বাংলাদেশব্যবসাব্যবসায়িক কাগজপত্রলাইসেন্স

ট্রেড লাইসেন্স তৈরি এবং নবায়ন করার নিয়ম (২০২৩)

ট্রেড লাইসেন্স বর্তমানে প্রায় সকল দেশের ব্যবসায়ীদের কাছেই বেশ পরিচিত একটি শব্দ। ব্যবসা শুরুর অন্যতম প্রথম একটি ধাপ হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করা । ট্রেড লাইসেন্স একজন ব্যবসায়ীর ও তার ব্যবসার পরিচিতি বহন করে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা আইনত দণ্ডনীয় একটি অপরাধ। তাই প্রত্যেক ব্যবসায়ীকেই ব্যবসা শুরু করার আগে ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করে নিতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে গিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। ফলে ট্রেড লাইসেন্সে ভুল হওয়া বা অন্যান্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে ব্যবসার বৈধতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ট্রেড লাইসেন্স কি ও সহজে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন তা নিয়েই আজকের লেখাটি।

সূচিপত্রঃ

ট্রেড লাইসেন্স কি?

ট্রেড লাইসেন্স বলতে মূলত ব্যবসার অনুমতিপত্র বোঝায়। ট্রেড লাইসেন্স হলো সরকার থেকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সরকারের ভৌগোলিক এখতিয়ারের মাঝে ব্যবসা করার অনুমতি। প্রতিটি ব্যবসার জন্যই সাধারণত আলাদা করে একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হয়। 

ট্রেড লাইসেন্স-এর প্রয়োজনীয়তা

বিভিন্ন চাকরিক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র থাকে। তেমনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যবসায়ীর পরিচয়পত্র হলো তার ট্রেড লাইসেন্স। সে কারণে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের কাজের প্রমাণ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এর একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে পাসপোর্ট তৈরী, যেখানে ব্যবসায়ীদেরকে তার ট্রেড লাইসেন্সটি প্রদর্শন করতে হয়। প্রায় প্রতিটি ব্যবসার জন্যই বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা অত্যন্ত জরুরী। যেকোন ব্যাংকেই ব্যবসায়িক একাউন্ট খোলার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হয়। ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠানকেই তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি করতে হয়। এসকল চুক্তির জন্য প্রায় সবসময়ই ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়।

ব্যবসায়িক বিভিন্ন সুবিধা পেতে বা ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান ও তথ্য পেতে একটি ব্যবসায়িক এসোসিয়েশনে যোগ দেওয়া প্রায় সবসময়ই ব্যবসায়ীদের সাহায্য করে। এসকল ব্যবসায়িক এসোসিয়েশনে যোগ দেওয়ার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হয়। বিদেশ থেকে কোন পণ্য আনতে বা বিদেশে রপ্তানি করতে আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স তৈরী করতে হয়। এই আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স পেতে হলেও ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। ব্যবসার জন্য কখনো ব্যাংক থেকে প্রজেক্ট লোন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এধরণের লোন পেতে হলে ব্যবসায়ীকে ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্স প্রদর্শন করতে হয়।

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সূচনা হয় ২০০৯ সালে। সিটি কর্পোরেশন [কর] বিধি ২০০৯ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত দেশে ট্রেড লাইসেন্সের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাগুলো প্রদান করে থাকে। এ হিসেবে বাংলাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করা যায়। ট্রেড লাইসেন্স বিশেষভাবে শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী ব্যক্তির নামে প্রদান করা হয়। তাই এদেশে এটি কোন ভাবেই হস্তান্তর করার নিয়ম নেই।

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের প্রকারভেদ

২০১৬ সালের গেজেট অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ২৯৪ টি ক্যাটাগরিতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। এই ক্যাটাগরি সমূহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার জন্যই প্রযোজ্য। ব্যবসার ক্যাটাগরিটি সাধারণত খুবই সাবধানতার সাথে নির্বাচন করতে হয়। কারণ এটি ভুল হলে ট্রেড লাইসেন্স পেতে ও পরবর্তীতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনেরই সমস্যা তৈরী হতে পারে।

এছাড়াও ২৯৪ টি ক্যাটাগরিকে মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১) সাধারণ দোকান বা ব্যবসা

প্রায় সকল ধরনের মুদি দোকান বা ছোট সকল ব্যবসা এই ক্যাটাগরির মাঝে পরে। এধরণের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াটা সাধারণত সবচাইতে সহজ ও কম খরচের।

২) কারখানা বা ফ্যাক্টরি অথবা শিল্প প্রতিষ্ঠান

এই ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সকল প্রকার পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা ও সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছোট বড় সকল কারখানাই এই ধরনের মাঝে পড়ে।

৩) অন্যান্য

উপরের দুটি প্রকারভেদ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ব্যবসা রয়েছে। যেমন- সিএনজি স্টেশন বা অন্যান্য দাহ্য পদার্থের ব্যবসা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লিমিটেড কোম্পানী, প্রিন্টিং প্রেস, আবাসিক হোটেল, রিক্রুটিং এজেন্সি, অস্ত্র ও গোলা বারুদ বিক্রি, ঔষধ, ট্রাভেলিং এজেন্সি ইত্যাদি। এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। 

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এছাড়াও কিছু কিছু ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে আলাদা কিছু কাগজপত্রেরও প্রয়োজন হতে পারে। এখানে ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে লেখা হলো-

সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রেঃ

  • নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ।
  • নির্দিষ্ট ভাড়ার চুক্তিতে দোকান ব্যবহার করলে ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প কাগজে লেখা দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্রের ফটোকপি।
  • নিজস্ব জায়গায় দোকান হলে ইউটিলিটি বিল ও হালনাগাদকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করার ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • দুই বা ততোধিক ব্যক্তির যৌথভাবে পরিচালিত ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীগণের ১৫০ অথবা ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প কাগজে ব্যবসা যৌথভাবে পরিচালনা করার অঙ্গীকারনামা ও শর্তাবলী।

কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেঃ

  • নির্দিষ্ট আবেদন ফরম।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তিপত্র। 
  • প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য কারখানা অথবা ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার বিবরণ সহ নকশা বা মানচিত্র। 
  • প্রস্তাবিত কারখানা বা ফ্যাক্টরির আশেপাশের অন্যান্য স্থাপনার মালিকের অনুমতিপত্র বা অনাপত্তিনামা।
  • ফায়ার সার্ভিস থেকে নেওয়া অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র।
  • ডি.সি.সি-এর নিয়মাবলী মেনে চলা হবে তা স্বীকার করে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র।
  • ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রেঃ

এধরণের প্রতিটি ব্যবসার ক্যাটাগরির জন্যই সাধারণত আলাদা কিছু অতিরিক্ত কাগজ প্রয়োজন হয়। সেগুলোর তালিকা দেয়া হলো-

  • সিএনজি স্টেশন এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থঃ এধরণের ব্যবসা শুরু করতে বিস্ফোরক অধিদপ্তর বা ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতিপত্র প্রয়োজন হবে।
  • ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত হাসপাতালঃ এধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনপত্র প্রয়োজন হবে।।
  • লিমিটেড কোম্পানিঃ এধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন হবে- মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন।
  • রিক্রুটিং এজেন্সি: মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট লাইসেন্স।
  • অস্ত্র ও গোলাবারুদ: অস্ত্রের লাইসেন্স।
  • ঔষধ ও মাদকদ্রব্য: এধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে সাধারণ ঔষধের দোকানের জন্য সাধারণ ব্যবসার কাগজপত্র সহ অতিরিক্ত হিসেবে ড্রাগ লাইসেন্সের কপি।
  • ট্রাভেলিং এজেন্সি: এধরণের প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন হবে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি।
  • ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেল: এধরণের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স পেতে ডিপুটি কমিশনার কর্তৃক অনুমতিপত্র প্রয়োজন হবে।

ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ফরম পূরনের নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ফরম (ঢাকা জেলার জন্য)

ট্রেড লাইসেন্স তৈরীর জন্য স্থানীয় সরকার অফিস থেকে পাওয়া ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফরম পূরণে ভুল হলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই এখানে ট্রেড লাইসেন্সের ফরম পূরণ করার নিয়ম দেওয়া হলোঃ

  • ১ নং ঘরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করতে হবে।
  • ২ নং থেকে ৬ নং ঘরে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য লেখতে হবে। এখানে যথাক্রমে নাম, পিতা/স্বামীর নাম, মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা লিখতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে যদি ব্যবসার মালিকানা একাধিক ব্যক্তির হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৬ নং ঘরে প্রত্যেকেরই তথ্য পাশাপাশি লিখতে হবে।
  • ৭ নং ঘরে আবেদনকারীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা লিখতে হবে।
  • ৮ নং ঘরে আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার লিখতে হবে। এবং ৯ নম্বর ঘরে আবেদনকারীদের জাতীয়তা লিখতে হবে। 
  • ১০ নং ঘরে ব্যবসার ধরন বা ক্যাটাগরি পূরণ করতে হবে। এই অংশটি গ্যাজেটে উল্লিখিত ব্যবসার ধরনের তালিকা থেকে সাবধানতার সাথে পূরণ করতে হবে। 
  • ১১ নং ঘরে ব্যবসা শুরু করার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। 
  • ১২ নং ঘরটি শুধুমাত্র লিমিটেড কোম্পানির মালিকদের জন্য। তাই আবেদনকারীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি লিমিটেড কোম্পানি হলে এই ঘরে ব্যবসার মূলধন লিখতে হবে
  • ব্যবসার নামে কোন আয়কর প্রদান করতে হলে তার TIN নাম্বার ১৩ নং ঘরে লিখতে হবে।
  • ১৪ নাম্বার ঘরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাটি নিজস্ব নাকি ভাড়া তা টিক চিহ্ন দিয়ে পূরণ করতে হবে।
  • ১৫ নাম্বার ঘরে ব্যবসার আলাদা সাইনবোর্ড আছে কি না তা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর মাধ্যমে লিখতে হবে 
  • ১৬ নাম্বার ঘরে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা পৌর ভূমি বা সরকারি ভূমির উপর অবস্থিত কিনা তা টিক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। 
  • ১৭ নং ঘরে আপনার দোকান বা প্রতিষ্ঠান কত তালায় অবস্থিত তা টিক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।
  • ১৮ বা শেষ ঘরে আবেদনকারীদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার লিখতে হবে। 
  • ‘আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও নাম’ লেখা স্থানে আবেদনকারীদের নাম লিখে তার পাশে স্বাক্ষর করতে হবে। এরপর এর নিচে তারিখ লিখতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। ধাপগুলো হলো: 

ধাপ-১: নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করুন

আবেদন ফরমটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান শহরে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে হলে সিটি কর্পোরেশন বা তাদের আঞ্চলিক অফিস থেকে ফরমটি নিতে হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বাইরে হলে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ অফিস থেকেই সংগ্রহ করা যাবে। 

এছাড়াও চাইলে অনলাইনে ফরমটি ডাউনলোড করেও প্রিন্ট করে নেয়া যাবে। 

ধাপ-২: প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আবেদন ফরমের সাথে যুক্ত করুন

ট্রেড লাইসেন্স করার সময় উল্লেখ্য একটি বিষয় হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সত্যায়িত করা থাকতে হবে। এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য শুধুমাত্র প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাগজপত্র সত্যায়িত করতে পারবেন।

ধাপ-৩: সত্যায়িত কাগজপত্র সহ আবেদন ফরমটি স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে জমা দিন

ধাপ-৪: ফরম জমা নেওয়ার পর আবেদনপত্রের তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়। এই কাজে আবেদনপত্র পাওয়ার পর লাইসেন্সিং সুপারভাইজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান।

ধাপ-৫: এরপর আবেদনকারী নির্ধারিত আবেদন ফি স্থানীয় সরকারের নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। 

ট্রেড লাইসেন্স করার খরচ

ট্রেড লাইসেন্সের ফি ব্যবসার ধরনের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে। অর্থাৎ ২৯৪ টি ক্যাটাগরির প্রতিটিতেই আলাদা আলাদা পরিমানে ফি প্রদান করতে হয়। এই ফি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ফি ক্যাটাগরি বা ধরন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফি এর তালিকা এই লিংক থেকে জেনে নিন। এছাড়া এই ২৯৪ ধরনের ব্যবসার বাইরে অন্য কোন  ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত হারে ফি জমা দিতে হবে-

১) ব্যবসাতে ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে এমন ব্যবসার ক্ষেত্রে– ১০০০ টাকা

২) ব্যবসাতে ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে না এমন ব্যবসার ক্ষেত্রে– ৫০০ টাকা।

ট্রেড লাইসেন্সের ফি জমা দেওয়ার সময় ফি এর সাথে নির্ধারিত ফি এর ১৫% ভ্যাট জমা দিতে হবে। 

এছাড়াও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কোন প্রচারণামূলক সাইনবোর্ড থাকলে সাইনবোর্ড চার্জ হিসেবে সাইনবোর্ডের প্রতি বর্গফুটের জন্য ৮০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এবং ২০০ টাকা লাইসেন্স বইয়ের মূল্য হিসেবে জমা দিতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্স তৈরীর সময় সাধারণত ১ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময় সেটি চাইলে সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদ পর্যন্ত নবায়ন করা যায়। ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন করার জন্য ৩ মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এবং এই সময়ের মাঝে লাইসেন্সটি নবায়ন করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর পরবর্তীতে কেউ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করলে তার জন্য সরকারি নিয়মানুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা বেশ সহজ একটি কাজ।

ধাপ-১: ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পুরাতন ট্রেড লাইসেন্সটি নিয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তিনিই লাইসেন্সটি নবায়ন করে দিতে পারবেন।

 ধাপ-২: প্রতিবার লাইসেন্স নবায়ন করার সময় লাইসেন্স নবায়ন ফি প্রদান করতে হবে। লাইসেন্স নবায়ন ফি ও লাইসেন্স তৈরী করার ফি একই। তাই লাইসেন্স নবায়ন করার সময় ক্যাটাগরি অনুযায়ী লাইসেন্সের ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। 

ধাপ-৩: নবায়ন ফি জমা দেওয়ার পর নবায়নকৃত লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে।

লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ

লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কে হবে সেটি সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার উপর নির্ভর করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যদি কোন সিটি কর্পোরেশনের অধীনের এলাকায় হয়ে থাকে, তবে ঐ সিটি কর্পোরেশন থেকে বা সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ আঞ্চলিক অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সিটি কর্পোরেশনের বাইরে হলে ঐ স্থানের স্থানীয় সরকার থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এসকল ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্ট পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে। 

এখানে উল্লেখ্য যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তাদের কাজের সুবিধার জন্য বেশ কিছু  আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তাই ঢাকায় কেউ ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে চাইলে তাকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাটি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কোন আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে রয়েছে তা জেনে নিতে হবে। এবং এরপর সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে যেতে হবে। এখানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক ভাগগুলো ও আঞ্চলিক অফিসের ঠিকানা দেয়া হলো:

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন:

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মোট ১০ টি অঞ্চলে বিভক্ত রয়েছে। কোন এলাকা কোন অঞ্চলের অধীনে এবং সকল আঞ্চলিক অফিসের ঠিকানা জানতে এই লিংকে প্রবেশ করুন।

এখানে কয়েকটি আঞ্চলিক অফিসের ঠিকানা দেওয়া হলো-

অঞ্চল-১ 

আঞ্চলিক অফিস

হাউস- ২০; রোড – ১৩/ ডি; সেক্টর- ৬; উত্তরা; ঢাকা- ১২৩০,

মোবাইল নাম্বার- (৮৮০২) ৫৮৯৫১২১৩

ইমেইল- zeo-1@dncc.gov.bd

অঞ্চল-২ 

আঞ্চলিক অফিস

জার্মান টেকনিক্যাল সেন্টার এর পাশে; সেক্টর- ২; মিরপুর; ঢাকা- ১২১৬

মোবাইল নাম্বার- (৮৮০২) ৮০১১৫৫৩

ইমেইল- zeo-2@dncc.gov.bd

অঞ্চল-৩

আঞ্চলিক অফিস

হাউস- ৪; রোড- ৯০; গুলশান ২; ঢাকা-১২১২

মোবাইল নাম্বার- (৮৮০২) ৮৮২৪৫৫১, ৯৮৯৬৩০৭, ৮৮৩৫৫৫৯

ইমেইল- zeo-3@dncc.gov.bd

অঞ্চল-৪

আঞ্চলিক অফিস

টাউন হল; সেক্টর- ১০; মিরপুর; ঢাকা- ১২১৬

মো বাইল নাম্বার- (৮৮০২) ৯০০১৯৫২

ইমেইল- zeo-4@dncc.gov.bd

অঞ্চল-৫

আঞ্চলিক অফিস

কারওয়ান বাজার আড়ৎ ভবন

কারওয়ান বাজার; ঢাকা- ১২১৫

মোবাইল নাম্বার- (৮৮০২) ৮১১৫৮৫৯

ইমেইল- zeo-5@dncc.gov.bd

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন: 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মোট ১০ টি অঞ্চলে বিভক্ত। কত নং ওয়ার্ড কোন অঞ্চলের অধীনে এবং সকল আঞ্চলিক অফিসের ঠিকানা জানতে এই লিংকে প্রবেশ করুন।

এখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি অঞ্চলের ঠিকানা দেয়া হলো:

অঞ্চল-১

আঞ্চলিক অফিস

লেভেল ৯; ওয়েস্ট ব্লক; নগর ভবন; ফুলবাড়িয়া

অঞ্চল-২

আঞ্চলিক অফিস

তিলপাপাড়া কমিউনিটি সেন্টার; খিলগাঁও

অঞ্চল-৩

আঞ্চলিক অফিস

হাজী গনি কমিউনিটি সেন্টার; আজিমপুর

অঞ্চল-৪

আঞ্চলিক অফিস

লেভেল ৯; ইস্ট ব্লক; নগর ভবন; ফুলবাড়িয়া

অঞ্চল-৫

আঞ্চলিক অফিস

সায়েদাবাদ (পরিবহন পুলের কাছাকাছি)

শেষকথা

ট্রেড লাইসেন্স সঠিকভাবে তৈরী ও নবায়ন করতে পারলে ব্যবসা করার অনেক সমস্যাই সহজ হয়ে যায়। এবং এই লাইসেন্সটি থাকায় ব্যবসাও আইন মেনে চালানো যায়। সেকারণে ট্রেড লাইসেন্স সকল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা শুরুর পূর্বেই করে রাখা উচিত। এবং পরবর্তীতে লাইসেন্সটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নবায়ন করা উচিত। তাই এ সকল ক্ষেত্রে এই লেখাটি আপনাদের অনেকখানি সাহায্য করবে বলেই আশা করছি।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) অনলাইনে ব্যবসা করতে কি ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হবে?

উত্তরঃ শুধুমাত্র ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আলাদা করে ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক না। কিন্তু কেউ চাইলে বিভিন্ন সুবিধার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে আইটি অথবা সফটওয়্যার ক্যাটাগরিতে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

২) ট্রেড লাইসেন্স তৈরীর পর কোন তথ্য ভুল থাকলে তা ঠিক করবো কিভাবে?

উত্তরঃ ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য খুব সহজেই নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে স্থানীয় অফিসে গিয়ে এফিডেবিটের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়।

৩) একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কি একাধিক ব্যবসা করা যায়?

উত্তরঃ একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে শুধুমাত্র একটি ব্যবসাই করা যায়। অন্য কোন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ঐ ব্যবসার জন্য আলাদা ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হবে।

৪) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা পরিবর্তন করলে কি ট্রেড লাইসেন্সে কোন সমস্যা হবে?

উত্তরঃ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা পরিবর্তন হলে ট্রেড লাইসেন্সের তথ্যও পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় ট্রেড লাইসেন্সটির বৈধতা থাকবে না।

৫) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শাখা খুলতে হলে কি ঐ শাখার জন্য আলাদা করে ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হবে?

উত্তরঃ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শাখার জন্যই আলাদা আলাদা ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হবে।

৬) একজন মানুষ একাধিক ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে পারবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ। একজন যতগুলো ইচ্ছা ততগুলো ব্যবসার জন্য আলাদা আলাদা ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে পারবে।

৭) একই নামে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে? 

উত্তরঃ সাধারণ ক্ষেত্রে একই নামে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে। কিন্তু কেউ চাইলে আলাদা করে রেজিষ্ট্রেশন করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম সংরক্ষণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে ঐ নামটি কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

৮) একটি ট্রেড লাইসেন্স কতজন ব্যবহার করতে পারবে?

উত্তরঃ ট্রেড লাইসেন্স কোনভাবেই হস্তান্তর যোগ্য নয়। তাই একটি ট্রেড লাইসেন্স কেবলমাত্র যার নামে তৈরি করা হয়েছে তিনিই ব্যবহার করতে পারবেন।

রিলেটেড আর্টিকেল গুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button