংরক্ষিত থাকায় এটি চাইলেই এখন অনলাইনে চেক করা যায় এবং একই সাথে সেখান থেকেই জন্ম সনদের অনলাইন কপি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা যায়। এই প্রিন্ট করা কপিটি মূল কপির পরিবর্তে অনেক প্রতিষ্ঠানই গ্রহণ করে। এই প্রিন্ট কপিটি প্রায় সম্পূর্ণই আসল কপির মত দেখতে হওয়ায় ব্যবহার করতেও সমস্যা হয় না কোন। ফলে জন্ম নিবন্ধনের মূল কপিটি না থাকলেও এই প্রিন্ট কপিটির সাহায্যে অধিকাংশ কাজ করা সম্ভব হয়।

জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে মূল কপি পাওয়ার উপায়

অন্যান্য অনেক ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলেও জন্ম নিবন্ধনের মূল কপিটি অনেক সময়ই প্রয়োজন হতে পারে অনেকের। এছাড়াও মূল কপিটি ব্যবহার করা সবসময়ই প্রিন্ট কপি ব্যবহার থেকে বেশী গ্রহণযোগ্য। তাই জন্ম সনদ হারিয়ে গেলে পুনরায় সেটির একটি কপি তৈরী করে নেওয়া উচিত যত দ্রুত সম্ভব।

অনলাইনে আবেদন করুন

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে সেটি পুনরায় পাওয়া খুবই সহজ একটি কাজ। কয়েকটি সহজ ধাপের মাধ্যমে যে কেউ জন্ম নিবন্ধন পুনঃমূদ্রণ করতে পারবে। এখানে সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

ধাপ-১.

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়ার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য সরকারী নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে সর্বপ্রথমে। https://bdris.gov.bd/br/application এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে সহজেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে মূল কপি পাওয়ার উপায় ধাপ- ১

ধাপ-২.

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ওয়েবসাইটের উপরের মেনু বার থেকে ‘জন্ম নিবন্ধন’ লেখা অপশনে যেতে হবে। এখান থেকে ‘জন্ম সনদ পূনঃমূদ্রণ’ অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে মূল কপি পাওয়ার উপায় ধাপ- ২

ধাপ-৩.

ক্লিক করার পর নতুন একটি পৃষ্ঠা আসবে সামনে। এখানে হারিয়ে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ লিখতে হবে। এরপর অনুসন্ধান বাটনটিতে ক্লিক করলেই ঐ জন্ম নিবন্ধনটির তথ্য দেখানো হবে। জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সঠিক থাকলে পাশের ‘নির্বাচন করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে মূল কপি পাওয়ার উপায় ধাপ- ৩

ধাপ-৪.

পরবর্তী পৃষ্ঠায় আবেদনকারীকে তার নিবন্ধক কার্যালয়ের ঠিকানা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে প্রথমে জন্ম নিবন্ধন সনদটি কোন এলাকা থেকে তৈরী করা হয়েছিলো তা জেনে নিতে হবে। নিবন্ধক কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে অবশ্যই ঐ এলাকার কার্যালয়কেই নির্বাচন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে মূল কপি পাওয়ার উপায় ধাপ- ৪

ধাপ-৫.

নিবন্ধক কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়ার পর আবেদনকারীর তথ্য লিখতে হবে। এর প্রথম ঘরটিতেই আবেদনকারী জন্ম নিবন্ধনটি যার নামে তৈরী করা তার সাথে কিভাবে সম্পর্কিত তা নির্বাচন করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখতে হবে নিচের ঘরগুলোতে। এরপর সাবমিট বাটনটিতে ক্লিক করলেই আবেদনটি জমা হয়ে যাবে।

ধাপ-৬.

এর পরের পৃষ্ঠায় আবেদনটির নাম্বার ও জন্ম নিবন্ধনের মূলকপিটি সংগ্রহ করার তারিখ দেওয়া হবে। ঐ নির্দিষ্ট তারিখের মাঝে জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট দিনের মাঝে নির্দিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদটি সংগ্রহ করতে হবে।

হারানো জন্ম নিবন্ধন নং জানা না থাকলে করনীয়

উপরে বর্ণনা করা পদ্ধতিগুলোর প্রায় সবগুলোই শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন নং জানা থাকলে করা সম্ভব। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন নং ও মনে না থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে ঐ তথ্যগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এরকম পরিস্থিতে সাধারণত স্বশরীরে জন্ম নিবন্ধন সনদটি সংগ্রহ করার জন্য আবেদন করতে হয়। এর পদ্ধতি এখানে উল্লেখ করা হলোঃ

ধাপ-১. জন্ম নিবন্ধন তৈরীর স্থান খুঁজে বের করুন

জন্ম নিবন্ধন সনদটি নতুন করে পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরীর সময় যে নিবন্ধকের কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছিলো সেটি প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে। এটি সাধারণত জন্ম নিবন্ধনে উল্লেখ করা স্থায়ী ঠিকানার উপরে নির্ভর করে। ঐ ঠিকানা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সিটি কর্পোরেশন অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভাতে উপস্থিত হতে হবে আবেদনকারীকে।

ধাপ-২. দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট আবেদন করুন

নির্দিষ্ট অফিসে উপস্থিত হওয়ার পরে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরীর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে আবেদনকারী তার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা উল্লেখ করলে ঐ কর্মকর্তা নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করে দিবে। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদটি গ্রহণ করে যেকোন জায়গাতেই ব্যবহার করা যাবে।

শেষকথা

বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে সরকার অন্যান্য সকল নথিকেই যুক্ত করছে। সেকারণে জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতের কাছে থাকাটা অনেক জরুরী। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে আমাদের অনেক ধরনের কাজই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই সেধরনের পরিস্থিতিতে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ পূনরায় ফেরত পাওয়া যায় সে সম্পর্কে এই লেখাটি আপনাদের সাহায্য করতে পারবে।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে পুনঃমূদ্রণ করার পর কি জন্ম নিবন্ধন নং একই থাকবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ। জন্ম নিবন্ধন পুনঃমূদ্রণ করলে আগের জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বার এবং পরের কপিটির নাম্বার একই থাকবে।

২. জন্ম নিবন্ধন পুনঃমূদ্রণ করার সময় কি জন্ম নিবন্ধনের ভূল তথ্যগুলোও একই সাথে ঠিক করা যাবে?

উত্তরঃ জন্ম সনদ হারিয়ে গেলে তা পুনঃমূদ্রণ করলে আগের জন্ম নিবন্ধন সনদের একটি কপিই নতুন করে আবেদনকারীকে দেওয়া হবে। আগের কপিতে কোন তথ্য ভূল থাকলে পুনঃমূদ্রিত কপিটিতেও সেই তথ্যটি ভূলই থাকবে। এক্ষেত্রে আগের জন্ম নিবন্ধন সনদে্র কোন ভূল আলাদা করে শোধরানো হবে না। ভুল শোধরানোর জন্য আলাদা করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে হবে।

৩. কারো জন্ম নিবন্ধন তৈরীর সময়ের নিবন্ধকের কার্যালয় যদি বর্তমানে কোনভাবে বিভক্ত হয়ে যায়, তাহলে করনীয় কি?

উত্তরঃ নানান কারণে জন্ম নিবন্ধন তৈরীর সময়ের নিবন্ধকের কার্যালয় বিভক্ত হতে পারে বা ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারে। সেক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী ঐ এলাকার নিবন্ধকের কার্যালয় নির্বাচন করতে হবে।

৪. অনলাইনে কি জন্ম নিবন্ধন সনদের উল্লেখিত জন্ম নিবন্ধন নং কোনভাবে জানতে পারা সম্ভব?

উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত জন্ম নিবন্ধন নংটি শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন সনদটি থেকেই পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে সেটি আলাদা করে পাওয়ার কোন উপায় নেই। বরং অন্যান্য সকল তথ্য জানার প্রয়োজন হলেও এই জন্ম নিবন্ধন নং ব্যবহার করে ঐ তথ্যগুলো পেতে হয়।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button