লাইফ স্টাইলস্বাস্থ্য

মানবদেহে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ

সারাবিশ্বের মানুষদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোর যদি তালিকা করা হয়, তবে এতে ধূমপান থাকবে একদম প্রথম সারিতেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর ধূমপানের কারনে গড়ে ৮০ লক্ষ মানুষ মারা যায়৷ এদের মধ্যে ৭০ লক্ষ এর মতো মানুষ মারা যায় সরাসরি তামাকের কারনে সৃষ্ট রোগে এবং বাকিরা মারা যায় অন্যান্য রোগে যেখানে ধূমপান একটি বড় প্রভাবক ছিলো। সুতরাং ধূমপান এর প্রভাব ও এর ক্ষতির মাত্রাকে কোনভাবেই অবজ্ঞা করলে চলবে না। আজকের এ লেখাটি থেকে আমরা জানবো ধূমপানের ফলে মানবদেহে কি কি ভয়ংকর সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে৷

সূচিপত্রঃ

ধূমপান মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ

ধূমপান মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ

ক্যান্সার হচ্ছে মানুষের দেহের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও এর ফলে সৃষ্ট ব্যাধি। প্রতিটি কোষ এর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের জন্য কোষের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কোন কারনে তা অচল হয়ে যায় এতে কোষের বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, ফলে কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। এর ফলে প্রথমে টিউমার ও পরবর্তীতে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

যখন কোন ব্যক্তি ধূমপান করে, তখন তার দেহে নিকোটিন সহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ ধোঁয়া আকারে প্রবেশ করে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ৬৯ এর বেশি ধরনের উপাদান সিগারেটে থেকে থাকে, যাদের কারসিনিওজেন বলা হয়। এসকল উপাদান যখন দেহের অভ্যন্তরে যায়, এটি কোষীয় DNA কে আক্রমন করে এতে কিছু পরিবর্তন করে ফেলে৷ তো পরবর্তীতে এই DNA এর সংখ্যাবৃদ্ধি হয়, তখন দেহে এই ধরনের ত্রুটিপূর্ন DNA এর সংখ্যাই বৃদ্ধি পায়। দেহের অনেক বিষয় যেহেতু এই DNA নিয়ন্ত্রন করে থাকে, তখন এই ত্রুটির কারনে কোষীয় অনেক বিষয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, কোষীয় বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং এক পর্যায়ে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। ক্যান্সারের নানান প্রকারভেদ রয়েছে। সবধরনের ক্যান্সারের কারন ধূমপান নয়, তবে অধিকাংশ ক্যান্সারের ই মূল কারন ক্যান্সার এবং ধূমপান আরো অনেক ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।

ধূমপানের ফলে মানবদেহে যে সকল ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়

ধূমপান ও ক্যান্সার, বর্তমান যুগে যেন এক প্রকার সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছে। আর হবেই না বা কেন, মানবদেহে যত ধরনের ক্যান্সারের সৃষ্টি হয় তার কারন অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এর জন্য ধূমপান ই প্রধান কিংবা অন্যতম কারন৷ যেসকল ক্যান্সারের জন্য ধূমপানকে অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে জানা যায় সেগুলো হলোঃ 

  • মুখগহ্বর এর ক্যান্সার
  • গলার ক্যান্সার
  • স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার
  • খাদ্যনালীর ক্যান্সার
  • যকৃতের ক্যান্সার
  • বৃক্কের ক্যান্সার
  • জরায়ুর ক্যান্সার
  • মূত্রথলির ক্যান্সার
  • অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
  • পাকস্থলীর ক্যান্সার
  • ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার
  • ফুসফুসের ক্যান্সার

দেখা যাচ্ছে যে শরীরের প্রায় সকল অঙ্গের ক্যান্সারের-ই অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে এই ধূমপান। বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার এর ক্ষেত্রেই ধূমপানের প্রভাবটা সবচেয়ে মারাত্নক। ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের রোগের কারন হচ্ছে ধূমপান।

ধূমপান যেভাবে ফুসফুসের ক্ষতি করে

ধূমপান মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ

ধূমপানের ফলে ধোঁয়া সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিগারেটের এ ধোঁয়াতে প্রায় ৭০০০ রাসায়নিক উপাদান থাকে, যার মধ্যে অন্তত ৬৯ টি উপাদান বিদ্যমান থাকে যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সাধারনত ধূমপানের ফলে অন্যান্য সকল অঙ্গের চেয়ে ফুসফুসকেই বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ গবেষনা মতে, যদি কেউ ধূমপান না করতো, তাহলে পৃথিবীর ৮৫% ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা ঘটতো না। ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের পাশাপাশি COPD, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসেমা, Smoker’s Cough প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

COPD

COPD ( Chronic Obstructive Pulmonary Disease )  মানবদেহের শ্বসনতন্ত্রের অন্যতম জটিল রোগগুলোর একটি। বিশ্বব্যাপী কয়েক লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত এই ভয়াবহ রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগটির প্রধান কারন হিসেবে ধূমপানকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এ রোগের কারনে রোগীর ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথ আক্রান্ত হয়৷ ফলে রোগীর ব্যাপক শ্বাসকষ্ট হয়, সে বাতাস থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেনা। বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হয়। সময়ের সাথে সাথে এই রোগ আরো ভয়ংকর হতে থাকে৷ যদি কেউ COPD আক্রান্ত হয় এবং তাও ধূমপান চালিয়ে যায়, তবে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত৷ এই রোগটির সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এর কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখন অব্ধি নেই, কিছু ঔষধের মাধ্যমে শ্বাসগ্রহনে কিছুটা উপকার পাওয়া যায় এতটুকুই। তাই COPD এর ফলে মৃত্যু এড়াতে এখনই ধূমপান ত্যাগ করা প্রয়োজন।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস

যখন কোন ব্যক্তি ধূমপান করে, তখন তার শরীরে ফুসফুসে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি মিউকাস ( একপ্রকার পিচ্ছিল পদার্থ ) তৈরি হয়, যা বারবার ধূমপায়ী কফ আকারে বের করে দিতে চায়। বারবার এমন হওয়ায় ফুসফুসে বায়ু চলাচলের পথে প্রদাহ সৃস্টি হয়, যাকে ব্রঙ্কাইটিস বলে। এবং এটি খুবই দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাই এটির নাম ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। 

নিউমোনিয়া

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এর উপরের ব্যাপারটি যখন খুব বেশি বেড়ে যায় ও কফ বারবার হয়, তখন এ সমস্যাটি হতে পারে। এর ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের পথটি মাঝেমাঝে কফ ও স্কার টিস্যু এর কারনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তখন এর এই শ্বাসনালীর টিস্যুতে ইনফেকশন হয়। এভাবে ধূমপানের ফলে নিউমোনিয়া হতে পারে। 

Smoker’s Cough

আমাদের শরীরে বায়ু চলাচলের পথে কিছু ছোট ছোট চুলের মত অংশ থাকে, যাকে সিলিয়া বলে। এ সিলিয়াগুলো মিউকাস ও ধুলাবালি ইত্যাদিকে ফুসফুসে প্রবেশ করতে দেয়না। কিন্তু ধূমপানের ফলে এই সিলিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে এগুলো সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে৷ এরফলে এক দীর্ঘমেয়াদি কাশি সমস্যার সৃস্টি হয় যা স্মোকার্স কফ নামে পরিচিত। 

এমফাইসেমা

ধূমপানের ফলে বায়ুথলি ও ফুসফুসের মধ্যের দেয়াল ভেঙে যায়। ফলে বড় বায়ুথলি তৈরি হলেও সংখ্যা কমে যায়, তাই পর্যাপ্ত পরিমানে অক্সিজেন গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। তাই শ্বাসকষ্ট দেখা যায় ও একপর্যায়ে এ শ্বাসকষ্ট মারাত্নক রূও ধারন করতে পারে৷ এই রোগের ও কোন চিকিৎসা নেই, তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করা প্রয়োজন।

এছাড়াও, যেসব অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা ধূমপান করে থাকে, তাদের ফুসফুস স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট ও দূর্বল ভাবে গঠিত হয়ে থাকে। তাদের এ ফুসফুস আর জীবনে কখনোই স্বাভাবিক হবেনা। আবার এ দূর্বল ফুসফুস এর জন্য তাদের সারাজীবন ধরে নানান সমস্যাবলির সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়াও ধূমপানের কারনে হাঁপানি সহ অন্যান্য রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।

ধূমপানের ফলে হৃদযন্ত্রে ও রক্তপ্রবাহে যেসব ক্ষতি হয়

ধূমপানের ফলে হৃদযন্ত্রে ও রক্তপ্রবাহে যেসব ক্ষতি হয়

ধূমপানের ফলে সিগারেটের যে বিষাক্ত ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে, এর মধ্যে থাকে কার্বন মনোক্সাইড এর মত বিষাক্ত গ্যাস। এটি হৃদপিন্ডে পৌছে রক্তের হিমোগ্লোবিন এর সাথে যুক্ত হয়ে যায় ও দেহের নানান অংশে ছড়িয়ে যায়৷ রক্তের হিমোগ্লোবিন এর সাথে কার্বন মনোক্সাইড যুক্ত হওয়ার ফলে অক্সিজেন যুক্ত হওয়ার পরিমান কমে যায়, ফলে সারাদেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়াও ধূমপানের ফলে হৃদপিন্ডে রক্তের প্রবাহ অনেক কমে যায়, তাই হৃদপিন্ডের পক্ষে সারাদেহে প্রয়োজনীয় পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। একে Coronary Heart Disease (CHD) বলে। এর ফলে হৃদপিন্ডের নানান রোগ এবং হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, এমনকি মস্তিষ্কে স্ট্রোক ও হতে পারে। 

এছাড়াও ধূমপানের কারনে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার কারনে হাত ও পায়ে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে হাটার সময়ে পায়ে ব্যাথা হতে পারে, এমনকি যদি হাতে ও পায়ে কোন ক্ষত হয় রক্তপ্রবাহ কম থাকার ফলে তা আর নাও সারতে পারে। এই কারনে অনেক সময় দেখা যায় ডাক্তাররা ধূমপায়ীদের শরীরে কোন ধরনের অপারেশন করতে পারেন না যতদিন না তারা ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছে।

পরিপাকতন্ত্রে ধূমপান যেভাবে ক্ষতিসাধন করে

পরিপাকতন্ত্রে ধূমপান যেভাবে ক্ষতিসাধন করে

ধূমপানের ফলে দেহের শ্বসনতন্ত্র ও রক্ত সংবহন তন্ত্রের পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্র ও খুবিই মারাত্নকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ধূমপানের ফলে মুখগহ্বর এ, গলায়, অগ্ন্যাশয়ে, পাকস্থলীতে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেহের পরিপাক ক্রিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং এতে মানুষের মৃত্যু ও ঘটতে পারে৷

এছাড়াও, ধূমপানের ফলে দেহে ইনসুলিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়৷ এর ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে আর ইনসুলিন তৈরি হয়না। এই ইনসুলিনের কারনেই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। যখন দেহে আর ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয়না তখন টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর তুলনায় এটির ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি এবং গবেষনায় দেখা গিয়েছে, যেসকল ধূমপায়ীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তাদের জন্য এ রোগ বেশি ভয়ংকর হয়ে থাকে। এছাড়াও ধূমপানের ফলে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর যকৃতকে বলা হয় দেহের রাসায়নিক গবেষণাগার, কারন এখানেই দেহের অনেক বিপাকীয় কার্যাবলি ঘটে ও রাসায়নিক পদার্থসমূহ তৈরি হয়৷ ধূমপানের ফলে যকৃত আক্রান্ত হলে এসকল কার্যাবলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাহ্যিক অঙ্গে ধূমপান যেসব ক্ষতিসাধন করে

  • ত্বকঃ আমাদের শরীরের সম্পূর্নটাই আবৃত ত্বক দ্বারা। তাই এটি আক্রান্ত হলে সম্পূর্ন শরীরেই এর কোন না কোন প্রভাব পড়বেই। ধূমপানের ফলে এ ত্বকের ও ক্ষতি হয়। ধূমপানের ফলে যেসকল বিষাক্ত পদার্থ দেহে প্রবেশ করে, তা ত্বকের অভ্যন্তরীণ গঠনকে পাল্টে দেয়। এছাড়াও এর ফলে ত্বকীয় কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে স্কিন ক্যান্সারের সৃস্টি হয়ে থাকে।
  • চুলঃ  সিগারেটের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে নিকোটিন। আর এ নিকোটিন চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। নিকোটিন গ্রহনের ফলে অসময়ে চুল পেঁকে যাওয়া বা সাদা হয়ে যাওয়া, চুল পড়া, মাথায় টাক হওয়া এমনকি সম্পূর্নরূপে চুল ঝড়ে পড়ে ন্যাড়া হয়ে যাওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে। তাই চুল পড়া বন্ধ করার জন্য হলেও ধূমপান ত্যাগ করা উচিৎ।
  • নখঃ ধূমপানের ফলে নখের ও ক্ষতি হয়ে থাকে। একটি গবেষনায় এসেছে, ধূমপানের ফলে ধূমপায়ী ব্যক্তির নখে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং তা সহজে ভালোও হয়না, কারন ধূমপায়ীদের দেহে রক্তপ্রবাহ কম থাকে।
  • দাঁতঃ ধূমপানের ফলে গাম ডিজিজ (মাড়িকে আক্রান্ত করে এমন একটি রোগ) এর সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়াও দাঁতের গঠন দূর্বল হয়ে যায়, সহজেই দাঁত পড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ফলে যে সকল ক্ষতি হয়ে থাকে

গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ফলে যে সকল ক্ষতি হয়ে থাকে

গর্ভাবস্থায় যখন নারী ধূমপান করে, তখন তার নিজের শরীরের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি গর্ভের সন্তানের ও ক্ষতি হয়। ধূমপানের ফলে সে যে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ করছে তা ফিটাসের মাধ্যমে বাচ্চার দেহেও পৌছায়, এবং তার ফুসফুস গঠনে সমস্যার সৃষ্টি করে। একারনেই দেখা যায় ধূমপায়ী মায়েদের সন্তান এর ওজন কম হয়ে থাকে, তার ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিণত ও দূর্বল হয়ে থাকে। এতে অকালে গর্ভপাত এবং ধূমপানের ফলে গর্ভে থাকা সন্তান মারাও যেতে পারে। শুধু সন্তান নয়, ধূমপানের ফলে সন্তান জন্মদানের সময়ে মায়ের নিজের ও মৃত্যুঝুঁকি ধূমপানের ফলে অনেক বেড়ে যায়।

যেসকল নারীরা গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মদানের পর ধূমপান করে থাকেন তাদের Sudden Infant Death Syndrome (SIDS) এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

যৌ* ন জীবনে ধূমপানের প্রভাব

যৌ* ন জীবনে ধূমপানের প্রভাব

ধূমপান প্রভাব বিস্তার করে আপনার যৌ* ন জীবনেও। এটি পুরুষের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নস্ট করে দিতে পারে। যেমনটা উপরে আলোচনা করা হয়েছে, ধূমপানের ফলে দেহে রক্ত প্রবাহের হার কমে যায়৷ ফলে যৌ* ঙ্গে রক্তপ্রবাহের হার কমে যায়, যা পুরুষের যৌ* ন উত্তেজনার উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও ধূমপানের ফলে পুরুষের বী* র্যে* র উপর ও প্রভাব ফেলে, যাতে জীবিত শুক্রাণু কম থাকে৷ তাই অনেক পুরুষ ধূমপানের ফলে সন্তান জন্মদানে অক্ষম ও ক্ষেত্রবিশেষে যৌ* ন মিলনেও অক্ষম হয়ে পড়েন।

এছাড়াও, ধূমপানের ফলে নারীদের ও যৌ* ন জীবনে প্রভাব পড়ে। ধূমপান করলে মহিলাদের গর্ভধারণ এর ক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তার শরীরে বাচ্চা জন্মদান আর সম্ভব হয়না। তাই ধূমপান এর ফলে হয়ত ধূমপায়ী কোন নারীকে সারাজীবন ব্যাপী নিঃসন্তান থাকতে হতে পারে। 

ধূমপানের মানসিক প্রভাব

ধূমপানের মানসিক প্রভাব

ধূমপানের ফলে যে শুধু শারীরিক ক্ষতি হয় তাই নয়, বরং মানসিকভাবেও এর খুবই বাজে প্রভাব বিদ্যমান৷ ধূমপানের ফলে যখন কোন ব্যক্তি নিকোটিনের প্রতি তীব্র আসক্ত হয়ে যায় তখন তার মনে অস্থিরতা কাজ করে। অল্পবয়স্ক শিশু-কিশোর যারা ধূমপান করে থাকে তাদের উপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ধূমপান করে এমন শিশু কিশোররা অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। তারা সহজেই ঝগড়াতে জড়িয়ে পড়ে, ডিপ্রেশন সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ভুগে, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও তাদের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। এটা জরুরী নয় যে শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের মধ্যেই এসব লক্ষন দেখা যাবে কিংবা ধূমপান করে একারনে এসব দেখা যাচ্ছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ করা গিয়েছে যে ধূমপায়ীদের মধ্যেই এসব ব্যাপারগুলো বেশি ঘটছে। এছাড়াও যারাই ভয়ংকর মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে তাদের শুরুটা হয় বেশিরভাগ সময়েই ধূমপানের মধ্য দিয়েই। এভাবে ধূমপান আমাদের শরীরের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও ক্ষতিসাধন করে থাকে।

শেষকথা

ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। এটি নানাভাবে আমাদের শারীরিক ক্ষতি ঘটায় এমনকি মৃত্যুর কারন ও হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজের ও পরিবারের কথা ভেবে হলেও অবিলম্বে সিগারেট ছাড়ার কার্যকরী উপায়গুলো জেনে নিন এবং আজ থেকেই এই ভয়াবহ অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

ধূমপান করলে কি করোনা ভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি? 

উত্তরঃ হ্যাঁ। পরিসংখ্যান বলছে, যারা অধূমপায়ী তাদের চেয়ে ধূমপায়ীদের শরীরে করোনা ভাইরাস সহজে আক্রমন করে। এর কারন ধূমপায়ীদের শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ফুসফুস আগে থেকেই দূর্বল থাকে৷ তাছাড়াও করোনা ভাইরাস আক্রমন করলে সাধারনত সবাইকে আইসিউ বা হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে এমন হয়না, কিন্তু ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস আক্রমন করলে তা বেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করে থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই৷ ফলে হাসপাতাল এ ভর্তি হতে হয় ও আইসিউ এ থাকার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়। সুতরাং একজন ধূমপায়ী ব্যক্তি অবশ্যই একজন অধূমপায়ী ব্যক্তির তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

ধূমপানের ফলে মৃত্যুঝুঁকি কেমন ? 

উত্তরঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাক গ্রহণকারীদের ৫০% মানুষের ই মৃত্যুর কারন এর সাথে এই ধূমপান জড়িত থাকে। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের অর্ধেক সংখ্যক মানুষ ই এজন্য মৃত্যুবরণ করে। ধূমপানের ফলে একদিকে যেমন আয়ু কমে যায়, তেমনি অন্যান্য রোগে সহজে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যা প্রায় ৫০%। 

ধূমপান না করে তামাক গ্রহণ করা কি ক্ষতিকর? 

উত্তরঃ হ্যাঁ। ধূমপান না করলেও যদি অন্যান্য মাধ্যমে তামাক গ্রহণ করেন যেমন জর্দা ইত্যাদি। তাও আপনার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে আপনার ফুসফুসের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও মুখের ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্ষতি হবেই৷ তাই নিকোটিনজাতীয় সকল পদার্থ কোন উপায়েই গ্রহণ করা উচিত নয়। 

সিগার বা হুক্কা কি ক্ষতিকর?

উত্তরঃ সিগারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ধোঁয়া অতটা শরীরের ভেতরে নেওয়া হয়না, যতটা সিগারেটের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়। তাই সিগারকে কিছুটা কম ক্ষতিকর বলা যেতে পারে সিগারেটের তুলনায়, তবে এটি অবশ্যই নিরাপদ কিছু নয়। সিগার ও দেহের ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করে থাকে, তাই সিগারেট, সিগার, হুক্কা যেকোন উপায়েই তামাক গ্রহণ পরিত্যাগ করা উচিত।

ধূমপান কি শরীরের জন্য ভালো কিছুই করে না?  

উত্তরঃ না। তেমন কিছুই করেনা। ধূমপানে আপনি নিকোটিনের প্রভাবে সাময়িক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন তবে সেটা ক্ষণস্থায়ী, তবে এর ক্ষতিকর দিকগুলো দীর্ঘস্থায়ী। তামাকের ধূমপান দ্বারা শরীরের কোন উপকার হয়ে থাকে তেমন কোন বিষয় জানা যায়নি। তবে এর ক্ষতির পরিমান যেরকম, সে তুলনায় উপকার একদম ই নেই। তাই অবিলম্বে ধূমপান বর্জন করা উচিত।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button