উন্নয়নটেকনোলজিবাংলাদেশ

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট রিফান্ড করার নিয়ম ২০২৩

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম অনেক দিন ধরে থাকলেও, অনলাইনে ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়ম খুব বেশি দিন আগের নয়। পূর্বে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম থাকলেও টিকেট বাতিল করতে অর্থাৎ ফেরত দিতে  যেতে হতো কাউন্টারে। কিন্তু অনেকেই ট্রেন স্টেশন থেকে অনেক দূরে বসবাস করায় স্টেশনে যাওয়ার ঝামেলায় যেতেন না। এক্ষেত্রে সেসব টিকেটের টাকা নষ্টই হতো। কেউ বা আবার চেষ্টা করতেন অন্য কারও কাছে ট্রেনের টিকেটটি বিক্রি করে দেওয়ার। কিন্তু ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ নীতিতে একজনের টিকেটের অন্য জনের ভ্রমণের আর সুযোগ নেই। আর তাই রেলের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় বর্তমানে অনলাইনে ট্রেনের টিকেটের ফেরত দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে ঘরে বসে টিকেট কাটার পাশাপাশি সেই টিকেট বাতিলও করতে পারবেন সহজেই।

সূচিপত্রঃ

ধাপে ধাপে ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়ম 

ঘরে বসে অনলাইনেই ট্রেনের টিকেট রিফান্ড করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো বিস্তারিত। 

ধাপ ১ঃ রেলের সার্ভারে লগ-ইন করুন 

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রমের জন্যই প্রয়োজন বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং সার্ভারে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট। আর তাই ট্রেনের টিকেট বাতিল করতেও প্রথমে লগ ইন করতে হবে রেলের সার্ভারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই চলে যান Bangladesh Railway E-Ticketing Service ওয়েবসাইটে। ‘Login’ ট্যাবে ক্লিক করে নিচের চিত্রের মতো পেজ থেকে অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন সার্ভারে। 

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম। ধাপঃ ১

ধাপ ২ঃ পারচেজ হিস্ট্রি (Purchase History) সেকশনে যান 

পারচেজ হিস্ট্রি হলো আপনার রেলের টিকেট ক্রয়ের একটি অনলাইন নথি। এখানে আপনি গত ৭ দিনে দিনে কোন কোন যাত্রার জন্য টিকেট কেটেছেন তা সংরক্ষিত থাকবে। পারচেজ হিস্ট্রিতে যেতে ওয়েবসাইটের উপরে ডান দিকে আপনার নাম লেখা অংশে ক্লিক করুন। ড্রপ-ডাউন মেনু খুলে গেলে তার ৪ নম্বর অপশনে থাকা ‘Purchase History’ বাটনে ক্লিক করুন। 

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম। ধাপঃ ২

উপরের চিত্রের ন্যায় উইন্ডোটিই হলো পারচেজ হিস্ট্রি উইন্ডো। এখানে আপনার গত ৭ দিনে ক্রয়কৃত সকল টিকেটের বিস্তারিত থাকবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই থাকবে ট্রেনের নাম ও পিএনআর নম্বর। এরপরে থাকবে আপনি কবে কখন টিকেটটি কেটেছেন এবং আপনার যাত্রার তারিখ ও সময় কখন। তার পাশেই রয়েছে ‘Download Ticket’ অপশন ও ‘Cancel Ticket’ অপশন। ডাউনলোড টিকেট অপশন থেকে আপনি আপনার টিকেটের পিডিএফ কপি পাবেন।

ধাপ ৩ঃ ট্রেনের টিকেট বাতিল করুন 

ট্রেনের টিকেট বাতিল করতে পারচেজ হিস্ট্রির ‘Cancel Ticket’ অপশনে ক্লিক করুন। এখানে ক্লিক করলে ট্রেনের টিকেটের মোট দাম, সার্ভিস চার্জ, টিকেটের দাম থেকে কত টাকা কেটে রাখা হচ্ছে, সার্ভিস চার্জ সহ কত টাকা কেটে রাখা হচ্ছে এবং সর্বশেষে আপনি কতটাকা ফেরত পাচ্ছেন তার উল্লেখ থাকবে। সব কিছু ঠিক দেখালে লাল রঙের ‘CONFIRM CANCELLATION’ বাটনে ক্লিক করুন। 

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম। ধাপঃ ৩

ধাপ ৪ঃ ভেরিফিকেশন কোড (Verification Code) প্রদান করুন 

আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে লগ ইন করে অন্য কেউ যাতে আপনার টিকেট বাতিল করতে না পারে তাই টিকেট বাতিলের সময় একটি ভেরিফিকেশন কোড দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই ভেরিফিকেশন কোডটি হলো একটি ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। কনফার্ম ক্যান্সেলেশন বাটনে ক্লিক করলে পরবর্তী উইন্ডোতে একটি ওটিপি প্রবেশ করাতে বলবে। ওটিপিটি আপনার অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল দুই স্থানেই পৌছে যাবে। ওটিপিটি লিখে ‘Verify’ বাটনে ক্লিক করুন অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম। ধাপঃ ৪

ধাপ ৫ঃ রিফান্ড (Refund) গ্রহণ করুন 

ট্রেনের টিকেট বাতিল করলে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ আপনি ফেরত পাবেন। কত টাকা ফেরত পাবেন তা নির্ভর করবে টিকেটের দাম এবং টিকেট বাতিল করার সময়ের উপর। টিকেট বাতিলের সময় ওটিপিটি প্রবেশ করালেই আপনাকে রিফান্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এরপর কয়েক কর্ম দিবসের মধ্যেই আপনি যেই মাধ্যম ব্যবহার করে টিকেটটি ক্রয় করেছিলেন, সেই মাধ্যমেই রিফান্ড পৌছে যাবে। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম। ধাপঃ ৫

অনলাইনে টিকেট রিফান্ড করার নিয়মাবলি 

বর্তমানে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট রিফান্ড করার সুবিধা থাকলেও এর জন্য মানতে হবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মাবলী। নিচে সেই নিয়মাবলী সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ-

  • শুধু মাত্র ই-টিকেট ওয়েবসাইট এবং রেল সেবা অ্যাপের মাধ্যমে ক্রয়কৃত টিকেট সমূহই অনলাইনে রিফান্ডের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। 
  • কাউন্টার থেকে ক্রয়কৃত কোনো টিকেটই অনলাইনে বাতিল বা রিফান্ড করা যাবে না। সে সকল টিকেট কাউন্টার থেকেই রিফান্ড করতে হবে।  
  • অনলাইন থেকে ক্রয় করার পর যদি কেউ কাউন্টার থেকে টিকেট প্রিন্ট করিয়ে ফেলেন, তাহলে সেই টিকেট আর অনলাইনে রিফান্ড করা যাবে না। কাউন্টার থেকেই করতে হবে। 
  • রিফান্ড কৃত অর্থ ফেরত আসতে কয়েক কার্যদিবস সময় লাগবে। 
  • একবার ওটিপি পাঠানো হয়ে গেলে সাথেই সাথেই সেই টিকেট আবার ই-টিকেট সার্ভিসে বিক্রয়ের জন্য সংযুক্ত করা হবে। 

টিকেট রিফান্ডের ক্ষেত্রে ভাড়া কর্তনের পরিমাণ 

অনলাইন অথবা অফলাইন, টিকেট বাতিল করলেও সম্পূর্ণ টাকা কখনই রিফান্ড করা হবে না। কত টাকা ফেরত পাবেন তা মূলত নির্ভর করবে যাত্রার কত আগে টিকেটটি রিফান্ড করছেন তার উপর। এক্ষেত্রে নিচের চার্টটি এক নজর দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

টিকেট বাতিলের সময় (যাত্রা শুরুর পূর্বে) টিকেটের মূল্য হতে কর্তনকৃত অর্থের পরিমাণ 
যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা অথবা টিকেটের মূল্যের ১০%। 
যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘন্টার কম কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা অথবা টিকেটের মূল্যের ২৫%
যাত্রা শুরুর ২৪ ঘন্টার কম কিন্তু ১২ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা অথবা টিকেটের মূল্যের ৫০%
যাত্রা শুরুর ১২ ঘন্টার কম কিন্তু ০৬ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা অথবা টিকেটের মূল্যের ৭৫%
যাত্রা শুরুর ০৬ ঘন্টার কম বাকি থাকলে রিফান্ড করা হবে না। 

উল্লেখ্য যে, অনলাইন টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেই ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ দেওয়া হয় সেই টাকা অফেরতযোগ্য। অর্থাৎ যেকোনো টিকেটের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা কাটলেও অফেরতযোগ্য সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে আসলে কেটে রাখা হয় ৬০ টাকা। মনে রাখবে হবে যে, ৪০ টাকা সর্বনিম্ন। টিকেটের মূল্যের ১০%, ২৫%, ৫০% অথবা ৭৫% যদি ৪০ টাকা থেকে বেশি হয় তাহলে সেই পরিমাণ অর্থই কাটা হবে। উদাহরণস্বরুপঃ 

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের এসি বার্থের (AC_B) প্রতিটি টিকেটের মূল্য ১১৭৯ টাকা। সার্ভিস চার্জ সহ খরচ আসবে ১১৯৯ বা ১২০০ টাকা। এক্ষেত্রেঃ- 

টিকেট বাতিলের সময় (যাত্রা শুরুর পূর্বে) রিফান্ডের পরিমাণ 
যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে ১০৪১ টাকা 
যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘন্টার কম কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে ৮৬৪.২৫ টাকা 
যাত্রা শুরুর ২৪ ঘন্টার কম কিন্তু ১২ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে ৫৬৭.৫ টাকা 
যাত্রা শুরুর ১২ ঘন্টার কম কিন্তু ০৬ ঘন্টার বেশি বাকি থাকলে ২৭৪.৭৫ টাকা 
যাত্রা শুরুর ০৬ ঘন্টার কম বাকি থাকলে ০ টাকা 

শেষকথা 

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটা এবং রিফান্ড করা এই দুইটি ডিজিটাল প্রক্রিয়াই জনজীবনকে করেছে সহজ। ট্রেনের মতো এমন আরামদায়ক এবং সুনিশ্চিত বাহন কমই আছে। আর অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় এবং ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ নীতির মাধ্যমে কালোবাজারিও এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে রেলকে এগিয়ে নিতে চাইলে রেলের সাথেই থাকুন, নিয়মিত রেলে ভ্রমণ করুন এবং সর্বোপরি কালোবাজারিদের এড়িয়ে চলে আইনগত ভাবে টিকেট ক্রয় ও প্রয়োজনে রিফান্ড করুন। 

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১। রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও টাকা ফেরত না পেলে কি করণীয়? 

উত্তরঃ রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে টাকা ফেরত না পেলে সকল প্রমাণ সহ ইমেইল করুন support@eticket.railway.gov.bd. এই ঠিকানায়। উল্লেখ্য যে, কত কর্মদিবসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে রেলের সাইটে উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে কিছু দিন অপেক্ষা করে এরপরে মেইল করাটাই সমীচিন। 

২। ট্রেনের টিকেট কাটার পরেও যদি দেখা যায় ট্রেনে সিট নেই তাহলে কি টিকেটের অর্থ ফেরত পাবো?

উত্তরঃ এমনটি হওয়ার কথা নয়। তবুও যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে ট্রেন ছাড়ার ৩ ঘন্টার মধ্যে কাউন্টারে যোগাযোগ করলে টিকেটের সমপরিমাণ অর্থ রিফান্ড পাবেন। 

৩। যেই শ্রেণীর টিকেট কেটেছি সেই শ্রেণীতে সিট না থাকায় বাধ্য হয়ে নিম্ন শ্রেণীতে ভ্রমণ করলে কি রিফান্ড পাবো?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে দুই শ্রেণীর ভাড়ার মধ্যকার যে পার্থক্য, ঐ পরিমাণ অর্থ রিফান্ড পাবেন। 

৪। আমি অন্য একজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছি, ওটিপি ছাড়া টিকেট রিফান্ড করার কি কোনো সুযোগ আছে?

উত্তরঃ না, ওটিপি ছাড়া টিকেট রিফান্ডের সুযোগ নেই। 

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Back to top button