ফার্নিচার

বাংলাদেশের অনলাইন ফার্নিচার মার্কেট

গয়না যেভাবে একজন নারীর সৌন্দর্যকে কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে ঠিক একই ভাবে আসবাবপত্র বা ফার্নিচারও একটি ঘরের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। কোন ঘরই আসবাবপত্র ছাড়া পূর্ণ হয় না। ঘরের ফার্নিচার যেমন ঘরের মানুষগুলোর মনের শৌখিনতার পরিচয় বহন করে, তেমনি ঘরে বসবাসকারীদের জীবনও অনেক আরামদায়ক করে তোলে। আমাদের দেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রির অনেক পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক বছরে । যুগের সাথে মানানসই নতুন এবং আধুনিক অনেক ডিজাইন দেখা যায় এখন। আগেকার দিনে, ফার্নিচার কেনার সবচেয়ে প্রচলিত পন্থা ছিলো দোকান ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দসই ফার্নিচার খুজে বের করা, যা কিনা অনেক সময় সাপেক্ষ সেই সাথে অনেক ধকলেরও ছিলো।কিন্তু এখনকার ডিজিটাল যুগে দেশের অনেকগুলো সেরা ফার্নিচার কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফার্নিচার বিক্রি করে থাকে। শুধুমাত্র কম্পিউটারের সামনে বসেই, কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে, আপনার বাজেটের পরিমাণ, কোন ম্যাটেরিয়ালের ফার্নিচার চাচ্ছেন এবং আপনার ঘরের আকার উল্লেখ করলেই সেই অনুযায়ি কোম্পানির ফার্নিচার লিস্ট থেকে খুব সহজেই এবং কম সময়ের মধ্যেই বাছাই  করে নিতে পারবেন নিজের মনের মত ফার্নিচার। শুধু এতটুকুই না, পছন্দের ফার্নিচারটি আপনার ঠিকানায় পৌছে ঠিকঠাক করে সেটও করে দিয়ে যাবে কোম্পানি থেকেই।

আগের দিনের তুলনায় বর্তমানে ফার্নিচারের মধ্যে অনেক বেশি বৈচিত্র্য দেখা যায়। বসার, শোবার, খাওয়ার ঘর এমনকি অফিসের ফার্নিচার গুলোয়ও রয়েছে নতুনত্ব। যেমনঃ

১। বসার ঘর

বাড়িতে বসবাসকারীদের সম্পর্কে অতিথিদের মনে প্রাথমিক ধারণা হয় তাদের বসার ঘর দেখে। তাছাড়া বসার ঘর যেকোন ঘরেরই প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। এজন্য বসার ঘরের ফার্নিচার গুলো আধুনিক এবং স্টাইলিস ডিজাইনের হলে, তা অতিথিদের মনে যেমন একটি ভালো ইম্প্রেশন ফেলে সেইসাথে ঘরের মানুষদের রুচিবোধেরও পরিচয় বহন করে। বসার ঘরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফার্নিচার গুলো হচ্ছে, সোফা, সেন্টার টেবিল, টিভি ট্রলি, ম্যাগাজিন ট্রলি, ম্যাগাজিন সেলফ, ডিভান, টেলিফোন টেবিল, জুতার র‌্যাক এবং কফি টেবিল। 

সোফাঃ

বসার ঘরের জন্য আধুনিক ডিজাইনের সোফার দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৫০,০০০/- টাকা থেকে এবং টাকার পরিমাণ বেড়ে এক থেকে দেড় লাখ পর্যন্তও হয়ে থাকে সোফার ডিজাইন, আকারের উপর ভিত্তি করে।

সেন্টার টেবিলঃ

সোফা সেটের মাঝে ব্যবহৃত সেন্টার টেবিল এর দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৮০০০/- টাকা থেকে। টেবিলের ডিজাইন এবং কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে দাম আরো বেশি বা কম হতে পারে।  

টেলিভিশন ট্রলিঃ

বর্তমানে টেলিভিশন ট্রলি অনেক প্রচলিত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ট্রলিতে টেলিভিশন ছাড়াও অন্যান্য জিনিসপ্ত্র রাখার জায়গা হয়। টেলিভিশন ট্রলির দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১১,০০০/- টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ ২৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ম্যাগাজিন ট্রলি এবং ম্যাগাজিন সেলফঃ

ম্যাগাজিন ট্রলি আর ম্যাগাজিন সেলফ কাজের দিক থেকে প্রায় একই কিন্তু এদের মূল পার্থক্য হচ্ছে আকারে। ম্যাগাজিন ট্রলি আকারে ছোট, অনেকটা ক্যাবিনেটের মত অন্যদিকে ম্যাগাজিন সেলফ আকারে এবং উচ্চতায় বইয়ের সেলফের মত সাথে অনেকগুলো তাক থাকে। ম্যাগাজিন ট্রলি বা সেলফের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৭,০০০/- টাকা থেকে।  

ডিভানঃ

ডিভান রেগুলার সোফা থেকে আরো একটু চওড়া এবং আকারে বড় হয়ে থাকে। এর দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৩০,০০০/- টাকা থেকে কিন্তু ডিজাইন এবংবানানোর ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে দামে তারতম্য দেখা যায়।

টেলিফোন টেবিলঃ

অনেকের বাসায় বসার ঘরে টেলিফোন থাকায় সেটা রাখার জন্য টেলিফোন টেবিল রাখতে হয়। এই ধরণের টেবিলগুলোর দাম আনুমানিক ৫,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে আকার, ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে দাম আরো বাড়তে বা কমতে পারে।

জুতার র‌্যাকঃ

বসার ঘরে জুতার র‌্যাক রাখার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। চাইলে দরজার বাইরেও রাখা যায়। সিংগেল সেলফ টাইপ জুতার র‌্যাকের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৮,০০০/- টাকা থেকে এবং ক্লোজেট টাইপ জুতার র‌্যাকের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১৮,০০০/- টাকা থেকে। 

কফি টেবিলঃ

সেন্টার টেবিলের তুলনায়, কফি টেবিল গুলো আকারে ছোট হয়ে থাকে এবং দামটাও আকার, ডিজাইন এবং ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে।

২। বেডরুম ফার্নিচার

ঘরে থাকার বেশিরভাগ সময়টুকু শোবার ঘরেই কাটানো হয়। তাই একটা আরামদায়ক বিছানা, প্রশস্ত আলমারি বা ক্লোজেট, স্টাইলিস ডিজাইনের ড্রেসিং টেবিল এসবই দরকার যেনো শোবার ঘরে কাটানো সময়টুকু আরামদায়ক এবং প্রশান্তিময় হোক।

বেডঃ

শোবার ঘরের জন্য যেই ফার্নিচারটা সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হল বিছানা। মোটামুটি ভালো মানের বিছানার দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ২৫,০০০/- টাকা থেকে এবং ডিজাইন, নকশা, ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে দাম বেড়ে আনুমানিক প্রায় ৬০,০০০/- পর্যন্ত হতে পারে।

আলমারিঃ

বিছানার পরে যেই আসবাবটির বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে আলমারি। আলমারির দাম আনুমানিক প্রায় ৩০,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০/- টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আলমারি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে কাঠ এবং ওক ভিনিয়ার।

সাইড টেবিল ড্রয়ারঃ

বিছানার পাশে রাখার জন্য সাইড টেবিল ড্রয়ারের বিকল্প নেই। মোবাইলের চার্জার, ঘুমানোর সময় আপনার পড়ার বইগুলো, ওষুধপত্র ছাড়াও অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসপ্ত্র রাখার জন্য একটি সাইড টেবিল থাকা জরুরি। অনেক সুবিধা হয় এতে। এসব সাইড টেবিল ড্রয়ার গুলোর দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৬,০০০/- টাকা থেকে।

চেস্ট ড্রয়ারঃ

অনেকে আলমারির চেয়ে চেস্ট ড্রয়ার বেশি পছন্দ করে থাকেন। চেস্ট ড্রয়ারের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৩০,০০০/- টাকা থেকে এবং ড্রয়ারের সংখ্যা, বানানোর জিনিসের উপর ভিত্তি করে দামে তারতম্য দেখা যায়।

ড্রেসিং টেবিলঃ

বিছানা, আলমারি, সাইড টেবিল এবং চেস্ট ড্রয়ারের পরে আসে ড্রেসিং টেবিল। আগে রুমের মধ্যে শুধুমাত্র একটি আয়না থাকলেই হয়ে যেত কিন্তু এখন ট্রেন্ডই হচ্ছে পার্টিশন করা, বিভিন্ন ড্রয়ার বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা যায় এমন ডিজাইনের ড্রেসিং টেবিলের। এসব ড্রেসিং টেবিল গুলোর দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১০,০০০/- টাকা থেকে কিন্তু ডিজাইন, নকশা আর কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে দাম আরো বেশি হতে পারে।

৩। ডাইনিং রুম ফার্নিচার

ডাইনিং টেবিলঃ

ডাইনিং রুম বা খাবার ঘরের প্রধান আসবাব হচ্ছে ডাইনিং বা খাবার টেবিল। আধুনিক ডিজাইনের এবং ঘরের আকারের সাথে মানানসই ডাইনিং টেবিল খাওয়ার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে কয়েক গুন। চার জনের জন্য ডাইনিং টেবিলের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১৪,০০০/- টাকা থেকে । অন্যদিকে ছয় জনের জন্য খাওয়ার টেবিলের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ২০,০০০/- টাকা থেকে। টেবিলের ডিজাইন, নিকশা, আকার এবং ম্যাটেরিয়ালের উপর ভিত্তি করে দামের তারতম্য হয়ে থাকে।

সাইড বোর্ডঃ

অনেকেই ডাইনিং রুমে মাইক্রোওয়েভ রাখতে চান কাজের সুবিধার জন্য এবং এর জন্য সাইড বোর্ড রাখাটা জ্রুরি। সাইডবোর্ডে খাবার, রান্নার সরঞ্জাম এবং অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র খুব সহজেই গুছিয়ে রাখা যায়। এর দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ২৫,০০০/- টাকা থেকে এবং আকার, ডিজাইন, ড্রয়ারের সংখ্যা ভেদে দামের তারতম্য হয়ে থাকে।  

ওভেন স্ট্যান্ডঃ

সাইড বোর্ডের বিকল্প হিসেবে র‌য়েছে ওভেন স্ট্যান্ড যা মূলত ওভেন রাখার জন্য উপযোগী। ওভেন স্ট্যান্ডের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১২,০০০/- টাকা থেকে।

সোকেসঃ

ডাইনিং রুমের আরো একটি জনপ্রিয় ফার্নিচার হচ্ছে সোকেস। সবাই মূলত দামি ডিনার সেট, সোপিস সোকেসে রেখে থাকেন। মোটামুটি ডিজাইন এবং কোয়ালিটির সোকেসের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৪০,০০০/- টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ বেড়ে প্রায় ৭০,০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৪। অফিস ফার্নিচার

টেবিলঃ

অফিসে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আসবাবের মধ্যে রয়েছে টেবিল এবং চেয়ার। টেবিলের আকার দরকার এবং কাজের পদ অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। কোম্পানির ডিরেক্টর এবং এক্সিকিউটিভদের জন্য টেবিলের ধরণ আলাদা হয়ে থাকে। ডিরেক্টরদের টেবিল আকারে বড় এবং চওড়া সেই সাথে অনেক ড্রয়ার এবং চ্যাম্বার বিশিষ্ট হয়ে থাকে। অন্যদিকে এক্সিকিউটিবদের টেবিল আকারে ছোট  এবং দুই থেকে তিন ড্রয়ার বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ডিরেক্টরদের টেবিলের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ১৫,০০০/- টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আকার, ডিজাইনের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে আর এক্সিকিউটিবদের টেবিলের দাম শুরু হয় আনুমানিক প্রায় ৮,০০০/- টাকা থেকে এবং দাম বেড়ে সর্বোচ্চ প্রায় ১৫,০০০টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

চেয়ারঃ

টেবিলের পরে আসে চেয়ার। অফিসে ব্যবহৃত চেয়ারের মধ্যে প্রকারভেদ দেখা যায়। যেমন রয়েছে, ওয়েটিং রুম চেয়ার, ভিজিটরদের জন্য চেয়ার এবং সুইভেল চেয়ার। ওয়েটিং রুমের চেয়ার, যা কিনা মূলত দুই বা তিনটি চেয়ারের সেট, দাম আনুমানিক প্রায় ১০,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫,০০০/- টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। ভিজিটরদের জন্য চেয়ারগুলোর দাম আনুমানিক প্রায় ৭,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে ১৩,০০০/- টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সুইভেল চেয়ার মূলত অফিসের কর্মীবৃন্দ ব্যবহার করে থাকেন। এসব চেয়ারের দাম আনুমানিক প্রায় ৮,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৩০,০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

শেষ কথা

অনলাইনে ফার্নিচার কিনতে চাইলে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলো যেমন- ব্রাদারস ফার্নিচার, হাতিল, অটোবি, রিগ্যাল ফার্নিচার, নাদিয়া ফার্নিচার এবং ফার্নিচার বাড়ি এদের অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পারেন। চাইলে এসব ব্রান্ডের শোরুম ও ভিজিট করতে পারেন। অনলাইনে ফার্নিচার কিনার মূল সুবিধা হচ্ছে সময় ,টাকা এবং দোকান ঘুরে ঘুরে কেনার যে ধকল, তা এড়ানো যায়। উপরে উল্লিখিত প্রতিটি ব্রান্ডেরই রয়েছে নানা ধরণের আধুনিক, সেই সাথে স্টাইলিস ফার্নিচার কালেকশন এবং তুলনামূলকভাবে কম দামে। ওয়েবসাইটগুলোও ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়ায় যে কেউ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ম্যাটেরিয়াল, রুমের সাইজ এবং ক্রেতার বাজেট রেঞ্জ সিলেক্ট করারও অপশন আছে।

আপনার এপার্টমেন্টটি ছোট হলেও চিন্তার কিছু নাই। এখানে আপনি পেয়ে যাবেন আপনার ছোট বাসাটি দারুণ সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজানোর দারুন সব আইডিয়াএখন তাহলে আর নয় ভাবনা বরং সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিন নিজের স্বপ্নের ঘরটিকে।

Back to top button