মাথায় উকুন: রাইড শেয়ারিংয়ের উপরি পাওনা
সমসাময়িক নাগরিক ব্যস্ততায় জীবন গতিময়। আর এই গতির সাথে তাল মেলাতে আমাদের সাহায্য করার জন্য এখন রয়েছে উবার, পাঠাও ইত্যাদির মতো নানা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। প্রতিদিনের রুটিনে বাঁধা সময়টুকুও যখন নগর রাস্তার জ্যামের চাপে হারিয়ে যেতে থাকে, তখন কিছুটা সময় বাঁচানো আর খানিক স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরবাইক সার্ভিসের উপযোগিতা অনস্বীকার্য।
কিন্তু আপনি জানেন কি! রাইড শেয়ার করতে গিয়ে নাজেহাল হতে পারেন উকুনের সমস্যায়! রাইড শেয়ারের সময় মাথা থেকে মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে উকুন। ছোট থেকে বড়, ছেলে কিংবা মেয়ে, লম্বা চুল বা ছোট চুল সব ক্ষেত্রেই সবার মাথাতেই উকুন ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। আর যেহেতু উকুন খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে তাই এই পরজীবী একবার মাথায় চলে গেলে খুব অল্প সময়ে বহুগুণ বেড়ে গিয়ে নাজেহাল এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
যেভাবে ছড়াতে পারে উকুন
এখন প্রশ্ন আসে রাইড শেয়ারিংয়ে কীভাবে উকুন ছড়াতে পারে! বিষয়টা হচ্ছে, আমরা রাইড শেয়ারিংয়ের সময় শুধু বাইকই ব্যবহার করি না, বাইকের হেলমেটও ব্যবহার করি। আর সারাদিনে আরো অনেক যাত্রী রাইড শেয়ারের সময় সেই একই হেলমেট ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে এই হেলমেটের মাধ্যমেই খুব সহজে উকুন ছড়াতে পারে। অনেকের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আছে যে, গরমের সময় প্রতিদিনের বহু ব্যবহৃত এই হেলমেটগুলো কেমন ভেজা ঘর্মাক্ত থাকে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, কতটা ঘামে ভেজা আর বাজে রকমের গন্ধযুক্ত থাকে এরকম হেলমেটগুলো। এতে করে অন্যকোন যাত্রীর মাথায় থাকা উকুন ঘামের সাথে এসব হেলমেটে আটকে থাকতেই পারে। আর খুব সহজেই অন্য কোনো যাত্রীর মাথায় চলে যেতে পারে।
এছাড়া রয়েছে খুশকির সমস্যা
শুধু তাই নয়, একই হেলমেটের এই বহু ব্যবহারে চুলে হতে পারে খুশকির সমস্যা, এমনকি দুর্গন্ধও। ভুক্তভোগী জনৈক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, এমন হেলমেট ব্যবহারে কীভাবে ওই ব্যক্তির খুশকির সমস্যা থেকে চুল নষ্ট হয়ে চুল পরা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। খুশকি সমস্যায় চুলের অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে। অথচ চুলে উকুন বা খুশকির মতো সমস্যাগুলো সমাধানেও বেশ বেগ পেতে হয় মাঝে মাঝে।
সমাধানে আপনার করণীয়
তবে এই সমস্যায় তো জীবন থেকে খানিক আরামের অবকাশ হারাতে দেয়া যায় না। যান্ত্রিক জীবনের কর্মযজ্ঞে সময় বাঁচাতে কিংবা ঝামেলা কমিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে চলতে, রাইড শেয়ারিংয়ের যে কোন বিকল্প নেই তা এখন কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। তাই রাইড শেয়ারের সময় অন্য কিছু যাতে মাথা থেকে মাথায় শেয়ার হয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের আর একটু যত্নবান হতে হবে।
কেমন হতে পারে সেই একটু বাড়তি যত্ন! যেমন ধরুন-
একজন নিয়মিত রাইড শেয়ারিং আ্যপ ব্যবহারকারী তার নিজের জন্য একটি আলাদা হেলমেটের ব্যাবস্থা করে নিতেই পারেন। তাছাড়াও রাইড শেয়ারের বাইকের হেলমেটগুলো তেমন মজবুত হয়না, বরং বেশ হালকা হয়। একজন অনিয়মিত রাইড শেয়ারিংয়ের যাত্রি হিসেবে এমন হেলমেট ব্যাবহারের অভিজ্ঞতা আছে আমার। নিজেই দেখেছি, মাঝে মাঝে কিছু বাইকের হেলমেটগুলো যারপরনাই ঠুনকো রকমের হয়, একটু বাতাসের ঝাপটায় মাথা থেকেই উড়ে যেতে চায়। যা নিরাপত্তার বিচারে একটু ঝুঁকিপূর্ণই বলা চলে। তাই রাইড শেয়ারের একজন নিয়মিত যাত্রি হিসেবে নিজের জন্য আলাদা হেলমেট থাকলে রাইড শেয়ারিংয়ে উকুন বা খুশকি ছড়ানোর চান্স তো থাকলোই না বরং নিরাপত্তা বিবেচনায় আপনি এগিয়ে গেলেন বেশ কিছুটা।
যারা নিয়মিত রাইড ব্যাবহার করেন না তারাও যে নিজেদের আলাদা হেলমেট কিনেই নেবেন তেমন কথা নেই। এমন ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেদের সুবিধামতো স্কার্ফ বা ওড়না বা হিজাব দিয়ে, কিংবা নিজেদের মতো স্টাইলিং করে মাথার চুলটা ঢেকে নিয়ে হেলমেট ব্যাবহার করতে পারেন। আর ছেলেরাও একইভাবে টুপি বা রুমাল দিয়ে বা নিজেদের মতো আর কোন স্টাইল ফলো করে চুল ঢেকে হেলমেট ব্যাবহার করতে পারেন। এতে করে উকুন বা খুশকি সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা তো কমবেই, তাছাড়া ব্যাস্ততম শহরের এই অত্যধিক ধুলো-বালি বা ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি থেকেও চুলকে রক্ষা করা যাবে কিছুটা। তাতে চুলের উন্নতি ছাড়া অবনতির চান্স কমই বলা যেতে পারে।
শেষকথা
বিংশ শতাব্দীর দ্রুততায় ছন্দ মিলিয়ে ছুটে চলতে রাইড শেয়ারের উপযোগিতার কথা মাথায় রেখে আমরা নিজেরা নিজেদের চুলের প্রতি আরো কিছুটা যত্নবান হয়ে রাইডের সুবিধা নির্দ্বিধায় ব্যাবহার করে যেতেই পারি। তাতে প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যটুকু তো থাকলোই সাথে চুলের প্রতি এই কিছুটা বাড়তি যত্নটুকু বরং উপরি পাওয়াই বলা যেতে পারে।