আউটসোর্সিংপেশা

আউটসোর্সিং কি? এর গুরুত্ব, সুবিধা, অসুবিধা (বিস্তারিত)

বর্তমানে আউটসোর্সিং শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত। ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এই শব্দটি অহরই শুনে থাকে। কিন্তু সারা বিশ্বের চাকরি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খুব পরিচিত এই শব্দটি নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারনা রয়েছে। এমনকি অনেক ফ্রিল্যান্সারও আউটসোর্সিং সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারনা রাখেন না। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, পৃথিবীটা ততই আউটসোর্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। তাই এই পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে হলে অবশ্যই আউটসোর্সিং কী, কিভাবে তা করতে হয় এবং এর সুবিধা অসুবিধাসমূহ সম্পর্কে জানা দরকার। সেই লক্ষ্য পূরণেই থাকছে আজকের এই লেখাটি।

সূচিপত্রঃ

আউটসোর্সিং কি?

একটি প্রতিষ্ঠান যখন কোনো একটি কাজ বা কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের জন্য বাহিরের কোনো লোক বা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় তখন তাকে বলে আউটসোর্সিং। ইংরেজি শব্দ আউটসোর্সিং (Outsourcing) এর মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে আছে। আউট সোর্স করার অর্থ দাঁড়ায় বাহিরের কাউকে দিয়ে কাজ করানো। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান যখন তার কোনো বিশেষ কাজ নিজের কর্মীদের দ্বারা না করিয়ে বাহিরের কাউকে দিয়ে করায় সেটিই আউটসোর্সিং।

আউটসোর্সিং অনেক মাধ্যমেই করা সম্ভব। তা হতে পারে যেকোনো একজন ব্যাক্তি অথবা একটি দল। আবার হতে পারে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। যেমন ধরা যাক, ঢাকার ‘ক’ কলেজ তার শিক্ষার্থীদের ফলাফল ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠাতে চায়। এই কাজটি কলেজের কর্মীদের দ্বারা না করিয়ে তারা চাইলে অন্য একটি আইটি ফার্মকে সেই দায়িত্ব দিতে পারে। এটিই হলো আউটসোর্সিং। আবার যদি কলেজটি তার ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে চায় তবে যেকোনো একজন ওয়েব ডেভেলপারকে সেই দায়িত্ব দিতে পারে। আবার কাজটি বড় পরিসরের হলে একজনের বদলে একটি দল সেই কাজ করতে পারে। এগুলো সবই আউটসোর্সিং এর উদাহরণ। মূলত আউটসোর্সিং বর্তমানে একটি সর্বজনবিদিত প্রক্রিয়া। যার শুরু হয়  ১৯৮৯ সালে। এবং পুরো ‘৯০ এর দশক জুড়েই এটি ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই এর ব্যবহার অহরহ।

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং এর গুরুত্ব 

ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়ায় যদি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু থেকে থাকে, তবে সেটি আউটসোর্সিং। কারণ আউটসোর্সিং থেকেই ফ্রিল্যান্সিং এর জন্ম। ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো মুক্তপেশা। কোনো একক প্রতিষ্ঠানে দায়বদ্ধ না থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী খন্ডকালীন কাজ করাই হলো ফ্রিল্যান্সিং। আর ফ্রিল্যান্সারগণ যা কাজ করে থাকে, সেসব কাজের সৃষ্টিই আউটসোর্সিং এর কারণে। কোনো প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কোনো কাজ সমাধান করতে চাইলে তবেই ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের অনেকেরই ধারনা ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং দুটি একই জিনিস। বাস্তবে এদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আউটসোর্সিং করা হলো মূলত কাজ দেওয়া। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং হলো সেই কাজটি করা। অর্থাৎ এরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলেও এক নয়। যিনি আউটসোর্স করেন তিনি হলে কর্ম দাতা, অন্যদিকে যিনি ফ্রিল্যান্স করেন তিনি হলেন কর্ম গ্রহীতা। যাকে সহজ ভাষায় বলে কর্মী।

আউটসোর্সিং এর ধরন

আউটসোর্সিং অনেক বিস্তৃত একটি ধারনা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই  আউটসোর্সিং হচ্ছে অহরহ। এই আউটসোর্সিং এর পুরো প্রক্রিয়াটিকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলোঃ

ইনশোর আউটসোর্সিং

যখন একটি প্রতিষ্ঠান তার দেশেরই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে থাকে, তখন তাকে বলে ইনশোর আউটসোর্সিং। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান নিজের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে সুবিধা যেমন আছে। অসুবিধাও আছে।ইনশোর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে যেই সুবিধাটি পাওয়া যায় তা হলো এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক দূরত্ব নেই বললেই চলে। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই আলাদা আলাদা সংস্কৃতি বিরাজমান। আর একটি দেশের সীমানা পার হলে সংস্কৃতিও বদলে যায় অনেকটুকু। কিন্তু ইনশোর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংস্কৃতিগত বাধা বা দূরত্ব থাকে না। ফলে যোগাযোগ ও বোঝা-পড়া খুব সহজ ও সাবলীল হয়। যা কাজটিকে আরো নিখুঁত করে তোলে। একই ভাবে ইনশোর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে সময়ের পার্থক্য তেমন থাকে না। একই দেশের হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ও বাহিরের কর্মীদের সময় মেলাতে সমস্যা হয় না। ফলে কাজের সার্বিক গতি বজায় থাকে।  

অপরদিকে ইনশোর আউটসোর্সিং এর উপর নির্ভরশীল হলে খরচের তেমন একটা পার্থক্য থাকে না। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান যদি নিজের দেশেরই ভিন্ন জনবল ব্যবহার করে কাজটি সম্পাদন করে তাহলে খুব কম বাজেটে কাজটি করার সুযোগ নেই। যেখানে ভিন্ন দেশ বা ভিন্ন অঞ্চলের কর্মীদের দ্বারা কাজটি করালে খরচ অনেকটাই কম হতে পারে। 

নিয়ারশোর আউটসোর্সিং

নিয়ারশোর আউটসোর্সিং এর অর্থ প্রতিবেশি দেশের কর্মীদের দ্বারা আউটসোর্সিং এর কাজটি সম্পাদন করা। এক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান যেই দেশে অবস্থিত তার পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির মাধ্যমে আউটসোর্সিং করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দূরত্ব কিছুটা সৃষ্টি হলেও তার মাত্রা খুব বেশি নয়। একই ভাবে খরচের পার্থক্যটাও এক্ষেত্রে খুব বেশী নয়।

ধরা যাক নেপালের কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি কাজ বাংলাদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান যদি চুক্তির ভিত্তিতে করে থাকে, তবে তা হবে নিয়ারশোর আউটসোর্সিং। এক্ষেত্রে দুই দেশের কর্মীদের মধ্যে সময়ের পার্থক্য খুব বেশি হবে না। ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও সাংস্কৃতিক পার্থক্য তূলমামূলক কম হবে। এটিই নিয়ারশোর আউটসোর্সিং।  

অফশোর আউটসোর্সিং

বর্তমান দুনিয়াতে আউটসোর্সিং বললে প্রথমেই যেই বিষয়টি মাথায় আসে তাই আসলে অফশোর আউটসোর্সিং। বিশেষত বাংলার জনমনে ফ্রিল্যান্সিং করে বিদেশি মুদ্রা আনার যে ধারনা রয়েছে তা মূলত ইউরোপ-আমেরিকা ভিত্তিক। বর্তমানে অনেক বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারই ইউরোপের বড় বড় ফার্মে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে। আবার অনেক ইউরোপিয়ান নিজস্ব কাজও বাংলাদেশী, ভারতীয় এদের দ্বারা করিয়ে নেয়। এটিই অফশোর আউটসোর্সিং এর উদাহরণ। 

এ ধরনের আউটসোর্সিং এ ভাষাগত, সময়গত ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য সবচেয়ে বেশি। যেমন আমেরিকাতে যখন দিন তখন বাংলাদেশে গভীর রাতে। আবার সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এসব ইউরোপিয়ান দেশগুলোর ভাষা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তাই ইনশোর ও নিয়ারশোর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে একই বা কাছাকাছি ভাষা ব্যবহৃত হলেও অফশোর আউটসোর্সিং এ যোগাযোগের জন্য শুধু ইংরেজিই ব্যবহৃত হয়। আবার ঠিক একই ভাবে অফশোর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে খরচের পার্থক্যটা অনেক। কারণ একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান দ্বারা আরেকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে আউটসোর্সিং করাতে হলে যে খরচ হবে, বাংলাদেশী কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তার ৩ ভাগের ১ ভাগই যথেষ্ট। ঠিক এ কারণেই বর্তমান বিশ্বে অফশোর আউটসোর্সিং এত বেশি জনপ্রিয়।  

কেন করবেন আউটসোর্সিং?

আউটসোর্সিং কী ও কয় ধরনের এসব সম্পর্কে ধারনা পেয়ে গেলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি কিন্তু রয়েই যায়। সেটি হলো, কেন করবেন আউটসোর্সিং। এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আউটসোর্সিং সুবিধাগুলো সম্পর্কে আমাদের কিছুটা জানতে হবে। 

স্বল্প খরচ

আউটসোর্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বল্প খরচ। একটি প্রতিষ্ঠান চলার মূলমন্ত্র হলো এর অর্থনৈতিক সফলতা। এমনকি কোনো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও খরচের বিষয়টি তাদের মাথায় রাখতেই হয়। আর একবিংশ শতাব্দীতে আউটসোর্সিং হতে পারে সেই খরচ কমানোর হাতিয়ার। 

লেখার শুরুতেই আউটসোর্সিং কী তা বোঝাতে আমি একটি কলেজ ও একটি আইটি ফার্মের উল্লেখ করেছিলাম। ঠিক একই চিত্রটি আবার কল্পনা করা যাক। ধরা যাক একটি কলেজ তার শিক্ষার্থীদের ফলাফল ম্যাসেজের মাধ্যমে জানাতে চায় ও ওয়েবসাইটের উন্নয়ন করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা যদি কাজটি নিজেদের কর্মীদের দ্বারা করতে চায় তাহলে বিষয়টি অনেক ব্যায়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ শুধু সেই কাজের জন্য আলাদা করে নতুন কম্পিউটার কিনতে হবে, নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যায়বহুল। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের কাজ ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করে থাকে, যা স্পষ্টতই আউটসোর্সিং।

এর চেয়েও বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের বিদেশী ব্যাংকে নিরাপত্তা প্রদান করা। বাস্তবিকই বাংলাদেশী টিম বিদেশী অনেক নামি-দামি ব্যাংকের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে নিয়োজিত। কারণ আর কিছুই নয়, বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান কম খরচে দক্ষতার সাথে কাজটি করতে পারছে।

স্থান সংকুলান

স্থান সংকুলান করতে না পারাও অনেক সময় আউটসোর্সিং এর একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন অনেক কর্পোরেট অফিসই অনেক খরুচে স্থানে অবস্থিত। এ সব অফিসের যায়গা বাড়ানোটা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ ও ঝামেলাদায়ক। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের মূল অফিসে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চালু রেখে ছোট কাজগুলো ফ্রিল্যান্সারদের সাহায্যে করে থাকে। 

অধিক দক্ষতা

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর আউটসোর্সিং এর দিকে ঝুঁকে পড়ার পেছনে অধিক দক্ষতাও একটি বড় কারণ। আপনি যদি আপনার কর্মীদের সম্পূর্ণ নতুন কোনো কাজের ভার দেন, তবে তাতে তাদের অভ্যস্থ হতে অবশ্যই কিছুটা সময় লাগবে। এ সময়ে তাদের দক্ষতা বেশ কম থাকবে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কাজের গতি ধীর হয়ে যাবে। অপর দিকে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করালে কাজটি দ্রুত হয়। কারণ যারা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজটি করবে, তারা সেই কাজটিতে পুরোপুরি দক্ষ। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে তাদের প্রধান কাজগুলোর জন্যই স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। বাকি কাজগুলোর জন্য আউটসোর্সিং এর ওপর নির্ভর করে। আর যতই দিন যাচ্ছে, এই প্রবণতা ততই বেড়ে চলেছে। 

আউটসোর্সিং এর অসুবিধাসমূহ

আউটসোর্সিং এর অনেক সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও তেমন আছে। বর্তমানে ভাষা, সংস্কৃতি ও সময় ব্যবধানের বাঁধা এড়িয়ে আউটসোর্সিং দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লেও, কিছু সমস্যা থেকেই যায়। আপনি যদি কোনো কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। 

তথ্য চুরির ভয়

তথ্য চুরির ভয় বর্তমানে আউটসোর্সিং দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা। বর্তমান যুগে তথ্য হলো সম্পদের ন্যায়। যেকোনো ব্যবসাতেই তথ্যের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। ঠিক সে কারণেই, কোনো প্রতিষ্ঠানের স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সে প্রতিষ্ঠান মারাত্নক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আর আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। কারণ স্থায়ী কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেও ফ্রিল্যান্সারদের তা নেই বললেই চলে। তাই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের কাছে যাতে কোনো স্পর্শকাতর তথ্য না চলে যায় সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কড়া নজরদারি করতে হয়। অথচ দ্রুত কাজ করতে চাইলে এটি অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। 

এই কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই আবার অনেক অর্থ ও শ্রম ব্যায় করে নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে তোলে। যেমন বাংলাদেশের করোনা টিকা নিবন্ধনের ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশী সার্ভার ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে প্রথম দিকে এর সেবা ধীর গতির হলেও, এ দেশের নাগরিকদের স্পর্শকাতর তথ্য বহিরাগত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছায় নি। 

অব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা

আউটসোর্সিং যেমনটা দ্রুত গতির এবং সুবিধাজনক, অব্যবস্থাপনার কারণে তা হতে পারে ততটাই সমস্যাদায়ক। আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়। এবং এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা করাটা সাধারণ ব্যবস্থাপনার চেয়ে কিছুটা কঠিনই বটে। কারণ আউটসোর্সিং এর কাজগুলো করে প্রতিষ্ঠানের বাইরের কিছু মানুষ। তাই তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাটা স্বভাবতই কঠিন। বিশেষত অনেক বড় কোনো কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করাতে গেলে তা নিয়ন্ত্রণেই বেশ খানিকটা জনবলের প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আউটসোর্সিং এর কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেয়ে প্রতিষ্ঠানের যে অর্থ ও জনবলের দরকার হচ্ছে তার থেকে কিছুটা বাড়াল তারা নিজেরাই কাজটি সম্পাদন করতে পারে। তাই আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে তা কতটা লাভজনক হচ্ছে সে বিষয়ে হিসেব রাখাটা খুবই জরুরী।

নিজ দেশের বেকার সমস্যা

আউটসোর্সিং এর অন্যতম বড় একটি অংশ হচ্ছে অফশোর আউটসোর্সিং। অর্থাৎ দূর দেশের কারো সাহায্যে কাজ সম্পাদন করা। কিন্তু এর ফলে স্থানীয় অনেক কর্মীই বেকার হয়ে পড়ছেন। বিশ্বজুড়ে এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন উন্নত দেশের বাসিন্দারা। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর নাগরিকেরা মূলত উন্নত দেশের নাগরিকদের কাজই স্বল্প খরচে করে দিচ্ছে। ফলে এদেশে উলটো অনেকের কর্ম সংস্থান হচ্ছে। কিন্তু আউটসোর্সিং এর বিস্তৃতির সাথে সাথে বাংলাদেশেও যে এই সমস্যা আঘাত হানবে না, তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই।  

শেষকথা

বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যবহার যতটা বাড়ছে, আউটসোর্সিং ততটাই সহজলভ্য হচ্ছে। বিশেষত খরচ কমানোর লক্ষ্যে বিশ্বের সকল আধুনিক প্রতিষ্ঠানই এখন আউটসোর্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি হতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। আবার আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন উদ্যোক্তা, তাহলে আউটসোর্সিংকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে পারেন নিজের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এক্ষেত্রে হতে হবে সাবধানী। মনে রাখতে হবে যে একমাত্র সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আউটসোর্সিং এর পূর্ণ সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) আমার কখন আউটসোর্সিং করা উচিত?

উত্তরঃ কোনো কাজে আপনার কর্মীরা একদমই অদক্ষ হয়ে থাকলে অথবা আপনার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকলে তা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত।

২) আমার কর্মীদের কি প্রশিক্ষণ দেওয়াবো নাকি আউটসোর্সিং এর দ্বারস্থ হবো?

উত্তরঃ কাজটি যদি স্বল্পমেয়াদী হয় তবে প্রশিক্ষণ দেওয়ানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু কাজটি দীর্ঘমেয়াদি হলে নিজের একটি প্রশিক্ষিত কর্মী দল থাকাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে প্রথমে ফ্রিল্যান্সারদের উপর নির্ভর করলেও ধীরে ধীরে নিজের কর্মী দল তৈরি করে নেওয়া উচিত।

৩) অটোমেটেড কলার সার্ভিস কি আউটসোর্সিং?

উত্তরঃ এটিও এক ধরনের আউটসোর্সিং। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার গ্রাহকেরা সেবা পেয়ে থাকবে। ফলে আপনার কর্মীরা আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় ব্যায় করার সুযোগ পাবে। যদি আপনি ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই অটোমেটেড কলার সার্ভিস নিয়ে থাকেন, তবে তা অবশ্যই আউটসোর্সিং। 

৪) আউটসোর্সিং করলে কি সেবার মান কমে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে?

উত্তরঃ এটি নির্ভর করবে আপনি কতটা ভাল ব্যবস্থাপনা করছেন তার ওপর। আপনি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সেবা গ্রহণ করার সময় তার মান নিখুঁতভাবে যাচাই করে নেবেন। এটি নিশ্চিত করতে পারলে আপনার সেবার মানও স্থিতিশীল থাকবে। 

৫) আমি একজন ফ্রিল্যান্সার, আমি কিভাবে আউটসোর্সিং এর পূর্ণ সুবিধা পাবো?

উত্তরঃ আউটসোর্সিং এর কারণেই আপনি কাজ পেয়ে থাকেন। তাই আপনার কাজগুলো নিখুঁত ভাবে করার চেষ্টা করুন। একই ভাবে আপনার গ্রাহকের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন যাতে ভবিষ্যতেও কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকে। 

 

 

তথ্যসূত্রঃ

১। Outsourcing Definition (investopedia.com)

২। What is Outsourcing and How Does it Work? (techtarget.com)

৩। What is outsourcing? Definitions, best practices, challenges, and advice (cio.com)

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button